مؤسسة النصر
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Media
تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents
الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation
بعنوان:
শিরোনাম:
Titled:
تحریک جہاد برصغیر…حقیقت و حقانیت! – الحوار الخاص مع استاد اسامه محمود حفظه الله-٣
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ’র বিশেষ সাক্ষাৎকার
উপমহাদেশ ভিত্তিক জিহাদি আন্দোলন – প্রকৃত বাস্তবতা!(তৃতীয় পর্ব)
পাকিস্তানে জিহাদের প্রেক্ষাপট, প্রকৃত বাস্তবতা
Exclusive Interview with Ustad Usama Mahmud Hafizahullah (Part-3)
"The Context of Jihad in Pakistan, The Realities on the Ground"
روابط بي دي اب
PDF (611 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৬১১ কিলোবাইট]
https://archive.gnews.to/s/K5zfFwmr3jd2EcQ
https://banglafiles.net/index.php/s/f8WJKooqpkc4T9f
https://www.mediafire.com/file/43jkrwcoovypwoy/UstadOsamaMahmudSakkhatkar-Part3.pdf/file
روابط ورد
Word (304 KB)
ওয়ার্ড [৩০৪ কিলোবাইট]
https://archive.gnews.to/s/RARECjfoZGfLk9J
https://banglafiles.net/index.php/s/B3ag63MYdAqABwK
https://www.mediafire.com/file/p2hcuxidzme7lln/UstadOsamaMahmudSakkhatkar-Part3.docx/file
روابط الغلاف- ١
book Cover [556 KB]
বুক কভার ডাউনলোড করুন [৫৫৬ কিলোবাইট]
https://archive.gnews.to/s/ddeJTgPAzdnCbgQ
https://banglafiles.net/index.php/s/TJfPZMEyEqEm8di
https://www.mediafire.com/file/bpl0cz2eyuzvyi3/UstadOsamaMahmudSakkhatkar-Part3+Cover.jpg/file
روابط الغلاف- ٢
Banner [67 KB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [৬৭ কিলোবাইট]
https://archive.gnews.to/s/9djqS6Pn6xB3ZLf
https://banglafiles.net/index.php/s/T2cHi5cCKBwB3Rr
https://www.mediafire.com/file/bfmxlpkg0d7l21z/UstadOsamaMahmudSakkhatkar-Part3Banner.jpg/file
******
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ’র বিশেষ সাক্ষাৎকার
উপমহাদেশ ভিত্তিক জিহাদি আন্দোলন - প্রকৃত বাস্তবতা!
(তৃতীয় পর্ব)
পাকিস্তানে জিহাদের প্রেক্ষাপট, প্রকৃত বাস্তবতা
আস-সাহাব উপমহাদেশ: পাকিস্তানের জিহাদি আন্দোলন বর্তমানে এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ পরিস্থিতিকে এই আন্দোলন-ধ্বংসের সূচনা বলে দাবি করছে। আপনি কি তাদের সাথে এ বিষয়ে একমত?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ: পাকিস্তান জিহাদের বিষয়ে আপনারা নিশ্চিত থাকুন। ইনশাআল্লাহ এই কাফেলা দুশমনদের চক্রান্তের সকল জাল ছিন্ন করে সম্মুখ পানে এগিয়ে যাবে। কেননা তারা হলো গাযওয়ায়ে হিন্দের কাফেলা। আর আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে আশা করি যে, পাকিস্তানি মুজাহিদ বাহিনী শুধু পাকিস্তানেই নয় বরং কাশ্মীর ও মিয়ানমারসহ উপমহাদেশের সকল নির্যাতিত মুসলিম ভাইয়ের জন্য নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
বৈশ্বিক কুফরী সংস্থার এ পা চাটা গোলামরা দীনের ধারক-বাহক ও মুজাহিদদের শত মানহানি করুক, সত্যের পথে জুলুম-অত্যাচার, ছল-চাতুরী ও ধোঁকার শত পাহাড় দাঁড় করাক, প্রয়োজনে তারা আমেরিকার সাথে সাথে বেদীন শাসকদের থেকেও সহযোগিতা নিক, ইনশাআল্লাহ মুজাহিদদের সফলতা আল্লাহর আদেশেই আসবে। মুজাহিদগণ শত বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে সফলতা ছিনিয়ে আনবেনই, তাদের বিজয়-সফলতার পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না, কেননা এ বিজয় তো আল্লাহর পক্ষ থেকে।
বস্তুত এই বাহিনী নিশ্চল হওয়ার নয়। এই বাহিনী শাহাদাত ও আত্মোৎসর্গকারী বাহিনী। তাঁদের অভীষ্ট লক্ষ্য হলো- জুলুমের অপনোদন আর শরীয়তের বাস্তবায়ন। সে উদ্দেশ্য সামনে রেখেই তারা পথ চলছে এবং ইনশআল্লাহ চলতেই থাকবে। সাময়িকভাবে কোনো ভূখণ্ড হাতছাড়া হয়ে যাওয়া, শহীদ হওয়া, কারারুদ্ধ হওয়া এগুলো কোনো জিহাদি আন্দোলনের সফলতা-ব্যর্থতার মাপকাঠি নয়।
আজ পর্যন্ত এমন কোনো আন্দোলন আছে, যারা জিহাদের পতাকা উড্ডীন করেছে আর কালের দুর্যোগ, বাঁধা-বিপত্তি ছাড়াই বিজয়ের পর বিজয় অর্জন করেছে? এমনটা ভাবা বোকামি বৈ কিছুই না। যেকোনো হকের আন্দোলন ও জিহাদি আন্দোলনকে আল্লাহ তাআলা বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। সাথিদের শহীদ হওয়া, বন্দী দশা, সাময়িক ভূমি হস্তচ্যুত হওয়া তাদের শক্তি-সামর্থ্য ও ঈমানকে আরও শাণিত করে। এ সকল পরীক্ষার একটা উদ্দেশ্য হলো, বিজয়ের প্রাক-প্রস্তুতি। কেননা এর দ্বারা আন্দোলনগুলো আত্মপর্যালোচনার সুযোগ পায় এবং খানিকটা পিছনে এসে নিজেদের ক্রটি-বিচ্যুতি শুধরে নিতে পারে। এর পরই শত্রু বাহিনীকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে সামনে এগুতে থাকে, এটাই হলো পাকিস্তানের জিহাদ। আর আল্লাহ চান তো এটাই হবে গাযওয়াতুল হিন্দের ভবিষ্যৎ কাফেলা।
মোট কথা: পাকিস্তানের জিহাদি সব কাফেলা যত দ্রুত নিজেদের আকীদা-মানহাজ ঠিক করে নিয়ে নিজেদের সংশোধন করে নিবে এবং নিজেরা সুশৃঙ্খল হয়ে যাবে, তত দ্রুতই ইনশাআল্লাহ এই দল সফল ও কৃতকার্য হয়ে সম্মুখপানে অগ্রসর হবে।
আস-সাহাব উপমহাদেশ: সামনে অগ্রসর হওয়ার (অর্থাৎ পরবর্তী আলোচনা শুরু করার) পূর্বে আপনি আমাদের এতটুকু বলুন যে, পাকিস্তান জিহাদ এবং পাকিস্তানের মধ্যে জিহাদি আন্দোলনের শুরুটা কিভাবে হলো?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ: প্রথম পর্বে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে যে, আমরা পাকিস্তান এবং উপমহাদেশের মধ্যে ‘আল্লাহর আদেশে’ সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ (রহিমাহুল্লাহ) এর বাহিনীর ক্রমধারা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই আন্দোলনের হক আদায় করার তাওফীক দিন। একইভাবে এই বিষয়টাও পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসলামী শরীয়ত বাস্তবায়নের এই আন্দোলন, মুজাহিদদের আন্দোলন কোনো না কোনোভাবে অব্যাহত ছিল। এটাও বলা হয়েছিল যে, যখন আমেরিকা ২০০১ সালে ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানে আক্রমণ করে, তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমেরিকার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং আমেরিকার পা চেটে আফগান থেকে কাশ্মীর অবধি জিহাদ ও ইসলামকে ধূলিসাৎ করার শপথ নেয়। এই গাদ্দাররা আমেরিকার সাথে হাত মিলিয়ে ইসলামী ইমারতকে সে সময় শেষ করে দেয়। অধিকন্তু তারা এ অপচেষ্টাও চালিয়েছে যে, মুজাহিদরা যেন কোনোভাবেই সংঘবদ্ধ হওয়ার সুযোগ না পায়।
মুজাহিদগণের আমেরিকা ও বৈশ্বিক কুফরী জোটের বিরদ্ধে জিহাদ পরিচালনার জন্য উপযুক্ত স্থান যেন না থাকে। এ অবস্থায় আরব ও আজমের মুহাজির ও বিভিন্ন গোত্রের মুজাহিদগণ পাকিস্তানের বিভিন্ন গোত্রে সমবেত হন। গোত্রের জনসাধারণ মুজাহিদদের সততা ও উত্তম আখলাকে মুগ্ধ হয়ে তাঁদের সঙ্গ দেন এবং মন উজাড় করে মুজাহিদদের জন্য সব ধরনের কুরবানী পেশ করতে রাজি হয়ে যান। আল্লাহ এই মুজাহিদদের জন্য এবং তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত সকলের জন্য উভয় জাহানে কল্যাণের ধারা অব্যাহত রাখুন। তাঁদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
আস-সাহাব উপমহাদেশ: ঐ জামাআতকে সামনে রেখে মূলত উদ্দেশ্য কী ছিল?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক উদ্দেশ্য তো ছিল ইসলামী ইমারাহর প্রতিরক্ষা করা, আমেরিকাকে সেখান থেকে বের করা, শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করা, মুসলমানদের রক্ষা করা এবং সর্বোপরি জিহাদি আন্দোলনকে রক্ষা করা। পাকিস্তানি বাহিনী আমেরিকার দাসত্ব করে বরকতপূর্ণ আন্দোলনকে সমূলে নিঃশেষ করে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল। এ উদ্দেশ্যে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়ে।
এটা আমি স্পষ্ট করে দিবো যে, দীর্ঘ একটা সময় অবধি আফগানিস্তানে আমেরিকাই ছিল মুজাহিদদের প্রধান টার্গেট। এ জন্য মুজাহিদ বাহিনী কোনোভাবেই পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাচ্ছিলেন না। কিন্তু তারাই মুজাহিদদের বাধ্য করেছে এবং তাঁদেরকে দুটি অপশনের যেকোনো একটি বেছে নিতে হলো।
প্রথম অপশন ছিল, পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে না লড়া। যার অবধারিত ফলাফল হলো, জিহাদি আন্দোলন নিঃশেষ হওয়া আর আমেরিকার এখানে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হওয়া।
দ্বিতীয় অপশন: পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা। যার ফলাফল দাঁড়ায়; জিহাদ, শরীয়ত বাস্তবায়ন এবং ইসলাম বিজয়ের আন্দোলনকে রক্ষা করা। এ জন্যই মুজাহিদগণ দ্বিতীয় অপশনটি গ্রহণ করেছেন। মুজাহিদগণ আত্মরক্ষার জন্য রণাঙ্গনে নেমে পড়েন। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তাআলা নিজ মোজেজা দেখান। আল্লাহ তাআলার সাহায্য আর মুজাহিদদের কারামত এখানে জনসাধারণের দৃষ্টিগোচর হয়। যার কারণে মুজাহিদরা আরও বলবান হয়ে উঠেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমেরিকার স্বপ্ন মিসমার হয়ে যায়।
অবশেষে তাদের সৈন্যবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। মুজাহিদ বাহিনী ও অন্যত্রের মুসলমানদের আত্মত্যাগ ফলপ্রসূ হয়েছে।
এরপর আলহামদুলিল্লাহ, জিহাদের জন্য সাহায্যকারী অঞ্চল মিলে যায়। এই আশ্রয়স্থল বা গন্তব্য ২০০৫/২০০৬ সালেই অর্জিত হয়েছিল। আর যখনই এটা হাতে আসে তখন থেকেই আফগান জিহাদ আরো বেগবান হয়ে উঠে। অথচ ইতিপূর্বে আফগানিস্তানে আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মুজাহিদগণ বেশ দুর্বল ছিলেন। যেন পাকিস্তান জিহাদের প্রথম সাফল্যই হলো আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ সুশৃঙ্খল হওয়া। আর এটা স্পষ্ট যে, এটা হয়েছে পাকিস্তান আনসার হাউস হওয়ার সুবাদে। এ কারণেই পরবর্তী দশ বছর অবধি এই ঘাঁটি কুফরী বাহিনীর আক্রমণ এবং মার্কিন বাহিনীর ড্রোন হামলার টার্গেট হিসেবে থাকে।
আস-সাহাব উপমহাদেশ: এটাতো ছিল বিভিন্ন গোত্রের মাঝে সংঘটিত পাকিস্তান জিহাদের আলোচনা, (এখন আলোচনা হবে) পাকিস্তানে জিহাদের ঘোষণা কখন এবং কেন হলো?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ: দেখুন, সে সময় অর্থাৎ বিভিন্ন গোত্রের অভ্যন্তরে যখন এই পাক সৈন্যরা মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, তখন পাকিস্তান জুড়েও সেনাবাহিনীর জেনারেলরা দুই ধরনের যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। একটা ছিল মুজাহিদদের ও হকপন্থীদের আটক করা, তাঁদের শহীদ করার মাধ্যমে পুরো পাকিস্তানকে তারা রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে। মার্কিন এফবিআই-এর অফিসাররা উপর থেকে এর তদারকি করতো। আইএসআই-’র অফিসাররা এবং সেখানকার সেনাফৌজ আমেরিকার দাস হয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছিল। টাকার বিনিময়ে একেক জন মুজাহিদকে গ্রেফতার ও শহীদ করছিল। এটা হলো প্রথম ধরনের যুদ্ধ।
আর দ্বিতীয় প্রকারের যুদ্ধ ছিল— ইসলামের বিরুদ্ধে, মসজিদ, মাদরাসা, উলামা এবং আহলে দীনের বিরুদ্ধে। উলামায়ে কেরাম এবং দীনদার শ্রেণির মুসলমানদের জন্য পৃথিবীকে করে রেখেছিল সংকীর্ণ। ইসলামের মডারেট ব্যাখ্যার বিস্তার ঘটাতে এবং সিলেবাসের পরিবর্তনের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল, এ সবের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের মূল চেতনা বিলুপ্ত করা। মার্কিনি ইসলামের প্রচার করা হচ্ছিল, যার মধ্যে আমর বিল মারূফ, নাহী আনিল মুনকার এবং জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ থাকবে না। অর্থাৎ; এমন ইসলাম, যা নিরাপত্তা দিবে শয়তান আমেরিকা, ভারতীয় হিন্দু-মালাউন, নাস্তিক চীন, সন্ত্রাসী ইসরাঈল এবং পুরো কুফরী বিশ্বের এবং ইসলামের যেই ব্যাখ্যা মুসলমানদেরকে পূর্ণরূপে কাফেরদের দাসে পরিণত করবে। অদ্যাবধি মিডিয়ার দিকে চোখ বুলান, টেলিভিশন চ্যানেলের টকশো ও সংবাদপত্রের কলাম দেখুন, সর্বত্রই মার্কিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার মিশনই দৃষ্টিগোচর হবে।
আলহামদুলিল্লাহ উলামায়ে কেরাম এই শয়তানি চক্রের সামনে পূর্ণ অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান। এই বিপ্লবের অগ্রভাগে ছিলেন আল্লামা নিজামুদ্দীন শামযায়ী (রহিমাহুল্লাহ), মুফতী জামিল রহিমাহুল্লাহ এবং মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানভী, আল্লাহ তাআলা তাঁদের সকলের উপর রহমত বর্ষণ করুন। এঁদের মতো উলামায়ে কেরামকে হক কথা বলার অপরাধে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা শহীদ করে দেয়। আলহামদুলিল্লাহ, এতদসত্ত্বেও উলামায়ে কেরাম পিছু হটেননি, বরং সবকিছু উপেক্ষা করে পাক বাহিনী ও মার্কিনিদের অপকর্মের বিরুদ্ধে ফাতওয়া প্রদান করেছেন, জনসাধারণের কাছে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
ইত্যবসরে ঘটে যায় লাল মসজিদের নৃশংস ট্রাজেডি। আল্লাহ তাআলা আব্দুর রশিদ গাজী রহিমাহুল্লাহ এবং তাঁর সাথে সম্পৃক্ত সকল শহীদকে চূড়ান্ত সফলতা স্বরূপ জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন, আমীন।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে জিহাদের বৈধতা ও যৌক্তিকতা প্রমাণে সহায়ক হয়েছে। এখানে এতটুকু মনে রাখতে হবে যে, লাল মসজিদের দুর্ঘটনা পাকিস্তানে জিহাদের কারণ ছিল না, বরং এই দুর্ঘটনা পাকিস্তানে জিহাদের বৈধতার প্রমাণ বহন করেছে।
এই ঘটনা সত্য ও মিথ্যা, ন্যায়-নিষ্ঠা ও জুলুম-অত্যাচারের মাঝে পার্থক্য স্পষ্ট করে দিয়েছে ; পাকিস্তানি জনসাধারণকে এটা বুঝিয়েছে যে, এই বাহিনী ইসলামেরও শত্রু জনগণেরও শত্রু । তারা কুফরী বিশ্বকে নিরাপত্তা প্রদানকারী বাহিনী। যদি এদের বিরুদ্ধে জিহাদ না করা হয় তাহলে মার্কিনিদের বিরুদ্ধেও জিহাদ করা হবে না। যদি এদের বিরুদ্ধে লড়াই করা না হয়, তাহলে ইসলামী ইমারাহ পুনরায় ফিরে আসবে না এবং হিন্দু-মালাউনদের বিরুদ্ধেও প্রকৃত পক্ষে জিহাদ করা কখনোই সম্ভব হবে না।
এদিকে শায়খ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ-ও ঐ সময়ে জিহাদের ঘোষণা দিয়ে দেন। তবে পাকিস্তানের মধ্যে পূর্ব থেকেই এই প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ অব্যাহত ছিল, কিন্তু শায়খ এবার জনসাধারণকেও এতে অংশ গ্রহণের আহ্বান জানান। কেননা জনসাধারণ বুঝে ফেলেছে যে, লাল মসজিদ ও জামিয়াতুল হাফসার পবিত্র রক্ত শত্রু-মিত্রের পার্থক্য করে দিয়েছে। শুধু ইশারা বাকি ছিল আর শায়খ রহিমাহুল্লাহ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ সেই ইশারা দিয়ে দিলেন।
আস-সাহাব উপমহাদেশ: কিছু সুহৃদ এটা থেকে ফলাফল বের করছেন যে, শায়খ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ এই সুযোগে কুফরী বিশ্বের মূল হোতাকে শায়েস্তা করার প্ল্যানে কিছুটা পরিবর্তন করেছেন, একথা কি সঠিক?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ: নাহ! এমনটা আদৌ সঠিক নয়! শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ’র এ প্ল্যান অর্থাৎ কুফরী বিশ্বের হোতা আমেরিকাকে নাস্তানাবুদ করা এটা পূর্ব থেকেই ছিল, আর আলহামদুলিল্লাহ আজ অবধিও আছে, এর মাঝে কোনো ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়নি।
তবে শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন এ কারণে যে, যেহেতু পাকিস্তানের মুসলমানদেরই বাস্তবিক অর্থে জিহাদের নেতৃত্ব দিতে হবে। আর মার্কিন-সেনাদের নিরাপত্তা প্রদানকারী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধেও জিহাদের পরিকল্পনা আসলে আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য পরিপূরক। অগ্রগণ্য ও উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যস্থল বানানো হবে কুফরের মাথা আমেরিকাকে। কিন্তু যে হাত এই মাথাকে রক্ষা করছে, তাদের সাথে ফয়সালায় যাওয়াটা তো স্পষ্টই। উদাহরণ স্বরূপ; আমাদের অভিমুখে শক্রসেনা (উপস্থিত), তারা সামনা সামনিই লড়াই করছে, তখন আমাদের মূল টার্গেট হবে তাদের মাথায় আঘাত হানা, কিন্তু তার হাত আমার গর্দান ও ঘাড় চেপে ধরে আছে, এহেন পরিস্থিতিতে কেউ কি এটা বলবে যে, তার হাত ছেড়ে দেয়া হোক এবং দুশমনের হাত না মনে করা হোক, বরং শুধু মাথায়ই আঘাত করা হোক। এভাবে তো চিন্তা ও কল্পনার জগতের জিহাদ হতে পারে। কার্যত এভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।
এখানে একটি কথা বলে রাখি, রুশ বিরোধী জিহাদ এবং শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ এর যুগের জিহাদ আর এখনকার আমেরিকার বিরুদ্ধের জিহাদের মাঝে আসমান-জমিনের পার্থক্য আছে।
রাশিয়ার বিরূদ্ধে জিহাদের ক্ষেত্রে আমেরিকার নেতৃত্বে এই সকল বাহিনী এবং শাসকগোষ্ঠী মুজাহিদদের সহযোগিতা করেছে আর আজ সেই দলগুলোই মুজাহিদদের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে পর্যন্ত সহযোগিতা করছে। সবাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুফরী বিশ্বের দাস বনে গেছে, যদিও এটা শুনতে একটু অদ্ভুত লাগে।[1]
মোটকথা, পাকিস্তানের মধ্যে জিহাদের সিদ্ধান্ত ছিল একটা সঠিক সিদ্ধান্ত, আর একারণে আফগান জিহাদ আরও শক্তি পেয়েছে, বেগবান হয়েছে। আফগান জিহাদের প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে এবং সেই কারণেই পাকিস্তান আমেরিকার এমন যুদ্ধের কলোনি হতে পারেনি, যেমনটা পাকিস্তানি সেনারা চেয়েছিল।
এই জিহাদ যদি না করা হতো, তাহলে বর্তমানে বাগরাম বিমানঘাঁটি ইসলামাবাদে হতো এবং তখন আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের ম্যাপই পরিবর্তন হয়ে যেতো।
এদিকে শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ’র তাওয়াক্কুলের বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। তিনি ছিলেন পাকিস্তানে, এদিকে জিহাদের ময়দানে তুমুল লড়াই চলছে বিধায় তাঁর সমূহ বিপদের শঙ্কা ছিল। তবুও ইসলাম ও মুসলমানদের কল্যাণার্থে শত ঝুঁকি সত্ত্বেও জালেম পাকিস্তানি জেনারেলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সমর্থন-শক্তির যোগান দেন এবং পাকিস্তানের মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন, স্বয়ং তাঁর নেতৃত্বেই তাঁর দল এক্ষেত্রে পরিপূর্ণ অংশগ্রহণ করেছেন এবং পাকিস্তানের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “জিহাদ ফরযে আইন এবং কুফরের নিরাপত্তা প্রদানকারী এই বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের জন্য দুটি পথ খোলা আছে—একটা হলো লড়াইয়ের পথ; আর যদি এর সামর্থ্য না থাকে তাহলে শক্তি অর্জনে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। এ ছাড়া তৃতীয় অপশন হলো— এরা আমাদেরই সৈন্য, ইসলাম ও মুসলমানদের নিরাপত্তা বিধানকারী দল। এই অপশন এর ব্যাপারে কথা হলো: এ ধরনের ফালতু অপশনের দিকে নজর দেয়ার কোন সুযোগ এখন নেই।
আস-সাহাব উপমহাদেশ: যদি একথা সত্যই হয় যে, পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদ করা আমেরিকা এবং কুফরী বিশ্বের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নামান্তর, তাহলে কি এই জিহাদের ব্যাপক আহ্বান এবং সাধারণ ঘোষণার পূর্বে জনসাধারণের মাঝে এই দাওয়াত গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রয়োজন ছিল না?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ: আলহামদুলিল্লাহ. শরয়ী দলীলের আঙ্গিনায় হোক বা জনসাধারণের মাঝে গ্রহণযোগ্যতার বিষয় হোক, দুটো আঙ্গিনায়ই পাকিস্তান জিহাদের দাওয়াত গ্রহণীয়ই ছিল। শরয়ী আঙ্গিনায় লক্ষ্য করলে দেখবেন, আমেরিকার আগমনের সাথে সাথে তো আলহামদুলিল্লাহ নিজামুদ্দীন শামযায়ী এবং মুফতী জামিল রহিমাহুল্লাহ প্রমুখ উলামায়ে কেরাম জিহাদের ব্যাপারে লোকদের উদ্বুদ্ধ করেন, পাক-সেনাদের বিশ্বাসঘাতকতার পথ অবরুদ্ধ করার জন্য জিহাদের প্রতি উৎসাহিত করেন[2], তারপরও সূচনালগ্নে অর্থাৎ ২০০৪ সালে তিনশত জন উলামায়ে কেরাম পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং গোত্র ভিত্তিক গড়ে উঠা জিহাদি আন্দোলনের পক্ষে ফাতওয়া দেন। এই ফাতওয়া ইসলামাবাদ বিচার বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়। পাকিস্তানের বড় আলেমদের মধ্যে কেউ এই ফাতওয়ার বিষয়ে দ্বিমত করেননি।
এটাকে সম্ভবত সর্বসম্মত ফাতওয়া হিসাবে ধরা যেতে পারে।[3] লাল মসজিদের ঘটনার পর যখন জিহাদি আন্দোলন আরও বেগবান হলো তখন অনেক আলেম জিহাদি আন্দোলনে অংশ নেন। অনেকেই জিহাদি আন্দোলনকে সাহায্য করেন এবং অনেক এলাকার মসজিদ, মাদরাসাগুলোতেও জিহাদি আন্দোলনের কার্যক্রম শুরু হয়।
সোয়াত এবং বাজোড়ের দৃষ্টান্ত আপনাদের সামনে, যেখানে উলামায়ে কেরাম জিহাদের আন্দোলনের সূচনা করেন। আজ পর্যন্তও আলহামদুলিল্লাহ নেতৃত্ব উলামায়ে কেরামের হাতেই আছে। এমনিভাবে মাহসুদ থেকে সোয়াত অবধি পুরো এলাকা এবং প্রত্যন্ত জেলাসমূহে এই আলিমগণই মুজাহিদদের এই আন্দোলনকে ব্যাপক আন্দোলনে পরিণত করেছেন। তাদের চেষ্টা-প্রচেষ্টায় সাধারণ জনগণ ব্যাপকভাবে জিহাদে অংশ গ্রহণ করেন।
অতঃপর লক্ষ্য করুন, জিহাদি আন্দোলনের প্রকাশ্য সমর্থন উলামাদের জন্য বড় হিম্মতের দাবি রাখে। জিহাদি আন্দোলনের পরোক্ষ সাহায্য ও সমর্থনও জিহাদের ক্ষেত্রে কম কিছু নয়। আলহামদুলিল্লাহ পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের উলামাদের একটি বড় অংশ জিহাদি আন্দোলনকে সমর্থন ও সাহায্য করেছেন। এই সাহায্য-সহযোগিতা, ফাতওয়া প্রদান এবং দিকনির্দেশনার সুরতেও হয়েছে এবং সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমেও হয়েছে।
এখানে সেই সময়টা উল্লেখ করছি, যে সময়ে মুফতী আতিকুর রহমান রহিমাহুল্লাহ’র মতো হকপন্থী উলামায়ে কেরামকে শহীদ করা হচ্ছিল। তখনও এই অত্যাচার আর নিপীড়ন সত্ত্বেও ‘চুটির’ কিছু আলেম ‘কাবায়েল’ -এ আসেন, যেমন শায়খ আবু ইয়াহইয়া, শায়খ আতিয়াতুল্লাহ, শায়খ মুস্তফা আবুল ইয়াযিদ, আমীরে মুহতারাম বাইতুল্লাহ মেহসুদ, উস্তাদ আহমদ ফারুকসহ অন্যরা। ওয়াজিরিস্থান থেকে সোয়াত পর্যন্ত যে সকল জিহাদের কমান্ডার আছেন, তাঁরা জিহাদি নেতৃবৃন্দদের সাথে এসে সাক্ষাৎ করেন, পরামর্শ করেন এবং সমর্থন দেন। এরপর প্রত্যেকে আলহামদুলিল্লাহ নিজ নিজ এলাকাতে এসকল মুজাহিদের পক্ষে সমর্থন দেন। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে উলামায়ে কেরাম যখন বিভিন্ন অঞ্চলে প্রকাশ্যে জিহাদের দাওয়াত দেন, তখন পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা এই অপরাধে অনেক আলেমকে কারারুদ্ধ করে। তাদেরকে বন্দীশালায় শহীদ করে এবং আজ অবধি শহীদদের সংখ্যা সহস্রাধিক পৌঁছে গেছে। এতদসত্ত্বেও উলামাগণ জিহাদের প্রতি সহযোগিতা পরিত্যাগ করেননি, আলহামদুলিল্লাহ।
আস-সাহাব উপমহাদেশ: উলামাদের বিষয়ে পুনরায় আসছি ইনশাআল্লাহ, (আগে) এটা বলুন যে, এটা তো শরয়ীভাবে জিহাদের দাওয়াত ব্যাপক হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হলো, কিন্তু জনসাধারণের ব্যাপারে এটা কীভাবে দাবি করলেন যে, তাদের কাছে এই আহ্বান সমাদৃত ও গ্রহণীয় হয়ে গিয়েছে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ: এই আন্দোলন ‘কাবায়েল’ থেকে শুরু করে করাচি ও লাহোর পর্যন্ত অসংখ্য মুসলমানের মন জয় করে নেয়। বাস্তবতা হলো এই যে, এটা ছিল সত্য পথেরই আহ্বান এবং এটাই একমাত্র আহ্বান ছিল, যার বিরুদ্ধে বিরোধীদের পক্ষ থেকে আকলি (চিন্তা থেকে উদ্গত) অথবা নাকলী (শরয়ী) দলীল ছিল না। এমন কোনো দলীল বিদ্যমান ছিল না যেটা ঐ আন্দোলনের পথে ধাবমান অগণিত মানুষকে আটকাতে পারবে।
এই বাস্তবতাকে কেউই অস্বীকার করতে পারবে না যে, পাকিস্তানে শরীয়ত বাস্তবায়নের (জন্যই মূলত) এই আন্দোলন ছিল গণমানুষের জিহাদি আন্দোলন, যা জনসাধারণের নেতৃত্বে এক ঐতিহাসিক আন্দোলন ছিল। সব শ্রেণি পেশার মানুষ এবং সব ফিকিরের মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন। তালাবা তথা ছাত্রদের প্রতি লক্ষ্য করুন, মাদরাসার তালেবুল ইলম এবং কলেজ-ভার্সিটির স্টুডেন্টরাও অংশগ্রহণ করে। সবার অংশগ্রহণ ছিল। উলামাদের মধ্যেও আলহামদুলিল্লাহ, সব শ্রেণির উলামা অংশগ্রহণ করেছেন। জিহাদি আন্দোলনের এটাই কৃতিত্ব ছিল যে, এই আন্দোলন তাদের অভ্যন্তরের অনেক বিবাদই শেষ করে দিয়েছে, যা জিইয়ে রাখার জন্য পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না।
উপরন্তু ডাক্তার, অধ্যাপক, অফিসার, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শহুরে এবং গ্রাম্য, জ্ঞানী-মূর্খ সব শ্রেণির লোকই এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এমনকি সৈন্যদের মধ্যেও সিপাহি থেকে নিয়ে অফিসার পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য একটি অংশ সমর্থন দেয়। কোনো কোনো অফিসার আর সিপাহি তো চাকরিই ছেড়ে দিয়েছেন, কিংবা ভিতরে থেকে জিহাদের সাহায্য করেছেন। কোনো কোনো অফিসার তো গণমাধ্যমে এসে মুজাহিদদের অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছেন।[4]
এমনভাবে রাজনৈতিক ধর্মীয় দলগুলোর মধ্য থেকে বিশেষ একটা অংশও যোগদান করেছেন, তারা জিহাদকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। বরং তাদের কিছু বড় নেতা প্রকাশ্যে মিডিয়াতে মুজাহিদদের সমর্থন দিয়েছেন। এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জ্ঞাপন করছি, আল্লাহ তাআলা এই কাজের প্রতিদান স্বরূপ ইহকাল-পরকালের মান মর্যাদা এবং চূড়ান্ত সাফল্য দান করুন।[5]
মোট কথা, জনসাধারণের এক বড় অংশ সাহসিকতা, বীরত্ব ও উদ্যমের সাথে এই মোবারক আন্দোলনে কোনো না কোনোভাবে অংশ নিয়েছেন। এখন কেউ যদি প্রশ্ন তুলে যে, এটা তো জনগণ ভিত্তিক আন্দোলন ছিল না! তাহলে (তার প্রত্যুত্তরে) আমি বলবো, যদি এটা জনগণ ভিত্তিক আন্দোলন নাই হতো তাহলে তো শক্রপক্ষকে কওমী অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করার প্রয়োজন ছিল না, যা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ সফল হয়নি।
অতঃপর বলবো যে, মুজাহিদদের আলোচনা আপাতত একদিকে রাখুন, শহীদগণ এবং কারাবন্দীদের ফিরিস্তিও যদি সামনে রাখা হয় তাহলেও বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, পাকিস্তানের ইতিহাসে জুলুম, অত্যাচার এবং কুফরী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের মাঝেই দেশব্যাপী এক জিহাদি আন্দোলন গড়ে উঠেছে।
এখানে আরেকটা সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করবো যে, ধন-সম্পদ আর স্বার্থের জন্য মানুষ যার-তার পিছনেই ছুটতে পারে, যেমনটি পাকিস্তানে চোর, গুণ্ডা বদমাইশ, লিডারদের পিছনে অধিকাংশ মানুষ ছুটতে থাকে। কিন্তু জীবন দেওয়ার জন্য, দেহ ছিন্ন-ভিন্ন করা, ঘর-বাড়ি বিরান করা, জীবন ও সম্পদকে সংকটে ফেলার জন্য বন্দীত্ব ও কষ্টের জীবন গ্রহণ কেউ কি চিন্তা-ভাবনা ব্যতিরেকেই করবে? না! কস্মিনকালেও না। ঈমান আর ইখলাস না থাকলে, সত্যবাদিতা না থাকলে কেউই আত্মোৎসর্গ করতে প্রস্তুত হবে না।
এ জন্য এটা শুধু আমাদের দাবি না বরং বাস্তবতা এই যে, পাকিস্তান জিহাদ ও শরীয়ত বাস্তবায়নের এই আন্দোলন শুধু শাসন ও কর্তৃত্ব বিস্তারের আন্দোলন ছিল না। বরং এটা এমন এক আন্দোলন, যার মধ্যে লোকজন নিষ্ঠা, সত্যবাদিতা এবং আত্মত্যাগের স্পৃহা নিয়ে দলবদ্ধ হয়েছেন। তারপর আমাদের প্রশ্ন হলো, পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক আন্দোলন কুরবানীর এমন মহান ইতিহাস রচনা করেছে? কেউ কি নিজ ঘর-বাড়ি নিজ এলাকা, নিজ গ্রাম সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্যের জন্য বিরান করতে পারবে? কোনো রাজনৈতিক দলের রুকনদের এত বড় কাফেলাকে আটক করা হয়েছে এবং লোমহর্ষক জুলুম করা হয়েছে? কোনো পার্টির রুকনদের এত বড় কাফেলাকে শহীদ করা হয়েছে? আর কোনো আন্দোলন এমন আছে যার অনুসারীরা এতো নিপীড়ন সত্ত্বেও নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে দাঁড়ায়নি?
বরং শত নির্যাতন আর নিপীড়নের সত্ত্বেও তারা দৃঢ়তা ও অবিচলতার এই মহান ইতিহাস রচনা করেছেন। পাকিস্তানের মধ্যে এটা শুধু এই জিহাদি আন্দোলনেরই কীর্তি। উপমহাদেশের জন্য এটা একটা ইতিহাস রচনা করবে। সত্য তো এটাই যে, এর মধ্যে এই রাষ্ট্রের প্রত্যেক হকপন্থীদের আলহামদুলিল্লাহ অবদান আছে, থাকবে ইনশাআল্লাহ। এই জিহাদি আন্দোলন রাষ্ট্রের প্রত্যেক পুণ্যবানের জন্য গর্ব ও দর্পের কারণ হওয়া চাই যে, দীনের জন্য এই রাষ্ট্রের মানুষ এই মহান আত্মদান দিয়েছেন, যেটা কোনো সেকুলারিস্ট (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী) ও জাতীয়তাবাদী (যে ধর্মের উপর দেশপ্রীতিকে প্রাধান্য দেয়) অতীত ইতিহাসে কখনোই দিতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না।
আস-সাহাব উপমহাদেশ: উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে সহযোগিতা ও বিরোধিতার ইস্যুটিতে ফিরে আসি। এখন তো কিছু আলেম জিহাদের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করছেন?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ: এক্ষেত্রে আমাদের মত হচ্ছে, ২০১৩ সাল পর্যন্ত কোনো হক্কানি আলেম জিহাদি আন্দোলনের বিরোধিতা করেননি। উল্লেখ্য যে, আমাদের নিকট উলামায়ে হক শুধু তারাই নয়, যারা আমাদের সাথে থেকে শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করছেন। বরং আল্লাহর ফযলে পাকিস্তানে এমন বহু আলেম রয়েছেন, ইলমে দীনকে পুঁজি করে জাগতিক স্বার্থ হাসিল করা যাদের উদ্দেশ্য নয়, বরং পরকালের কামিয়াবিই যাদের একমাত্র লক্ষ্য। তারা শাসকদের প্রভাব ও সংস্পর্শ থেকে মুক্ত থেকে একনিষ্ঠভাবে দীনের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দৃষ্টিতে তারাও হক্কানি আলেম। তাদের মধ্য হতে কোনো আলেম ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ভিত্তিক জিহাদি আন্দোলনের বিরোধিতা করেননি। বাস্তবতা হলো, ঐ সময়ে ফিকরি মাকাতিবগুলোর (চিন্তাকেন্দ্র/স্কুল অফ থট) এমন আলেমগণ কোনো না কোনোভাবে জিহাদের সহযোগিতা করেছেন। কেউ কম কেউ বেশি, কেউ প্রকাশ্যে কেউ গোপনে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, তাদের থেকে কখনো জিহাদের বিরোধিতা পরিলক্ষিত হয়নি।
২০১৩ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত যারাই জিহাদের বিরোধিতা করছে তাদের এই বিরোধিতার একটি কারণ বুঝে আসে, তা হলো- জিহাদের নামে যেসমস্ত জিহাদ বিরোধী কাজ করা হয়ে থাকে- তারা ঐ সমস্ত কর্মকাণ্ড ও শিরোনামের বিরোধিতা করে থাকেন। এগুলোর সমালোচনা আমাদের মুজাহিদ ভাইয়েরাও করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ দেখুন, সমালোচনাকারীদের মধ্য হতে একজন পরিচিত আলেম এবং আমাদের একান্ত শ্রদ্ধাভাজন মুফতী সাহেবের নিকট ২০০৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানে চলমান জিহাদের বিপরীত ফাতওয়া তলব করলেন। তখন ঐ মুফতী সাহেব সাথে সাথে তার মুখের উপর বলে দিলেন, আমেরিকার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করার সময় ফাতওয়ার প্রয়োজন হয় না? আজ কেন আপনাদের ফাতওয়ার এত প্রয়োজন? আল্লাহ তাআলা এই মুফতী সাহেব এবং তাঁর মতো অন্যান্য উলামায়ে কেরামকে উত্তম প্রতিদান দান করুন ! হকের উপর সর্বদা অবিচল রাখুন!!
আস-সাহাব উপমহাদেশ: কিছু দিন আগে ৩১জন উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে যৌথভাবে একটি বক্তব্য প্রকাশিত হয়, সেখানে তারা বলেছেন— জিহাদের জন্য পাকিস্তানের শাসকের অনুমতি লাগবে, একে তারা শর্ত হিসাবে উল্লেখ করেছেন, এ প্রসঙ্গে আপনাদের অভিমত কী?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ: আপনার প্রশ্নটির উত্তর দেয়ার পূর্বে সর্বপ্রথম মৌলিক কিছু কথা পেশ করতে চাচ্ছি, তা হলো, উলামায়ে কেরাম আমাদের মাথার মুকুট সমতুল্য। এমনকি আমরা জিহাদের যাবতীয় বিষয়াদি উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করে থাকি। তাঁরাই আমাদের নেতা ও আমীর, এমনভাবে আমাদের জিহাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো উলামায়ে কেরামকে তাঁদের আসল জায়গায় (তথা সামাজিক বিচার-আচারের সম্পূর্ণ নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব তাদের নিকট) ফিরিয়ে দেয়া। তাঁদেরকে এমন পরিবেশ উপহার দেয়া, যেখানে নির্যাতন, নিপীড়ন ও ত্রাসের রাজত্ব থাকবে না; বরং প্রত্যেকেই স্বাধীন ও মুক্তভাবে তাকওয়া ও ইলমে দীন মোতাবেক জনসাধারণকে পথ প্রদর্শনে সক্ষম হবেন।
এবার মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। যেহেতু আজ বাতিলের জুলুম, প্রতাপ, ধোঁকা, প্রতারণার জোয়ার বইছে, তাই সরকারের দালাল আলেমদের পাশাপাশি এমন কিছু ব্যক্তিদের থেকেও জিহাদের বিরোধিতা হচ্ছে, যাদের সম্পর্কে আমরা কল্যাণেরই আশা রাখি। সুতরাং বর্তমানে জিহাদের সমালোচনাকারী আলেমদের বিষয়টি আমরা আল্লাহর নিকটই সোপর্দ করছি। আমাদের মুজাহিদ ভাইদেরও এমন ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেওয়ার সাথে সাথে তাঁদের সমীপে এই আবেদনও করছি যে, এই ধরনের প্রোপাগান্ডার প্রত্যুত্তরের প্রয়োজন হলে ময়দানের উলামাদের প্রকাশিত জওয়াবগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। ইনশাআল্লাহ এর মধ্যেই আমাদের কল্যাণ ও মঙ্গল নিহিত রয়েছে।
পক্ষান্তরে ফাতওয়াটি সম্পর্কে বলবো, এধরনের ফাতওয়া আজ নতুন নয়। এর জওয়াব ও পর্যালোচনা পূর্ব থেকেই ফিকহের কিতাবাদিতে আছে। আলহামদুলিল্লাহ, এখনো রণাঙ্গনে এবং রণাঙ্গনের বাহিরে উম্মতের এমন বহু আলেম রয়েছেন, যারা ইলমকে আল্লাহর আমানত মনে করেন, শাসকদের এধরনের অপপ্রচারের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট। তাঁরাই হলেন নবীগণের প্রকৃত উত্তরসূরি, যাদের অনেককে শহীদ করা হয়েছে এবং অনেকের ক্ষত-বিক্ষত দেহ জেলখানা খেকে বের হয়েছে। কিন্তু তারপরেও তাঁরা মিথ্যাকে কখনো সত্য বলেননি। বরং তাঁরা নিজেদের জীবনে ইমাম আবু হানীফা (রহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহিমাহুল্লাহ) এর বিস্মৃত সুন্নাহর বাস্তবায়ন করেছেন।
আলহামদুলিল্লাহ, আজ সমগ্র বিশ্বের জিহাদি আন্দোলন এধরনের উলামায়ে হক্কানির নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।
আরো পরিতাপের বিষয় হলো আপনি যেই ফাতওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, সেখানে পাকিস্তান জিহাদকে রাষ্ট্রের অনুমোদনের সাথে শর্তযুক্ত করা হয়েছে। প্রথম কথা হলো, বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে চলমান জিহাদ হলো আত্মরক্ষামূলক জিহাদ, যেটা শরীয়তের দৃষ্টিতে ফরযে আইন।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, আপনারা জানেন যে, বর্তমান মুসলিম উম্মাহর উপর চেপে বসা শাসকরা নিজেদের রাষ্ট্রকে ইসলামী রাষ্ট্র বলে দাবি করে। গত বছর আফগানের কিছু উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে আশরাফ ঘানি এই ধরনের একটি ফাতওয়া প্রকাশ করে এবং সেখানে জিহাদকে আফগান সরকারের অনুমোদনের সাথে শর্তযুক্ত করেছে। এধরনের ফাতওয়া অনুযায়ী শুধু পাকিস্তানেই নই বরং আফগান, কাশ্মীর থেকে নিয়ে ফিলিস্তিন পর্যন্ত সারা বিশ্বের কোনো জিহাদে অংশগ্রহণ করা শরীয়ত সম্মত নয়। কারণ কোথাও এই শাসকরা জিহাদের ঘোষণা দেয়নি, বরং প্রতিটি জায়গায় তাঁরা জিহাদের পথে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছে, সব জায়গায় এরাই হলো মূল প্রতিবন্ধক। এ ফাতওয়াগুলো থেকে এ কথাও সাব্যস্ত হয় যে, এ পর্যন্ত বিশ্বে কুফফারদের বিরুদ্ধে যতগুলো জিহাদ হয়েছে সব ভুল ছিল ‘নাউযুবিল্লাহ’। তেমনিভাবে এই ফাতওয়া অনুযায়ী জালেম ও কাফের শাসকদের আনুগত্য করাটাই শরীয়তের বিধান। এখন আফসোস করা ছাড়া এই সম্পর্কে কী আর বলার আছে?
ইংরেজদের শাসনামলেও এখানে এই ধরনের কিছু ফাতওয়া প্রচার করা হতো, যেখানে জিহাদকে ব্রিটিশ সম্রাটের অনুমোদনের সাথে শর্তযুক্ত করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, পাকিস্তানের কিছু বড় আলেমে দীন উল্লেখিত ফাতওয়াকে অবৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁরা এটাও স্পষ্ট করেছেন যে, এই ফাতওয়ার মাধ্যমে আমেরিকা ও পশ্চিমাদের কল্যাণ হবে। আমরা তাঁদের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করি আল্লাহ যেন তাঁদের হকের উপর অবিচল রাখেন।
আস-সাহাব উপমহাদেশ: আমীন! কিন্তু একথা তো উপেক্ষা করা যায় না যে, এখানে জিহাদের নামে কিছু অন্যায় কাজ সংঘটিত হয়েছে, যেগুলো মুজাহিদদের কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, জিহাদের বদনাম করেছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ: দেখুন, জিহাদের নামে এমন কিছু কার্যক্রম অবশ্যই হয়েছে এবং এই কর্মকাণ্ডের কারণে জিহাদি আন্দোলনই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আবার কিছু কিছু কার্যক্রম জিহাদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমেই হয়েছে, একথা আমি অস্বীকার করছি না (যেটা আমাদের আলোচ্য বিষয়, ‘ইনশাআল্লাহ’ এ বিষয়ে আমি আলোচনা করবো)। কিন্তু এর পূর্বে এসবের প্রেক্ষাপট জেনে রাখা দরকার, যাতে করে এগুলোর মূল কারণ বুঝতে সুবিধা হয়।
বাস্তবতা এই যে, পাকিস্তানে জিহাদের এই পুণ্যময় আন্দোলন সাধারণ মানুষ দ্বারা পরিচালিত জিহাদি আন্দোলন ছিল। পুরো পাকিস্তানের মাঠ পর্যায়ে এককভাবে কোনো জামাআত, আন্দোলন অথবা কোনো এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে ছিল না। ব্যক্তিত্বের প্রভাবকে আমি অস্বীকার করছি না, বরং সাধারণ লোকেরা বিভিন্ন উপদলের শিরোনামে ব্যক্তিবর্গের পাশে এসে ভিড় করে, কিন্তু পুরো ময়দানে একক কোনো ব্যক্তির নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব অথবা একক কোনো শক্তি (চেইন অব কমান্ড) কখনো ছিল না। যখন লোকেরা কাফের গোষ্ঠী কর্তৃক কোনো আক্রমণ দেখতে পায় কিংবা পাকিস্তানি সেনাদের কোনো অন্যায় তাদের দৃষ্টিগোচর হয় তখন তারা বিভিন্ন দল, উপদল, সংগঠন ও সংস্থার ব্যানারে নিজেরাই জিহাদের ঘোষণা দিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। সকলের একটাই উদ্দেশ্য আর তা হলো- দীন-ইসলামের বিজয়, মুসলমানদের সহায়তা এবং আমেরিকা ও কুফফারের সংরক্ষক পাকিস্তানি সেনাদের বিপরীতে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতিরক্ষা করা। এভাবে সকলেই সাধারণভাবে রুখে দাঁড়ায়। তবে কাবায়েল থেকে সোয়াত পর্যন্ত যে সকল জিহাদি শক্তি ছিল, সেগুলো একটা স্তরে সুসংগঠিত ছিল, যার মধ্যে অনেক কল্যাণকামীর অংশ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং তাদেরকে সাহায্য করুন।
কিন্তু এরপরও এসকল উপজাতি ও সংগঠন এমন কোনো একক তানজীম অথবা জামাতের অধীনে ছিল না, যারা তাদের কথা ও কর্মের সম্পূর্ণরূপে মুহাসাবা করবে। অর্থাৎ তারা কখনো একক তানজীম বা এক আমীরের অধীনে চলেনি। সংগঠন ছিল স্বাধীন, কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছিল না। আর এধরনের পরিস্থিতিতে এভাবে চলাটা খুব বেশি দোষের কিছু ছিল না। আর অতীত ইতিহাসেও আমরা দেখতে পাই প্রথম অবস্থায় জিহাদের সূচনা এভাবেই হয়েছে। যেমন সালাউদ্দীন আইয়ুবী (রহিমাহুল্লাহ) এর যুগে ক্রুসেডারদের সাথে যুদ্ধের সূচনালগ্নে এমনটা হয়েছে। তিনি প্রথমে বিচ্ছিন্ন শক্তিগুলোকে একত্রিত করেছেন। সমগ্র বিশ্বের যেখানেই জনসাধারণের মধ্যে জিহাদি আন্দোলনের সূচনা হয়েছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকে। এভাবে চলতে চলতে বিভিন্ন পরিস্থিতির পরিবর্তনের সাথে সাথে তারা সকলে একটি সুনির্দিষ্ট মূলনীতির উপর উঠে আসে। এখন এই পর্যন্ত সম্পূর্ণ জিহাদের নিয়ন্ত্রণ জনসাধারণের হাতে ছিল। সুতরাং এই অবস্থায় কিছু সংখ্যক ব্যক্তির অমূলক কর্মকাণ্ডের দায়ভার পাকিস্তানে বিদ্যমান সকল মুজাহিদ ও জিহাদি সংগঠনের উপর কোনোভাবেই চাপিয়ে দেয়া যায় না।
আস-সাহাব উপমহাদেশ: আপনার কথা দ্বারা কি উদ্দেশ্য এই যে, পাকিস্তানের জিহাদি আন্দোলনে কিছু অসৎ লোকও আছে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ: দেখুন, আমি আবারো বলছি যে, জিহাদি শক্তিগুলো বিক্ষিপ্ত ও বিশৃঙ্খল ছিল, তাদের কারো মাঝেই আভ্যন্তরীণ কার্যকরী শক্তি ছিল না। আমি এটাও বলবো যে, জনসাধারণের মাধ্যমে পরিচালিত জিহাদি আন্দোলনগুলো সূচনালগ্নে এমনি হয়ে থাকে। এটা পুরোপুরি দোষের কিছু নয়। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে কিছু কাজ নেওয়া হয়েছে। অসৎ লোকেরাও এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে। এমন ব্যক্তি যদিও সংখ্যায় নগণ্য কিন্তু তারা সর্বদা ছিল এবং তাদের কারণে জিহাদি আন্দোলনের সমালোচনাও হয়েছে।
এখানে আমি আরেকটি বিষয় আলোচনা করতে চাই যে, অসৎ লোক থাকাটা কোনো নতুন কথা নয়। এধরনের কুচক্রী মহল ইতিহাসের প্রতিটি যুগেই ছিল। কখনো সংখ্যায় কম, কখনো বেশি। কখনো কখনো তারা ফিতনা সৃষ্টি করার সুযোগ পেয়েছে। আর কখনো তারা মাটিতে দাফন হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
وجعلنابعضكم لبعض فتنة
অর্থ: “আমি তোমাদের কতককে কতকের জন্য পরীক্ষা বানিয়েছি।”
أتصبرون অর্থ: “তোমরা কি ধৈর্যধারণ করবে না?” সত্যের পথে অবিচল থাকবে কিনা? আর এভাবে আল্লাহ মুজাহিদদের পরীক্ষা করে থাকেন। এটা দেখার জন্য যে, কারা আমর বিল মারূফ ও নাহী আনিল মুনকার (সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ) এর গুরুত্বপূর্ণ ফরয আদায় করে আর কারা করে না? তদ্রূপ কারা এ পরিস্থিতিতে জিহাদের পথে অটল থাকে আর কারা কিছু সাথির উসুলহীনতার (নীতি বহির্ভূত কাজের) কারণে এই ফরয কাজ ছেড়ে আল্লাহর অসন্তুষ্টিতে নিপতিত হয়।
এটা স্পষ্ট যে, জিহাদ আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত ফরয ইবাদত। জুলুম ও কুফরের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াই করা আল্লাহ কুরআনে ফরয করেছেন। এই সম্পর্কে কেয়ামতের দিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। তেমনিভাবে কয়েকজনের বিতর্কিত কাজের অজুহাত দেখিয়ে ফরয বিধান কখনো ছাড়া যাবে না। এটাই হচ্ছে মুজাহিদীন ও সকল মুসলমানের জন্য বড় পরীক্ষা। এরপর লক্ষ্য করুন, এমন কোন্ ময়দান আছে অথবা দীনের এমন কোন্ শাখা আছে যার মধ্যে সকল ব্যক্তিই ভালো?
বাহ্যিকভাবে এমন কোনো ময়দান নেই। আর প্রতিটি ময়দানেই যেমন কিছু সৎ ব্যক্তি থাকে তেমন কিছু অসৎ ব্যক্তিও থাকে। আর অসৎ লোকদের টার্গেট থাকে সৎ লোকদের ঘাড়ে পা রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়া। সুতরাং এটাকে পরীক্ষাই বলতে হবে।
এখানে আরেকটি বিষয় আমি অলোচনা করতে চাই। তা হলো, দুই ক্ষেত্রে দুই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি কেন? অন্য সকল ময়দানের মধ্যে খারাপ ব্যক্তিদের উপস্থিতি সত্ত্বেও তাতে ময়দান ছেড়ে দেওয়া হয় না এবং ঐ ময়দানকে খারাপ বলা হয় না। কিন্তু জিহাদের ময়দানে কয়েকজনের দুশমনের সাথে আঁতাত করার কারণে পুরো জিহাদি আন্দোলনের উপর আঙ্গুল তোলা হয়। এ কেমন ইনসাফ? কেমন নীতি?
যেমন আপনি গণতান্ত্রিক দলগুলোর প্রতি লক্ষ করুন। সেখানে খারাপের পরিমাণটাই বেশি। সেখানে নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্ট লোক, চোর ও খুনিদের উপস্থিতি সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে খারাপ বলা হয় না। বরং খারাপ লোকদের উপস্থিতিকে গণতন্ত্র উত্তম বলে দাবি করে থাকে।
কিন্তু জিহাদের ময়দানের আলোচনা আসলেই দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই পরিবর্তন হয়ে যায়। অথচ আলহামদুলিল্লাহ এখানে সৎ ও একনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সংখ্যা বেশি। আর এতো সৎ লোকের মাঝে যদি কয়েকজন শরীয়ত বহির্ভূত কোনো কাজ করে থাকে তাহলে পুরো জিহাদি আন্দোলনের বিরুদ্ধে কথা বলা কি বৈধ হয়ে যাবে? এটা ইনসাফের কথা নয় আর ইলমের দাবিও এমনটি নয়। এমনটি আমাদের রাসূলের আদর্শও নয়।
আস-সাহাব উপমহাদেশ: আচ্ছা, এসকল গায়রে শরয়ী কর্মকাণ্ড বন্ধে কি আপনাদের কোনো উদ্যোগ আছে, নাকি আপনারা পূর্ণ নীরবতা অবলম্বন করেন?
উস্তাদ উসামা মাহমূদ: দেখুন! প্রথমে আমি নিজ জামাআতের আলোচনা করবো। এধরনের গায়রে শরয়ী ও ভুল কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা আমরা ও আমাদের জামাআত প্রথম দিন থেকেই করে আসছে। কিন্তু শুধু আমরাই যে করি, তা নয়। বরং বাস্তবতা এই যে, আমাদের জামাতের বাহিরেও আলহামদুলিল্লাহ মাহসুদ থেকে সোয়াত এবং বাজোড়া পর্যন্ত যেখানেই জিহাদি আন্দোলনের মধ্যে সৎ ও একনিষ্ঠ লোকদের সংখ্যা বেশি তারা এমন গায়রে শরয়ী কর্মকাণ্ডকে কখনো পছন্দ করেননি। এখানে আমি প্রথমে এই সংখ্যাগরিষ্ঠ সৎ ব্যক্তিদের সম্পর্কে কিছুটা সবিস্তারে আলোচনা করতে চাই। দেখুন, মাহসূদ থেকে সোয়াত ও বাজোড় পর্যন্ত এই সৎ ব্যক্তিরা ঐতিহাসিকভাবে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছে যারা শরীয়তের প্রতি ভালোবাসা ও উম্মাহর সাহায্যের জন্য নিজেদের ঘর-বাড়ি, বসত-ভিটা বিরান করে দিয়েছেন।
আজ তারা মাজলুমের সহযোগিতার অপরাধে ফেরারি। আর তাদের জমি-জমা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সঞ্চিত সকল অর্থ সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদের এক একটি দল, জামাআত ও গোষ্ঠীর শাহাদাত বরণ এবং ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস ও দাস্তান অনেক বড়। তাদের এসকল ত্যাগ-তিতিক্ষা কোনো ধরনের দুনিয়াবি স্বার্থ অর্জনের উদ্দেশ্যে নয়। বরং তারা শুধু আল্লাহর প্রতিদানের আশা রাখে।
পাকিস্তানের একজন সৈন্য যখন মৃত্যু বরণ করে তখন তার পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট-ভাতার বরাদ্দ দেয়া হয়। বিপরীতে যারা দুনিয়াবি কোনো বিনিময় ছাড়া একমাত্র আল্লাহর দীন ও উম্মতের জন্য কাজ করছে তাদের সর্বস্ব লুটে নেয়া হচ্ছে। তাই এখানে যে সৎ ব্যক্তিদের বিরাট কাফেলা আছে তাঁরা পাকিস্তানি জিহাদি আন্দোলনের মূল ব্যক্তিবর্গ।
বস্তুত যখনই জিহাদের সমালোচনা করার সুযোগ তৈরি করে এমন কোনো কাজ চোখে পড়ে বা জিহাদি আন্দোলনের মাঝে অবৈধ কোনো চিন্তা প্রবেশ করে- তখনই সৎ ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে এবং তাদের মাঝে এক্ষেত্রে আলহামদুলিল্লাহ এসকল কাজের প্রতি ঘৃণা দেখা গিয়েছে।
আল-কায়েদার মাশায়েখ ও উমারাসহ পাকিস্তান জিহাদে অংশগ্রহণকারী মাহসুদ থেকে সোয়াত এবং বাজোড়া পর্যন্ত অন্যান্য সকল সংশোধনকারী মুজাহিদ আলেমগণ জিহাদি আন্দোলনকে মুসলমানদের হেফাযত, হেদায়াত (সুরক্ষা-পথপ্রদর্শন) কল্যাণকামিতা (যা শরীয়তের মৌলিক মাকসাদ-উদ্দেশ্য)-এর উপর টিকিয়ে রাখার যে অসামান্য প্রচেষ্টা করে আসছেন তার ফলাফল অচিরেই আমাদের চোখের সামনে ফুটে উঠবে, ইনশাআল্লাহ।
আস-সাহাব উপমহাদেশ: জিহাদি আন্দোলনের সংশোধনকারী কিছু উদ্যোগের কথা কি শুনাবেন?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ: যখন পাকিস্তানে কিছু বোমা হামলার ঘটনা ঘটে তখন শায়খ উসামা (রহিমাহুল্লাহ), আইমান আয-যাওয়াহিরী (হাফিযাহুল্লাহ) এবং আতিয়াতুল্লাহ (রহিমাহুল্লাহ), আহমাদ ফারুক (রহিমাহুল্লাহ) ও আসেম উমর (হাফিযাহুল্লাহ) এ নিয়ে যারপরনাই পেরেশান ছিলেন। অত্যন্ত অস্থিরতা তাদেরকে সংশোধনের দিকে ধাবিত করলো এবং তারা ইসলাহী কাজে গভীরভাবে মনোনিবেশ করলেন। মুফতী ওয়ালিউর রহমান এবং আযম তারেক (রহিমাহুল্লাহ) থেকে নিয়ে সোয়াত এবং বাজোড়-এর সকল মুখলিস মুজাহিদ মিলে গায়রে শরয়ী কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য সম্মিলিত চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এবিষয়ে তারা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং ফাতওয়া দিয়েছেন। জিহাদি নেতৃবৃন্দের কাছে বিভিন্ন চিরকুট পাঠিয়ে এমনকি সরাসরি দেখা করে নিজ আমলের মাধ্যমেও ইসলাহীমূলক কার্যকম অব্যাহত রেখেছেন।
শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহুর ঘর থেকে যে সব নথিপত্র আমেরিকা পেয়েছে। (যা এখন প্রকাশও হয়েছে) এ নথিপত্রগুলোতেও ফুটে উঠেছে উম্মতের প্রতি শায়খ উসামা (রহিমাহুল্লাহ) এবং সকল মুজাহিদের দরদ ব্যথার প্রকৃত অবস্থা— তাদের জবাবদিহিতার ফিকির, আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয়, উম্মতে মুসলিমার প্রতি ভালোবাসা, মহব্বত ও কল্যাণকামিতা।
একাগজগুলোর মধ্যে একটা কাগজ পাওয়া গিয়েছে, যেখানে শায়খ উসামা বিন লাদেন (রহিমাহুল্লাহ) পাণ্ডির একটি আক্রমণের বেশ সমালোচনা করেছেন। যেখানে মূল টার্গেট ছিল সেনাবাহিনীর বড় বড় অফিসার। মুজাহিদদের দৃষ্টিতে অনেক বড় অপরাধী আইএসআই এর চীফ জেনারেল ইউসুফ বড় ধরনের আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এত একটা গুরুত্বপূর্ণ আক্রমণকেও শায়খ উসামা (রহিমাহুল্লাহ) ভুল বলেছেন। কেননা হামলাটি হয়েছে মসজিদে।
শায়খ লিখেছেন যে, “মসজিদ আল্লাহর ঘর। এতে মানুষ নামায পড়তে আসে। সুতরাং মসজিদে যদি বড় থেকে বড় অপরাধী আসে তাকে টার্গেট করা যাবে না।” তিনি আরও লিখেছেন, “যে সকল স্থানে আম মুসলমানের আনাগোনা বেশি অর্থাৎ বাজার-ঘাট, পার্ক, কোর্ট-কাচারি- ঐ সমস্ত স্থানে মুসলমানের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো অপরাধীকে কেন্দ্র করে হামলা করা যাবে না।”
এখানে আমি শায়খ আতিয়াতুল্লাহ (রহিমাহুল্লাহ)’র উদ্ধৃতি দিয়ে উদাহরণস্বরূপ একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। খুব সম্ভব ২০১০ সালের দিকের ঘটনা। স্টেডিয়াম ও জানাযায় বোমা হামলা হয়। মূল টার্গেট ছিল সুনির্দিষ্ট আসামীরা, কিন্তু তাদের সাথে সাথে সাধারণ মানুষও শহীদ হয়।
এটা তখনকার কথা যখন ওয়াজিরিস্তানে ব্যাপকভাবে শায়খদেরকে শহীদ করা হচ্ছিলো। কয়েকদিন পরপরই ড্রোন হামলা হচ্ছিলো, যাতে আল-কায়েদার উমারা শহীদ হচ্ছিলেন। শায়খ মোস্তফা আবু ইয়াজিদ (রহিমাহুল্লাহ) শহীদ হয়ে যান। এদিকে শায়খ আতিয়াতুল্লাহ (রহিমাহুল্লাহ)’র একটি বয়ান প্রচারিত হয়, যা ব্যাপক প্রচার হয়। এখনো পর্যন্ত যা বৈশ্বিক জিহাদি আন্দোলনের সকল জিহাদের মুসলিহিন (সংস্কারক)’র নিকট অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সমাদৃত হয়ে আসছে।
ঐ বয়ানের বিষয়বস্তু তো সকলের জানা আছে। কিন্তু এই বয়ানটি কোন পরিস্থিতিতে, কোন সময়ে এবং কী পরিমাণ দরদ ও ইখলাসের সাথে বক্তব্যটি রেকর্ড করা হয়েছে- নিশ্চিতভাবে তা খুব অল্পসংখ্যক মানুষের জানা আছে। তখন শায়খ ওয়াজিরিস্তানের উত্তরাঞ্চলে এক এলাকায় এসেছিলেন। তিনি যেই ঘরে ছিলেন ঐ ঘরকে লক্ষ্য করে দুই দিনে চারবার ড্রোন চক্কর দিয়ে গেছে। স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে যে, ড্রোনগুলো শায়খের অনুসন্ধান করছে। তখন শায়খ (রহিমাহুল্লাহ) জরুরি কাজের কথা বলে কিছুটা দূরে অবস্থিত এক বাড়িতে যেতে চাচ্ছিলেন। তাই তিনি তড়িৎ গতিতে গাড়িতে উঠে সামনের সিটে বসলেন। গাড়ি যখন ঐ ঘরের কাছাকাছি পৌঁছে তখন একটি উটের পাশে এসে গাড়ি স্লো হয়ে যায়, যাতে শায়খ ড্রোনকে ফাঁকি দিয়ে ঘরে ঢুকে যেতে পারেন। শায়খ গাড়ি থেকে নামার পর গাড়িটি ১৫ মিটার দূরেও যেতে পারেননি। ড্রোন থেকে দুটি মিসাইল এসে গাড়িটিকে ধ্বংস করে দেয়। গাড়ির সাথিও শহীদ হয়ে যায়।
অতঃপর শায়খ যেই ঘর থেকে পূর্বে রওনা হয়েছিলেন। সেই ঘর থেকে আরেক ভাই শায়খের খবরাখবর জানতে মোটর সাইকেলে করে রওনা হন। যেই না সেই ঘরের নিকটবর্তী হন অমনি আরেকটি মিসাইল এসে এ ভাইকেও শহীদ করে দেয়। একটু চিন্তা করুন, ডানে বামে বোমা বর্ষণ হচ্ছে। তখন শায়খের অবস্থা সম্পর্কে একটু ভেবে দেখুন এবং তিনিও তখন কী ভাবছিলেন! কিন্তু এমন নাজুক পরিস্থিতিতেও ‘মেজবানের ভাষ্য অনুযায়ী’ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েই বললেন যে, ক্যামেরা অন কর। আমি একটি বয়ান রেকর্ড করতে চাই। তারপর তাঁর সামনে ক্যামেরা অন করা হলে তিনি নিম্নের ঐতিহাসিক শব্দগুলো (ভাষণ) বলেন যে, “আমাদের পুরো জামাত ধ্বংস হয়ে যাক, আমাদের সকল প্ল্যান-পরিকল্পনা ধুলোয় মিশে যাক, তবুও খবরদার! আমাদের হাত যেন কখনো কোনো মুসলমান ভাই-বোনের না-হক (অবৈধ) রক্তে রঞ্জিত না হয়”[6]
তাঁরাই ছিলেন আল্লাহ তাআলার মুজাহিদ বান্দা যারা একদিকে আমেরিকা ও তাদের রক্ষক পাকিস্তানি জেনারেলদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করতেন এবং অন্যদিকে অন্যদের তাদের বিরুদ্ধে লড়তে উদ্বুদ্ধ করতেন।
আস-সাহাব উপমহাদেশ: সম্মানিত দর্শকবৃন্দ! এখানেই আমাদের সাক্ষাৎকারের তৃতীয় পর্ব সমাপ্ত হতে চলেছে। সামনের পর্বে শেষের আলোচ্য বিষয়টি নিয়ে আমরা সামনে কথা বলার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আল্লাহ হাফেজ।
[1] জেনারেল নাসের জঞ্জুআ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল-কে ইন্টারভিউ দেয়ার সময় মার্কিন যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভূমিকা কিছুটা এভাবে বর্ণনা করেছেন:
“আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না যে, একজন ফৌজি জেনারেলের জন্য এ বিষয়টা কতটা বিব্রতকর! যখন আমরা জীবন উৎসর্গ করছি, তখন মানুষ সেটাকে মূল্যায়ন না করে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিচ্ছে। দেখুন সৎ ভাই বলে কিছু একটা আছে, সেটা তো আমরা জানি কিন্তু আপনি কখনোই এমনটা শুনতে পাবেন না যে, বন্ধুত্বের মধ্যেও আধা-আধি বলে কিছু একটা আছে। সৎ ভাইয়ের মতো সৎ বন্ধুও বুঝি হয়! আমরা জোটের শরিক। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বৈশ্বিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি। আমরা নিজেদের সবকিছু নিবেদন করেছি। আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমরা সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার করেছি। আমরা সবচেয়ে বেশি হত্যা করেছি—অন্য যে কারো চাইতে বেশি। এই সমস্ত কিছু আমরা দুনিয়ার জন্য করেছি।”
[2] এই জায়গায় মুফতি নিজাম উদ্দিন শামজাই রহিমাহুল্লাহ ফতোয়া দিয়েছিলেন যে-
“যদি কোনো সেনাসদস্যকে কোনো মুসলমান হত্যা আর ফাঁসি বা কোর্ট মার্শালের মধ্য থেকে কোনো একটা বাছাই করতে হয়, তাহলে আল্লাহর আইন অনুযায়ী ওই সেনা সদস্যের জন্য আখেরাতের দিক থেকে সবচেয়ে সহজ ও বৈধ অপশন হলো: সে নিজের জন্য কোর্ট মার্শাল ও ফাঁসির পথ বেছে নেবে।”
[3] লাল মসজিদের হকপন্থী উলামায়ে কেরাম ওই সময় উম্মাহর সালফে সালেহীন-এর স্মৃতি জীবন্ত করে একটি ফতোয়া প্রকাশ করেন, যেখানে কুরআন সুন্নাহর আলোকে একথা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছিল যে, প্রত্যেক মুসলমান সেনা সদস্যের জন্য আবশ্যক হলো, মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দেওয়া; অন্যথায় সেও মুসলিম হত্যায় বরাবর শরিক বলে গণ্য হবে। এমন ব্যক্তি কবিরা গুনাহে লিপ্ত ধর্তব্য হবে। সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী বলে বিবেচিত হবে। তার মৃত্যু হলো হারাম মৃত্যু। কখনোই তাকে শহীদ বলা হবে না। এমন ব্যক্তির জানাজার নামাজে কেউ যেন শরিক না হয়। এমন ব্যক্তির জানাযার নামাজ পড়ানোর জন্য কেউ যেন অগ্রসর না হয়। পাকিস্তানের হাজার হাজার উলামায়ে কেরাম এবং বিভিন্ন দারুল ইফতা থেকে এই ফতোয়ার পক্ষে সমর্থন ও স্বাক্ষর গৃহীত হয়। দীনি বিভিন্ন পরিবেশে এই ফতোয়া খুবই প্রচার-প্রসার হয়।
[4] সাবেক চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল (রিটায়ার্ট) শাহেদ আজিজ একটি টিভি প্রোগ্রামে বলেছেন:
“আফগানিস্তানে আমেরিকার দখলদারিত্ব অবৈধ। তারা মুসলমানদের দেশে চেপে বসে আছে। আমরাও এই দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনে অংশীদার। আমরা আফগানিস্তানে এন্টি-টেরোরিস্ট ওয়ার লড়ে যাচ্ছি। আমাদের এ বিষয়ে কনফিউসড হওয়ার প্রয়োজন নেই। পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বর্তমানে আফগানিস্তানে আমেরিকার হাতে আফগানদের নিহত হওয়ায় ততটাই শামিল ও অংশীদার, আমেরিকা নিজে যতটা অংশীদার। যখন আপনি আফগানিস্তানে আমেরিকার সাথে জোটবদ্ধ, আফগানিস্তানে মুসলমানদের হত্যায় শামিল, তো এখন যে মুসলমানরা আফগানিস্তানে আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তাদের সম্পর্ক উপজাতীয় এলাকার লোকদের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ ও মজবুত, এটা আপনার মাথায় রাখতে হবে। এর কারণ হলো যখনই মুসলমানেরা কোনো চাপের মধ্যে পড়ে, তখন কোনো একটা জায়গায় আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। চাই সে জাতীয়তাবাদী কারণের ভিত্তিতে লড়াই করুক কিন্তু তবুও ধর্মীয় প্রয়োজনীয়তা তাতে চলে আসে। কারণ তার সমস্ত মোটিভেশন আসে দীন থেকে। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এই দেশে দীনের নাম নেয়াকে জাহেলিয়াত মনে করতে আরম্ভ করেছি। কারণ এটাও প্রোপাগান্ডার ফল। যেমন এই প্রপাগান্ডা করা হয়েছে যে, পাকিস্তান নিজের লড়াই লড়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানকে আফগানিস্তান থেকে আলাদা করে ক্ষুদ্র চিত্র দেখানো হয়েছে। এমনিভাবে আজ পাকিস্তানে এই প্রপাগান্ডা করা হচ্ছে, যে ব্যক্তি ধর্মের নাম নেবে সে চরমপন্থী; তার কথা শোনার উপযুক্ত নয়।”
সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন: “এটা আমাদের লড়াই নাকি না?”
শাহেদ আজিজ সাহেব বললেন: এটা একেবারেই আমাদের লড়াই নয়; এটাকে আমাদের লড়াই বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
[5] মুহতারাম সাইয়েদ মনোয়ার হাসান (আল্লাহ তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করুন!)। টিভি চ্যানেলে তাঁর একটা আলোচনা উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা হচ্ছে:
সাংবাদিক: আফগান সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ জায়েজ কি?”
সাইয়েদ মনোয়ার হাসান সাহেব: কার জিহাদ?
সাংবাদিক: আফগান তালেবান, আপনি যার সমর্থক। তারা যে আফগান সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ করছে এটা কি জায়েজ আছে?
সাইয়েদ মনোয়ার হাসান সাহেব: যদি আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ জায়েজ হয়ে থাকে তাহলে যারা আমেরিকাকে সঙ্গ দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও জিহাদ কেন জায়েজ হবে না? নতুবা এরপর তো আমেরিকানদেরকেও শহীদ বলতে হবে—যারা তাদের মধ্যে নিহত হচ্ছে।
সাংবাদিক: আমি দুঃখিত মনোয়ার হাসান সাহেব তাহলে আপনি বলুন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ জায়েজ আছে কিনা?
সাইয়েদ মনোয়ার হাসান সাহেব: আমি মনে করি এ বিষয়ে মানুষের চিন্তা ভাবনা ও গভীর উপলব্ধি প্রয়োজন।
সাংবাদিক: জিহাদ জায়েজ কি?
সাইয়েদ মনোয়ার হাসান সাহেব: যদি পাকিস্তানের সরকার আমেরিকার সাথে থাকে, আমেরিকার সাথে মিলে যদি মুসলমানদের শক্তি ধ্বংস করে দিতে থাকে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে আগুন ও খুনের দরিয়ায় ভাসিয়ে দিতে থাকে, তাহলে এ বিষয়ে উলামায়ে কেরামের ফতোয়া দেয়া উচিত। আমি আগের কথা আবারও বলছি—যেখান থেকে কথা শুরু হয়েছিল। যারা আমেরিকার সাথে থাকবে তাদের ক্ষেত্রে সেই একই বিধান, যেই বিধান আমেরিকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই বিধান পরিবর্তন হবার নয়।
[6] শায়খ আতিয়াতুল্লাহ্ রাহিমাহুল্লাহর নিম্নোক্ত বিবৃতি থেকে কিছু উদ্ধৃতি:
“চাই আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাক, আমাদের জামাতগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাক, আমাদের সমস্ত পরিকল্পনা মাটির সাথে মিশে যাক, কিন্তু আমাদের হাত দ্বারা অন্যায় ভাবে কোনো মুসলমানের রক্ত যেন প্রবাহিত না হয়। নিঃসন্দেহে এটা অত্যন্ত পরিষ্কার ও অকাট্য বিষয়।”
....“নিজেদের বিশুদ্ধ পথ ও পন্থা সুস্পষ্ট করার জন্য, আল্লাহ তাআলার কাছে কারণ দর্শানোর জন্য এবং পবিত্র জিহাদী আন্দোলন শরীয়তের মূলনীতি পুরোপুরি আমলে নিয়ে নেবে এই প্রত্যাশা সামনে রেখে আমরা অত্যন্ত জোরালোভাবে মুসলমানদেরকে টার্গেট করে পরিচালিত সব হামলার ব্যাপারে পুরোপুরি দায়মুক্তি ঘোষণা করছি। এই জাতীয় হামলা মুসলমানদের মসজিদগুলোতে হোক, বাজারগুলোতে হোক অথবা অন্য কোনো জনসমাগমের জায়গায় হোক—সবগুলোর ব্যাপারে একই কথা। আলকায়দা এবং তার নেতৃত্ব নিজেদের বয়ান বক্তৃতা বিবৃতি ও বার্তাগুলোতে বারংবার এই বিষয় জোর দিয়েছেন, আমরাও দাওয়াতের মাধ্যমে আমাদের কর্মপন্থা অনুযায়ী আমল করে উপরোক্ত বিষয়টা সকলের কাছে পুরোপুরি সুস্পষ্ট করে তুলেছি।”
“অতএব এ জাতীয় কোনো কাজের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। এই কাজগুলো কোথায় হচ্ছে এবং কারা করছে তা দেখার প্রয়োজন নেই। এই কাজগুলো শত্রুদের অপরাধী সেল করুক অথবা নিরাপত্তার নামে প্রতিষ্ঠিত কাফেরদের ঘাতক গ্রুপ (গুপ্ত এজেন্সি ইত্যাদি) যারাই করুক না কেন, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শাস্তি দান করুন! মুসলমানদের অথবা মুজাহিদদের মধ্য থেকেও কেউ যদি এই কাজ করে এবং এমন কাজকে হালকা মনে করে কোনো প্রকার বিচ্যুতির শিকার যদি হয়; যারাই এজাতীয় কাজ করুক না কেন, আমরা একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, এজাতীয় কাজকর্ম পৃথিবীর বুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত। এমন কাজ করতে আমাদেরকে বারণ করা হয়েছে-
وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الفساد
অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশৃঙ্খলা পছন্দ করেন না।”
আল্লাহপাক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদেরকেও পছন্দ করেন না। আমাদের বরকতময় শরিয়াভিত্তিক জিহাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য অত্যন্ত উঁচু এবং সবার শীর্ষে। (সেগুলো হলো:) রহমত দয়া অনুগ্রহ ইন্সাফ ন্যায় পরায়ণতা সৎকর্মশীলতা, অনুগ্রহের ভাবধারা চর্চা, সম্মান মর্যাদার জীবন অর্জন, অবস্থার সংশোধন, দুনিয়া আখেরাতের কামিয়াবি সফলতা এবং সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন, আল্লাহ তাআলার সাহায্যকারীদের কাতারে শামিল হওয়া, যেন আমরা আল্লাহ তাআলার বাণী সমুন্নত করতে পারি, আল্লাহর দীনের সাহায্য ও হেফাজত করি, সত্যকে সত্য হিসেবে প্রমাণ করে দেখাই, জুলুম অত্যাচারের অবসান ঘটাই, মানবসমাজকে গাইরুল্লাহর দাসত্ব থেকে মুক্ত করি, পৃথিবীকে কুফর শিরকের অপমিশ্রণ থেকে পবিত্র করি, পৃথিবীবাসীর উপকার করি।”
[1] জেনারেল নাসের জঞ্জুআ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল-কে ইন্টারভিউ দেয়ার সময় মার্কিন যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভূমিকা কিছুটা এভাবে বর্ণনা করেছেন:
“আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না যে, একজন ফৌজি জেনারেলের জন্য এ বিষয়টা কতটা বিব্রতকর! যখন আমরা জীবন উৎসর্গ করছি, তখন মানুষ সেটাকে মূল্যায়ন না করে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিচ্ছে। দেখুন সৎ ভাই বলে কিছু একটা আছে, সেটা তো আমরা জানি কিন্তু আপনি কখনোই এমনটা শুনতে পাবেন না যে, বন্ধুত্বের মধ্যেও আধা-আধি বলে কিছু একটা আছে। সৎ ভাইয়ের মতো সৎ বন্ধুও বুঝি হয়! আমরা জোটের শরিক। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বৈশ্বিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি। আমরা নিজেদের সবকিছু নিবেদন করেছি। আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমরা সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার করেছি। আমরা সবচেয়ে বেশি হত্যা করেছি—অন্য যে কারো চাইতে বেশি। এই সমস্ত কিছু আমরা দুনিয়ার জন্য করেছি।”
[1] এই জায়গায় মুফতি নিজাম উদ্দিন শামজাই রহিমাহুল্লাহ ফতোয়া দিয়েছিলেন যে-
“যদি কোনো সেনাসদস্যকে কোনো মুসলমান হত্যা আর ফাঁসি বা কোর্ট মার্শালের মধ্য থেকে কোনো একটা বাছাই করতে হয়, তাহলে আল্লাহর আইন অনুযায়ী ওই সেনা সদস্যের জন্য আখেরাতের দিক থেকে সবচেয়ে সহজ ও বৈধ অপশন হলো: সে নিজের জন্য কোর্ট মার্শাল ও ফাঁসির পথ বেছে নেবে।”
[1] লাল মসজিদের হকপন্থী উলামায়ে কেরাম ওই সময় উম্মাহর সালফে সালেহীন-এর স্মৃতি জীবন্ত করে একটি ফতোয়া প্রকাশ করেন, যেখানে কুরআন সুন্নাহর আলোকে একথা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছিল যে, প্রত্যেক মুসলমান সেনা সদস্যের জন্য আবশ্যক হলো, মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দেওয়া; অন্যথায় সেও মুসলিম হত্যায় বরাবর শরিক বলে গণ্য হবে। এমন ব্যক্তি কবিরা গুনাহে লিপ্ত ধর্তব্য হবে। সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী বলে বিবেচিত হবে। তার মৃত্যু হলো হারাম মৃত্যু। কখনোই তাকে শহীদ বলা হবে না। এমন ব্যক্তির জানাজার নামাজে কেউ যেন শরিক না হয়। এমন ব্যক্তির জানাযার নামাজ পড়ানোর জন্য কেউ যেন অগ্রসর না হয়। পাকিস্তানের হাজার হাজার উলামায়ে কেরাম এবং বিভিন্ন দারুল ইফতা থেকে এই ফতোয়ার পক্ষে সমর্থন ও স্বাক্ষর গৃহীত হয়। দীনি বিভিন্ন পরিবেশে এই ফতোয়া খুবই প্রচার-প্রসার হয়।
[1] সাবেক চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল (রিটায়ার্ট) শাহেদ আজিজ একটি টিভি প্রোগ্রামে বলেছেন:
“আফগানিস্তানে আমেরিকার দখলদারিত্ব অবৈধ। তারা মুসলমানদের দেশে চেপে বসে আছে। আমরাও এই দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনে অংশীদার। আমরা আফগানিস্তানে এন্টি-টেরোরিস্ট ওয়ার লড়ে যাচ্ছি। আমাদের এ বিষয়ে কনফিউসড হওয়ার প্রয়োজন নেই। পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বর্তমানে আফগানিস্তানে আমেরিকার হাতে আফগানদের নিহত হওয়ায় ততটাই শামিল ও অংশীদার, আমেরিকা নিজে যতটা অংশীদার। যখন আপনি আফগানিস্তানে আমেরিকার সাথে জোটবদ্ধ, আফগানিস্তানে মুসলমানদের হত্যায় শামিল, তো এখন যে মুসলমানরা আফগানিস্তানে আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তাদের সম্পর্ক উপজাতীয় এলাকার লোকদের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ ও মজবুত, এটা আপনার মাথায় রাখতে হবে। এর কারণ হলো যখনই মুসলমানেরা কোনো চাপের মধ্যে পড়ে, তখন কোনো একটা জায়গায় আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। চাই সে জাতীয়তাবাদী কারণের ভিত্তিতে লড়াই করুক কিন্তু তবুও ধর্মীয় প্রয়োজনীয়তা তাতে চলে আসে। কারণ তার সমস্ত মোটিভেশন আসে দীন থেকে। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা এই দেশে দীনের নাম নেয়াকে জাহেলিয়াত মনে করতে আরম্ভ করেছি। কারণ এটাও প্রোপাগান্ডার ফল। যেমন এই প্রপাগান্ডা করা হয়েছে যে, পাকিস্তান নিজের লড়াই লড়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানকে আফগানিস্তান থেকে আলাদা করে ক্ষুদ্র চিত্র দেখানো হয়েছে। এমনিভাবে আজ পাকিস্তানে এই প্রপাগান্ডা করা হচ্ছে, যে ব্যক্তি ধর্মের নাম নেবে সে চরমপন্থী; তার কথা শোনার উপযুক্ত নয়।”
সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন: “এটা আমাদের লড়াই নাকি না?”
শাহেদ আজিজ সাহেব বললেন: এটা একেবারেই আমাদের লড়াই নয়; এটাকে আমাদের লড়াই বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
[1] মুহতারাম সাইয়েদ মনোয়ার হাসান (আল্লাহ তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করুন!)। টিভি চ্যানেলে তাঁর একটা আলোচনা উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা হচ্ছে:
সাংবাদিক: আফগান সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ জায়েজ কি?”
সাইয়েদ মনোয়ার হাসান সাহেব: কার জিহাদ?
সাংবাদিক: আফগান তালেবান, আপনি যার সমর্থক। তারা যে আফগান সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ করছে এটা কি জায়েজ আছে?
সাইয়েদ মনোয়ার হাসান সাহেব: যদি আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ জায়েজ হয়ে থাকে তাহলে যারা আমেরিকাকে সঙ্গ দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও জিহাদ কেন জায়েজ হবে না? নতুবা এরপর তো আমেরিকানদেরকেও শহীদ বলতে হবে—যারা তাদের মধ্যে নিহত হচ্ছে।
সাংবাদিক: আমি দুঃখিত মনোয়ার হাসান সাহেব তাহলে আপনি বলুন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ জায়েজ আছে কিনা?
সাইয়েদ মনোয়ার হাসান সাহেব: আমি মনে করি এ বিষয়ে মানুষের চিন্তা ভাবনা ও গভীর উপলব্ধি প্রয়োজন।
সাংবাদিক: জিহাদ জায়েজ কি?
সাইয়েদ মনোয়ার হাসান সাহেব: যদি পাকিস্তানের সরকার আমেরিকার সাথে থাকে, আমেরিকার সাথে মিলে যদি মুসলমানদের শক্তি ধ্বংস করে দিতে থাকে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে আগুন ও খুনের দরিয়ায় ভাসিয়ে দিতে থাকে, তাহলে এ বিষয়ে উলামায়ে কেরামের ফতোয়া দেয়া উচিত। আমি আগের কথা আবারও বলছি—যেখান থেকে কথা শুরু হয়েছিল। যারা আমেরিকার সাথে থাকবে তাদের ক্ষেত্রে সেই একই বিধান, যেই বিধান আমেরিকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই বিধান পরিবর্তন হবার নয়।
[1] শায়খ আতিয়াতুল্লাহ্ রাহিমাহুল্লাহর নিম্নোক্ত বিবৃতি থেকে কিছু উদ্ধৃতি:
“চাই আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাক, আমাদের জামাতগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাক, আমাদের সমস্ত পরিকল্পনা মাটির সাথে মিশে যাক, কিন্তু আমাদের হাত দ্বারা অন্যায় ভাবে কোনো মুসলমানের রক্ত যেন প্রবাহিত না হয়। নিঃসন্দেহে এটা অত্যন্ত পরিষ্কার ও অকাট্য বিষয়।”
....“নিজেদের বিশুদ্ধ পথ ও পন্থা সুস্পষ্ট করার জন্য, আল্লাহ তাআলার কাছে কারণ দর্শানোর জন্য এবং পবিত্র জিহাদী আন্দোলন শরীয়তের মূলনীতি পুরোপুরি আমলে নিয়ে নেবে এই প্রত্যাশা সামনে রেখে আমরা অত্যন্ত জোরালোভাবে মুসলমানদেরকে টার্গেট করে পরিচালিত সব হামলার ব্যাপারে পুরোপুরি দায়মুক্তি ঘোষণা করছি। এই জাতীয় হামলা মুসলমানদের মসজিদগুলোতে হোক, বাজারগুলোতে হোক অথবা অন্য কোনো জনসমাগমের জায়গায় হোক—সবগুলোর ব্যাপারে একই কথা। আলকায়দা এবং তার নেতৃত্ব নিজেদের বয়ান বক্তৃতা বিবৃতি ও বার্তাগুলোতে বারংবার এই বিষয় জোর দিয়েছেন, আমরাও দাওয়াতের মাধ্যমে আমাদের কর্মপন্থা অনুযায়ী আমল করে উপরোক্ত বিষয়টা সকলের কাছে পুরোপুরি সুস্পষ্ট করে তুলেছি।”
“অতএব এ জাতীয় কোনো কাজের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। এই কাজগুলো কোথায় হচ্ছে এবং কারা করছে তা দেখার প্রয়োজন নেই। এই কাজগুলো শত্রুদের অপরাধী সেল করুক অথবা নিরাপত্তার নামে প্রতিষ্ঠিত কাফেরদের ঘাতক গ্রুপ (গুপ্ত এজেন্সি ইত্যাদি) যারাই করুক না কেন, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শাস্তি দান করুন! মুসলমানদের অথবা মুজাহিদদের মধ্য থেকেও কেউ যদি এই কাজ করে এবং এমন কাজকে হালকা মনে করে কোনো প্রকার বিচ্যুতির শিকার যদি হয়; যারাই এজাতীয় কাজ করুক না কেন, আমরা একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, এজাতীয় কাজকর্ম পৃথিবীর বুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত। এমন কাজ করতে আমাদেরকে বারণ করা হয়েছে-
وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الفساد
অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশৃঙ্খলা পছন্দ করেন না।”
আল্লাহপাক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদেরকেও পছন্দ করেন না। আমাদের বরকতময় শরিয়াভিত্তিক জিহাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য অত্যন্ত উঁচু এবং সবার শীর্ষে। (সেগুলো হলো:) রহমত দয়া অনুগ্রহ ইন্সাফ ন্যায় পরায়ণতা সৎকর্মশীলতা, অনুগ্রহের ভাবধারা চর্চা, সম্মান মর্যাদার জীবন অর্জন, অবস্থার সংশোধন, দুনিয়া আখেরাতের কামিয়াবি সফলতা এবং সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন, আল্লাহ তাআলার সাহায্যকারীদের কাতারে শামিল হওয়া, যেন আমরা আল্লাহ তাআলার বাণী সমুন্নত করতে পারি, আল্লাহর দীনের সাহায্য ও হেফাজত করি, সত্যকে সত্য হিসেবে প্রমাণ করে দেখাই, জুলুম অত্যাচারের অবসান ঘটাই, মানবসমাজকে গাইরুল্লাহর দাসত্ব থেকে মুক্ত করি, পৃথিবীকে কুফর শিরকের অপমিশ্রণ থেকে পবিত্র করি, পৃথিবীবাসীর উপকার করি।”
******
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent