NoteShare

bd_islam_bijoy


اداره النصر
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Media

پیش کرتے ہیں
পরিবেশিত
Presents

بنگالی ترجمہ
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation

عنوان:
শিরোনাম:
Titled:
 

بنگلہ دیش نصرت ِ اسلام کی ابھرتی اُمید

বাংলাদেশ ইসলামের বিজয়ের আশা জাগানিয়া ভূখণ্ড

Bangladesh is the beacon of hope for the victory of Islam in the region.

از استاد اسامہ محمود حفظه اللہ 
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
Ustad Usama Mahmud Hafizahullah

بسم الله الرحمن الرحيم

বাংলাদেশ

ইসলামের বিজয়ের আশা জাগানিয়া ভূখণ্

মূল

উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ

 

অনুবাদ

আন নাসর অনুবাদ টিম

 

 

সূচীপত্র

ভূমিকা.. 6

বিপ্লবের সাফল্য …… গন্তব্য এখনো অনেক দূরে! 8

আরব বসন্তের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা.. 9

এই অঞ্চলের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং দীনদার জনসাধারণের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব. 10

দীনদার ভাই ও মুরুব্বিদের খেদমতে কিছু নিবেদন. 11

প্রথম বিষয়: আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং এর সাফল্য-ব্যর্থতার পরিমাপক. 12

দ্বিতীয় বিষয়: যে লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে জাতি স্বাধীনতা পাবে! 15

দীনদার শ্রেণির কর্তব্য ও এর তিনটি মৌলিক কারণ! 15

কীভাবে ইসলামের মুজাহিদদের প্রস্তুতিকেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত হবে?. 19

খুবই পিচ্ছিল যে পথ! 20

আমেরিকার নেতৃত্বে জায়নবাদী-হিন্দুত্ববাদী জোট সম্পর্কে আমাদের নিবেদন. 23

 

ভূমিকা

 

الحمدللہ رب العالمین والصلاۃ والسلام علی رسول اللہ محمد وآلہ وصحبہ أجمعین وبعد!

সমস্ত প্রশংসা রাব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য! রহমত ও প্রশান্তি (সালাত ও সালাম) বর্ষিত হোক রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সাহাবীদের ওপর।

সালাত ও সালামের পর-

 

বাংলাদেশের জনসাধারণ এবং বিশেষভাবে দীনদার ভাইদের প্রতি-

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয় যে, যেই বাহিনী জুলুম-অত্যাচার ও অনাচারে প্রবাদতুল্য বনে গিয়েছিল, যারা বাংলাদেশের মুসলিমদেরকে মুশরিক হিন্দুদের গোলাম বানিয়ে কর আদায়ের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিল, যাদের হাতে দীনদার ব্যক্তিরা নেহায়েত জুলুম-অত্যাচারের মুখোমুখি হচ্ছিল, আজ তাদের বিরুদ্ধে বাংলার মুসলমানেরা ক্ষোভ ও বিদ্রোহের তুফান হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তারা না কোনো গুলির পরোয়া করেছেন, না ডাণ্ডা বেড়ির। সমস্ত প্রতিকূল দশা ডিঙ্গিয়ে অবশেষে সেকুলারিজম ও ধর্মহীনতার মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেগুলো মাটির উপর মুখ থুবড়ে পড়েছে। আল্লাহর অনুগ্রহ ছিল বিধায় খুব বেশি সময় এই গণজোয়ার থামিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি।

এভাবেই অপরাধীর দল পালিয়ে গিয়েছে এবং জুলুম অত্যাচারের একটা যুগের অবসান ঘটেছে। আজ জনসাধারণের চেহারায় যেই প্রত্যয়-দীপ্তি, তাদের বুকে যেই জযবা ও উদ্দীপনা এবং তাদের চোখে যে আশা ও প্রত্যাশার আলো দেখা যাচ্ছে, তা কেমন যেন এ কথা ঘোষণা করছে যে, এই জাতি এখন আর জুলুম অত্যাচার, অন্যায়-অনাচার সহ্য করে নেবে না। তারা এখন কুফর ও নাস্তিকতাকে আর প্রচার-প্রসার হতে দেবে না। লাঞ্ছনা ও ভয়ের চাদর তারা ঝেড়ে ফেলেছে। সম্মান-মর্যাদা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ন্যায়-ইনসাফের জন্য জীবন দিতে জাতিগতভাবে তারা শিখে গিয়েছে। এই লড়াই এখন তাদের জাতীয় লড়াই। আল্লাহ তাদের এই উদ্দীপনা স্থায়ী করুন এবং এই জাতিকে প্রতিটি বিষয়ে সঠিক পথ ও অবিচল থাকার নেয়ামত দান করুন। এই আন্দোলনে ছাত্র জনতা যারাই অংশগ্রহণ করেছে তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে এই সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন আল্লাহ তাদের উপর রহম করুন। আহতদেরকে আল্লাহ তাআলা সুস্থতা দান করুন। এখন সকলকে তিনি এই তাওফীক ও অবিচলতা দান করুন যে, তারা আর কখনো জুলুমের সামনে মাথা নত করবে না, কখনো শয়তানের গুণাবলি সম্পন্ন প্রতারকদের দ্বারা প্রতারিত হবে না। নিজেদের প্রত্যয়, দৃঢ়তা, ইখলাস, একনিষ্ঠতা এবং কর্ম প্রচেষ্টাকে ওই সময় পর্যন্ত নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে তারা ধরে রাখবে, যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ ইসলামের প্রকৃত দুর্গ হয়ে না ওঠে; যতদিন পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে এখানে ইনসাফ ও ন্যায় সঙ্গত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হয়।

 

বিপ্লবের সাফল্য …… গন্তব্য এখনো অনেক দূরে!

প্রিয় ভাইয়েরা! এই সময়টা নিঃসন্দেহে আনন্দের। কিন্তু আমি আপন ভাইদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে তুলে ধরতে চাই, এটাই আমাদের গন্তব্য নয়। গন্তব্য এখনো অনেক দূরে। যদি আমরা সজাগ ভাবে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ না করি, তাহলে আশঙ্কা রয়েছে যে, এই বিজয় ও আনন্দ আমাদেরকে নিজেদের আসল গন্তব্য থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিবে। শুধু কিছু ব্যক্তি ও চেহারার পরিবর্তন এবং দুটি চারটি সংশোধনীর দ্বারা এই জুলুম ও অনাচার পূর্ণ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে না। কারণ এই ব্যবস্থার ভিত্তি অনেক গভীরে এবং সেগুলো অনেক পুরানো। এই ব্যবস্থার সঙ্গে দুনিয়ার অনেক বড় বড় শয়তানের স্বার্থ মিশে আছে। বিপ্লব অনেক বড় বিষয়। জনসাধারণের জেগে ওঠা এবং অতি উচ্চ লক্ষ্য সামনে রেখে জালিমের মুখোমুখি হওয়া ছোটখাট ব্যাপার নয়। কিন্তু তার চেয়ে বড় বিষয় হলো এই বিপ্লবের সাফল্য এবং সুফলগুলো ঘরে তুলতে পারা।

 

আরব বসন্তের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা

সম্মানিত ভাইয়েরা! আপনারা জানেন যে, কয়েক বছর পূর্বে পৃথিবীবাসী আরব বসন্ত দেখেছে। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। এত বিরাট আন্দোলন আরব বিশ্ব ইতিপূর্বে কখনো দেখেনি। সেখানেও শাসকদের পতন হয়েছে। ব্যক্তি পরিবর্তন হয়েছে। মিশরে তো ৩০ বছর যাবৎ চেপে বসা সামরিক স্বৈরাচারী শাসক জেলে চলে গিয়েছে। শুধু তাই নয় বরং তারপর ইলেকশন হয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা সরকার গঠন করেছে। কিন্তু তারপর কি হয়েছে? কিছুদিন পর ওই জনপ্রতিনিধিদেরকে হয় জেলে পাঠানো হয়েছে অথবা শহীদ করে দেয়া হয়েছে। আজও অত্যাচারী এবং শত্রুবাহিনীর তাবেদার বাহিনী এককভাবে মিশরের শাসন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। আরব বিশ্বের কোনো একটি দেশেও বিপ্লব তার গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছুতে পারেনি। জনসাধারণ আগের মতোই বঞ্চিত, নিপীড়িত এবং পরাজিত রয়ে গেছে। জনগণের ও ইসলামের শত্রুরা আজও বিজয়ী হয়ে বসে আছে।

একই কথা পাকিস্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেখানেও জনসাধারণ অগণিত বার আন্দোলন করেছেন। কখনো এই নামে কখনো ওই নামে। প্রত্যেকবার দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলার আশা দেয়া হয়েছে, কিন্তু পাকিস্তানের ইতিহাস সাক্ষী, সেখানে বাহ্যিকভাবে যাকেই ক্ষমতার চেয়ারে বসানো হয়েছে, প্রতিবার আসল ক্ষমতা দীনের দুশমন ফৌজি জেনারেলদের হাতেই থেকেছে।

এ কারণে আজ যদি আমরা কিছু বাহ্যিক সাফল্য পেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি, এতোটুকুতেই আশ্বস্ত হয়ে পড়ি, ইসলামী বিশ্বের বিপ্লবগুলোকে ব্যর্থ ও অকার্যকর করার যেই দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করি, গালভরা স্লোগান ও চিল্লাচিল্লিতে যদি উচ্চাভিলাষী হয়ে পড়ি, তাহলে সেটা আমাদের অনেক বড় দুর্ভাগ্যের কারণ হবে। এই জাতির সঙ্গে ওই সমস্ত জুলুম অত্যাচারের কিছুই বদলাবে না, যেগুলো বিগত ৭০ বছর যাবৎ নিজেদের এবং অন্যদের হাতে এই জাতি সহ্য করে এসেছে। এমনকি আজ জনসাধারণ এ কথা কল্পনাও করতে পারছে না যে, তারা আরও বেশি প্রতারিত হবে এবং নিজেদের ব্যাপারে শত্রুদেরকে হাসাবে। আজ মুসলিম উম্মাহর সামগ্রিক অবস্থা এমন নয় যে, আরো একবার ইখলাস, একনিষ্ঠতা, সদিচ্ছা এবং পবিত্র উদ্দীপনা অবলম্বন করে জনসাধারণ বিরাট ত্যাগের নজরানা পেশ করবে।

 

এই অঞ্চলের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং দীনদার জনসাধারণের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব

এই অবস্থায় সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো এই অঞ্চলের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং দীনদার জনসাধারণের। কোনো রকম অতিশয়তা ছাড়া আমি এ কথা বলতে পারি, উপরে যাদের কথা বলা হলো তারাই ওই শ্রেণি, যাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও আন্দোলনের সঙ্গে গোটা জাতির সাফল্য ও ব্যর্থতা লিখিত রয়েছে। যদি তারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন, ইখলাস একনিষ্ঠতা, সদিচ্ছা, দৃঢ়তা, অবিচলতা ও প্রত্যয়ের সঙ্গে সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেন, অবস্থান গ্রহণ করেন, তাহলে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, হাজী শরীয়তুল্লাহ রহিমাহুল্লাহর এই ভূখণ্ড পুনরায় গোটা উম্মাহর জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। তারাই ওই শ্রেণি যাদের সদিচ্ছা, একনিষ্ঠতা ও ত্যাগের অনেক উদাহরণ পূর্বে গত হয়েছে। তারাই বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি জুলুম অত্যাচার সহ্য করছে। কিন্তু যদি এই দীনদার শ্রেণি নিজেদের দায়িত্বের উপলব্ধি, তা আঞ্জাম দেয়া এবং একাধিক বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ না করুন কোনো ভুল করে ফেলে, তাহলে শতভাগ নিশ্চয়তার সঙ্গে একথা বলা যায়, এই শ্রেণিকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো শ্রেণি যত উচ্চতর যোগ্যতা সম্পন্ন, দক্ষ অভিজ্ঞ এবং জাতির সেবায় অধিক সদিচ্ছার অধিকারী হোক না কেন, যেহেতু তারা আল্লাহর পছন্দনীয় পথে নিজেদেরকে এবং সজাতিকে পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এজন্য তাদের পক্ষে কিছুতেই জনসাধারণকে উক্ত দুর্দশা, দুর্গতি ও অস্থিতিশীলতা থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব নয়।

 

দীনদার ভাই ও মুরুব্বিদের খেদমতে কিছু নিবেদন

অতএব খুবই জরুরি মনে করে আমরা নিজেদের দীনদার ভাই ও মুরুব্বিদের খেদমতে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে কিছু কল্যাণমূলক বিষয় নিবেদন করতে চাই

 

প্রথম বিষয়: আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং এর সাফল্য-ব্যর্থতার পরিমাপক

এই জাতির প্রতিটি ব্যক্তি জুলুম থেকে মুক্তি পেতে চায়। সকলেই অস্থির হয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে— কখন এই দুঃখ-দুর্দশা, অস্থিতিশীলতা পরিবর্তিত হয়ে সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, স্বচ্ছলতা ও স্থিতিশীলতা তাদের জাতীয় জীবনে এসে ধরা দেবে। এই অবস্থায় আমাদের কর্তব্য হলো, আমরা নিজেরাও জুলুম-অত্যাচার ও অসচ্ছলতার বাস্তব কারণ উপলব্ধি করব, সেগুলোর অবসান ঘটানোকে নিজেদের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করব এবং সেই সঙ্গে গোটা জাতিকে সেগুলো সম্পর্কে বোঝাবো। আমরা তাদেরকে নিজেদের সঙ্গে আমাদের দায়িত্ব পালনের আন্দোলনে দাঁড় করাবো। এই কাজ যদি আমরা করতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমাদের জন্য বরকতের দরজাগুলো খুলে যাবে এবং পৃথিবীতে আল্লাহর ইচ্ছায় ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ইরশাদ করেছেন:

فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَى ۝ وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا

অর্থ: “অতএব যে আমার প্রদর্শিত সৎপথের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না ও দুঃখ-কষ্ট পাবে না। ۝ আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত। [সূরা তোহা, ২০: ১২৩-১২৪]

আল্লাহ তাআলার কিতাব আমাদেরকে জানাচ্ছে:

إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

অর্থ: “নিশ্চয়ই শিরক অনেক বড় জুলুম।” [সূরা লোকমান, ৩১:১৩]

আল্লাহ পাক আরো বলেন:

وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

অর্থ: “যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান মোতাবেক ফায়সালা না করবে তারা জালিম।” [ সূরা মায়েদা ০৫:৪৫]

 

অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেছেন:

وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡقُرَىٰٓ ءَامَنُواْ وَٱتَّقَوۡاْ لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِم بَرَكَٰتٖ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ وَلَٰكِن كَذَّبُواْ فَأَخَذۡنَٰهُم بِمَا كَانُواْ يَكۡسِبُونَ

অর্থ: “আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম, কিন্তু তারা (সত্যকে) মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করেছিল; কাজেই আমি তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে পাকড়াও করেছি।” [সূরা আরাফ, ০৭:৯৬]

 

এ কারণে....

কোনো প্রকার ভয়-ভীতি ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ছাড়াই অতি সুস্পষ্ট আকারে নির্দ্বিধায় নিঃসঙ্কোচে জাতির সামনে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরতে হবে যে, ফিতনা ফাসাদ, জুলুম-অত্যাচার, অন্যায়-অনাচার, স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্র থেকে শুধু তখনই আমরা মুক্তি লাভ করব, যখন আমরা ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবনে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করব এবং শাসনকার্যে ওই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করব, যার মাঝে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার হাকিমিয়া (পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা ও আইন) নিশ্চিত হবে; যেখানে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়তের আইন বাস্তবায়িত হবে।

অতএব, আসুন আমরাও এটাকে আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং এর সাফল্য-ব্যর্থতার পরিমাপক হিসেবে গড়ে তুলি, এটাকে মৌলিক অপরিবর্তনীয় নীতি ও চাবিকাঠিতে পরিণত করি। তারপর এই পথে বাধা সৃষ্টিকারী প্রতিটি শক্তির বিরুদ্ধে মোকাবেলার জন্য উক্ত নীতি অনুসরণে আমরা গোটা জাতিকে নিজেদের সঙ্গে দাঁড় করাতে চেষ্টা করব।

এদেশের জনসাধারণকে এই লক্ষ্য উদ্দেশ্যের ছায়াতলে আমাদের দাঁড় করাতে হবে যে, এখানে কুফরী, নাস্তিকতা, চরিত্রহীনতা, অনৈতিকতা ও নির্লজ্জতা বিস্তারকারীদের এবং সুদভিত্তিক অর্থনীতি পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। এই দৃষ্টিভঙ্গিতেও সজাতিকে নিজেদের সঙ্গে আন্দোলনে সংযুক্ত করতে হবে যে, বাংলা ভূখণ্ডে জায়নবাদী-হিন্দুত্ববাদীদের মিত্রশক্তির কোনো স্থান নেই। বরং তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ভাব ও বিদ্বেষ জনসাধারণের অন্তরে তৈরি করা এবং তাদেরকে প্রতিহত করাকে আন্দোলনের ফোকাস তথা মূল লক্ষ্য হিসেবে আমরা প্রতিষ্ঠিত করবো।

 

দ্বিতীয় বিষয়: যে লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে জাতি স্বাধীনতা পাবে!

উপরের পয়েন্টে যা কিছু উল্লেখ করা হলো সেগুলো আমাদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য এবং গন্তব্য বলে আমরা ধরে নিতে পারি। এখন তার জন্য দাওয়াত দেয়া, প্রচার-প্রচারণা চালানো, জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ ও সংঘবদ্ধ করা, উক্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য আন্দোলন ও কর্ম প্রচেষ্টাকে গতিশীল করা আমাদের কাজ। এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে জাতি স্বাধীনতা পাবে, এতদিনের শোষণ ও জুলুম-অত্যাচার থেকে মুক্তির পথ রচিত হবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে যখন একটা সরকারের পতন ঘটেছে, সেনাবাহিনী চেষ্টা করে যাচ্ছে জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতে। ছাত্র ও রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি মোতাবেক একটা নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। এই অবস্থায় আমাদের সামনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এই লক্ষ্য কি আমাদের অর্জন হতে পারে? যদি উত্তর না বাচক হয়, তাহলে এই লক্ষ্য অর্জনের পথ এখন কি হবে? কোন কর্মপন্থা অবলম্বন করে আমরা আশা রাখতে পারি যে, বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন কখনোই নিষ্ক্রিয় হতে বাধ্য হবে না?

 

দীনদার শ্রেণির কর্তব্য ও এর তিনটি মৌলিক কারণ!

এ প্রসঙ্গে আমাদের পক্ষ থেকে মৌলিক ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আবেদন হলো এই যে, দীনদার শ্রেণির কর্তব্য হলো সরকারের থেকে পুরোপুরি অমুখাপেক্ষী হয়ে জনসাধারণের মাঝে দাওয়াত ও আন্দোলনের প্রচার-প্রসার ঘটানো, আন্দোলন ও বিপ্লবের প্রস্তুতিকে আরো শক্তিশালী করা, তারই ভিত্তিতে সরকারকে বিভিন্ন সংশোধনী আনতে বাধ্য করা। এই কর্মপন্থা তারা অবলম্বন করবে। এই আবেদনের পেছনে তিনটি মৌলিক কারণ রয়েছে:

এক. এই বাস্তবতা আমরা ভুলে থাকতে পারি না যে, যতদিন পর্যন্ত এখানে ঔপনিবেশিক আমলের গঠিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী বিদ্যমান থাকবে এবং তাদের স্থলে আকীদা-বিশ্বাস চিন্তাধারা দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপন্থার দিক থেকে বিশুদ্ধ ইসলামী বিপ্লবী বাহিনী না দাঁড়াবে, ততদিন পর্যন্ত দীনদারদের কোনো প্রতিরোধ, প্রতিরক্ষা ও নির্বাহী শক্তি যেহেতু অর্জিত হবে না, সেজন্য ওই সময় পর্যন্ত দীনদারগণ বিশ্বাসঘাতক সেনাবাহিনীর দয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবে। সেনাবাহিনী যখন ইচ্ছা তাদেরকে সরকারি বাড়িতে থাকতে দেবে, আবার যখন ইচ্ছা ফাঁসিতে ঝোলাবে, তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে, তাদেরকে জেলে ভরবে। এ কারণে দীনদারদের এমন দুর্বলতা এবং সেনাবাহিনীর শক্তি সক্ষমতার এই পরিস্থিতিতে কর্তব্য হলো- নিজেদের দাওয়াতকে বিস্তৃত সাধন ও ব্যক্তি ও সমাজের শক্তিময় অবস্থান তৈরির প্রতি মনোনিবেশ করা। এ কাজের জন্য জনসাধারণের মাঝে নিজেদের দাওয়াত ও আন্দোলনের শিকড় অত্যন্ত গভীরে প্রোথিত করতে হবে। কিন্তু তার পরিবর্তে যদি ইসলামপন্থীরা সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভর করে সরকারের অংশীদার বনে যায়, তাহলে সেটা নিজেদের আন্দোলনের পায়ে নিজেদেরই কুঠারাঘাত করার সমতুল্য হবে।

দুই. যে রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে আজ হাসিনা ওয়াজেদের পতনে সাহায্যকারী ও জোটবদ্ধ দেখা যাচ্ছে, ইসলামকে সামাজিক ও জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের মধ্য থেকেই বিরাট অংশকে আগামীকাল ইসলামপন্থীদের বিরোধিতা করতে দেখা যাবে। তারা আপনার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। ইসলাম ও কুফর নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের নীতি হলো শুধু দুর্নীতির অভিযোগ ও পেরেশানি। তারা আজ ভারতের ক্রীতদাসদের প্রতি অসন্তুষ্ট দেখা যাচ্ছে কিন্তু আমেরিকার ক্রীতদাসদের ব্যাপারে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। যারাই তাদের প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করার জন্য কাজ করবে, রাজনৈতিক পক্ষগুলো তাদের হাতেই নিজেদেরকে সঁপে দেবে।

তিন. এই শাসন ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে গাইরুল্লাহর ইবাদত ও দাসত্ব এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার সঙ্গে বিদ্রোহাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির উপর। শরীয়তের নীতিমালার আলোকে এই শাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য। যতদিন পর্যন্ত এই কাজের জন্য দীনদারদের মাঝে আপনাআপনি এমন শক্তি দেখা না দিবে, পথ চলতে গিয়ে যে শক্তির সামনে কোনো রাজনৈতিক অথবা সামরিক প্রতিবন্ধকতা টিকে থাকতে পারবে না, ততদিন পর্যন্ত এই শাসন ব্যবস্থায় সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে সত্যকে বিজয়ী করা সম্ভব হবে না; বরং এর দ্বারা উল্টো জুলুম ও সীমালঙ্ঘনের ওপর প্রতিষ্ঠিত ধর্মহীন শাসন ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী হবে। তাগুতি শাসন ব্যবস্থায় যখনই দীনদারদেরকে সরকারে শামিল করা হয় তখন এর দ্বারা ওই শাসন ব্যবস্থা মোটেও ইসলামী হয়ে ওঠে না; বরং এ কাজের দ্বারা দীনদারদেরকে অকাট্য সুসংহত ইসলামী নীতিমালার ব্যাপারে আপোষ করতে হয়। এভাবে নিজেদের দাওয়াত ও আন্দোলনের প্রতি ফোকাস রাখা এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে শক্তিশালী হবার পরিবর্তে মিথ্যাকেই আরো শক্তিশালী করা হয়। এভাবেই দীনদাররা আল্লাহর সমর্থন ও সাহায্য থেকে প্রকৃত অর্থে বঞ্চিত হয়ে যায়।

এ কারণে উচিত তথা করণীয় হলো, দীনদার শ্রেণি আগামী সরকারে নিজেরা শামিল থাকাকে লক্ষ্য স্থির করার পরিবর্তে বর্তমান এই বিপ্লব ও পরিবর্তনকে আল্লাহর দীনের বিজয়ের জন্য ব্যবহার করার সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। জনসাধারণকে সেই রূপরেখা লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে দীক্ষিত করবেন। তাদের মাঝে আত্মশুদ্ধিমূলক কার্যক্রম চালাবেন। নিজস্ব শক্তিময় ও সুদৃঢ় অবস্থান তৈরির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। এই প্রেক্ষাপটে নিজেদের বিপ্লবী শক্তি ও আন্দোলনের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্রসহ সমগ্র ব্যবস্থার তদারকি ও সংস্কারের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। আমলাতন্ত্র থেকে ইসলাম বিরোধীদেরকে অপসারণ করার পদক্ষেপ নীতি-কৌশল গ্রহণ করবেন। এই কাজের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেবেন। মোটকথা তারা প্রচলিত ব্যবস্থায় বিদ্যমান ইসলামের দুশমন ও গণশত্রুদের অপসারণকে নিজেদের আন্দোলনের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করবেন।

অতএব আমাদের কর্তব্য দীনদার ব্যক্তিদেরকে কল্যাণের দিকে ডাকা, সৎ কাজের আদেশ করা, অসৎ কাজে বাধা প্রদান করার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও বিশুদ্ধ শরীয়তের বিষয়গুলোর ওপর কাজ করার জন্য রূপরেখা তৈরি করতে হবে। তাগুতকে অস্বীকার, শাসনতন্ত্রে আল্লাহর একক কর্তৃত্বের অনুভূতি, শরীয়ত পালনের আবশ্যকতা, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও ঘৃণা, আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব ও শত্রুতা— এ জাতীয় ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোকে নিজেদের দাওয়াত ও আন্দোলনের মূল পয়েন্ট তথা উপাদান বানাতে হবে।

 

বাংলা কীভাবে ইসলামের মুজাহিদদের প্রস্তুতিকেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত হবে?

হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা!

এই আন্দোলন কঠিন চেষ্টা-প্রচেষ্টা, নিরন্তর সাধনা, বিরাট ত্যাগ ও বিসর্জন, শেষ সময় পর্যন্ত দৃঢ়তা অবিচলতা ও অটলতা অবলম্বন করে চূড়ান্ত লক্ষ্যে উত্তীর্ণ হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখাই আমাদের কাছে দাবি করছে। কিন্তু কার্যকারিতার দিক থেকে ইনশাআল্লাহ এই আন্দোলন ঐ সমস্ত কর্ম প্রয়াস থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে, অতীতে যেগুলোর এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছে। দাওয়াত-তরবিয়ত, শিক্ষা-দীক্ষা-প্রশিক্ষণ, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ হলো আমাদের এই আন্দোলনের হাতিয়ার। তাৎক্ষণিকভাবে গন্তব্য আমরা দেখতে পাবো না এবং বিদ্যমান বাস্তবতায় কোনোভাবেই সেই গন্তব্যে আমরা পৌঁছতে পারবো না। কিন্তু এই আন্দোলন শুরু করার পর এক একটি দিন অতিবাহিত হবে, আমরা এক-একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করব আর এদিকে এদেশের জনসাধারণ গন্তব্যের নিকট থেকে নিকটতর হতে থাকবে। উম্মাহর বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে সত্য-মিথ্যার মধ্যকার লড়াই চলাকালেও এই অঞ্চলের মুসলিমরা শক্তিশালী ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। এভাবেই যেই বাংলা কোনো এক সময় জায়নবাদী হিন্দুত্ববাদীদের সামরিক বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাগত কেন্দ্র ও মোর্চা হিসেবে বিবেচিত হতো, এই আন্দোলনের বদৌলতে আল্লাহর ইচ্ছায় তা ইসলামের মুজাহিদদের প্রস্তুতিকেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত হবে ইনশাআল্লাহ।

 

খুবই পিচ্ছিল যে পথ!

কিন্তু হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা!

তার বিপরীতে আরেকটা পথ আছে যা খুবই পিচ্ছিল। বিগত ৭০-৮০ বছর যাবৎ শুধু উপমহাদেশ নয় বরং গোটা মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে দীনদারদের এই অভিজ্ঞতার কথা লিখিত রয়েছে যে, তাদের রাজনৈতিক কর্মপ্রয়াস এবং প্রচলিত সরকার ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক চেষ্টা প্রচেষ্টা পাকিস্তান, মিশর, বাংলাদেশ ও তিউনিসিয়া কোথাও তাদের জন্য কোনো প্রকার কল্যাণ বয়ে আনেনি; বরং বাস্তবতা হলো: প্রচলিত সরকার ও সেনাবাহিনীর বিপরীতে যেখানে ধর্মীয় দলগুলোর কর্তব্য ছিল সৎ কাজের আদেশ করা অসৎ কাজে বাধা প্রদান করা, সেখানে তারা ইসলামের শত্রুদের প্রণীত শাসন ব্যবস্থাকে সমর্থন ও হেফাযতের কাজ করেছেন। ফলস্বরূপ রাষ্ট্র ও সমাজে ইসলামের শত্রু ও ইসলাম বিদ্বেষী শক্তিগুলো আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এরপর দীনদারদেরকে ফাঁসানো হয়েছে, তাদের উপর গুলি চালানো হয়েছে, তাদেরকে দেশান্তর করা হয়েছে, তাদের দাওয়াত ও আন্দোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, কিন্তু এতসব ত্যাগ ও বিসর্জনের পরেও তারা দুর্বল থেকে গেছেন। সেনাবাহিনী নামক কুফরী শক্তিগুলো আরো সুসংহত হয়েছে। এতই শক্তিশালী হয়েছে যে, আজ গাজা উপত্যকায় ইসরাঈলি সেনাবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদেরকে দেয়া হয়েছে। এরাই ওই সেনাবাহিনী, যারা নিজেদের দেশে বিগত ত্রিশ বছর যাবৎ আল-কুদসের মুজাহিদদের বিরুদ্ধে আমেরিকা ও ইসরাঈলের পক্ষে প্রতিরক্ষামূলক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

তাই আমাদের মনে রাখতে হবে, ঈমানদার কখনো এক গর্তে দুইবার দংশিত হয় না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

لَا يُلْدَغُ مُؤْمِنٌ مِنْ جُحْرٍ وَاحِدٍ مَرَّتَيْنِ

অর্থ: “কোনো ঈমানদার একই গর্তে দুইবার দংশিত হয় না।” (বুখারী শরীফ)

 

আমরা মুসলিমরা নিজ নিজ রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে নিজেদের কর্মপন্থা নিয়ে যদি দ্বিতীয়বার চিন্তাভাবনা না করি, আল্লাহর দীন ও উম্মাহর প্রয়োজনে যদি আমরা লাব্বাইক বলতে না পারি, আত্মশুদ্ধি, সংস্কার, সংশোধন কার্য, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মাধ্যমে ইতিহাস ও বুদ্ধিবৃত্তিক এমনকি পৃথিবীর যেকোনো প্যারামিটারে আজ আমাদের কাঁধে চেপে বসা ধর্মীয় ও জাতীয় দায়িত্ব পালনে যদি আমরা সাড়া না দিই, তাহলে বলতেই হবে, সামগ্রিকভাবে দ্বিতীয়বার আমরা পুরানো গর্ত থেকে দংশিত হতে যাচ্ছি। এই দংশনের ফলেই আজ গাজায় আমাদেরকে জবাই করা হচ্ছে। কাশ্মীরে আমাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানেও আমাদেরকে কোণঠাসা করে ফেলা হচ্ছে। আমরা যদি এভাবেই চলতে থাকি তাহলে নিশ্চিতভাবে আমাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলা তাঁর দীনের জন্য অনেক আনসার ও মুজাহিদ তৈরি করবেন। কিন্তু আমরা সত্য-মিথ্যার এই লড়াইয়ে নিজেদেরকে এই যেই পজিশনে দাঁড় করাচ্ছি, তার ভয়াবহতা দুনিয়াতে তো আমরা দেখতে পাবোই কিন্তু আখিরাতে যদি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমরা কেন নিজেদেরকে অসম্মান, লাঞ্ছনা ও ব্যর্থতার পথে নিক্ষেপ করেছিলে, তখন আমরা কি জবাব দেব? যদি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়, কেন তোমরা শক্তি অর্জন ও প্রস্তুতি গ্রহণে আত্মনিয়োগ করোনি? কেন তোমরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করোনি? আল্লাহ তাআলার কাছে প্রত্যাশা রাখি, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশি ভাইয়েরা ইসলামকে বিজয়ী করার পথে পা বাড়াবেন, তারা ইসলামের শত্রুদের সমস্ত হাতিয়ার ও অস্ত্র এবং পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবেন ইনশাআল্লাহ। তারা জুলুমের সামনে কখনো মাথা নত করবেন না। তারা কখনো প্রতারকদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না। বরং তারা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল ও ভরসা করে ওই সমস্ত শয়তানের সামনে থেকে ঈমানদারদের ঘাড়ে চেপে বসার সকল পথ বন্ধ করে দেবেন ইনশাআল্লাহ।

 

আমেরিকার নেতৃত্বে জায়নবাদী-হিন্দুত্ববাদী জোট সম্পর্কে আমাদের নিবেদন

পরিশেষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিবেদন করতে চাই- ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে আমেরিকার নেতৃত্বে জায়নবাদী হিন্দুত্ববাদী জোটের পরিচালিত গাজার ধ্বংসলীলা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। সত্য কথা হলো আজ মুসলিম বিশ্ব প্রত্যক্ষভাবে অথবা পরোক্ষভাবে এই জোটের অধীন। তাদের জুলুমের কারণে পাকিস্তান, হিন্দুস্তান এবং কাশ্মীর থেকে নিয়ে গাজা ও আরব বিশ্ব পর্যন্ত গোটা মুসলিম বিশ্বে হাহাকার চলছে। বাংলাদেশে এতদিন যে সমস্ত জুলুম-অত্যাচার হয়েছে, সেগুলো এই জায়নবাদী হিন্দুত্ববাদী জোটের পরিচালিত নির্যাতন-নিপীড়নেরই একাংশ। কুফরী শক্তির কর্তা ব্যক্তি এবং তাদের তাবেদারদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরযে আইন। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা আজ উম্মাহর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। বৈশ্বিক পরিসরে এই লড়াই হবে। সেই লড়াইয়ে কুফরী শক্তির শীর্ষ ব্যক্তিদের স্বার্থগুলো আমাদের টার্গেট এবং আমাদের হামলার শিকার হবে। তাতে তাদের অহংকারের প্রাসাদ ভেঙে পড়বে আর তখনই আমাদের সাফল্য আসবে ইনশাআল্লাহ। সে সময় গাজার মুসলিমরা পুনরায় প্রশান্তির সঙ্গে শ্বাস নিতে পারবে। সে সময় মসজিদে আকসাও স্বাধীন হবে। সে সময় উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্যও আল্লাহ সব দিক থেকে পথ খুলে দেবেন। তাই এই লড়াইয়ে আপনি নিজেও কার্যতভাবে অংশগ্রহণ করুন এবং গোটা জাতিকে এই লড়াইয়ে নিজের সাথে দাঁড় করাবার প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করুন।

 

আমি আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনার মাধ্যমে আমার আলোচনা শেষ করছি যে, আল্লাহ আপনাদের এবং আমাদেরকে সঠিক পথের দিশা দান করুন, আমাদের হৃদয়কে ঈমান ইস্তেকামাত দিয়ে অটল-সুদৃঢ় করে দেন এবং হেদায়াত দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেন। আমাদেরকে মজলুমদের পাশে দাঁড়াবার এবং দীন ইসলামের বিজয়ের জন্য কাজ করার তাওফীক দান করুন। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বাংলাদেশের মুসলিমদেরকে সকল প্রকার অকল্যাণ থেকে হেফাযত করুন, আর তিনি এদেশবাসীর ভয়-ভীতিকে নিরাপত্তা দ্বারা, দুর্বলতাকে শক্তি দ্বারা, বিক্ষিপ্তততাকে ঐক্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দিন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাদেরকে নিজের দীনের সাহায্যে ব্যবহার করুন, তাদেরকে দুনিয়া আখিরাতের সর্বপ্রকার কল্যাণ দান করুন এবং সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে হেফাযত করুন, আমীন সুম্মা আমীন।

 

وآخر دعوانا أن الحمد للہ رب العالمین!

 

٭٭٭٭٭

پی ڈی ایف
PDF (903 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৯০৩ কিলোবাইট]
https://archive.org/download/bangladesh-ashajagania-banner/Bangladesh%20Ashajagania.pdf


https://workdrive.zohoexternal.com/file/uanz1ec7565bde2b74b11aad10e36559d67bd


https://share.internxt.com/d/d/sh/file/0c63f562-5429-4283-b71c-17bd69f25c7f/4d05f23110384408a08a0271e89f1ee8715b443be43046a1d5766b8c7618d9df


https://mega.nz/file/yIhHkBCa#JoW3hUorPSQEgur61WnfdcTfXawqAh4Ih5fUXo5l0DM


https://www.mediafire.com/file/y51ughc8y9tfwhi/Bangladesh_Ashajagania.pdf/file

ورڈ
Word (616 KB)
ওয়ার্ড [৬১৬ কিলোবাইট]
https://archive.org/download/bangladesh-ashajagania-banner/Bangladesh%20Ashajagania.docx


https://workdrive.zohoexternal.com/file/uanz15e67e3ac30d9454ebfedc3e6edda1d4d


https://share.internxt.com/d/d/sh/file/2a850423-f0ca-4109-97d6-081944a211c6/62cf35772ac5455b620bff351283e0cde568b1c2dd4a959f081b2c0263c657a5


https://mega.nz/file/bEoCVAbR#x0KCpFzM1gHEDpffSv8SYQqGzJDNbjeIPJv8lM4_LGk


https://www.mediafire.com/file/e02b4i0ymbj0trx/Bangladesh_Ashajagania.docx/file

غلاف - ١
book cover [544 KB]
বুক কভার ডাউনলোড করুন [৫৪৪ কিলোবাইট]
https://archive.org/download/bangladesh-ashajagania-banner/Bangladesh%20Ashajagania.jpg


https://workdrive.zohoexternal.com/file/uanz177ec89fd0c094ec0aaa4405e56a1821b


https://share.internxt.com/d/d/sh/file/0c4de1a1-5dd2-4592-a9a9-fea35872865b/3ea0a47dd9d68d1f9d6a7aef08353d6634c0c7ac9b6deba14988aa405ad61b2d


https://mega.nz/file/aYQQEbIZ#3HXsa57DscVgl76Ue06IxgXcKNsCKyApn1FTdYX2CAU


https://www.mediafire.com/view/zys89xp5pt7py0s/Bangladesh_Ashajagania.jpg/file


غلاف - ٢
Banner [1.6 MB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.৬ মেগাবাইট]
https://archive.org/download/bangladesh-ashajagania-banner/Bangladesh-Ashajagania-banner.jpg


https://workdrive.zohoexternal.com/file/uanz1d3d39d97855848499375ff332b6a305b


https://share.internxt.com/d/d/sh/file/39630934-4d08-472c-90c5-d32041f14741/59f9c4ae282474c1581b23b9bcb9f9626d385fd1baae8b5b07f34d309bcc4261


https://mega.nz/file/KAAhRRyS#VjZJZdAa-sG5oNKP6JIdaaGPGYllq4xgE0ZNNiowWSY


https://www.mediafire.com/view/85nak0gmt8cjz5q/Bangladesh-Ashajagania-banner.jpg/file


اپنی دعاؤں میں ہمیں یاد رکھيں
اداره النصر براۓ نشر و اشاعت
القاعدہ برِّ صغیر
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent