উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
ياأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلا سَدِيدا * يُصۡلِحۡ لَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۗ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا [الأحزاب: 70-71]
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের আমল পরিশুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ মেনে চলবে, সে লাভ করবে মহাসাফল্য।” (সূরা আহযাব- ৩৩:৭০-৭১)
পরিবেশনায়— ইদারায়ে সাহাব মিডিয়া, উপমহাদেশ
بسم الله الرحمن الرحيم الحمد لله رب العلمين والصلاة والسلام على رسوله الكريم رب اشرح لى صدري ويسر لى امري واحلل عقدة من لساني يفقهوا قولي
শুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি সীমাহীন মেহেরবান, পরম দয়ালু। সকল প্রশংসা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর, দরূদ ও শান্তি বর্ষিত হোক তার সম্মানিত রাসূলের উপর।
হে আমার রব! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন, আমার কাজ সহজ করে দিন, এবং আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝে।
عن معاذ بن جبل قال: كنت مع النبي صلى الله عليه وسلم في سفر فأصبحت يوما قريبا منه ونحن نسير فقلت: يا رسول الله
মুআয ইবনে জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরে ছিলাম। একদিন আমি রাসূলের নিকটবর্তী হয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
أخبرني بعمل يدخلني الجنة ويباعدني عن النار
“আমাকে এমন একটি আমল বলে দেন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে, এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে।”
এটি এক দীর্ঘ হাদীস[1]। এই হাদীস থেকে দুটি বিষয় বুঝে আসে; এক. ঐ কাজ কিংবা রাস্তা যা আল্লাহর নিকট মকবূল। এই কাজ বা রাস্তার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নিকট মর্যাদা ও সম্মান পাবে।
দুই. ঐ কাজ অথবা রাস্তা যার মাধ্যমে বান্দার আমল বরবাদ হয়ে যায় এবং বান্দাকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যে আমলের কারণে বান্দার তারাক্কি বন্ধ হয়ে যায়, সেটি কেমন আমল?! তা কেমন ত্রুটি এবং কেমন গাফলত! যার কারণে তার উন্নতি থেমে যায়?
এ দৃষ্টিকোণ থেকে হাদীসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তাওফীক দান করুন। তিনি আমাদেরকে এমন গাফলত থেকে রক্ষা করুন, যার দরুন বান্দা যে পরিমাণ সাওয়াব লাভ করে, তার চেয়ে বেশি বরবাদ করে। এবং অর্জনের চেয়ে বিসর্জনের পরিমাণ বেশি হয়।
আরেকটি বিষয় হলো, আপনি খেয়াল করুন—সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুমের মনের অস্থিরতা, ব্যাকুলতা ও সকাল-সন্ধ্যার পেরেশানি এবং তাদের চিন্তা-ফিকির কেমন ছিল? তারা সারাক্ষণ কী ভাবতেন?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সফরে থেকেও হযরত মুআয ইবনে জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহু নিজের ব্যাপারে আত্মতুষ্টিতে ছিলেন না। বরং তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে থাকা সত্ত্বেও চিন্তিত ছিলেন। তিনি ভাবছেন যে, তার আমলের দরুন জান্নাত থেকে দূরে সরে যান কি না! এবং জাহান্নামের নিকটবর্তী হয়ে যান কি না!
এ হাদীস সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুমদের দিলের অবস্থা জানিয়ে দিয়েছে। আর এই অবস্থা সকল মুমিনের হওয়া উচিত। কখনও নিজের ব্যাপারে আত্মতুষ্টিতে থাকা উচিত নয়।
দেখুন! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুদের সফর চলছিলো। হযরত মুআয রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূলের নিকটে গিয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দেন, যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দিবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুমের পদাঙ্ক অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন।
মুআয রাযিয়াল্লাহু আনহুর এই প্রশ্নের জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছিলেন?! তিনি বলেছিলেন-
لقد سألت عن عظيم وإنه ليسير على من يسره الله عليه
“তুমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল প্রশ্ন করেছো, তবে তা সে ব্যক্তির জন্য সহজ, যার জন্য আল্লাহ সহজ করে দেন।”
এখান থেকে একটি বিষয় বুঝে আসে যে, কেবল নিজের আমল, সততা, সংকল্প ও প্রতিজ্ঞাই যথেষ্ট নয়, বরং মৌলিক বিষয় হলো ‘আল্লাহর তাওফীক’। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, আল্লাহর নিকট নিজেকে অর্পণ করা, আল্লাহর সাথে এমন সম্পর্ক গড়ে তোলা, যে সম্পর্কের ভিত্তিতে বান্দার মধ্যে এ আত্মবিশ্বাস জন্মাবে যে, আল্লাহ আমাকে বাঁচাবেন। নিজের আমল যতই হোক, যদি আল্লাহ সহজ করে না দেন, তিনি যদি না বাঁচান, তবে সব আমল অনর্থক হয়ে যাবে।
সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “এটি সে ব্যক্তির জন্য সহজ হয়ে যায়, যার জন্য আল্লাহ সহজ করে দেন।”
লক্ষ্য কী? আল্লাহ তাআলা। আল্লাহর নৈকট্য। আল্লাহ তাআলা পর্যন্ত পৌঁছা। কিন্তু এই লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছানো, এব্যাপারে শক্তি-সামর্থ্য দিবেন যিনি, তিনি তো আল্লাহ। বুঝা গেলো—শুরুতেও আল্লাহ। শেষেও আল্লাহ। আমলের হিসেব করার দরকার নেই যে, আমি তো অমুক অমুক আমল করেছি। আল্লাহ আমাদের জন্য যে আমল সহজ করে দিবেন, সেটিই করা সম্ভব হবে।
এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড় বড় আমলের তালিকা দেখিয়ে দিয়েছেন। এগুলোর মাধ্যমে মুমিন জান্নাতের নিকটে যাবে, এবং জাহান্নাম থেকে দূরে থাকবে।
তিনি বলেন:
"تعبد الله ولا تشرك به شيئا"
“আল্লাহর ইবাদত করো এবং আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না।”
আল্লাহর বন্দেগি করো। আল্লাহর গোলামী করো। রুকু এবং সেজদা আল্লাহর সামনেই করো। আল্লাহ তাআলার সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক রাখো। ইবাদতের মধ্যে আল্লাহর সাথে সর্বস্তরের ভালোবাসা জরুরি। অর্থাৎ ভালোবাসার শেষ সীমা পর্যন্ত। মানুষের মধ্যে যত ধরনের ভালোবাসা রয়েছে তার মধ্য হতে সবচেয়ে বেশি। যতটা বেশি মানুষ ভালোবেসে থাকে। এতটা ভালোবাসা প্রয়োজন আল্লাহর সাথে, তার ইবাদতের ক্ষেত্রে।
এরপর হলো ভয়। আল্লাহর নারাজির ভয়, স্বচ্ছ পর্যায়ের ভয়। আর তৃতীয় নাম্বার বিষয় হলো, আশা-ভরসা। এই তিনটি বিষয়ই ইবাদতের মধ্যে জরুরি। যদি তিনটির কোনোটি আপনি বাদ দেন, তাহলে ইবাদত এর হক আদায় হবে না। আল্লাহর ইবাদত করা হবে না। যদি ভয় থাকে কিন্তু ভালোবাসা নেই। ভালোবাসা আছে—কিন্তু কম। ভয় আছে—কিন্তু কম। (এবং আল্লাহ না করুন, যদি আল্লাহর উপর ভরসা খতম হয়ে যায়। তাহলে তো আপনার ঈমানই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে) এই তিনটি বিষয়ই খুব জরুরি।
ইবাদত করবো এমনভাবে যেভাবে আল্লাহকে স্মরণ করা উচিত। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী আমরা আমল করবো, এবং যততুকু সম্ভব আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলবো। আমাদেরকে এই তিনটি বিষয় অর্জন করতে হবে।
ভালোবাসা হতে হবে স্বচ্ছ স্তরের। সেটি বোধগম্য হতে হবে। নিজেই বুঝতে পারবেন, ভালোবাসা কীভাবে বাড়ে, কীভাবে সৃষ্টি হয়?
আল্লাহ তাআলা আমাদের যে নেয়ামত দান করেছেন, এবং যে নেয়ামতের ওয়াদা তিনি আমাদের দিয়েছেন, তার ব্যাপারে যত চিন্তা করবেন, বিদ্যমান নেয়ামতের প্রতি যত দৃষ্টি দিবেন, সেগুলো যত বেশি অনুভব করবেন, সেগুলোর আলাপ-আলোচনা যত বেশি করবেন – ভালবাসা তত বাড়বে। বারবার স্মরণ করবেন। দেখবেন, আল্লাহ তাআলার প্রতি আপনার ভালোবাসা বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি এই আতঙ্ক, এই ভয়ও রাখা চাই যে, আল্লাহ আমার প্রতি নারায হয়ে যান কি না!
আর তৃতীয় নাম্বার বিষয় হলো - ভরসা রাখা। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া, এটিও ইবাদত। এরপর এই ভালোবাসা, এই ভয়, এই আশা ও ভরসায় আল্লাহর সাথে কাউকে যেন মুকাবেলায় না আনা হয়। আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করা হয়। যে সব ভালোবাসা আল্লাহর ভালোবাসার সমতুল্য হয় অথবা আল্লাহর ভালোবাসার চেয়ে বেশি হয়, সে ভালোবাসা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। সেগুলো আপনাকে আল্লাহর ভালোবাসা থেকে দূ্রে সরিয়ে দিবে। সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, অন্য কোনো ভালোবাসা যেন আল্লাহর ভালোবাসার সমতুল্য না হয়। আল্লাহর নারাজির ভয়, আল্লাহর আযাবের ভয়, এসব নিজের সামনে রাখা চাই।
আরেকটি বিষয় হলো, বর্ণিত হয়েছে:
وتقيم الصلاة
“নামায কায়েম করো।”
وتؤتي الزكاة
“যাকাত আদায় করো।”
وتصوم رمضان
“এবং রমযানের রোযা রাখো।”
وتحج البيت
“এবং হজ পালন করো।”
এগুলো ফরযের আলোচনা। এগুলো হলো এমন আমল, যা ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে।
"ثم قال ألا أدلك على أبواب الخير؟"
"এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বললেন-আমি কি তোমাকে কল্যাণের দ্বার সম্পর্কে বলে দিবো না? "
কল্যাণের দরজা কী? এখানে কল্যাণের দরজা দ্বারা উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য হলো নফল আমল।
তিনি বলেন:
الصوم جنة
“রোযা হচ্ছে ঢাল।”
والصدقة تطفئ الخطيئة كما يطفئ النار الماء.
“সাদাকা গুনাহকে এমনভাবে বিলুপ্ত করে দেয়, যেমনভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।”
وصلاة الرجل في جوف الليل
“এবং ব্যক্তির গভীর রাতের নামায।” অর্থাৎ রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদের নামায।
এরপর তিনি পাঠ করলেন:
تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفا وَطَمَعا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ [السجدة: 16]
"তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে পৃথক থাকে; তারা আল্লাহকে ডাকে, আল্লাহকে স্মরণ করে ভয় ও আশার সাথে, এবং আল্লাহ তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করে।” (সূরা সাজদা ৩২:১৬)
এরপর তিনি বলেন:
فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡس مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنجَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ [السجدة: 17]
“নফস জানে না, মানুষ নিজেও জানে না যে, আল্লাহ তাআলা তাদের চক্ষু শীতল করার জন্য কী রেখেছেন। এটি তার প্রতিদান—যা তারা করেছে।” (সূরা সাজদা ৩২:১৭)
হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুই আয়াতের আলোচনা উল্লেখ করেছেন।
সুতরাং এই ‘আবওয়াবুল খায়ের’ তথা ‘খায়েরের দরজা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল নাওয়াফেল (নফল)। কারণ, আপনি যখন নফল আদায় করবেন, তখন আপনি ফরয ভালোভাবে আদায় করতে পারবেন। আলেমগণ বলেন-
من ترك الأدب عوقب بحرمان النوافل ومن ترك النوافل عوقب بحرمان السنن ومن ترك السنن عوقب بحرمان الفرائض ومن ترك الفرائض يوشك ان يعاقب بحرمان المعرفة.
‘ইসলামী শিষ্টাচার বর্জন, ব্যক্তিকে নফল ইবাদত থেকে বঞ্চিত করে। নফল ইবাদত ছেড়ে দেয়া, ব্যক্তিকে সুন্নত ছেড়ে দেয়ার দিকে নিয়ে যায়। সুন্নত ছাড়লে ব্যক্তি ফরয ইবাদত থেকে বঞ্চিত হয়। আর কেউ যদি ফরয ইবাদত ছেড়ে দেয়, তাহলে তার ঈমান চলে যাওয়ারও আশঙ্কা থেকে যায়’।
এই আদব, নফল, সুন্নত, ফরয এবং ঈমান ও মারেফাত, এগুলো নিচের দিক থেকে উপরের দিকে যায়। তাই আলেমগণ বলেন, যে ব্যক্তি আদব ছেড়ে দেয় এর ফলসরূপ সে নফল থেকে মাহরূম হয়। যে ব্যক্তি নফল ছেড়ে দেয়, সে সুন্নত থেকে বঞ্চিত হয়। আর যে সুন্নতের মধ্যে ত্রুটি করে, তার ফরয ভালোভাবে আদায় হয় না। আর যে ব্যক্তি ফরযের মাঝে ত্রুটি করে সে আল্লাহ তাআলার মারেফত থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় থাকে।
তাই আমরা যদি আল্লাহ তাআলার মারেফাত থেকে বঞ্চিত না হতে চাই, তাহলে আমাদের ফরয আদায় করতে হবে। আর ফরয আদায়ের পাশাপাশি এই ফিকির থাকতে হবে যে, ফরয সঠিক ভাবে আদায় করার জন্য সুন্নত আদায় করতে হবে। আর সুন্নত সঠিকভাবে আদায় করতে হলে নফল আদায় করতে হবে।
নফলের মাঝে কমতি থাকলে, দেখতে হবে আদবগুলো আদায় হচ্ছে কি না। আল্লাহ তাআলার সাথে, আল্লাহর দীনের সাথে, উলামায়ে কেরামগণের সাথে এবং নিজেদের সাথি-সঙ্গীদের সাথে আদব রক্ষা হচ্ছে কি না? আদবের কমতির কারণে নফলের তাওফীক উঠে যায়, এমনকি একপর্যায়ে আল্লাহ তাআলার মারেফত (ঈমান) পর্যন্ত উঠে যায়। তাই এই নাওয়াফেলকেই আবওয়াবুল খায়ের তথা খায়েরের দরজা বলা হয়েছে।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি কি তোমাকে বলে দেবো না, এই দীনের মূল কী! এর খুঁটি কী! এবং দীনের স্বচ্ছ চূড়া কী!” তখন মুয়াজ ইবনে জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “অবশ্যই বলুন হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন;
راس الامر الاسلام
“দীনের মূল হল ইসলাম”,
و عموده الصلاة
“আর দীনের খুঁটি হল নামায”,
وذروة سنامه الجهاد
“আর এর স্বচ্ছ চূড়া হল জিহাদ।”
দেখুন! এখানে ইসলামের কথা উল্লেখ হয়েছে, নামাযের কথা উল্লেখ হয়েছে এবং জিহাদের কথা উল্লেখ হয়েছে। আর জিহাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, এটা হল স্বচ্ছ চূড়া। উটের যেটা কুজ হয় সেটা উপরে হয়, এভাবে দীনের যেটা স্বচ্ছ চূড়া, সেটা হল জিহাদ। কেননা, এতে কষ্ট করতে হয়, সবর করতে হয়, দুশমনের মোকাবেলা করতে হয়। অর্থাৎ এতে বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তাই এটাকে স্বচ্ছ চূড়া বলা হয়েছে। আর স্বচ্ছ চূড়া যেমন সবাই দেখতে পায়, অনুরূপ জিহাদে যেসব আমল হয়, শত্রুর মোকাবেলার মধ্য দিয়ে জিহাদের সময় যে পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং নিজেদের মাঝে যেসব আমল হয়, এগুলো উম্মতের নজরে আসে, সকল মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়। এই জন্য জিহাদের মধ্যে ভালো আমল ও ভালো কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করা জিহাদী আন্দোলনের জন্য আবশ্যক। আর যখন এর মধ্যে ভুল হবে তখন এর প্রভাব চলে যাবে।
অতঃপর যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হাদীসে উল্লেখ হয়েছে, তা এমন একটি আমল, যার দ্বারা একজন মুমিন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে থাকতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
ألا أخبرك بملاك ذلك كله
“আমি কি তোমাকে এই সবকিছুর বুনিয়াদ, ভিত্তি কী তা বলে দিবো না?”
ملاك شيئ قوامه ما تقوم به تلك العبادة
মিলাক বলা হয় যেটা কোনো স্থাপনার মূল, বুনিয়াদ ও ভিত্তি। যেটা ইবাদাতের মূল তথা ভিত্তি সেটা হল মিলাক। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
ألا أخبرك بملاك ذلك كله
“আমি কি তোমাকে এই সবকিছুর বুনিয়াদ, এই সবকিছুর ভিত্তি কী তা বলে দিবো না?” মুয়াজ রাযিয়াল্লাহু আনহু উত্তর করলেন, “অবশ্যই বলুন।” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জবান মোবারক ধরে বললেন;
تكف هذا
“এটাকে থামাও।”
দেখুন! কত বড় বড় আমলের আলোচনা হয়েছে! ঈমানের আলোচনা হয়েছে, নামাযের আলোচনা হয়েছে, রোযার আলোচনা হয়েছে, হজ ও যাকাতের আলোচনা হয়েছে, জিহাদের আলোচনা হয়েছে, তাহাজ্জুদের আলোচনা হয়েছে। এত বড় বড় আমলের আলোচনা পর বলা হচ্ছে যে, আমি কি তোমাকে বলে দিবো না যে, এই সবকিছুর ভিত্তি কী? তুমি যদি এই সবকিছু হেফাযত করতে চাও, তবে তা কীভাবে করবে তা বলে দিবো না?
অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘জবানকে নিয়ন্ত্রণ কর’। আশ্চর্যের ব্যাপার! এত বড় বড় আমলের আলোচনা হল, আর এই ছোট্ট জবানের হেফাযত! তখন মুয়াজ রাযিয়াল্লাহু আনহু সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কথার কারণে কি আমরা জিজ্ঞাসিত হবো?”
কথা বলাতো খুব সহজ কাজ। কারও ব্যাপারে আলোচনা করা, কোনো কমেন্ট করা, কারও সমালোচনা করা, কারও ব্যাপারে কোনো শক্ত কথা বলা কিংবা বিদ্রূপ করা, এটাতো সহজ ব্যাপার, এতে কি সমস্যা? কেউ কোনো জামাতের বিরুদ্ধে কিছু বললে কে কাকে ধরবে? এটাকে খুব সহজ ব্যাপার মনে হয়, আর এর জন্য এতসব আমল নষ্ট হয়ে যাবে!!! তাও এমন আমল যেগুলোতে মানুষের সারা জীবন কেটে যায়। সকল শক্তি-সামর্থ্য, আগ্রহ ও রাত জাগরণ সবকিছু ব্যয় হচ্ছে এর পিছনে।
তাহাজ্জুদে, জিহাদে কি পরিমাণ সবর করতে হয়? কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এই সবকিছুর ভিত্তি, মূল এবং এগুলোর সংরক্ষণ হল জবান নিয়ন্ত্রণের মধ্যে।’ মুয়াজ রাযিয়াল্লাহু আনহু আমাদের জন্য, এই উম্মতের জন্য, এই বিষয়কে স্পষ্ট করার জন্য পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন; “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আমাদের জবানের জন্য পাকড়াও হব?” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
ثكلتك امك يا معاذ وهل يكب الناس في النار على وجوههم الا حصائد ألسنتهم
“হে মুয়াজ! জাহান্নামে যারা যাবে তারা তো এই জবান ছাড়া অন্য কিছুর জন্য যাবে না।”
জবানের ফলসরূপ, জবানের অর্জনের কারণে সে জাহান্নামে পতিত হবে। এই হাদীসটি একটি জামে হাদীস। দেখুন, মানুষের জীবনের লক্ষ্য হল জাহান্নাম থেকে বাঁচা আর জান্নাতে পৌঁছা। আর এর জন্য সব আমল বলে দেয়া হয়েছে, আর সর্বশেষ এসব আমলের ভিত্তি বলে দেয়া হয়েছে। যদি এইসব আমলের হেফাযত করতে চাও, তবে এই জবানের হেফাযত কর।
ভাই! এটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। জবানের হেফাযত কঠিন কেন? কারণ, জবানের হেফাযত শুধু ঐ ব্যক্তিই করতে পারে যে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যার রাগ, ঘৃণা এবং প্রতিশোধ গ্রহণ আল্লাহর শরীয়ত অনুযায়ী হয়। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন,আমীন।
এই ব্যক্তি জিন্দেগিকে তুচ্ছ মনে করে না। এই যে যুদ্ধ-জিহাদ, এই যে কষ্ট-মুজাহাদা, সে বুঝে যে, এগুলোর দ্বারা প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন হয়। আবার এগুলোর দ্বারাই বান্দা আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায়।
সে বুঝে যে, তার অন্তর স্বাধীন নয়, তার চলাফেরাও স্বাধীন নয়। সে যখন সাথিদের ব্যাপারে আলোচনা করে তখন খামখেয়ালি ভাবে করে না। মনে যা আসে তাই বলে দেয় না। সে তৎক্ষণাৎ নিজের আকল ও জবানের উপর চৌকিদারি করে। সে প্রতিটি মুহূর্তে এটা চিন্তা করে যে, এটা ইনসাফের কথা আর ওটা জুলুমের কথা। এটা অপমানের কথা আর ওটা সম্মানের কথা। যে সাথির ব্যাপারে আমি আলোচনা করছি তার ভিতরে এটা আছে না নেই? এটা সত্য না মিথ্যা? এতে বাড়াবাড়ি হচ্ছে নাতো? ঐ সাথির ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ হচ্ছে নাতো? সে সব সময় নিজের উপর দৃষ্টি রাখে।
অতঃপর দেখুন! সুবহানাল্লাহ!
হাদীস আর সুন্নত হল আল্লাহ তাআলার কিতাবের ব্যাখ্যা।
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন:
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا } [الأحزاب: 70]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।” (সূরা আহযাব ৩৩:৭০)
অর্থাৎ, এমন কথা বল যা শরীয়ত অনুযায়ী হয়, যা সত্য হয়, যাতে কোনো মুসলমানের অসম্মান থাকে না, কোনো মুসলমানের উপর অপবাদ থাকে না, কোনো মুসলমানের গীবত থাকে না। এমন কথা বল, যা ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, যে কথা আল্লাহকে সন্তুষ্টকারী হয়, আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ না হয়। যে কথার কারণে কোনো মুসলমান ভাইয়ের কষ্ট হয়, যে কথার কারণে দীনের অথবা জিহাদের কোনো ক্ষতি হয় – এমন কথা বলা যাবে না। যখন তোমরা এর উপর চলবে তখন কি হবে? আল্লাহ তাআলা এর পরে বলেন:
{يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ } [الأحزاب: 71]
“আল্লাহ তোমাদের আমল সংশোধন করে দিবেন।” (সূরা আহযাব-৩৩:৭১)
সুবহানাল্লাহ! উলামায়ে কেরাম বলেন যে, আল্লাহ তাআলা যেখানেই তাকওয়ার উপদেশ দিয়েছেন, তাকওয়ার আদেশ করেছেন সেখানেই এমন কোনো আমল কিংবা নিদর্শন বলে দিয়েছেন যার দ্বারা তাকওয়া অর্জন হয়। সুতরাং এখানে কি বলেছেন?
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ﴾ [الأحزاب: 70]
“আল্লাহর তাকওয়া গ্রহণ কর।”
আল্লাহর তাকওয়া কী? এই তাকওয়াই জান্নাতের চাবি। তাকওয়া ছাড়া কেউ জান্নাত অর্জন করতে পারে না। তাকওয়া ছাড়া কেউ আল্লাহর প্রিয় হতে পারে না। তাকওয়া ছাড়া কুফর ও বাতিলের মোকাবেলা করা যায় না। তাকওয়া ছাড়া কোনো কিছুই করা যায় না। তাকওয়া হল মূল জিনিস। তাকওয়া অর্জন করা সকল মুমিনের সংকল্প হওয়া উচিত। তাই আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ﴾ [الأحزاب: 70]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা তাকওয়া অর্জন কর।” (সূরা আহযাব ৩৩:৭০)
তাকওয়া অর্জন করার মাধ্যম কী?
﴿وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا]
“সত্য কথা বল।” (সূরা আহযাব-৩৩:৭০)
শরীয়তের কথা বল। শরীয়ত অনুযায়ী কথা বল। ইনসাফের কথা বল। আর যখন তোমরা এটা করবে, আয়াতের মিল দেখুন (সুবহানাল্লাহ)!
যখন আমাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় না থাকবে, তাকওয়া না থাকবে তখন কি আমরা সঠিক কথা বলতে পারবো? ইনসাফের কথা বলতে পারবো?
না, আমরা তখন এমন কথা বলে ফেলবো যা অন্য মুসলমানের হক নষ্ট করবে। আমরা এমনটিই করে থাকি। কারণ, আমাদের মাঝে তাকওয়া নেই। তাই আমাদের মাঝে এই আগ্রহ থাকতে হবে যে, আমাদের মাঝে যেন তাকওয়া চলে আসে।
তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম কি? তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমই হল -
﴿وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ﴾ [الأحزاب: 70[
সঠিক কথা বলা।
এর উপর আমল হবে তখন, যখন আমাদের মাঝে তাকওয়া থাকবে।
﴿يُصۡلِحۡ لَكُمۡ أَعۡمَٰلَكُمۡ ﴾ [الأحزاب: 71[
যখন সত্য কথা বলা হবে, শরীয়ত অনুযায়ী কথা বলা হবে, ইনসাফের কথা বলা হবে, তখন আল্লাহ তোমাদের আমল সংশোধন করে দিবেন। আমাদের সব সময় কষ্ট হয়, পেরেশানি হয়। (পেরেশানি হওয়ারই কথা) কারণ, আমাদের আমল ঠিক নাই। আমাদের আমল তা নয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয়। আমাদের আমল তা নয়, যার দ্বারা উম্মতের উপকার হয়। আমাদের আমল তা নয়, যার দ্বারা জিহাদী আন্দোলনের উপকার হয়। আমাদের আমল তা নয়, যার দ্বারা মুসলমানের কল্যাণ সাধিত হয়। তো এটা সংশোধনের পদ্ধতি কি?
এটার পদ্ধতি হল; প্রথমে এই জবানকে নিয়ন্ত্রণ করা। নিজেদের লোকদের ব্যাপারে যে কথা বলেন, যে কমেন্ট করেন তার উপর নজর রাখুন। কথা বলার আগেই চিন্তা করুন।
মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহিমাহুল্লাহ বলেন: “যখনই কোনো কথা মুখ থেকে বের করবে, তখন এটা মনে করবে যে, আমি কোনো আদালতে দাঁড়িয়ে কথা বলছি এবং আমাকে এটা সত্য প্রমাণিত করতে হবে। দুনিয়ার আদালত না হলেও আল্লাহর আদালতে তো দাঁড়ানোই আছি। আমি কারও ব্যাপারে বলে দিলাম যে, সে ফাসেক, ফাজের, সে ভুল করছে, সে জিহাদ করে না, সে ফাসাদ করছে, তার ভিতর ইখলাস নেই! এমন অনেক কথা আমি বলে ফেললাম! তাই দুনিয়াতেও এসব কথার জবাব দিতে হবে, আর আল্লাহর দরবারেও জবাব দিতে হবে, আল্লাহর আদালতে দাঁড়াতে হবে।”
আমল ঠিক হবে তখন, যখন জবান ঠিক হবে। আর জবান ঠিক হবে তখন, যখন আল্লাহর ভয় থাকবে। আর আল্লাহর ভয় রাখার জন্য জবান, আর জবান ঠিক রাখার জন্য আমল ঠিক করতে হবে। আর যখন এই সব হবে, আমরা যে আমল করবো তার কি হবে?
﴿وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۗ ﴾ [الأحزاب: 71]
“তোমাদের গুনাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিবেন।” (সূরা আহযাব-৩৩:৭১)
এই সবকিছুর মূল কী? জবান। হাদীস অনুযায়ী জবান। জবানের ব্যবহার।
অতঃপর সামনে দেখুন! আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِيمًا ﴾ [الأحزاب: 71]
“যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করে, আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করে তার জন্য অনেক বড় সফলতা।” (সূরা আহযাব-৩৩:৭১)
হাদীসের মধ্যে নেক আমল এবং নেক আমলের তাওফীকের কথা এসেছে। তাওফীকই হল আসল। তাওফীক এটা অনেক বড় জিনিস, এটা অনেক বড় সৌভাগ্য, এটা অনেক বড় নেয়ামত। তাওফীকের অনুভূতি যেমন অন্তরে হয়, তেমনি জবানেও হয়। যদি আমার জবান ঠিক থাকে, আমি সকাল সন্ধ্যায় মানুষের ব্যাপারে যা বলি তাতে জবান ঠিক থাকে, তবে আল্লাহ তাআলা তাওফীক দিয়ে দিবেন। আর যদি এতে আদল-ইনসাফ না থাকে বরং জুলুম হয়, তাহলে আল্লাহ তাওফীক উঠিয়ে নিবেন।
একটি হাদীসে এসেছে, যার মর্মার্থ এমন: “মানুষ যখন মুখে এমন কোনো শব্দ উচ্চারণ করে যার ভয়াবহতার অনুভূতি তার থাকে না, এ কারণে তাকে জাহান্নামের অতল গহ্বরে যেতে হবে, যেমন আসমান/ উপর থেকে কোন কিছু নিচে ছুড়ে মারা হলে তা মাটির অনেক গভীরে গিয়ে পতিত হয়।”
ইউনুস ইবনে উবাইদ রহিমাহুল্লাহ বলেন;
“ما رأيت احدا لسانه منه على بال الا رأيت ذلك صلاحا في سائر عمله”
“আমি এমন কোনো ব্যক্তিকে দেখিনি, যার জবান নিজের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, অথচ তার ভালো প্রভাব তার সমস্ত আমলে পাওয়া যায় না। যে ব্যক্তি তার জবানের ইসলাহ করলো, তার আমলেরও ইসলাহ হয়ে গেল।”
ইয়াহ্ইয়া ইবনে আবি কাসীর রহিমাহুল্লাহ বলেন:
ما صلح منطق رجل الا عرفت ذلك في سائر عمله
“যে ব্যক্তি নিজের কথাগুলোকে ঠিক করলো, নিজের কথাকে পরিশুদ্ধ করলো, আমি দেখেছি তার সব আমল পরিশুদ্ধ হয়ে গেল।”
মানুষের ব্যাপারে নিজের চিন্তার ইসলাহ যে করলো, দেখা গেল তার আমলেরও ইসলাহ হয়ে গিয়েছে। আর যে ব্যক্তির জবান খারাপ হয়ে গিয়েছে, আমি দেখেছি তার সব আমল খারাপ হয়ে গিয়েছে। আমাদের কেউ একজন কোনো এক সময় বলেছিল যে, মাশাআল্লাহ! অমুক ব্যক্তি অনেক ভালো মানুষ। কিন্তু তার মুখের ভাষা অনেক খারাপ। এমনও শুনেছি যে, অমুক ব্যক্তি অনেক ভালো; মানুষের অনেক উপকার করে। তবে ভাই, তার মুখের ভাষা খুব বেশি কুরুচিপূর্ণ। কখনও এর পিছনে বদনাম করে, কখনও ওর পেছনে বদনাম করে। আমরা কখনও তার কথা শুনতাম না।
ইউনুস ইবনে উবাইদ রহিমাহুল্লাহ আরও বলেন:
لا تجد من البر شيئاً واحداً يتْبعُه البر كله غير اللسان،
“আমি কখনও এমন কোনো নেক কাজ দেখিনি যে, আপনি একটি নেক কাজ করলে আপনার আরেকটা নেক কাজ করার তাওফীক হয়ে যাবে; একমাত্র জবান ছাড়া।”
এই জবান দ্বারা যেই নেক কাজই করুন; আরও নেক কাজ করার তাওফীক প্রাপ্ত হবেন। প্রথমত, আপনি আপনার ভাষাকে পরিশুদ্ধ করুন। আপনি লোকদের উদ্দেশ্য করে যা কিছু বলেন, তা মার্জিত করে নিন। তাহলে সাথে সাথেই আল্লাহ তাআলা আরও বেশি নেক কাজের তাওফীক দিয়ে দিবেন। অতঃপর বলেন,
فإنك تجد الرجل يكثر الصيام ويفطر على الحرام، ويقوم الليل ويشهد بالزور بالنهار... [وذكر أشياء نحو هذا] ولكن لا تجده لا يتكلم إلا بحق؛ فيخالف ذلك عمله أبدا».
“আপনি হয়তো দেখেছেন, এমনও লোক আছে যে প্রচুর রোযা রাখে কিন্তু হারাম দ্বারা ইফতার করে। রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে, দিনে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু আপনি কখনও এমন লোক দেখবেন না, যে সত্য বলে, ন্যায়-নীতির কথা বলে কিন্তু তার আমল তার পক্ষে সাক্ষ্য দেয় না। তার কথা কাজ এক হবে না, এমনটি কখনও হবে না। বরং অবশ্যই তার আমল ভালো হবে এবং সুন্দর হবে।”
একজন মানুষের ইসলাহ এবং তার নেক আমল উপকারী হওয়া উম্মতের জন্য এবং তার নিজের জন্য নির্ভর করে কীসের উপর? তার সীমাবদ্ধতা কীসের উপর? শুধু তার জবানের উপর। এমনভাবে একটি পুরো দলের জন্য অর্থাৎ মুজাহিদদের যে ইসলাহ সেটিও মুখের ভাষার সাথে সম্পৃক্ত। ফিতনা-ফাসাদের মূল কারণ জবান এবং মুখের বে-লাগাম কথা-বার্তা এবং অনুচিত কমেন্ট।
যে সমস্ত ভাষ্য ও মন্তব্য এমনকি আমরা মজলিসে বসে মুজাহিদদের ব্যাপারে, অন্যান্য লোকের ব্যাপারে এবং সাথি-সঙ্গীদের ব্যাপারেও যেসকল মন্তব্য করে থাকি, যদি এ মন্তব্য সহানুভূতির সহিত আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে শরীয়ত, ন্যায়নীতি ও বাস্তবতা অনুযায়ী করি, তাহলে আমার এই কথার প্রভাব আমার নিজের আমলের উপরও পড়বে। আমার ভাইয়ের উপরও পড়বে, পুরো জামাতের উপর, মুজাহিদীনের উপর, পুরো উম্মতের উপর পড়বে। পুরো জিহাদের মধ্যে ইতিবাচক ফলাফল আসবে এবং কাফেলা কল্যাণের পথে পরিচালিত হবে।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে - আমাদের যে জবান রয়েছে, আমরা তার মধ্যে সতর্কতা অবলম্বন করি না। সুতরাং সর্বপ্রথম বদ আসর যেটা হবে, সেটা হল আমার নিজের আমল নষ্ট হবে। সুবহানাল্লাহ! আপনারা হয়তো শুনেছেন, আমি নিজেও আল্লাহ ওয়ালাদের ব্যাপারে পড়েছি এবং শুনেছি –
এক ব্যক্তি তাহাজ্জুদও পড়ে, নেক আমলও করে। কিন্তু সাথিদের ভুলের ব্যাপারে এমন শব্দ চয়ন করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যা উচিত নয়। বে-ইনসাফির সাথে কথা বলে। এতে করে তার তাহাজ্জুদ নামাযের তাওফীক যা ছিল তা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। যদি আমার নফল নামায পড়ার তাওফীক না হয় এবং নিজের জিহাদী মুআমালাত ঠিক না হয়, তখন নিজের বিষয়ে ভাবতে হবে যে, আমার কোনো ভুল হচ্ছে কিনা, জবানের অপব্যবহার হচ্ছে কিনা? আমি যদি নিজের জবানের অপব্যবহার না করি, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই আমাকে সাহায্য করবেন।
আরও একটি কথা, যদি আমাদের ভাইদের ব্যাপারে, মুসলমানদের ব্যাপারে, মুজাহিদদের ব্যাপারে এবং জিহাদী আন্দোলনের ব্যাপারে আমার জবান সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তাহলে ….হতে পারে আমরা আসলে ব্যবহার হচ্ছি। আর এই ব্যবহার হওয়াটা এবং ঘর থেকে বের হওয়াটা কি আল্লাহ তাআলার মাকবুল বান্দা হওয়ার জন্য প্রমাণ হতে পারে? আমরা কী এমন প্রজন্ম দেখিনি যারা লড়াইও করে, হত্যাও করে (অর্থাৎ কত বড় ফাসাদ এসমস্ত লোকদের থেকে প্রকাশিত হচ্ছে) এসকল দায়েশী-খারেজীদের সাথে আপনাদের হয়তো মুআমালা হয়েছে।
আমি একবার নয়, একাধিকবার এই চলমান ফিতনা সম্পর্কে দেখেছি যে, এমন লোক ছিল যাদের সাথে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতো (আল্লাহ ক্ষমা করুন)। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি নজরে পড়েছে, এটা ঐ সময়, যখন তাদের পক্ষ থেকে তখনো কেউ গুলি চালায়নি, কোনো মুসলমানের রক্ত তখনো প্রবাহিত করেনি- কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় জুলুম যা প্রকাশ পেয়েছে তা ছিলো, তাদের অনেকে বড় বড় আল্লাহ ওয়ালা মুজাহিদীনদের ব্যাপারে জবানের অপব্যবহার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কত মারাত্মক মারাত্মক মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে! যাদের পুরো জিন্দেগি কেটেছে জিহাদের ময়দানে, যারা এই উম্মতের জন্য নিজেদেরকে কুরবানী করেছে এবং স্বচ্ছ কুরবানী দিয়েছে – তাদের বিষয়ে জবানের অপব্যবহারের কারণে, তাদের শানে গোস্তাখী করার কারণে অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দৃষ্টান্তমূলকভাবে তারা মৃত্যুবরণ করেছে। জুলুম শুধু হাত-পা দ্বারা আঘাত কিংবা অস্ত্রের আঘাতের নাম নয়। বরং কারও ব্যাপারে অপবাদ দেওয়া, কারও গীবত করা, কারও অন্তরে দুঃখ দেওয়া এবং কারও ব্যাপারে বে-ইনসাফি কথা বলা এ সবই নাজায়েয জুলুম।
وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ
(“আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন।”)
যে সকল লোক জুলুম করে নিজের ভাইয়ের সাথে, মুজাহিদ ভাইদের সাথে এবং বিভিন্ন আন্দোলনের সাথে, তাদের হক আদায় করে না, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন। তাদের হক হলো, তাদের প্রশংসা করা, তাদের গুণগান গাওয়া, তাদের ভালো কাজের স্বীকারোক্তি দেয়া, তাদের প্রতি মুহাব্বত প্রকাশ করা। আল্লাহ মাফ করুন আমরা আমাদের স্বজনপ্রীতির কারণে তাদের প্রশংসার স্থলে তিরস্কার করছি। তাদের অপদস্থ করছি। তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি লোকদের মাঝে ছড়িয়ে বেড়াচ্ছি। আল্লাহ তাআলা কারও থেকে কোনো কাজ নিচ্ছেন, কেউ ভালো কাজ করছেন, কিন্তু আমরা তার ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করছি যে, তার নিয়ত খারাপ ইত্যাদি। এটা জুলুম। আর এই জুলুমের কারণে হক-বাতিলের পার্থক্য করার যোগ্যতা আল্লাহ তাআলা ছিনিয়ে নেন। যার ফলে ভুল-সঠিক পার্থক্য করার ক্ষেত্রে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। অন্তর কালো হয়ে যায়। তার মধ্যে অতিরিক্ত স্বজনপ্রীতি চলে আসে। এই সবকিছুর কারণ একটাই; তা হলো জুলুম। যার ফলে আল্লাহ তাআলা এসমস্ত কাজে লিপ্ত করেন।
মুআজ বিন জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন এবং তার মাঝে এই অনুভূতি ছিলো যে, “কীভাবে আমি আমল করবো এবং কীভাবে আমলকে বাঁচাবো?” আমাদের অন্তরেও এমন অনুভূতি ও ব্যথা আসুক! আমরা সর্বদা নিজেদের আমলের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখবো যে, আমি কী আমল করছি! আর যখন ঐ আমলের তাওফীক আমার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তখন সাথে সাথেই আমার বুঝতে হবে যে, কোন্ কারণে আমার থেকে ঐ আমলের তাওফীক চলে যাচ্ছে!
দেখুন, “কিয়ামতের দিন এমন এক লোক আসবে তার নিকট নামায, তাহাজ্জুদ, সাদাকা এবং যাকাতও থাকবে, এমনকি জিহাদও থাকবে কিন্তু সে কারও ব্যাপারে জবানের অপব্যবহার করেছে, কাউকে অপদস্থ করেছে, কাউকে কষ্ট দিয়েছে; যার সাথে সে জুলুম করেছে, তাকে বলা হবে এই ব্যক্তির যে আমল তোমার পছন্দ হবে তা তুমি নেয়ে নাও।”
আমরা জিহাদের জন্য নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়েছি, হিজরত করেছি। জিহাদী জিন্দেগি অনেক কষ্টের। এই সবকিছু আমরা কী উদ্দেশ্যে করছি? আল্লাহ না করুন- এটা কতই না আফসোসের কথা যে, সকল আমল করার পরও কিয়ামতের দিন আমাদের ঝুড়িতে কোনো আমল থাকবে না! বরং যারা মন্দ আমল করেছে তাদের আমল আমাদের ঝুড়িতে চলে আসবে! আল্লাহ আমাদের পরিশুদ্ধ করুন, আমীন।
খোলাসা কথা হলো, আমরা যা কিছু বলি, যা কিছু লিখি এবং যা কিছু মন্তব্য করি, এ সব কিছুতেই আমরা জিজ্ঞাসিত হবো। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই দুনিয়ায় লোক সম্মুখেও জিজ্ঞাসা করবেন এবং আখিরাতেও করবেন। সুতরাং সকল আমলের মধ্যে আসল হচ্ছে জবান। আল্লাহ তাআলা আমাদের জবান সংযত রাখুন। এবং আমাদেরকে উপকারী বানান। কোনো ব্যক্তি নিজের জন্য, মুসলমান ভাইদের জন্য, উম্মতের জন্য এবং জিহাদের জন্য ততক্ষণ উপকারী হয় না, যতক্ষণ না তার জবান এবং তার কলম উপকারী হয়। তার জবান ও কলম শরীয়ত মোতাবেক হলে, ইনসাফপূর্ণ হলে, আল্লাহর জন্য হলে - উম্মতের মুহাব্বত, দীনের মুহাব্বত এবং আহলে দীনের মুহাব্বত তার অন্তরে থাকে। অর্থাৎ তার অন্তরে তাদের মুহাব্বত এবং ঘৃণার মাপকাঠি স্রেফ আল্লাহর জন্য হয়।
সুতরাং যদি আমরা উপকারী হতে চাই তাহলে আমরা যেনো আমাদের জবানকে উপকারী করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
سبحانك اللهم وبحمدك اشهد ان لا اله الا الله استغفرك واتوب اليه
১
حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاذٍ الصَّنْعَانِيُّ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ أَبِي النَّجُودِ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ فَأَصْبَحْتُ يَوْمًا قَرِيبًا مِنْهُ وَنَحْنُ نَسِيرُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ وَيُبَاعِدُنِي مِنَ النَّارِ . قَالَ " لَقَدْ سَأَلْتَنِي عَنْ عَظِيمٍ وَإِنَّهُ لَيَسِيرٌ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ تَعْبُدُ اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ وَتَصُومُ رَمَضَانَ وَتَحُجُّ الْبَيْتَ " . ثُمَّ قَالَ " أَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى أَبْوَابِ الْخَيْرِ الصَّوْمُ جُنَّةٌ وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ وَصَلاَةُ الرَّجُلِ مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ " . قَالَ ثُمَّ تَلاََ: ( تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ ) حَتَّى بَلَغَ: (يَعْمَلُونَ) ثُمَّ قَالَ " أَلاَ أُخْبِرُكَ بِرَأْسِ الأَمْرِ كُلِّهِ وَعَمُودِهِ وَذِرْوَةِ سَنَامِهِ " . قُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ " رَأْسُ الأَمْرِ الإِسْلاَمُ وَعَمُودُهُ الصَّلاَةُ وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ " . ثُمَّ قَالَ " أَلاَ أُخْبِرُكَ بِمَلاَكِ ذَلِكَ كُلِّهِ " . قُلْتُ بَلَى يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَالَ فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ قَالَ " كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا " . فَقُلْتُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُونَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ فَقَالَ " ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
মু‘আয ইবনু জাবাল রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, আমি কোন এক ভ্রমণে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। একদিন যেতে যেতে আমি তার নিকটবর্তী হলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এমন একটি কাজ সম্পর্কে আমাকে জানিয়ে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম হতে দূরে রাখবে। তিনি বললেনঃ তুমি তো আমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করেছো। তবে সেই ব্যক্তির জন্য এ ব্যাপারটা অতি সহজ যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা‘আলা তা সহজ করে দেন। তুমি আল্লাহ তা‘আলার ‘ইবাদাত করবে, কোন কিছুকে তাঁর সাথে শরীক করবে না, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দিবে, রামাযানের রোযা রাখবে এবং বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ করবে। তিনি আরো বললেনঃ আমি কি তোমাকে কল্যাণের দরজাসমূহ সম্পর্কে বলে দিব না? রোযা হলো ঢালস্বরূপ, দান-খাইরাত গুনাহ্সমূহ বিলীন করে দেয়, যেমনিভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয় এবং কোন ব্যক্তির মধ্যরাতের নামায আদায় করা। তারপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ “তাদের দেহ পাশ বিছানা থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং তারা তাদের প্রভুকে ডাকে আশায় ও ভয়ে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না তাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর কি লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ।” (সূরা আস-সাজদাহ ১৬, ১৭) তিনি আবার বলেনঃ আমি কি সমস্ত কাজের মূল, স্তম্ভ ও সর্বোচ্চ শিখর সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ সকল কাজের মূল হলো ইসলাম, স্তম্ভ হলো নামায এবং সর্বোচ্চ শিখর হলো জিহাদ। তিনি আরো বললেনঃ আমি কি এসব কিছুর সার সম্পর্কে তোমাকে বলব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্র রাসূল! তিনি তাঁর জিহ্বা ধরে বললেনঃ এটা সংযত রাখ। আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্র নাবী! আমরা যে কথা-বার্তা বলি এগুলো সম্পর্কেও কি পাকড়াও করা (জবাবদিহি) হবে? তিনি বললেনঃ হে মু‘আয! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষকে শুধুমাত্র জিহ্বার উপার্জনের কারণেই অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ( ইবনু মা-জাহ - ৩৯৭৩)
اداره النصر
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Media
پیش کرتے ہیں
পরিবেশিত
Presents
بنگالی ترجمہ
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation
عنوان:
শিরোনাম:
Titled:
اصلاح اعمال کی کنجی
আমল সংশোধনের উপায়
Ways to correct Worship
از استاد اسامہ محمود حفظہ اللہ
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
Ustad Usama Mahmud Hafizahullah
پی ڈی ایف
PDF (546 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৫৪৬ কিলোবাইট]
https://archive.org/download/amol-songsudhoner-upai/AmolSongsodhonerUpay%20-%20UstadUsamaMahmud.pdf
https://www.file-upload.org/kjhdor79c5ca
https://amalsongsodhon.files.wordpress.com/2023/09/amolsongsodhonerupay-ustadusamamahmud.pdf
https://www.mediafire.com/file/yfec1ki96emq5p3/AmolSongsodhonerUpay+-+UstadUsamaMahmud.pdf/file
https://mega.nz/file/cm8GxYyC#nHm06g1orWs6t3CeEP9tA8swzc_MzzQ2GOMntn-MZEs
ورڈ
WORD (355 KB)
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [৩৫৫ কিলোবাইট]
https://archive.org/download/amol-songsudhoner-upai/AmolSongsodhonerUpay%20-%20UstadUsamaMahmud.docx
https://www.file-upload.org/ozr83x7he1z0
https://amalsongsodhon.files.wordpress.com/2023/09/amolsongsodhonerupay-ustadusamamahmud.docx
https://www.mediafire.com/file/pzfeyt37gn05580/AmolSongsodhonerUpay+-+UstadUsamaMahmud.docx/file
https://mega.nz/file/p79R2BSI#7Q5uqyW3az39Mi5Ini6ALAU9oCtkkYUvtIBcNEaXOfU
غلاف-١
book cover [756 KB]
বুক কভার [৭৫৬ কিলোবাইট]
https://justpaste.it/img/8720cd14e9be48c6bdcc262568abd21c.jpg
https://www.file-upload.org/d6aodrz72rww
https://justpaste.it/img/f56b7982e73afe7b1ec48f7ebcbcd10b.jpg
https://www.mediafire.com/file/hwuhuiz0yse8jxa/amol-songsudhoner-upai-Cover.jpg/file
٢-غلاف
Banner [313 KB]
ব্যানার [৩১৩ কিলোবাইট]
https://justpaste.it/img/de27b85a4ecdd3d4879dc624278d952c.jpg
https://www.file-upload.org/thu0q34nae97
https://justpaste.it/img/faef83925dfb41b8ce6557af8b3f3a14.jpg
https://www.mediafire.com/file/s8ryfjlq1j3wfhk/amol-songsudhoner-upai-Banner.jpg/file
https://mega.nz/file/d7kTVJYC#4yBwNxkPu-GOZbEz-D4wYMD_fhRsL_sk0nfX18Am5hg
اپنی دعاؤں میں ہمیں یاد رکھيں
اداره النصر براۓ نشر و اشاعت
القاعدہ برِّ صغیر
আপনাদের দোয়ায়
আন নাসর মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent