NoteShare

Tufanul_Aqsa_QUESTIONS_AND_ANSWE

مؤسسة الحكمة
আল হিকমাহ মিডিয়া
Al-Hikmah Media

 

تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents

 

الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation

 

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled

 


نصُّ إصدار: تساؤلات وردود حول عملية طوفان الأقصى وتداعياتها
ربيع الثاني 1445هـ

 

‘তুফানুল আকসা’ অভিযান এবং তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্নোত্তর
 রবিউল আখির ১৪৪৫ হিজরী

 

QUESTIONS AND ANSWERS ON OPERATION “AL-AQSA FLOOD” AND ITS AFTERMATH

 


للشيخ خالد باطرفي حفظه الله
শায়খ খালিদ বিন উমর বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ
By Shaykh Khalid ‘Umar Bâtarfî – May Allah protect him

 

 

‘তুফানুল আকসা’ অভিযান এবং তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্নোত্তর

 

প্রকাশের তারিখ: রবিউল আখির ১৪৪৫ হিজরী

প্রকাশক: আল-মালাহিম মিডিয়া

  

মূল

শায়খ খালিদ বিন উমর বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ

  

অনুবাদ

আল-হিকমাহ অনুবাদ টিম

 

 

 

بسم الله الرحمن الرحيم

 

 

 

তুফানুল আকসাঅভিযানের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান

 

প্রশ্ন: তুফানুল আকসাঅভিযানের ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কী?

 

بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله.

আল্লাহর নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।

‘তুফানুল আকসা’ অভিযানের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান হল অভিনন্দন ও সমর্থন। আমাদের ‘কায়িদাতুল জিহাদ’ এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে এবং ‘কায়িদাতুল জিহাদ’ এর বিভিন্ন শাখার পক্ষ থেকে এই সম্পর্কে অভিনন্দন ও সমর্থনমূলক বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে।

 

সরাসরি অভিযান সম্পর্কে বলবো: এই অভিযানে আমরা সুচিন্তিত সূক্ষ্ম পরিকল্পনা এবং দক্ষতার যথার্থতা দেখতে পেয়েছি। সেই সাথে অভিযানের জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার অনুগ্রহে সময়টি ছিল সুককোটের, যেটিকে ইহুদীরা উৎসবের দিন হিসেবে পালন করে। তাই এটি একটি সময়োপযোগী ক্ষণ ছিল।

বিশেষ করে এই অভিযানের পূর্বে গোপনীয়তাও ছিল আশ্চর্য রকমের। ইহুদী শত্রু হোক, আমেরিকান হোক, অন্যরা হোক, এমনকি মুসলিমদেরকে পর্যন্ত এই গোপনীয়তা বিস্মিত করে তুলেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার দয়ায় এ গোপনীয়তা অপারেশনের অবিশ্বাস্য সাফল্য লাভের পিছনে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে।

এছাড়াও এই অপারেশনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো - আক্রমণের বৈচিত্র্য। স্থল, নৌ ও আকাশ - সব পথেই আক্রমণ হয়েছিল। অনেক অস্ত্র এই অপারেশনে ব্যবহৃত হয়েছে- যেমন আর্টিলারি ও রকেট। আক্রমণের এই সমস্ত বৈচিত্র্যের কারণে শত্রু উদ্ভ্রান্ত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তারা ব্যর্থ হয়ে যায়। সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার দিক থেকে ইহুদীরা কেলেঙ্কারির মুখে পড়ে। ইহুদী সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা সকলের কাছে প্রকাশিত হয়ে যায়। অথচ তারা দাবি করতো, তাদেরকে কেউই পরাজিত করতে পারবে না।

বাস্তবতা হলো: তাদেরকে এমন কতক লোক পরাজিত করেছে, যাদেরকে আমরা সত্যনিষ্ঠ মনে করি। এই মহান ব্যক্তিরা শত্রু সেনাবাহিনী এবং এদের মত আরও অন্যান্য সেনাবাহিনীর ব্যাপারে বহু মানুষের পূর্বের ধারণা ভেঙে দিয়েছে। সবই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দয়ায় সম্ভবপর হয়েছে।

 

তুফানুল আকসাঅভিযানের প্রভাব

শত্রুসেনাদের এত দ্রুত পতন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অনুগ্রহে খোদ তাদের উপর এবং মুসলিম উম্মাহর উপর বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করেছে। মুসলিম উম্মাহর উপর প্রভাব দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: এই অভিযানের দ্বারা মুসলিম উম্মাহর মাঝে চেতনা জাগ্রত হয়েছে। ঘটনার আকস্মিকতায় সকলেই বিস্মিত হয়ে পড়েছে। আল্লাহর অপার অনুগ্রহে এই হামলা সকলের জীবনে প্রশান্তি নামিয়ে এনেছে। কেউই এতে দুঃখিত হয়নি অথবা বলা যায়: এই অপারেশনের কারণে সকলেই আনন্দ অনুভব করেছে।

আল্লাহ তায়ালার কাছে আমরা প্রার্থনা করি, যারা এই অপারেশন পরিচালনা করেছেন, আল্লাহ হাশরের ময়দানে দাঁড়িপাল্লায় এই আমলকে সৎকর্ম ও নেকি হিসেবে যুক্ত করে দিন। এই অভিযান বর্তমান প্রজন্ম এবং পরবর্তী বহু প্রজন্মের জন্য আলোর মিনার হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের পরে বহু প্রজন্ম এ অপারেশন সম্পর্কে আলোচনা করবে।  

শুধু তাই নয়; বরং অচিরেই আমরা আমাদের সন্তান-সন্ততি এবং নাতি-নাতনিদের কাছে আল্লাহর অনুগ্রহে এই অভিযানের ঘটনা বর্ণনা করবো। এই ঘটনা এই উম্মাহর জন্য চেতনার মশাল হবে। এই অভিযান আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহে এতটাই সফল যে, বহু সেনাবাহিনী; ধোঁকাবাজ সৈন্যবাহিনী, তাগুতের সৈন্যবাহিনী— যারা অস্ত্র, সরঞ্জাম এবং প্রাচুর্যে দেশ বোঝাই করে রাখে, তারাও এমন একটি বরকমতময় অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম হয়নি। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি- এই অভিযান পরিচালনাকারীদের নেকীর পাল্লায় যেন এই কাজ শামিল হয়ে যায়। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; সর্বাবস্থায়— সর্বক্ষণে।

 

ইহুদীদের প্রতিক্রিয়া ও পাল্টা আক্রমণের ব্যাপারে মতামত

 

প্রশ্ন: ইহুদীদের প্রতিক্রিয়া ও পাল্টা আক্রমণের ব্যাপারে আপনাদের মতামত কী?

 

ইহুদীদের প্রতিক্রিয়া: তাদের সাথে যখনই এমন হয়, বরকতময় হামলা যখন তাদের উপর পরিচালিত হয়, তখনই চিৎকার ও হাহাকার করেই তারা প্রতিক্রিয়া দেখায়। ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্বেষ ও ক্ষোভ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কারণ তারা এমন কাজ দেখে বিস্মিত হয়, যা তাদের কল্পনার অতীত।

তারা মনে করেছিল, মুসলিম জাতি মরে গিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার অনুগ্রহে এই ঘটনা তাদের জন্য ছিল চপেটাঘাত। এই চপেটাঘাতে তাদের চেতনা ফিরে আসা মাত্রই সামনে তাকিয়ে দেখে কিছুই নেই। তাই আল্লাহর শত্রুরা অসহায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের উপর তাদের ক্রোধ ঢেলে দেয়। এটা তাদের যন্ত্রণার তীব্রতার কারণেই। যেমন বলা হয়: ব্যথা যত তীব্র, চিৎকার তত বড়।

আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহ ও দয়ায় এই অপারেশনে তারা যে বেদনা ভোগ করছে, ধৈর্যশীল গাজার অধিবাসীদের উপর সে বেদনারই প্রতিক্রিয়া তারা দেখাচ্ছে। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি- যেন তিনি গাজাবাসীকে সবর, ধৈর্য ও সান্ত্বনা দান করেন। শত্রুরা যা করছে, তা তাদের কাপুরুষতা ছাড়া আর কিছুই নয়। মুজাহিদিন তাদের বিরুদ্ধে যা কিছু করছেন, সেগুলোর কারণে দিন দিন তাদের হীনতা ও নীচতাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিন দিন নিরস্ত্র মুসলিমদের সঙ্গে কৃত অপরাধের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।

যুদ্ধের সময় তারা কোথায়?! কোথায় তারা?! আমরা তাদেরকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি। আমরা মুজাহিদদের রিলিজগুলোতে তাদেরকে দেখেছি, তারা কীভাবে বাথরুমে লুকিয়ে ছিল। তারা যা দেখেছিল, তাতে আতঙ্ক ও বিস্ময় নিয়ে চিৎকার করে কাঁদছিল। পরিস্থিতির মুখে পড়ে, ঘটনার আকস্মিকতায় কোনো দিকে না তাকিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো। আমরা তাদেরকে দলে দলে এবং একাকী অবস্থায় মুজাহিদদের অগ্রযাত্রা থেকে পলায়ন করতে দেখেছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের রব আল্লাহর জন্য।

 

শত্রুর প্রতিক্রিয়া কি অপ্রত্যাশিত ছিল?

এত বড় কাজের কেমন প্রতিক্রিয়া তারা দেখাবে, সেটা ধারণার বাইরে ছিল না। তারা এখন যা কিছু করছে সেগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের কার্যকলাপের মতই। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম খাইবার অভিযান পরিচালনা করেন, তখন তারা কি করেছিল? এক দুর্গ থেকে আরেক দুর্গে! তারা এক দুর্গ থেকে আরেক দুর্গে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল! এভাবেই তাদের সকল দুর্গ পবিত্র হয়ে যায়। সবই আল্লাহর ইচ্ছায়।  

ইনশা আল্লাহ, অচিরেই এমন দিন আসবে, যেদিন তারা পালাবারও সুযোগ পাবে না। তখন মুসলিম উম্মাহ প্রতিটি দরজা, প্রতিটি অলিগলি দিয়ে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। সেদিন আসলেই তারা দিশেহারা হয়ে যাবে। তারা মনে করছে, এটা অনেক দূরে। তারা এটাকে দূরের মনে করলেও, আমরা এটাকে খুব কাছে দেখতে পাচ্ছি। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আমরা প্রার্থনা করি- তিনি যেন এই বিষয়ে নিজের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেন। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এটাকে খুব নিকটেই দেখতে পাচ্ছি।

একইভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহীহ হাদীসে আমাদেরকে জানিয়েছেন:

"تقاتلون اليهود حتى ينطق الحجر والشجر، فيقول: يا مسلم يا عبد الله هذا يهودي خلفي تعال فاقتله. إلا الغرقد فإنه من شجر يهود."

“তোমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে এমনকি পাথর ও বৃক্ষ কথা বলতে শুরু করবে। তারা বলবে: হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা! এই দেখো আমার পেছনে একটা ইহুদী। এসো তাকে হত্যা করো— শুধু গারকাদ বৃক্ষ ছাড়া, কারণ এটা ইহুদীদের বৃক্ষ।[1]

 

আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান

 

প্রশ্ন: আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থানকে আপনারা কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

মুসলিমদের যেকোনো ইস্যুতে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান আমাদের সকলেরই জানা আছে। বিশেষ করে ফিলিস্তীন এবং গাজা ভূখণ্ডের ব্যাপারে তাদের অবস্থান আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সর্বদাই তারা নিপীড়িতের বিরুদ্ধে জল্লাদের পাশে দাঁড়ায়। বছরের পর বছর আমরা এমনটাই দেখে আসছি।

এই কাফের গোষ্ঠীর অবস্থান নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। এর দ্বারাই বোঝা যায়, তাদের মিত্র ইহুদী জায়নবাদী শক্তি ফিলিস্তীনে কতটা দুর্বল ও হীন! এই অবস্থানের ব্যাপারে এবং এই প্রেক্ষাপটে আমরা গোটা বিশ্বের সকল ফ্রন্টের মুসলিম উম্মাহকে ইহুদী ও ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে ঐ লড়াইয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যার ছক এঁকেছেন শায়খ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ। তিনি কয়েকটি ইসলামিক সংগঠন, জিহাদী দল এবং মুসলিমদের উলামায়ে কেরামের ফতোয়া ও সমর্থন নিয়ে এই বৈশ্বিক ধারা চালু করেছেন।

এর কারণ হলো: আমরা, আমাদের মত সকলেই; সেই সাথে শায়খ নিজে, জিহাদী অঙ্গনের শায়খগণ, উম্মাহর উলামায়ে কেরাম যারা তাদের সঙ্গে এই লড়াইয়ের ব্যাপারে সহমত, যারা তাদেরকে এ বিষয়ে সমর্থন দান করেছেন—সকলেই ভালোভাবে জানেন যে, ইহুদী গোষ্ঠী, আমেরিকা ও কাফের পশ্চিমা বিশ্ব একই মুদ্রার দুই পিঠ।

 

শায়খ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ’র দাওয়াত

এ পর্যায়ে আমরা আমাদের মুসলিম ভাইদেরকে শায়খ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ’র দাওয়াতের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। তিনি আমেরিকানদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই হত্যা করতে উৎসাহিত করেছেন। কারণ যদি আমেরিকানদের অস্তিত্ব না থাকতো, তাহলে এই দখলদার অপহরণকারী শক্তি আমাদের অঞ্চলে এবং মুসলিমদের দেশে এত দীর্ঘ বছর যাবৎ অবস্থান করতে পারতো না।

তাইতো শায়খ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ বলেছেন: “যেখানেই হোক, আপনারা আমেরিকানদেরকে হত্যা করুন। তাদেরকে হত্যা করার ব্যাপারে কোনো ফতোয়া খোঁজ করবেন না। কিংবা কাউকে জিজ্ঞাসাও করবেন না। আল্লাহর বরকতে এগিয়ে যান এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের সঙ্গদানের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা বাস্তবায়িত হবার অপেক্ষা করুন।”

 

মুসলিমদের প্রতি আহ্বান

আমরা পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম সর্বস্থানের মুসলিম ভাইদেরকে, মুসলিম দেশ কিংবা অমুসলিম দেশ— যেকোনো জায়গায় বসবাসকারী মুসলিমদেরকে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন কোনো ইহুদী, কোনো আমেরিকান কিংবা কোনো ব্রিটিশকে হত্যা না করে ছেড়ে না দেন। কারণ আল্লাহর কসম! ‘তুফানুল আকসা’র মত বরকতময় অপারেশন ছাড়া তারা কিছুতেই ভীত-সন্ত্রস্ত হবে না।

 

হে আল্লাহর বান্দাগণ!

আপনারা জেনে রাখুন, এ জাতীয় কাজের মধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার নৈকট্য রয়েছে। হে আল্লাহর বান্দা! আপনি এই অপরাধীদেরকে হত্যার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট্য অর্জন করবেন। তাদের রক্তের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকটে পৌঁছুবেন। ইনশা আল্লাহ, খুব অচিরেই এমন একটা সময় আসবে, যখন আমরা যেকোনো জায়গায় আমেরিকাকে আঘাত করলেও এমন কাউকে পাবো না, যে এ কথা বলে আমাদের সমালোচনা করতে আসবে যে, আপনারা মুসলিম উম্মাহকে অসম যুদ্ধে জড়িয়ে দিয়েছেন।

কারণ সকল মানুষ অপরাধী অন্যায়কারী মার্কিন শত্রুর অহঙ্কার ও দম্ভ দেখতে পাচ্ছে। কেমন করে তারা নিরপরাধ বেসামরিক নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যাকে সমর্থন করেছে - এটা সকলেই জানে। তাদের এই অন্যায় সকলের সামনে রয়েছে। তাই এই শত্রুপক্ষকে প্রকম্পিত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখের অপারেশন, তার পূর্ববর্তী এ জাতীয় অপারেশন এবং তার পরবর্তী অন্যান্য অপারেশন। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আমরা প্রার্থনা করি- যেন তিনি আমাদেরকে কাফেরদের নিজ ভূখণ্ডে অথবা অন্য যেকোনো স্থানে আঘাত করার তাওফীক দান করেন! নিশ্চয়ই তিনি সবকিছুর অভিভাবক এবং আমাদের প্রার্থনা পূরণে সক্ষম।

 

ইরান এবং তার অনুসারীদের অবস্থানের বিষয়ে মতামত

 

প্রশ্ন: ইরান এবং তার অনুসারীদের অবস্থানের ব্যাপারে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

ইরান এবং তার অনুসারীদের অবস্থানের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো: সাম্প্রতিক এই অপারেশন থেকে আমরা বুঝতে পারি, রাফেজী ইরান এ সম্পর্কে কিছুই জানতো না। শুধু তাই নয়, আমরা আরও বুঝতে পারি, এ জাতীয় অপারেশনের কথা তারা কল্পনাও করতে পারেনি।  

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার অনুগ্রহে অপারেশনের পর প্রথম বিবৃতিতেই তারা সুস্পষ্টভাবে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে। ইরানের রাফেজীদের সুস্পষ্ট বিবৃতি এই ছিল: “যদি ইরান হামলা করতো তাহলে রকেটগুলো লেবানন, ইরান, ইরাক অথবা ইয়েমেন থেকে নিক্ষেপ করা হতো। যদি ইরান হামলা করতো, তাহলে অচিরেই গোলান থেকে সিরিয়ান বাহিনী তৎপর হয়ে উঠতো।” তাদের সুস্পষ্ট বিবৃতিতে এ জাতীয় কথাগুলোই তারা বলেছে।

এ কথা থেকে আমাদের প্রমাণ মেলে, ফিলিস্তীন নিয়ে ইরানের কোনো চিন্তা নেই। ইসলামী দলগুলোর ব্যাপারে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। ফিলিস্তীন অথবা অন্য কোনো ভূখণ্ডের মুসলিমদের অবস্থা, বিশেষ করে আহলে সুন্নাহ তথা সুন্নীদের ব্যাপারে তাদের কোনো ভাবনা নেই। তাদের ভাবনা শুধু নিজেদেরকে নিয়ে।

এই বিষয়ে যদি তুলনা করা হয় অর্থাৎ আল্লাহর শপথ করে যদি তুলনা করি ইরানের ভূমি রক্ষা করা কি বাইতুল মুকাদ্দাস অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ? (তাহলে উত্তর হবে— হ্যাঁ; ইরানের দৃষ্টিতে অন্তত তাই)। ইরান কি আল-আকসা অপেক্ষা অধিক মূল্যবান?

ইরান যদি হামলার শিকার হতো, তাহলে তার পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণকারীরা সকলেই তৎপর হয়ে উঠতো এবং মোকাবেলা করতে আরম্ভ করতো।

আজ আল-আকসায় ইহুদীরা অপবিত্রতা ঘটাচ্ছে। ইহুদীদের কারাগারগুলোতে মুসলিম বন্দীদেরকে নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। আল-আকসা প্রাঙ্গনে মুসলিম নারীদেরকে অসম্মান ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। গাজায় গণহত্যা চালানো হচ্ছে। এখানে নারী, শিশু কিংবা বৃদ্ধের সম্মান ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। এগুলোর কোনো কিছু নিয়েই ইরানের মাথা ব্যথা নেই! এগুলো নিয়ে রাফেজীদের কোনো ভাবনা নেই!! শুধু ইরান আঘাতপ্রাপ্ত হলেই তার সকল অনুসারীরা সর্বতোভাবে জেগে উঠতো।

এই বিষয়ে আমি একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। সেই ঘটনা থেকে আলোচ্য ইস্যুতে ইরানের আচরণের বাস্তবতা আমাদের কাছে ফুটে উঠবে। আমরা বুঝতে পারবো, মুসলিমদের ইস্যুতে তারা কতটা সোচ্চার! আমাকে প্রিয় আবু হাফস আরব রহিমাহুল্লাহ ঘটনাটি বলেছেন।

তিনি যখন ইরানের কারাগারে ছিলেন, তখন জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য এক ব্যক্তি এসে তাকে বললো: “তোমরা কেমন করে এই কাজটা করলে?” অর্থাৎ সে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে বরকতময় হামলার কথা বুঝিয়েছে। “তোমরা কেমন করে এ কাজ করে তোমাদের রাষ্ট্রের পতনের কারণ হলে?!” অর্থাৎ ২০০১ সালে তদানীন্তন ইমারতে ইসলামিয়া তালেবানের রাষ্ট্রের কথা বোঝানো হয়েছে।

তখন ভাই আবু হাফস তাকে জবাবে বললেন: “আমরা কিছু মূলনীতির অনুসারী। আমাদের আদর্শ রক্ষা ও বাস্তবায়নের জন্য আমরা সব কিছু উৎসর্গ করে দিতে প্রস্তুত।” তখন ইরানি জিজ্ঞাসাবাদকারী তাকে বললো: “এটাই তোমাদের আর আমাদের মধ্যকার পার্থক্য। তোমরা তোমাদের আদর্শের জন্য সবকিছু উৎসর্গ করে দাও। আর আমাদের অবস্থা হল: ইরান তার স্বার্থ রক্ষার জন্য শয়তানের সঙ্গেও জোট গঠন করতে প্রস্তুত।”

এই হল ইসলামিক ইস্যুগুলোতে ইরানের আচরণের প্রকৃত চেহারা। ইরানের অনুসারীরা এই ইস্যুতে যা কিছু বলছে ও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সবই তাদের স্বার্থ রক্ষার বিনিয়োগ। আমরা নিজ চোখে দেখেছি, একেকজন উঠে মানুষকে অসংলগ্ন কথা-বার্তা শোনাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে তাদের কার্যকরী পদক্ষেপ আমরা কিছুই দেখিনি।

দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহ যা করছে, তা ফিলিস্তীনের বর্তমান বিপর্যয় মোকাবেলার মতো পর্যাপ্ত নয়। এছাড়াও হিজবুল্লাহ নামক দলটির যতটা শক্তি-সামর্থ্য আছে, তাদের বর্তমান কার্যকলাপ সে সবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। গাজায় সম্মিলিতভাবে সকল সশস্ত্র দলের শক্তি সামর্থ্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী শক্তি রয়েছে হিজবুল্লাহর। এই দলটা এবং ইরানের অনুসারী অন্যান্য দলগুলো ওই মাত্রায় প্রতিরোধ তৈরি করছে না, যেমনটা তারা দাবি করে যাচ্ছে। কয়েক দশক যাবৎ তারা কেবল তাদের মিথ্যা প্রতিরক্ষার কাহিনী শুনিয়ে আসছে। এটা এক দিক।

 

ইরানের আরেক চেহারা

অন্যদিক হলো: ফিলিস্তীনের চলমান পরিস্থিতিতে সময়ের দাবি লক্ষ্য রেখে তারা যা করছে, আর সিরিয়াতে সিরিয়ান মুসলিম জনসাধারণের বিরুদ্ধে এক দশকের অধিককাল যাবৎ নুসাইরি আসাদ সরকারকে যে সাহায্য-সহায়তা ও সমর্থন দিয়ে আসছে, উভয়টার মাঝে কোনো তুলনাই হয় না! 

রাশিয়ার সঙ্গে মিলে সুন্নীদের বিরুদ্ধে তারা ইরান, ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন এবং অন্য জায়গায় যেসকল লজ্জাজনক কর্মকাণ্ড করেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এটাই হচ্ছে তাদের পরিচয়। আসলে তারা মুসলিম জনসাধারণের সামনে তাদের অনুসারীদের মনকে বোকা বানাচ্ছে। তারা মনে করে, এগুলো করে তারা কিছু সময়ের জন্য মানুষকে ধোঁকা দিতে থাকবে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় যখনই এই ধরনের অভিযান হয়, তখনই তাদের মুখোশ খসে পড়ে। তাদের প্রকৃত চেহারা সবার সামনে চলে আসে। এই চেহারা তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য লুকিয়ে রাখতে পারবে না।

 

ফিলিস্তিনের ভাই বোনদের প্রতি বার্তা

 

প্রশ্ন: গাজা ও ফিলিস্তীনে আমাদের ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে আপনারা কী বলবেন?

আমরা গাজা এবং সাধারণভাবে গোটা ফিলিস্তীনে আমাদের ভাই-বোনদেরকে বলবো: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা যেন আপনাদের ব্যাপারেই কিছু আয়াত নাযিল করেছেন। সেই আয়াতগুলো আমি তিলাওয়াত করবো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা বলেন:

قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُمْ سُنَنٌ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ ﴿١٣٧﴾‏ هَٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِينَ ﴿١٣٨﴾‏ وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿١٣٩﴾‏ إِن يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهُ ۚ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَاءَ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ ﴿١٤٠﴾‏ وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ ﴿١٤١﴾

অর্থ:“তোমাদের আগে অতীত হয়েছে অনেক ধরনের জীবনাচরণ। তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের পরিণতি কি হয়েছে। এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা। আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশবাণী। আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে। তোমরা যদি আহত হয়ে থাকো, তবে তারাও তো তেমনি আহত হয়েছে। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালোবাসেন না। আর এ কারণে আল্লাহ ঈমানদারদেরকে পাক-সাফ করতে চান এবং কাফেরদেরকে ধ্বংস করে দিতে চান।” [সূরা আলে-ইমরান ০৩: ১৩৭-১৪১]

হে গাজাবাসী! হে ফিলিস্তীনবাসী!! এই আয়াতগুলো যেন আপনাদের কথাই বলছে!

পৃথিবীর যে কোনো জায়গার হে ঈমানদার ভাইয়েরা! এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম থেকে শুরু করে সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়কে উহুদের পরাজয়ে সান্ত্বনা দান করেছেন। আজও পর্যন্ত এবং ভবিষ্যতেও এই আয়াতগুলো আমাদের জন্য ঐশী সান্ত্বনা হয়ে থাকবে।

 

উহুদের প্রাঙ্গনে আবু সুফিয়ানের সাথে সাহাবীদের কথোপকথন থেকে শিক্ষা

একইভাবে আমাদের ও আপনাদেরকে সান্ত্বনা দেয় সেই সংলাপ; যা আবু সুফিয়ান ইবনে হারব এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা রাযিয়াল্লাহু আনহুমের মধ্যে যুদ্ধ শেষে হয়েছে। উহুদ যুদ্ধের সময় আবু সুফিয়ান মুশরিক ছিলেন। যুদ্ধ শেষে সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুমরা উহুদের পরাজয়ে কাতর ছিলেন। এদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাথা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, তাঁর দাঁত মুবারক ভেঙে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আবু সুফিয়ান যুদ্ধের পর বিজয় ধ্বনি দিয়ে বলে ওঠে: ‘জয় হোবল!’

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘তোমরা কি তাকে জবাব দেবে না’? তখন হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন: ‘আমরা কি বলবো’? নবীজি বললেন: তোমরা বলো— আল্লাহ সর্ব মহান, সর্বশ্রেষ্ঠ!

তখন সাহাবা রাযিয়াল্লাহু আনহুম বললেন— আল্লাহ সর্ব মহান, সর্বশ্রেষ্ঠ। তখন আবু সুফিয়ান বললেন: ‘আমাদের উজ্জা দেবী রয়েছে, তোমাদের নেই কোনো উজ্জা!’ তখন হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর কন্ঠে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম তাকে জবাব দিলেন: ‘আল্লাহ আমাদের মাওলা ও অভিভাবক; তোমাদের নেই কোনো মাওলা’।

অতঃপর আবু সুফিয়ান বললেন: ‘আজকের দিন বদরের দিনের প্রতিশোধ। আর যুদ্ধ তো উভয় পক্ষের জন্যই সমান সমান’। তখন সাহাবা রাযিয়াল্লাহু আনহুম তাকে জবাব দিলেন: “কখনোই সমান সমান নয়। আমাদের নিহত ব্যক্তিরা জান্নাতে, আর তোমাদের নিহত ব্যক্তিরা জাহান্নামে।”

 

তাই হে গাজার অধিবাসীরা!

যারা আপনাদের সামনে বলবে: ইহুদীবাদের জয় হোক; আপনারা বলবেন: আল্লাহ সর্ব মহান, সর্বশ্রেষ্ঠ। আপনারা আল্লাহর বান্দা। আল্লাহ কখনোই আপনাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না।

কেউ যদি আপনাদেরকে বলে: তোমাদের হাজার হাজার শত শত নিহত হয়েছে; আপনারা তাকে বলুন: আমাদের নিহত ব্যক্তিরা জান্নাতে আর তাদের নিহত ব্যক্তিরা জাহান্নামে। কেউ যদি আপনাদেরকে বলে তার উজ্জা রয়েছে, আপনাদের কোনো উজ্জা নেই; আপনারা তাকে বলে দিন: আল্লাহ আমাদের মাওলা, তোমাদের কোনো মাওলা নেই!

 

আবু সুফিয়ান ও হেরাক্লিয়াসের কথোপকথন থেকে শিক্ষা

একইভাবে আবু সুফিয়ান ইবনে হারব এবং রোম সাম্রাজ্যের কায়সার   হেরাক্লিয়াসের মাঝে যে সংলাপ হয়েছে, সেখানেও আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তাদের দীর্ঘ সংলাপের একপর্যায়ে কায়সার আবু সুফিয়ানকে বললেন: “তোমরা কি তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করেছো?”

আবু সুফিয়ান বললেন: “জি হ্যাঁ, আমরা লড়াই করেছি।” সম্রাট বললেন: “তোমাদের লড়াই তাঁর বিরুদ্ধে কেমন ছিল?” আবু সুফিয়ান বললেন: “সমান সমান; কখনও তাঁর জয়, কখনও আমাদের জয়।”

এরপর সম্রাট তার প্রশ্নের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন: “তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি যে, তোমরা তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করেছো কিনা? তুমি দাবি করলে যে, তোমরা লড়াই করেছ। আমি জিজ্ঞেস করেছি, তাঁর বিরুদ্ধে তোমাদের লড়াই কেমন ছিল? তুমি বললে: সমান সমান; কখনও তাঁর জয়, কখনও তোমাদের জয়। সম্রাট বলেন: এভাবেই নবীদেরকে পরীক্ষা করা হয়। এরপর সবশেষে শুভ পরিণাম তাঁদেরই হয়।”

 

হে গাজার অধিবাসীরা!

আজ আপনারা পরীক্ষায় পতিত হয়েছেন। আপনারা ছাড়াও আফগানিস্তানে, ইরাকে, অন্য অঞ্চলে মুসলিমগণ পরীক্ষায় নিপতিত হয়েছে। ইনশা আল্লাহ, অচিরেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার হুকুমে সর্বশেষে শুভ পরিণাম আমাদেরই হবে।

 

মুসলিম শাসকদের অবস্থান

 

প্রশ্ন: মুসলিমদের শাসকদের অবস্থান নিয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?

মুসলিমদের শাসকদের অবস্থান সম্পর্কে বলবো: আমাদের আলোচ্য অপারেশন জনসাধারণের সামনে তাদেরকে আরও বেশি লজ্জার মুখে ফেলে দিয়েছে। তাদের মুখোশ খসে পড়েছে। মুসলিমদের যেকোনো ইস্যুতে তাদের যে অবস্থানের সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি, তাহলো: তারা হামলাকারীদেরকে অভিযুক্ত করে নিন্দা ও ধিক্কার জানায়। তারপরে তারা কিছু ফাঁপা ও অন্তঃসার শূন্য শব্দে এবং তাদের সমর্থকদের করতালির মাধ্যমে সবার চোখে ছাই দিয়ে দেয়, যেন মানুষ প্রশংসা মুখর হয়ে ওঠে। প্রতিটি ইস্যুতে তাদের অতীতের ও বর্তমানের অবস্থানগুলোর মধ্য দিয়েই তাদের মিথ্যা দাবি আমাদের সামনে ধরা পড়ে।

 

এরদোগানের মুখোশ

উদাহরণস্বরূপ, প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বক্তব্য। তিনি বলেছেন: গাজায় গণহত্যা হচ্ছে, সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে ইত্যাদি। এরদোগানের এ ধরনের অন্যান্য কথা ও বিবৃতির পর আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই যে, দখলদার সত্তার সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্কের পরিমাণ কতটুকু আপনাদের? এই ঘটনা তুর্কি সরকার ও ইহুদীদের মাঝে স্থাপিত বন্ধনের মাঝে কোন প্রভাব ফেলেছে কি? তিনি যদি সৎ হন, তবে তার প্রথম কাজ হবে এই বন্ধনগুলো ছিন্ন করা।

এমনিভাবে আমরা তাকে তুরস্কের ইনসিরলিক বিমান ঘাঁটি (Incirlik Air Base) সম্পর্কে প্রশ্ন অথবা জিজ্ঞাসা করতে পারি, যেখান থেকে আমেরিকান বিমান ফ্লাই করে। এর আগে তুর্কি সেনাবাহিনী আফগানিস্তানে আগ্রাসনে ন্যাটোতে অংশ নিয়েছিল। আজও তারা সোমালিয়ায় আমাদের মুজাহিদ্বীন ভাইদের সাথে যুদ্ধ ও লড়াইয়ে আমেরিকার সাথে অংশ নিচ্ছে। তারা যেই বিবৃতিগুলি দিয়েছে, বাস্তবে তার কোনো সত্যতা নেই। তারা দখলকারী সত্তার দিকে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেয় না— অথচ এরদোগানকে সেরা শাসকদের একজন বলে বিবেচনা করা হয়।

 

অন্যান্য মুসলিম শাসকদের অবস্থা

এরদোগান ছাড়া আমিরাত, সৌদি আরব অথবা সাধারণভাবে উপসাগরীয় অঞ্চলের শাসক, মিশর, জর্ডান এবং অন্য অঞ্চলের শাসকদের সম্পর্কে বলার কিছু নেই। এইতো মিশর ও জর্ডান মুসলিমদের সামনে তাদের সীমান্ত ফটক বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ ফিলিস্তীনে তাদের ভাইদের সাহায্যের জন্য তা খুলে দেয়া উচিত ছিল। তাই এটা এখন স্পষ্ট বিষয়। এটা কারও কাছে অস্পষ্ট নয়। তারা এই প্রথমবারই এমন করছে তা নয়। আমরা সব সময়ই তাদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুপক্ষের পাশে দাঁড়াতে দেখি।

শত্রুপক্ষের বিমানগুলো এমনকি শত্রু সেনাবাহিনীরাও আমাদের মুসলিম দেশগুলোতে অবস্থিত সেনাঘাঁটি থেকে বের হয়ে আসে। যেমন কাতারের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটি (Al Udeid Air Base) এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল-ধাফরা বিমান ঘাঁটি (Al Dhafra Air Base)। এগুলোর কথা আমাদের সামনে এসেছে, এগুলো আমরা নিজেরা দেখেছি অথবা গণমাধ্যমে এগুলোর সংবাদ এসেছে। পর্দার আড়ালে যা রয়েছে তা তো আরও ভয়ানক। কেউ যদি এ বিষয়ের গভীরে যেতে চায়, তাহলে সে পুরোপুরি হতবাক হয়ে যাবে।

আমরা চলমান ইস্যুতে ইহুদীদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে এই শাসকদের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে তাদের উপর্যুক্ত কার্যকলাপের তুলনা করে দেখতে পারি। দেখুন, এই শাসকরা তাদের জনগণকে নিরস্ত্র করেছে— এমনকি যদি জনসাধারণ ফিলিস্তীনে তাদের ভাইদের সাহায্যে নিরস্ত্রভাবে এগিয়ে আসতে চায়, তাহলেও শাসকবর্গ এর অনুমতি দেবে না। অথচ ইহুদী এবং ইহুদী শাসকদের অবস্থা মিলিয়ে দেখুন। এখন দখলদার শক্তি, তাদের নেতৃবৃন্দ ও রাজনীতিবিদদের মাঝে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই ও প্রতিরোধের জন্য ইহুদী সকল জনগণকে সশস্ত্র করার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ইতামার বেন গেভির (Itamar Ben-Gvir) এবং তার মত অন্য উগ্র কট্টরপন্থি ইসরাঈলি নেতাদের ব্যাপারে একথা প্রযোজ্য।

 

বর্তমান শাসকেরা মুসলিমদের সমস্যা ও সঙ্কটগুলোর অবিচ্ছেদ্য অংশ

 

প্রিয় পাঠক!

এখন তাহলে শত্রুপক্ষের শাসকবর্গ এবং মুসলিমদের বিশ্বাসঘাতক শাসকদের মাঝে তুলনা করে দেখুন। মুসলিমদের শাসকেরা প্রথমে আল্লাহর শরীয়ত পরিবর্তন করেছে, কাফেরদের তাবেদারি করেছে, এরপর কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফেরদের পথ তৈরি করে দিয়েছে। জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। এমনকি কোনো দাতব্য সংস্থা কিংবা প্রতিষ্ঠানকেও তারা ছাড় দেয়নি বরং সেগুলোকেও প্রতিরোধ করেছে।

এই শাসকেরা নিকৃষ্ট জিনিসের বিস্তার ঘটিয়েছে, আর উৎকৃষ্ট জিনিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এমন কোনো জঘন্য অপরাধ নেই, যাতে তারা লিপ্ত হয়নি। কেমন করে আশা করা যায়, তাদের মত লোকেরা ফিলিস্তীনকে সাহায্য করবে?! কেমন করে আশা করা যায়, তারা ফিলিস্তীন ও গাজার ভাই-বোনদেরকে সাহায্য করার জন্য তাদের দেশের জনগণকে অনুমতি দেবে?!

তারাও বর্তমান সময়ে মুসলিমদের সমস্যা ও সঙ্কটগুলোর অবিচ্ছেদ্য অংশ। সব সময় সর্বত্র তাদের অবস্থান অভিন্ন। আমরা চীনের উইঘুরের মুসলিমদেরকে দেখতে পাই, যারা এই শাসকদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পায়নি। আমরা ভারতের মুসলিমদেরকেও দেখতে পাই, যারা এদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পায়নি। তাই আল্লাহ তায়ালার কাছে আমরা প্রার্থনা করি- যেন দ্রুত তাদের পতন ঘটে এবং মুসলিমদেরকে যেন আল্লাহ নতুন নেতৃত্ব দান করেন। শুধু তাই নয় — নবুয়তের আদলে এমন খেলাফত ব্যবস্থা যেন তিনি দান করেন, যে ব্যবস্থায় আল্লাহর আনুগত্যশীল বান্দারা সম্মানিত হবেন, আর নাফরমান ও পাপিষ্ঠরা লাঞ্ছিত হবে।

 

উলামায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে বার্তা

 

প্রশ্ন : উম্মাহর উলামায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে আপনাদের বার্তা কী?

উম্মাহর উলামায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে আমাদের বার্তা হল, আমরা তাদেরকে বলবো:  

 

হে উম্মাহর উলামায়ে কেরাম!

আপনারা নিজেদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করুন। মানুষের কাছে বর্তমান সময়ে একথা সুস্পষ্ট করুন যে, আমাদের সঙ্গে ইহুদী ক্রুসেডার শক্তির চলমান যুদ্ধের প্রকৃতি কি? আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের এই যুদ্ধের পরিচয় ও বাস্তবতা কি? আপনারা উম্মাহর সামনে শত্রুতা-মিত্রতার মূলনীতিগুলো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরুন। আবশ্যকীয়ভাবে আপনারা উম্মাহর অন্তরে ইসলাম, জিহাদ, শাহাদাত ফী সাবীলিল্লাহর ভালোবাসা গেঁথে দিন। এটা আপনাদের দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা এ দায়িত্ব পালনের জন্য আপনাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং নির্দেশ পালনের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা ইরশাদ করেছেন:

وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۖ فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ﴿١٨٧﴾‏

অর্থ: “আর আল্লাহ যখন আহলে কিতাবদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করলেন যে, তা মানুষের নিকট বর্ণনা করবে এবং গোপন করবে না, তখন তারা সে প্রতিজ্ঞাকে নিজেদের পেছনে ফেলে রাখলো আর তার কেনা-বেচা করলো সামান্য মূল্যের বিনিময়ে। সুতরাং কতই না মন্দ তাদের এ বেচা-কেনা।” [সূরা আলে-ইমরান ০৩: ১৮৭]

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন:

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِن بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ﴿١٥٩﴾‏ إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُولَٰئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ ۚ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ﴿١٦٠﴾

অর্থ: “নিশ্চয় যারা গোপন করে, আমি যেসব বিস্তারিত তথ্য এবং হেদায়াতের কথা নাযিল করেছি মানুষের জন্য কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করার পরও; সে সমস্ত লোকের প্রতিই আল্লাহর অভিসম্পাত এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারীরও। তবে যারা তওবা করে এবং বর্ণিত তথ্যাদির সংশোধন করে মানুষের কাছে তা বর্ণনা করে দেয়, সে সমস্ত লোকের তওবা আমি কবুল করি এবং আমি তওবা কবুলকারী পরম দয়ালু।” [সূরা বাকারা ০২: ১৫৯-১৬০]

 

কাজের মাধ্যমে উম্মাহকে উদ্ভুদ্ধ করুন

উম্মাহর উলামায়ে কেরামের আরও দায়িত্ব হচ্ছে:

বর্তমান সময়ে অপর মুসলিম ভাইদেরকে কথার আগে কাজের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা। নিজেরা বের হবার মাধ্যমে অন্যদেরকে উদ্বুদ্ধ করা। লড়াইয়ের ময়দানে যারা রয়েছে তাদেরকে নেতৃত্ব দান করা। প্রতিটি ইসলামী ভূখণ্ডের সীমান্তে অবস্থানকারী মুজাহিদ্বীনকে নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে মুসলিম ভাইদেরকে উৎসাহিত করা। নিজেরা সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে অপর মুসলিম ভাইদেরকে রণাঙ্গনে শরীক হওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা। এখন তাদের পতাকা বহন করে নেয়ার সময় হয়েছে। তারা এগিয়ে চলবে আর তাদের পেছনে পেছনে অন্যরা আসবে। অন্যরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে। তাইতো বলা হয়েছে: “যদি আপনি আমার ইমাম’(নেতা) হন, তাহলে আমার আমামএ (সম্মুখভাগে) থাকুন।”

 

কতক উলামায়ে কেরামের বিভ্রান্তি

আমি আসলেই আশ্চর্য বোধ করি, এত বিরাট ঘটনার ব্যাপারে কেমন করে কিছু আলেম বিভ্রান্তিতে নিপতিত হতে পারেন। যেই শাসকবৃন্দ আমাদের সমস্যা ও সঙ্কটের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যারা কখনোই আমাদের সমস্যাবলীর সমাধান হতে পারে না, যারা আল্লাহর শরীয়ত পরিবর্তন করেছে, যারা কাফেরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে, যেই শাসকেরা উৎকৃষ্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও নিকৃষ্টের বিস্তার ঘটানোর এমন কোনো পথ বাদ রাখেনি; যা তারা অবলম্বন করেনি, যারা সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত, যারা উলামায়ে কেরাম ও ইসলামের দাঈদের জুলুম করে যাচ্ছে, সেই শাসকদেরকে কেমন করে কিছু আলেম এই অনুরোধ করছেন যে, তারা যেন আমাদের সঙ্কট থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন?! তারা কেমন করে সঙ্কট মোকাবেলা করবেন যখন কিনা তারা নিজেরাই প্রধান সমস্যা ও সঙ্কট?!

তাই বর্তমান সময়ে উম্মাহর উলামায়ে কেরামের কর্তব্য হলো, এই বাস্তবতা ভালোভাবে উপলব্ধি করা। শাসকবর্গের প্রকৃত পরিচয় জেনে ও বুঝতে পেরে মুসলিমদেরকে তাদের অপসারণ এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উদ্বুদ্ধ করা। উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব মুসলিমদেরকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করা, তারা যেন নিজেদের সন্তানদেরকে এই সমস্ত শাসকের সেনাবাহিনীতে ভর্তি না করায়। কারণ এতে তারা তাগুতের সেনাবাহিনীর শামিল হয়ে যাবে নাউযুবিল্লাহ!

আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন:

إِنَّ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا كَانُوا خَاطِئِينَ﴿٨﴾

অর্থ: “নিশ্চয়ই ফেরাউন হামান এবং তাদের সেনাবাহিনী ভুলের মধ্যে ছিল।” [সূরা কাসাস ২৮: ০৮]

এদের উপর যখন শাস্তি আসবে, তখন এই সেনাবাহিনীও বাদ থাকবে না। এ কারণে মুসলিমদের বিশেষত উম্মাহর উলামায়ে কেরামের আবশ্যকীয় কর্তব্য হচ্ছে, উম্মাহর পিতাদের কাছে এ কথা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা যে, যারা এই সমস্ত তাগুতদের সেনাবাহিনীতে শামিল থাকবে, তাদের উপর শরীয়তের কী হুকুম বর্তাবে? শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের হুকুম হলো: দলগতভাবে তারা মুরতাদ বাহিনী। তারা এমন বাহিনী, যারা আল্লাহর শরীয়ত পরিবর্তনকারী শাসককে সাহায্য করে। তাই উম্মাহর পিতাদের কাছে এই বাহিনীর প্রকৃত অবস্থা ও শরীয়তের হুকুম তুলে ধরা আবশ্যক।

এই সমস্ত শাসকের অধীনতা থেকে মুসলিমরা কিভাবে মুক্তি পাবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কেমন করে বিদ্রোহ করবে— এবিষয়ে শরীয়তের হুকুম উলামায়ে কেরাম যদি মুসলিম জনসাধারণের কাছে বর্ণনা না করেন, তবে কে করবে? তাই উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে এগুলো হতে হবে। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা পূর্ববর্তী উলামায়ে কেরামের হকের উপর যথাযথ অবস্থান দেখতে পাই।

 

দুর্যোগের সময় শায়খ ইবনে তাইমিয়ার অবস্থান

তাতারীদের হামলার সময় শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ’র অবস্থান কি ছিল? তিনি কেমন করে মুসলিমদেরকে তাতারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন!

তাতারী গোষ্ঠী ছিল মুসলিমদের শাসক। যখন তারা শরীয়তে পরিবর্তন ঘটালো এবং ইয়াসিক সংবিধান দিয়ে বিচারকার্য শুরু করলো, তখন শায়খ তাইমিয়া তাদেরকে কাফের সাব্যস্ত করে ফতোয়া ঘোষণা করলেন। তিনি ছাড়াও উম্মাহর অন্য উলামায়ে কেরাম; যেমন- ইবনে কাসীর রহিমাহুল্লাহ প্রমুখ ব্যক্তিগণ কাফের হবার ফতোয়া দেন। তখন মুসলিমরা তাড়াতাড়ি শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এমনই আরও বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে।

এমনকি জালেম মুসলিম শাসকেরাও হক্কানী রব্বানী এ জাতীয় উলামায়ে কেরামের উপস্থিতিতে কখনও নিরাপদ ছিল না। ইজ ইবনে আব্দুস সালাম রহিমাহুল্লাহ ‘রাজাদের বিক্রেতা’ নামে অভিহিত ছিলেন। মিশরের শাসকরা তাকে অত্যধিক ভয় করতো। কারণ তিনি সত্য প্রকাশে নির্ভীক ছিলেন। মানুষের কাছে তিনি শরীয়তের প্রকৃত বিষয়গুলো যথাযথভাবে তুলে ধরতেন। তিনি ছিলেন মুসলিম মিল্লাতের রাহবার। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে রহম করুন এবং উম্মাহর উলামায়ে কেরাম সকলকে আপন দয়ার চাদরে আবৃত করুন।

যাই হোক, এজন্যই উলামায়ে কেরামের জন্যও অবশ্য কর্তব্য হলো, পূর্ববর্তী উলামায়ে কেরামদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা। তাঁরা হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহুকে অনুসরণ করবেন, যিনি মুরতাদদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কেমন ছিল মুরতাদদের এবং যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীদের সেই ফিতনা? হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু তখন মুসলিমদেরকে এমন এক বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন, যা হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর কাছেও অস্পষ্ট ছিল—যেই উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর মনে আল্লাহ তায়ালা এমন বিষয়ের সঞ্চার ঘটাতেন, যা পরবর্তীতে হাদীস হয়ে যেতো।

হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু যেহেতু শরীয়তের ব্যাপারে মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ছিলেন, তিনি দাঁড়িয়ে নবীজির সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুমের কাছে যাকাত প্রদান করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীদের রিদ্দা তথা মুরতাদ হবার হুকুম তুলে ধরলেন। তখন সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুমও প্রস্তুত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেন। আল্লাহর পর যদি আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু না থাকতেন, তাহলে ইসলামের অসম্পূর্ণ রূপ আমরা পেতাম। একইভাবে ইমাম আহমদ রহিমাহুল্লাহ খলকে কুরআন ফিতনার সময় কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। এমন বহু ঘটনা রয়েছে। সেসব ঘটনা উল্লেখ করলে আলোচনা অনেক বেশি দীর্ঘ হয়ে যাবে।

যাই হোক, উলামায়ে কেরামকেই এই পতাকা বহন করতে হবে। শাসকবর্গের মোকাবেলায় তাদেরই দাঁড়াতে হবে। ইহুদী খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে তাদেরই প্রথম সারিতে থাকতে হবে। আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ফতোয়া ঘোষণা করতে হবে। ইহুদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যারা আমাদের বিরোধিতা করে, সে সমস্ত শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ফতোয়াও উলামায়ে কেরামেরই ঘোষণা করতে হবে।

 

হে উলামায়ে কেরাম!

আপনারা আলোর বাতিঘর। সাধারণ মানুষ আপনাদের দ্বারা আলোকিত হন। তাই কিছুতেই আপনারা এই আলো গোপন করবেন না। আপনারা উম্মাহর কাছে প্রকৃত বাস্তবতা তুলে ধরুন। আপনারা আপনাদের ভাই ওই সমস্ত আলেমের কথা তুলে ধরুন, যারা সত্য বলার কারণে কারারুদ্ধ হয়ে আছেন। যারা আলে সৌদ, আমিরাত এবং সিসি সহ তাগুত শাসকবর্গের কারাপ্রকোষ্ঠে আবদ্ধ হয়ে আছেন। আপনারা সত্য তুলে ধরুন। সত্য এখন মৃতপ্রায়। নিজেদের জীবনের বিনিময়ে একে আপনারা জাগিয়ে তুলুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

أفضل الشهداء حمزة بن عبد المطلب ورجل قام إلى إمام جائر فأمره ونهاه فقتله

“সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ হলেন হামজা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রাযিয়াল্লাহু আনহু এবং এমন ব্যক্তি যিনি কোনো জালিম রাজার সামনে দাঁড়ালেন অতঃপর তাকে আদেশ ও নিষেধ করলেন, ফলে বাদশা তাকে হত্যা করলো।[2]

তারাই হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ। শহীদানের সরদার তাঁরা। যেমনটি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে শরীফে বলেছেন। অতএব, আপনারা এই উম্মাহর সরদার হবেন। আপনাদের কাছে উম্মাহর এটাই দাবি। তাই উম্মাহকে কিছুতেই একা ছেড়ে যাবেন না।

সবশেষে আমি পরিপূর্ণ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি- ওই সকল আলেমের প্রতি; যারা এই প্রেক্ষাপটে এবং এ জাতীয় প্রতিটি পূর্ববর্তী ইস্যুতে প্রশংসনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আপনারা সত্যকে নির্ভয়ে উচ্চারণ করেছেন, আল্লাহর পথে কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করেননি। ঈমানদারদেরকে লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন, মুসলিমদের কাছে আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের প্রকৃত রূপ তুলে ধরেছেন। আপনাদের প্রতি আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি- যেন তিনি তাঁদেরকে তাওফীক দান করেন। অটল-অবিচল রাখেন ও সাহায্য করেন। তাদের উপর আপন বরকতের ফোয়ারা জারি করেন! আরও প্রার্থনা করি- আল্লাহ যেন তাদের উপর সাকিনা ও প্রশান্তি অবতীর্ণ করেন! আল্লাহ যেন তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে শক্তিশালী করেন। নিশ্চয়ই তিনি তা করতে সক্ষম এবং তিনিই উত্তম তত্ত্বাবধায়ক।

 

মুজাহিদদের প্রতি বার্তা

 

প্রশ্ন: বিভিন্ন রণাঙ্গনে ও সীমান্ত প্রহরায় রত মুজাহিদ্বীনের প্রতি আপনাদের বার্তা কী?

ইসলামের সীমান্তগুলোতে অবস্থানকারী মুজাহিদ্বীনের প্রতি আমাদের বার্তা হল, তাদেরকে আমরা বলবো:

 

আমার প্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা!

আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন, আল্লাহর সাহায্যে ভবিষ্যতে হতে চলা চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করুন। কারণ এই অভিযান ও তুফানুল আকসাঅগ্রযাত্রা আল্লাহর সাহায্যে পরবর্তীতেও চলমান থাকবে। তাই আসন্ন যুদ্ধগুলোর জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করুন। শুধু তাই নয় বরং আপনারা মালহামা কুবরা তথা মহাকালের মহাযুদ্ধের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করুন। এই বিষয়ে মনস্থির করুন। সেই মহাযুদ্ধের কথা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ইরশাদ করে গিয়েছেন। তাই সর্বদাই দ্বীন ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতিরক্ষার জন্য আপনারা প্রস্তুত থাকুন। আপনারা এই দ্বীনের জন্য দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হয়ে যান।

 

আল্লাহর তরে হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা!

বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সর্বত্র ইহুদী ও আমেরিকানদেরকে টার্গেট করার প্রতি মনোনিবেশ করা আপনাদের একান্ত কর্তব্য। না ডুবিয়ে সমুদ্রে তাদের কোনো জলযান ছেড়ে দেবেন না। ভূপাতিত না করে আকাশে তাদের কোনো উড়োজাহাজ ছেড়ে দেবেন না। ঝড় বইয়ে না দিয়ে তাদের কোনো ব্যারাক ছেড়ে দেবেন না। পৃথিবী থেকে বিদায় না দিয়ে তাদের একজন সৈনিককেও আপনারা ছেড়ে দেবেন না। তাদের ঘর-বাড়ি অফিস-আদালত কোথাও তাদের ব্যাপারে নিজের দায়িত্ব পালন না করে তাদেরকে ছেড়ে দেবেন না। তাদের ঘরেই তাদেরকে লক্ষ্যবস্তু বানান। সর্বত্র তাদের উপর আঘাত হানুন। আজ বিশ্বের সকলেই ইহুদী আমেরিকান, ব্রিটিশ, ফরাসি এবং ইহুদী ও ক্রুসেডারদের জোটে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের অপারেশনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

আপনারা আপনাদের জিহাদ চালু রাখুন। আল্লাহ আপনাদেরকে হেফাযত করুন। জেনে রাখুন, আল্লাহ তায়ালা আপনাদের সঙ্গে রয়েছেন। তিনি কিছুতেই আপনাদের আমল বিনষ্ট করবেন না। আপনারা মানুষকে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর জন্য উদ্বুদ্ধ করুন, যেমনটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা ইরশাদ করেছেন:

وَلَا تَهِنُوا فِي ابْتِغَاءِ الْقَوْمِ ۖ إِن تَكُونُوا تَأْلَمُونَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ كَمَا تَأْلَمُونَ ۖ وَتَرْجُونَ مِنَ اللَّهِ مَا لَا يَرْجُونَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا﴿١٠٤﴾

অর্থ: “তাদের পশ্চাদ্ধাবনে শৈথিল্য করো না। যদি তোমরা আঘাতপ্রাপ্ত, তবে তারাও তো তোমাদের মতই হয়েছে আঘাতপ্রাপ্ত এবং তোমরা আল্লাহর কাছে আশা কর, যা তারা আশা করে না। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা নিসা ০৪: ১০৪]

তাই আপনারা অটল অবিচল থাকুন— আল্লাহ আপনাদেরকে হেফাযত করুন! আল্লাহর শত্রুদের বক্ষ ভেদ করার ক্ষেত্রে আপনাদের নিশানাকে তিনি সঠিক করে দিন। তাদের বক্ষ ও মস্তক চূর্ণ করার তাওফীক দান করুন!

তাদেরকে ছেড়ে দেবেন না বরং সর্বত্র তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকুন। নিশ্চয়ই বিজয় সন্নিকটে... ইনশা আল্লাহ, সন্নিকটে। বিজয় তো শুধু এমন লোকদের হাতেই আসবে, যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকারের ব্যাপারে সত্যবাদী; তাদের মাঝে কেউ কেউ নিজেদের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন, আবার কেউ কেউ অপেক্ষায় রয়েছেন, তারা কৃত অঙ্গীকার একটুও পরিবর্তন করেননি।

 

মুসলিম জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বার্তা

 

প্রশ্ন: মুসলিম জনসাধারণের উদ্দেশ্যে আপনাদের বার্তা কী?

মুসলিম জনসাধারণের প্রতি আমাদের বার্তা হল, তাদেরকে আমরা বলবো:

 

হে মুসলিম উম্মাহ!

আজ ইহুদী ও ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে আমাদের এই লড়াই ধর্মীয় লড়াই। তাই কেউ যেন আপনাদেরকে এ কথা বলে প্রতারিত না করে যে, আমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি শুধু এজন্যই যে, তারা মুসলিমদের ভূমি দখল করেছে অথবা আমেরিকানরা মুসলিমদের ভূমিতে আগ্রাসন চালিয়েছে কিংবা তারা আমাদের উপর চেপে বসেছে। যেগুলো বলা হলো এগুলোও আমাদের লড়াইয়ের কারণ কিন্তু এছাড়াও আমাদের মূল লড়াই এজন্যই যে, তারা মহান আল্লাহর প্রতি কুফরী করেছে। তারা মুসলিম উম্মাহর উপর চেপে বসেছে এবং তাদের সম্পদ চুরি করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হবার উদ্দেশ্য সম্পর্কে এক হাদীসে এভাবে ইরশাদ করেছেন:

"بعثت بالسيف بين يدي الساعة حتى يعبد الله وحده لا شريك له، وجعل رزقي تحت ظل رمحي، والذلة والصغار على من خالف أمري، ومن تشبه بقوم فهو منهم."

“কিয়ামতের পূর্বে আমাকে তরবারি দিয়ে পাঠানো হয়েছে, যেন অংশীদারবিহীন এক আল্লাহর ইবাদত হয়; আমার বর্শার ছায়া তলে আমার রিযিক রাখা হয়েছে, আমার হুকুমের বিরোধিতাকারীর জন্য লাঞ্ছনা গঞ্জনা অবধারিত হয়ে গিয়েছে, যে ব্যক্তি কোনো গোত্রের সঙ্গে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।[3]

অপর একটি সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

"أمرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إله إلا الله وأني رسول الله ويقيموا الصلاة ويؤتوا الزكاة، فإن فعلوا ذلك فقد عصموا مني دماءهم وأموالهم إلا بحق الإسلام، وحسابهم على الله."

“আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আমি মানুষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকি, যতক্ষণ তারা এই সাক্ষ্য না দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল; এরপর যতক্ষণ তারা সালাত কায়েম না করবে, যাকাত প্রদান না করবে। যখন এগুলো তারা পালন করবে, তখন আমার থেকে নিজেদের রক্ত ও সম্পদ তারা মুক্ত করে নিলো, তবে ইসলামের কোনো হুকুমের কারণে হলে ভিন্ন কথা; আর তাদের হিসাব আল্লাহর কাছে হবে।[4]

এ সমস্ত হাদীস থেকে বোঝা যায়, আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবো আর আমাদের লড়াই হবে ধর্মীয়। হয় তারা ইসলাম গ্রহণ করবে অথবা বশ্যতা স্বীকার করে অবনত মস্তকে নিজেদের হাতে জিযিয়া প্রদান করবে অথবা আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই থাকবো।  আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী করার লক্ষ্যেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।

সেই সাথে আমাদের দেশ ও পবিত্র স্থানগুলো তাদের হাত থেকে রক্ষা করাও আমাদের লড়াইয়ের উদ্দেশ্য। এই স্তর পার হলে আমাদের আক্রমণাত্মক জিহাদ ও লড়াই আরম্ভ হবে। কিন্তু আজ আমাদের লড়াই তাদের বিরুদ্ধে রক্ষণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক। আমরা আমাদের দ্বীন, পবিত্র স্থান, দেশ ও সম্পদ রক্ষার জন্য তাদের বিরুদ্ধে লড়ছি।

 

হে মুসলিমগণ!

আজ গোটা উম্মাহ আগ্রাসন কবলিত। শত্রুরা তাদের উপর চেপে বসেছে। হয় এই শত্রু বিদেশি, যারা আমাদের দেশে এসে আমাদের বিরুদ্ধে লড়ছে কিংবা এই শত্রু আমাদের ঘরের, যারা আমাদের শাসক সেজে আল্লাহর শরীয়ত পরিবর্তন করে কাফেরদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।

 

তাই হে আল্লাহর বান্দাগণ!

লক্ষ্য করে দেখুন, শত্রুরা কেমন করে আমাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় চেতনা নিয়ে লড়াই করছে! এইতো আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধিকৃত ফিলিস্তীনে ইহুদীদের কাছে এসে তাদেরকে বললেন:“আমি শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তোমাদের কাছে আসিনি; আমি এমন একজন ইহুদী হিসেবে এসেছি, যার দাদা হত্যা থেকে বাঁচতে পলায়ন করেছিলেন।” তিনি জার্মানিতে নাৎসিদের গণহত্যার কথা বুঝিয়েছেন।

তাই আপনারা লক্ষ্য করুন, কেমন করে তারা তাদের বিকৃত ধর্মের শ্লোগান তুলে ধর্মীয় লড়াই আমাদের বিরুদ্ধে পরিচালনা করছে। এ অবস্থায় কেমন করে কেউ এ কথা ভাবতে পারে যে, তারা ফিলিস্তীনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এজন্য লড়াই করছে যে, ফিলিস্তিনিরা সন্ত্রাসী অথবা তারা অমুক দলের সদস্য কিংবা অমুক জামাআতের সদস্য? কিংবা তারা কি আল-কায়েদা কিংবা কাসসাম ব্রিগেডের বিরুদ্ধে শুধু লড়াই করছে?! এগুলো আজেবাজে কথা। তারা আমাদের সাথে যুদ্ধ করছে কারণ আমরা মুসলিম।  এর প্রমাণ হলো তাদের ওই সমস্ত কর্মকাণ্ড, যা তারা আজ গাজা ও অন্যান্য জায়গায় করছে।

বৃদ্ধদের কী দোষ?! নারীদের কী দোষ?! আমাদের ধর্মে তাদের হত্যা করা হারাম। আপনাদের ভাইয়েরা নারী শিশুদেরকে হত্যা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যে সমস্ত শিশু বোমার আঘাতে নিহত হচ্ছে তাদের কী অন্যায়?! তাদের কী দোষ?! তাদের এক রাজনীতিবিদকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি সে বলছে, এই মহিলারা হত্যার যোগ্য। কেন? কারণ তারা নিজেদের স্বামীদেরকে তালাক দেয় না, যারা ইহুদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।” এটা হল তাদের হিংসা-বিদ্বেষ, যা তাদের কথার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তাদের অন্তরে লুক্কায়িত বিদ্বেষ আরও ভয়ানক।

 

হে আল্লাহর বান্দারা!

আজ মুসলিম উম্মাহ আগ্রাসন কবলিত। তাই আমাদের জেগে উঠতে হবে। আবশ্যকীয়ভাবে আল্লাহর পথে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে। যেই গোলক-ধাঁধায় আমরা বসবাস করছি, তা থেকে আমাদের এই উম্মাহকে উদ্ধার করতে হবে। সেই দায়িত্ব শুধু আল-কায়েদা অথবা অন্য কোনো দলের মুজাহিদীনের নয়; হে মুসলিম ভাই! এ দায়িত্ব আমার আপনার, আমাদের সকলের। হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

لا تَحاسَدُوا، ولا تَناجَشُوا، ولا تَباغَضُوا، ولا تَدابَرُوا، ولا يَبِعْ بَعْضُكُمْ علَى بَيْعِ بَعْضٍ، وكُونُوا عِبادَ اللهِ إخْوانًا. المُسْلِمُ أخُو المُسْلِمِ، لا يَظْلِمُهُ، ولا يَخْذُلُهُ، ولا يَحْقِرُهُ. التَّقْوَى هاهُنا. ويُشِيرُ إلى صَدْرِهِ ثَلاثَ مَرَّاتٍ. بحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أنْ يَحْقِرَ أخاهُ المُسْلِمَ. كُلُّ المُسْلِمِ علَى المُسْلِمِ حَرامٌ؛ دَمُهُ، ومالُهُ، وعِرْضُهُ.

“তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করো না, (ক্রয় করার ভান করে) মূল্য বৃদ্ধি করে ধোঁকা দিও না। একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না। একে অপরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন (অবজ্ঞা প্রকাশ) করবে না। তোমাদের একজনের সাওদা করা শেষ না হলে ঐ বস্তুর সাওদা কিংবা কেনা-বেচার প্রস্তাব করবে না। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমদের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, অসম্মান করবে না, তুচ্ছ ভাববে না। ‘তাকওয়া’ এখানে’- এটা বলার সময় তিনি স্বীয় বক্ষস্থলের প্রতি তিনবার ইঙ্গিত করেছিলেন। কোনো মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করাটা মন্দ ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট (অর্থাৎ এরূপ তুচ্ছ জ্ঞান প্রদর্শন দ্বারা পাপ কার্য হওয়া সুনিশ্চিত) এক মুসলিম অন্য মুসলিমকে খুন করা, তার মাল গ্রাস করা ও সম্মানে আঘাত দেয়া হারাম।” [মুসলিম: ২৫৬৪]

সুতরাং একজন মুসলমানের জন্য তার অপর মুসলিম ভাইয়ের উপর জুলুম করা জায়েজ নয়। এমনিভাবে একজন মুসলমানের পক্ষে তার অপর মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করাও জায়েজ নয়।

ইমাম বুখারী ও মুসলিম হযরত আবু মুসা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন:

إنَّ المُؤْمِنَ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا. وَشَبَّكَ بيْنَ أَصَابِعِهِ.

অর্থ: “একজন মুমিন আরেকজন মুমিনের জন্য ইমারত তুল্য, যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে থাকে। এ বলে তিনি এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করালেন।” [সহীহ বুখারী: ৪৮১, ২৪৪৬, সহীহ মুসলিম: ২৫৮৫)

 

আল্লাহর তরে হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা!

আমাদের অবশ্যই এমন হতে হবে। আমরা একে অপরের জন্য ইমারত তুল্য। আমাদের এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে—যেমনিভাবে দালানকোঠার একাংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে। তাই গাজায় আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের সঙ্গে যা হচ্ছে, ফিলিস্তীনে আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের সঙ্গে যা হচ্ছে, পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় আমাদের মুসলিমদের সঙ্গে যা হচ্ছে, তা অনুভব করতে হবে। এই আঘাত আমার নিজের শরীরের বলে অনুভব করতে হবে। এই জুলুম প্রতিরোধে আমাদের জেগে উঠতে হবে। পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় আমাদের মুসলিম ভাই-বোন ও আল্লাহর বান্দাদের উপর থেকে এই জুলুম অপসারণ করতে হবে।

হযরত নোমান ইবনে বাশির রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

تَرَى الْمُؤْمِنِينَ فِي تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى

অর্থ: “তুমি মুমিনদের পারস্পরিক দয়া ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে একটি দেহের ন্যায় দেখতে পাবে। যখন দেহের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ গ্রহণ করে।[5]” [সহীহ বুখারী: ৬০১১, সহীহ মুসলিম: ৬৭৫১]

তাই আমাদের মুসলিম ভাইদেরকে আমরা একা ছেড়ে দিতে পারি না। হে আল্লাহর বান্দারা! নিজেদের মুসলিম ভাইদেরকে এভাবে একা ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন। যদি আমরা এই কাজ করি, তাহলে এই বিপদ ঘুরে আমাদের নিজেদের উপরেই আসবে। হাদীসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত; হযরত জাবের এবং হযরত আবু তালহা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন:

ما من امرئ يخذل امرأ مسلما في موطن ينتقص فيه من عرضه وينتهك فيه من حرمته إلا خذله الله تعالى في موطن يحب فيه نصرته، وما من أحد ينصر امرأ مسلما في موطن ينتقص فيه من عرضه وينتهك فيه من حرمته إلا نصره الله في موطن يحب فيه نصرته

অর্থ: “যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের মান-ইজ্জত নষ্ট হওয়ার স্থানে তাকে ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করা থেকে বিমুখ থাকবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য কামনা করে। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের মান-ইজ্জত নষ্ট হওয়ার স্থানে তাকে সাহায্য করে, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য প্রত্যাশা করে।” [ইমাম আহমদ রহ., ইমাম আবু দাউদ রহ. সহ আরও কতক মুহাদ্দিস হাদীসটি বর্ণনা করেছেন]

তাই মুসলিম ভাই-বোনদের সাহায্যে এগিয়ে আসা এবং তাদেরকে একা ছেড়ে না দেয়া আমাদের বাস্তবমুখী আবশ্যকীয় কর্তব্য। এছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। আমরা যদি গুনাহের মাঝে ডুবে থাকি, তাহলে এটাও মুসলিমদেরকে একা ছেড়ে দেওয়ার শামিল হবে। আমরা যদি মুমিনদের অনুভূতি গ্রহণ না করি, তাদের দুঃখে দুঃখিত না হই, তাহলেও আমাদের দায়িত্ব লঙ্ঘন হবে।

 

হে মুসলিমরা! সকল স্থানের হে মুসলিম ভাই-বোনেরা!

আমাদেরকে একান্ত মনে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে, তাঁর কাছে ফিরে আসতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার অধিকার ও পাওনাগুলো আমাদের জানতে হবে। আমাদের ভাইদের অধিকারগুলো আমাদের জানতে হবে। আমরা যদি এই কাজগুলো করতে পারি তাহলে নিশ্চিত জেনে রাখুন! ইনশা আল্লাহ, এসব কাজ সাফল্যের ভিত্তি হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের জান্নাতের প্রবেশের উপায় হবে।

 

তাই আল্লাহর তরে হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা!

আমরা এই পৃথিবীতে পরীক্ষার হলে রয়েছি। আমরা সফরে আছি। আমাদের এই জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত; যেকোনো সময় শেষ হয়ে যাবে। যখন আমরা মৃত্যুবরণ করবো, তখনই কবরে আমাদের হিসাব আরম্ভ হবে, এরপর বারযখ জগতে। এরপর আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার সামনে দাঁড়াবো। তাই প্রত্যেকের উচিত- নিজের জন্য জবাব তৈরি করে নেয়া, নিজের কাজের জবাব আল্লাহর কাছে পেশ করতে প্রস্তুত থাকা। সৌভাগ্যবান ওই ব্যক্তি, যে অন্যের দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করে। সৌভাগ্যবান ও বুদ্ধিমান ঐ ব্যক্তি, যে নিজের নফসকে শাসন করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে।

আমরা মহান আরশের অধিকারী আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি- তিনি আমাদেরকে এবং সকল মুসলিম ভাই-বোনকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে চলার তাওফীক দান করুন। আমাদের তাওবা কবুল করুন। পৃথিবীর সর্বত্র ইসলাম ও মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে যাবার তাওফীক আমাদেরকে দান করুন। নিশ্চয়ই তিনি উত্তম অভিভাবক। তিনি সর্বশক্তিমান।

 

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.

*****

 

[1] হাদীসের ভাষ্যটি অন্যত্র বিশুদ্ধ সূত্রে এভাবে এসেছে- لا تَقُومُ السَّاعَةُ حتَّى يُقاتِلَ المُسْلِمُونَ اليَهُودَ، فَيَقْتُلُهُمُ المُسْلِمُونَ حتَّى يَخْتَبِئَ اليَهُودِيُّ مِن وراءِ الحَجَرِ والشَّجَرِ، فيَقولُ الحَجَرُ أوِ الشَّجَرُ: يا مُسْلِمُ يا عَبْدَ اللهِ هذا يَهُودِيٌّ خَلْفِي، فَتَعالَ فاقْتُلْهُ، إلَّا الغَرْقَدَ، فإنَّه مِن شَجَرِ اليَهُودِ “কিয়ামত সংগঠিত হবে না যতক্ষন পর্যন্ত মুসলিমগণ ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের সাথে লড়াই না করবে। মুসলিমগণ তাদেরকে হত্যা করবে। ফলে তারা পাথর বা বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপন করবে। তখন পাথর বা গাছ বলবে, হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা! এই তো ইয়াহুদী আমার পশ্চাতে। এসো, তাকে হত্যা কর। কিন্তু ’গারকাদ’ গাছ এ কথা বলবে না। কারণ এ হচ্ছে ইয়াহুদীদের গাছ।” (সহীহ মুসলিম: ২৯২২) [সম্পাদক]

 

[2] হাদীসের ভাষ্যটি অন্যত্র বিশুদ্ধ সূত্রে এভাবে এসেছে- سَيِّد الشُّهَدَاءِ حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ المُطَّلِبِ وَرَجُلٌ قَامَ إلَى إمَامٍ جائرٍ فَأَمَرَهُ وَنَهَاهُ فَقَتَلَهُ “শহীদদের সর্দার হামযা বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব এবং সেই ব্যক্তি, যে কোন স্বৈরাচারী শাসকের নিকট দাঁড়িয়ে তাকে (ভাল কাজের আদেশ) ও (মন্দ কাজে) নিষেধ করলে সে তাকে হত্যা করে।” (ত্বাবারানীর আওসাত্ব: ৪০৭৯, হাকেম: ৪৮৮৪, সহীহ তারগীব: ২৩০৮) [সম্পাদক]

 

[3] হাদীসের ভাষ্যটি অন্যত্র বিশুদ্ধ সূত্রে এভাবে এসেছে-

 بُعِثْتُ بِالسَّيْفِ حَتَّى يُعْبَدَ اللهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَجُعِلَ رِزْقِي تَحْتَ ظِلِّ رُمْحِي وَجُعِلَ الذِّلَّةُ وَالصَّغَارُ عَلَى مَنْ خَالَفَ أَمْرِي وَمَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

“আমি (কিয়ামতের পূর্বে) তরবারি-সহ প্রেরিত হয়েছি, যাতে শরীকবিহীনভাবে আল্লাহর ইবাদত হয়। আমার জীবিকা রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে। অপমান ও লাঞ্ছনা রাখা হয়েছে আমার আদেশের বিরোধীদের জন্য। আর যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত।” (আহমাদ: ৫১১৪-৫১১৫, ৫৬৬৭, শুআবুল ঈমান: ৯৮, সহীহুল জামে’: ২৮৩১)

 

[সম্পাদক]

[4] হাদীসের ভাষ্যটি অন্যত্র বিশুদ্ধ সূত্রে এভাবে এসেছে- ‏ "‏ أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَيُقِيمُوا الصَّلاَةَ، وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ، فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلاَّ بِحَقِّ الإِسْلاَمِ، وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللَّهِ ‏"‏‏.আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য আদিষ্ট হয়েছে, যতক্ষন না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্‌র রাসূল, আর সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করে ও যাকাত দেয়। তারা যদি এ কাজগুলো করে, তবে আমার পক্ষ থেকে তাদের জান ও মালের ব্যাপারে নিরাপত্তা লাভ করল; অবশ্য ইসলামের বিধান অনুযায়ী যদি কোন কারণ থাকে, তাহলে স্বতন্ত্র কথা। আর তাদের হিসাবের ভার আল্লাহ্‌র উপর ন্যস্ত।” (সহীহ বুখারী: ২৫)

 

[সম্পাদক]

[5] হাদীসের ভাষ্যটি অন্যত্র বিশুদ্ধ সূত্রে এভাবে এসেছে- مَثَلُ المُؤْمِنِينَ في تَوادِّهِمْ، وتَراحُمِهِمْ، وتَعاطُفِهِمْ مَثَلُ الجَسَدِ إذا اشْتَكَى منه عُضْوٌ تَداعَى له سائِرُ الجَسَدِ بالسَّهَرِ والْحُمَّى‏ “মু’মিনদের আপোসের মধ্যে একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি, দয়া ও মায়া-মমতার উদাহরণ (একটি) দেহের মতো। যখন দেহের কোন অঙ্গ পীড়িত হয়, তখন তার জন্য সারা দেহ অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।” (সহীহ মুসলিম: ২৫৮৬) [সম্পাদক]

 

***

 


روابط بي دي اب
PDF (712 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৭১২ কিলোবাইট]
https://archive.org/download/tufanul-aqsa-er-potikriya/Tufanul%20Aqsa%20-%20Sheikh%20Khalid%20bin%20Umar%20Batarfi%20Hafizahullah.pdf


https://jmp.sh/oeU0ZbI8


https://tufanulaqsa2.files.wordpress.com/2023/11/tufanul-aqsa-sheikh-khalid-bin-umar-batarfi-hafizahullah.pdf


https://www.mediafire.com/file/npevn3zxxspg08n/Tufanul+Aqsa+-+Sheikh+Khalid+bin+Umar+Batarfi+Hafizahullah.pdf/file


https://mega.nz/file/pAgi2LKa#K4bV9oTZZk2P26f59rKFqWOCQPqiH2jsLrcuc6BEb60


https://docdro.id/BzhXe9O

 

 


روابط ورد
Word (851 KB)
ওয়ার্ড [৮৫১ কিলোবাইট]
https://archive.org/download/tufanul-aqsa-er-potikriya/Tufanul%20Aqsa%20-%20Sheikh%20Khalid%20bin%20Umar%20Batarfi%20Hafizahullah.docx


https://jmp.sh/FtcwPS7Q


https://tufanulaqsa2.files.wordpress.com/2023/11/tufanul-aqsa-sheikh-khalid-bin-umar-batarfi-hafizahullah.docx


https://www.mediafire.com/file/oqcm3i33aaer7sb

/Tufanul+Aqsa+-+Sheikh+Khalid+bin+Umar+Batarfi+Hafizahullah.docx/file


https://mega.nz/file/dchxAbKR#hyHtabX0GAt5x1BfR0Nn_WNf90v-Cf9ceYV9mv2FJdw


https://docdro.id/NfBrNbb

 


روابط الغلاف- ١ 
book Banner [1.8 MB]
বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.৮ মেগাবাইট]
https://archive.org/download/tufanul-aqsa-er-potikriya/Tufanul-Aqsa-er-potikriya-Cover-.jpg


https://jmp.sh/WfCXL5yS


https://tufanulaqsa2.files.wordpress.com/2023/11/tufanul-aqsa-er-potikriya-cover-.jpg


https://www.mediafire.com/file/5a02fxs2zeya5ir/Tufanul-Aqsa-er-potikriya-Cover-.jpg/file


https://mega.nz/file/AUgiBLZa#Mqhr6CHJH6BgzmcsLm2kYg1a1RmAtebpAjsXBihwFsE

 


روابط الغلاف- ٢
Banner [236 KB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [২৩৬ কিলোবাইট]
https://archive.org/download/tufanul-aqsa-er-potikriya/Tufanul-Aqsa-er-potikriya-Banner%20.jpg


https://jmp.sh/OAoR3Q9G


https://tufanulaqsa2.files.wordpress.com/2023/11/tufanul-aqsa-er-potikriya-banner-.jpg


https://www.mediafire.com/file/6951xhdbkcpvx07/Tufanul-Aqsa-er-potikriya-Banner+.jpg/file


https://mega.nz/file/NAJhiZyA#d1tkAVmDwIAY4fooGwkZxRoiuVvE7IycFj7WZrmoSPw

 


مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الحكمة للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায়
আল হিকমাহ মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
Al Hikmah Media
Al-Qaidah in the Subcontinent