مؤسسة الفردوس
আল ফিরদাউস
Al Firdaws
تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents
في اللغة البنغالية
বাংলা ভাষায়
In the Bengali Language
بعنوان:
শিরোনাম:
Titled:
سلسلة المذاكرة التربوية- الحلقة ١٢
ذكرالله
يورث الطمأنينة والثبات في القلب
তরবিয়তি মুযাকারা সিরিজ : ১২
আল্লাহর যিকির
অন্তরে প্রশান্তি ও দৃঢ়তা আনে
Tarbiyati Muzakara Series-12
Remembrance of Allah
Brings peace and strength to the heart
لمولانا عبد الله حذيفة حفظه الله
মাওলানা আব্দুল্লাহ হুযাইফা হাফিযাহুল্লাহ
By Mawlana Abdullah Huzaifa Hafizahullah
للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading
https://justpaste.it/tarbiyati_muzakara-12
روابط بي دي اب
PDF (571 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৫৭১ কিলোবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/yQF7nXdcd5p8Ap7
https://archive.org/download/web-banner_202110/TorbiyotiMuzakara%20-%2012%20-%20Zikir.pdf
https://www.mediafire.com/file/tkv3vfmug8q9ult/TorbiyotiMuzakara_-_12_-_Zikir.pdf/file
https://mega.nz/file/S9FzQAaC#ua-Y3jusfm8SBNeKKk9ZMF6pugaXa-Wg6kK_Z-yCYSQ
روابط ورد
Word (260 KB)
ওয়ার্ড [২৬০ কিলোবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/pfQE5xXiLBboqX7
https://archive.org/download/web-banner_202110/TorbiyotiMuzakara%20-%2012%20-%20Zikir.docx
https://www.mediafire.com/file/934cnef0pk4lnbz/TorbiyotiMuzakara_-_12_-_Zikir.docx/file
https://mega.nz/file/z9EBgCBA#l9s3XsQdqEfgihWMcH-mUL0GKfvo-evZaJDeN35OCWk
روابط الغلاف- ١
book Banner [160 KB]
বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [১৬০ কিলোবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/pzeK9tGT9sDBdAi
https://archive.org/download/web-banner_202110/Allahor-zikir3.jpg
https://www.mediafire.com/view/ywl8aukx0fdceql/Allahor-zikir3.jpg/file
https://mega.nz/file/bpli1a4Y#z2zJCeMM2faxQNfAiugTm9XbiWKTYxE_2tg0AEMJOsg
روابط الغلاف- ٢
Banner [1.9 MB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.৯ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/kHEtWfRXrdsDm5j
https://archive.org/download/web-banner_202110/web-Banner.jpg
https://www.mediafire.com/view/4yto6x69mhdtdfx/web-Banner.jpg/file
https://mega.nz/file/CoNxRCaS#W6OmP-t5fJASf58ehskE6KThxJzuzN60ECaM3lVOrVc
************
ذكرالله
يورث الطمأنينة والثبات في القلب
তরবিয়তি মুযাকারা সিরিজ : ১২
-------------------------------------
আল্লাহর যিকির
অন্তরে প্রশান্তি ও দৃঢ়তা আনে
মাওলানা আব্দুল্লাহ হুযাইফা হাফিযাহুল্লাহ
সূচিপত্র
যিকিরঃ আল্লাহর একান্ত সঙ্গ লাভের অন্যতম উপায়. 5
যিকির আমাদের নেক আমলগুলোর জন্য রুহের মতো... 9
এমন একটি আমল যার জন্য কোনো পরিমাণ বা অবস্থা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি.. 10
যিকির অন্তরে প্রশান্তি লাভের অন্যতম উপায়. 11
আল্লাহর যিকির অন্তরে দৃঢ়তা আনে.. 12
আয়াতের দুটি অংশের মাঝে পারষ্পরিক সম্পর্ক. 13
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم
اَلْحَمْدُ لله رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى أَشْرَفِ الْأَنْبِيَاءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ، وَعَلَى آله وَصحبِهِ أجمعين وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ،
أَمَّا بَعْدُ فأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
মুহতারাম ভাইয়েরা! আমাদের রব ও প্রতিপালক হলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। যিনি আসমান-জমিন এবং এর মধ্যবর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। যার কুদরত ও ক্ষমতার কোনো সীমা নেই। যার দয়া ও মেহেরবানিরও কোনো শেষ নেই। সেই মহান আল্লাহ হলেন আমাদের মালিক। আমাদের রব ও প্রতিপালক। আমাদের মাওলা ও মনিব। আমরা হলাম তাঁর বান্দা।
আমরা তাঁর অস্তিত্ব, তাঁর গুণাবলী মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা সব কিছুর ঊর্ধ্বে। তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যক্তি ও বস্তুকে আমরা আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে মহব্বত করি, ভালোবাসি।
তাঁর তরফ থেকে আসা প্রতিটি আদেশ নিষেধকে আমরা মনেপ্রাণে গ্রহণ করি এবং কোনো ধরনের বাহানা না করে তা পালন করার চেষ্টা করি, বাহ্যত তা যত কঠিনই হোক। তাঁর ছোট বড় প্রতিটি হুকুম অক্ষরে অক্ষরে পালন করাকে আমরা নিজেদের জন্য পরম সৌভাগ্য মনে করি।
এ উদ্দেশ্যেই আমরা ফেতনা ফাসাদের এ যুগে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর মতো কঠিনতম হুকুম পালন করার মহান লক্ষ্যে একত্রিত হয়েছি।
আমরা প্রত্যেকে এ কথার ওপর শপথ নিয়েছি, আমাদের শরীরে এক ফোঁটা রক্ত অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত কোনো ক্রমেই আমরা আল্লাহর এ হুকুম পালন করা থেকে বিরত হবো না। কখনোই না। ইনশাআল্লাহ, ছুম্মা ইনশাআল্লাহ।
দুনিয়ার সবাই পিছিয়ে গেলেও আমরা পিছু হটবো না ইনশাআল্লাহ। একা হলেও আমাদের সাধ্যানুযায়ী আল্লাহর এ হুকুম পালন করে যাবো ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় ভাই আমার!
একটি কথা আমরা সবাই জানি, আল্লাহর ছোট বড় যে কোনো হুকুম পালন করার জন্য যে জিনিসটির দিকে আমরা সবচেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী তা হল, আল্লাহর সাহায্য এবং তাঁর খাস মায়িয়্যাত বা একান্ত সঙ্গ।
তাই তো আমরা প্রতি নামাযে আল্লাহর ইবাদত করার কথা বলেই তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করে থাকি।
আল্লাহর সাহায্য না হলে আমাদের কারোর পক্ষে কোনো ইবাদতই করা সম্ভব হবে না এবং তাঁর খাস মায়িয়্যাত না হলে সেই ইবাদতের ওপর অবিচল থাকা এবং শেষ পর্যন্ত তা করে যাওয়াও সম্ভব হবে না।
এটি যেকোনো ইবাদতের ক্ষেত্রেই জরুরি তবে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর মতো কঠিনতম ইবাদতের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা অনেক অনেক বেশি।
আমরা কীভাবে আমাদের জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর এ ইবাদতের মধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা খাস মায়িয়্যাত বা একান্ত সঙ্গ লাভ করতে পারি এ বিষয়টি নিয়েই আজ সংক্ষিপ্ত কিছু কথা ভাইদের সাথে মুযাকারা করার ইচ্ছা করছি। আল্লাহ তাআলা ইখলাস ও ইতকানের সাথে কথাগুলো বলার এবং আমাদের সবাইকে সে মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
প্রিয় ভাই! বান্দা হিসেবে আমাদের জন্য অনেক বড় একটি সাআদাত বা সৌভাগ্য হল, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার খাস মায়িয়্যাত বা একান্ত সঙ্গ লাভ করা।
আল্লাহ তাআলার কত বড় দয়া, কত বড় মেহেরবানি যে, তিনি আমাদেরকে এমন কিছু আমলের কথা জানিয়ে দিয়েছেন যার মাধ্যমে আমরা তাঁর খাস মায়িয়্যাত লাভ করতে পারি।
এমন আমলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি আমল হল, যিকরুল্লাহ-আল্লাহর যিকির।
কত সহজ একটি আমল অথচ কত দামী ও মূল্যবান!
এর জন্য কোনো কিছুই লাগে না।
না ওযু, না গোছল, না বিশেষ কোনো সময় বা স্থান, না অন্য কোনো শর্ত, কোনো কিছুই লাগে না।
এ আমল জান্নাতেও বন্ধ হবে না। চিরকাল চলবে, কখনোই বন্ধ হবে না।
সহী মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদিসের শেষাংশে এসেছে,
يُلْهَمُونَ التَّسْبِيحَ وَالتَّحْمِيدَ، كَمَا تُلْهَمُونَ النَّفَسَ
ভাবার্থ, তোমরা যেভাবে শ্বাস নিয়ে থাকো জান্নাতিরা ঠিক ওভাবে তসবিহ ও তাহমিদ পড়বে। (অর্থাৎ শ্বাস নেওয়ার মতোই স্বাভাবিক ভাবে তারা তাসবিহ পড়বে। এতে তাদের কোনো কষ্ট হবে না।) সহী মুসলিম : ২৮৩৫
জান্নাতিরা দুনিয়ার ওই সময়গুলোর জন্য আফসোস করবে যা গাফেল অবস্থায় কেটে গেছে, কোনো যিকির করা হয়নি। যে সময়গুলো আল্লাহর কোনো হুকুমের ভিতর কাটেনি।
হাদিসে এসেছে,
عن معاذ بن جبل قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ليسَ يتحسَّرُ أَهلُ الجنَّةِ على شيءٍ إلّا على ساعَةٍ مرَّت بِهِم لم يذكُروا اللَّهَ عزَّ وجلَّ فيها.) السيوطي ، الجامع الصغير ٧٦٨٢ • حسن(
“হযরত মুয়ায বিন জাবাল রাজি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতিরা (জান্নাতে যাওয়ার পর দুনিয়ার) কোনো কিছুর জন্যই আক্ষেপ করবে না, তবে ওই সময়গুলোর জন্য আক্ষেপ করবে যেগুলো আল্লাহর যিকির ছাড়া কেটে গেছে”। (আলজামেউল সাগীর : ৭৬৮২)
দুনিয়াতে এর যে পুরস্কার রাখা হয়েছে তার কাইফিয়াত ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
فَاذْكُرُوْنِيْٓ اَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوْا لِيْ وَلَا تَكْفُرُوْنِ
“তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অকৃতজ্ঞ হয়ো না”। (সূরা বাকারা ০১ : ১৫২)
হাদিসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي، وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِي
“আমার বান্দা আমার ব্যাপারে যেরূপ ধারণা করে আমি তার সাথে তদ্রূপ আচরণ করি। যখনই সে আমাকে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গে থাকি। ...” (সহী বুখারী : ৬৪০৭; সহী মুসলিম : ৭৭৯)
বান্দার জন্য এর চেয়ে বড় সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে যে, বান্দা যখনই আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহর যিকির করে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহও তাকে স্মরণ করেন।
নাপাক পানি দিয়ে তৈরি গুনাহগার বান্দার জন্য এর চেয়ে বড় সাআদাত আর কী হতে পারে যে, তার মালিক তাকে স্মরণ করেন। তাও তার স্মরণ করার সঙ্গে সঙ্গেই।
কোথায় আল্লাহ! আর কোথায় নগণ্য তুচ্ছ বান্দা!! অথচ সেই নগণ্য তুচ্ছ বান্দাই কিনা যখনই তার মালিককে স্মরণ করে সঙ্গে সঙ্গে তার মালিক তার ডাকে সাড়া দেন।
এটি বান্দার ওপর আল্লাহ তাআলার কত বড় দয়া, কত বড় মেহেরবানি!
এযুগের ভাষায় বললে ব্যাপারটি যেন এমন যে, কোনো লোক তার মালিকের ব্যাপারে বলল, আমাকে আমার মালিক এত মায়া করেন, এত স্নেহ করেন যে, আমি দিন নেই, রাত নেই যখনই তাঁকে কল করি সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমার কল রিসিভ করেন। আমার কথা শুনেন। আমার কোনো অভাব-অভিযোগ থাকলে তা তিনি পূরণ করার ওয়াদা করেন। আর একারণে আমি দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা আমার মালিকের সাথে কানেক্ট থাকি। একটি মুহূর্তের জন্যও আমি আমার মালিকের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হতে দেই না।
প্রিয় ভাই! আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্কটি তো এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি গভীর। যার আসলে কোনো তুলনাই হয় না। প্রতি মুহূর্তেই তিনি আমাদের মনের কথা শুনেন। প্রতি মুহূর্তেই আমাদের ডাকে সাড়া দেন।
যিকিরের এছাড়া অন্য কোনো ফায়েদা যদি নাও থাকত তবুও এই একটি ফায়েদাই যথেষ্ট ছিল। অথচ দেখুন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কীভাবে বিষয়টিকে আমাদের বলছেন, তাও তিনি নিজের পক্ষ থেকে না বলে আল্লাহর কথাটাই আমাদের শুনাচ্ছেন,
তিনি বলেন,
يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى : أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي، وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِي، فَإِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ، ذَكَرْتُهُ فِي نَفْسِي، وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي مَلَأٍ، ذَكَرْتُهُ فِي مَلَأٍ خَيْرٍ مِنْهُمْ، وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَيَّ شِبْراً، تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعاً، وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَيَّ ذِرَاعاً، تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ بَاعاً، وَإِنْ أَتَانِي يَمْشِي أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً .
“আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমার বান্দা আমার ব্যাপারে যেরূপ ধারণা করে আমি তার সাথে তদ্রূপ আচরণ করি। যখনই সে আমাকে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গে থাকি। সে আমাকে মনে মনে স্মরণ করলে আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি। সে আমাকে কোনো মজলিসে স্মরণ করলে আমি তাকে এর’চে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি। সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হলে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হলে আমি তার দিকে কয়েক হাত অগ্রসর হই। সে আমার দিকে হেঁটে এলে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই”। (সহী বুখারী : ৬৪০৭; সহী মুসলিম : ৭৭৯)
শেষের কথাটি খেয়াল করুন, ‘সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হলে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই ...’ এ থেকে বুঝা যাচ্ছে, যে কোনো আমলের ক্ষেত্রে শুরুটা কিন্তু আমাকে-আপনাকেই করতে হবে। তারপর আসবে আল্লাহর নুসরাহ। তার আগে না।
আমি নিজেকে যিকিরুল্লাহর আদী (অভ্যস্ত) বানাতে চাই, তো শুরুটা আমাকেই করতে হবে।
আমি নিজেকে সাচ্চা মুসলিম, সাচ্চা মুজাহিদ বানাতে চাই, শুরুটা আমাকেই করতে হবে।
অপর এক হাদিসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَثَلُ الَّذِي يَذْكُرُ رَبَّهُ، وَالَّذِي لاَ يَذْكُرُ ربَّهُ، مَثَلُ الْحَيِّ وَالْمَيِّتِ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির করে আর যে করে না তাদের একজন জীবিত আর অপরজন মৃত”। (সহী বুখারী : ৬৪০৭; সহী মুসলিম : ৭৭৯)
হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে, আমরা যতক্ষণ আল্লাহর যিকির করি ততক্ষণই আসলে আমরা জীবিত আর যতক্ষণ যিকির থেকে গাফেল থাকি, ততক্ষণ আমরা যেন মৃত। আল্লাহর যিকির আমাদের দেহের জন্য রুহের মতো।
যিকির আমাদের দেহের জন্য যেমন রুহের মতো, আমাদের নেক আমলগুলো জন্যও রুহের মতো। কোনো আমলে আল্লাহর যিকির নেই, তো সেটি যেন রুহবিহীন দেহ। যেন মরা লাশ।
এজন্যই জামে তিরমিযীতে এসেছে, আবু দারদা রাযি. বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন,
أَلاَ أُنبِّئُكُم بِخَيْرِ أَعْمَالِكُمْ، وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيكِكُمْ، وَأَرْفَعِهَا فِي دَرَجَاتِكُمْ، وَخَيْرٍ لَكُمْ مِنْ إِنْفَاقِ الذَّهَبِ وَالوَرِقِ، وَخَيْرٍ لَكُمْ مِنْ أَنْ تَلْقَوْا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوا أَعْنَاقَهُمْ وَيَضْرِبُوا أَعْنَاقِكُم ؟
“আমি কি তোমাদেরকে বলব না, তোমাদের আমলের মধ্যে কোন আমলটি সর্বোৎকৃষ্ট, তোমাদের মালিক (আল্লাহর) কাছে অত্যন্ত পবিত্র, (জান্নাতে) তোমাদের জন্য অধিক মর্যাদা বৃদ্ধিকারী, (আল্লাহর পথে) সোনা-রূপা ব্যয় করার চেয়েও উত্তম এবং তোমরা তোমাদের শত্রুদের মুখোমুখি হয়ে তাদেরকে হত্যা করা এবং তাদের হাতে নিহত হওয়ার চেয়েও শ্রেষ্ঠ?
قَالُوا بَلَى
উপস্থিত সাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই বলুন।
قال : ذِكْرُ اللَّهِ تَعَالَى.
বললেন, তা হল, আল্লাহর যিকির”। (জামে তিরমিযী, হাদিস : ৩৩৭৭)
হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে, যেকোনো নেকআমল তা বাহ্যত যত বড়ই হোক, যদি তাতে আল্লাহর যিকির না থাকে তাহলে তা হবে রুহ বিহীন দেহের ন্যায়। এমন গাফলত পূর্ণ আমলের চেয়ে শুধু যিকিরের মূল্য অনেক বেশি। শুধু যিকিরের মূল্য ইনফাক ও জিহাদ অপেক্ষা তখনই বেশি হবে, যখন সেই ইনফাক ও জিহাদ যিকির শূন্য হবে। কিন্তু কারো ইনফাক ও জিহাদ যদি যিকিরওয়ালা হয় তখন সেই ইনফাক ও জিহাদ যে শুধু যিকিরের চেয়ে বেশি মূল্যবান হবে, তাতো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
হাদিস থেকে যে শিক্ষা আমরা পাই তা হল, কোনো মুজাহিদ তার জিহাদকে মূল্যবান বানাতে চাইলে তার উচিত বেশি বেশি যিকির করা। কোনো সাদাকাকারী তার সাদাকাকে মূল্যবান বানাতে চাইলে তার উচিত বেশি বেশি যিকির করা।
অতএব আমরা চেষ্টা করব, আমাদের ছোট বড় কোনো কাজই যেন যিকির শূন্য না হয়।
প্রিয় ভাই! একমাত্র যিকিরই এমন একটি আমল যা বেশি বেশি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যার কোনো পরিমাণ ঠিক করে দেয়া হয়নি। বিশেষ কোনো অবস্থাও ঠিক করে দেয়া হয়নি। এ ছাড়া অন্য কোনো আমলের ব্যাপারে এমন নির্দেশ নেই।
শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে করা যাবে?
কিংবা শুধু বসে বসে করা যাবে?
কিংবা শুধু শুয়ে শুয়ে করা যাবে?
না বরং সর্বাবস্থায়ই করা যাবে বরং করতে হবে-
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلٰوةَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قِيٰمًا وَقُعُودًا وَعَلٰى جُنُوبِكُمْ
“নামায শেষ হলে দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহর যিকির করো”। (সূরা আলে ইমরান ৩ : ১০৩)
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىَ جُنُوبِهِمْ
“যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে ...” (সূরা আলে ইমরান ৩ : ১৯১)
এর জন্য কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا .
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করো”। (সূরা আহযাব ৩৩ : ৪১)
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانتَشِرُوا فِى الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“নামায শেষ হলে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিযিক) তালাশ করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর তাহলেই সফলতা লাভ করতে পারবে”। (সূরা জুমআ ৬২ : ১০)
নামায অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি যিকির। এটি শেষ হলে দুনিয়ার কাজে যাবে, তো সেখানেও নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, বেশি বেশি যিকির করো। আয়াতের শেষে বলা হচ্ছে,
وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর তাহলেই সফলতা লাভ করতে পারবে।
এ থেকে বুঝা যায়,
كثرة الذكر من أهم أسباب الفلاح
বেশি বেশি যিকির করা সফলতা লাভের অন্যতম একটি উপায়।
الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ طُوبَى لَهُمْ وَحُسْنُ مَآبٍ
“যারা ঈমান আনে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে; জেনে রেখো, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে। যারা ঈমান আনে এবং নেকআমল করে, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ এবং মনোরম প্রত্যাবর্তনস্থল”। (সূরা রাআদ ১৩ : ২৮-২৯)
এ থেকে বুঝা যায়,
الذكر سبب حصول الطمأنينة في القلب
আল্লাহর যিকির অন্তরে প্রশান্তি লাভের উপায়।
وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيراً وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
“অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকিরকারী নারী ও পুরুষ, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও বিরাট পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন”। (সূরা আহযাব ৩৩ : ৩৫)
এ থেকে বুঝা যায়,
كثرة الذكر سبب حصول المغفرة والأجرالعظيم
অধিক পরিমাণে যিকির করা ক্ষমা প্রাপ্তি এবং বিরাট পুরস্কার লাভের একটি উপায়।
সূরা আনফালের একটি আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করুন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন কোনো বাহিনীর মুখোমুখি হও, তখন সুদৃঢ় থাকো এবং অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করো তাহলেই সফলতা লাভ করতে পারবে”। (সূরা আনফাল ০৮ : ৪৫)
লক্ষ করুন, এখানে প্রথমে বলা হল, তোমরা যখন কোনো বাহিনীর মুখোমুখি হও তখন সুদৃঢ় থাকো।
এটিই হল এখানে মূল হুকুম যে, শত্রুর মুখোমুখি হলে তার সামনে সাবেত কদম থাকো। অবিচল থাকো। সুদৃঢ় থাকো।
এরপর বলছেন, তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করো।
আয়াতের দুটি অংশের মাঝে পারষ্পরিক মুনাসাবাত বা সম্পর্ক কী? প্রথমে বললেন, শত্রুর সামনে অবিচল থাকো। এরপর বললেন, অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করো।
মুনাসাবাতটি বলার আগে একটি কথা বলি।
সর্বস্বীকৃত একটি নিয়ম হল, যে কোনো যুদ্ধে জয় লাভ করার জন্য সাবেত কদমি বা প্রতিপক্ষের সামনে অবিচল থাকা নেহায়েত জরুরি। যোদ্ধা যারাই হোক। মুসলিম হোক বা কাফের।
আর কদম বা পা তখনই সাবেত থাকে, অবিচল থাকে - যখন দিল সাবেত থাকে, অবিচল থাকে। আর দিল সাবেত থাকার উপায় হল, যোদ্ধার মনের এই অনুভূতি যে, আমার সাথে যিনি (বা যারা) আছেন তিনি খুবই শক্তিধর। তিনি যেহেতু আমার সঙ্গে আছেন, তার সাহায্য যেহেতু আমার সঙ্গে আছে তাই আমিই জিতবো। মুসলিম যোদ্ধা-কাফের যোদ্ধা সবার বেলায় একই কথা। প্রত্যেকেই নিজের পক্ষকে প্রচণ্ড শক্তিধর মনে করে।
এবার আয়াতের দুটি কথার মাঝে মুনাসাবাতটি লক্ষ করুন, এখানে প্রথমে বলা হচ্ছে, তোমরা যখন কোনো বাহিনীর মুখোমুখি হও, তখন সুদৃঢ় থাকো। এরপর বলছেন, অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করো।
কেন?
কারণ, অধিক পরিমাণে যিকির করলে তোমাদের দিল সুদৃঢ় থাকবে যা যুদ্ধে জয় লাভ করার অন্যতম একটি উপায়।
তো আয়াত থেকে বুঝা যায়,
كثرة الذكرتورث الثبات في القلب وهي من أهم أسباب الفلاح
অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির অন্তরে দৃঢ়তা আনে এবং এটি সফলতা লাভের অন্যতম একটি উপায়।
মুহতারাম ভাইয়েরা, আমরা কি এখন শত্রু বাহিনীর মুখোমুখি নই?
ওরা কি আমাদেরকে ধরার জন্য সারাক্ষণ ওঁত পেতে নেই?
অতএব এ সময় আমাদের করণীয় নিজের দিলের ইস্তিকামাতের জন্য বেশি বেশি যিকির করার খুব ইহতিমাম করা। তা না হলে আল্লাহ না করেন দিল নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে আর দিল নড়ে গেলে, পাও নড়ে যাবে।
এজন্য ভাই আমরা আমাদের অন্য সকল আমলের পাশাপাশি এ আমলের প্রতিও গুরুত্ব দেব ইনশাআল্লাহ। সকাল-সন্ধ্যার আযকার তো আমরা পড়বই, এর সঙ্গে অন্যান্য আযকার যা বিশেষ কোন সময়ের সাথে বাঁধা না, সব সময়ই পড়া যায়, ওগুলো পড়ার প্রতিও গুরুত্ব দেব ইনশাআল্লাহ।
যেকোনো যিকিরই করা যায়। কুরআন তেলাওয়াত তো হল সর্বোত্তম যিকির। তা তো আমরা করিই আলহাদুলিল্লাহ। এ বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা মুযাকারাও হয়েছিল। কুরআন তেলাওয়াতের পর অন্যান্য যিকিরের মধ্যে সাধারণভাবে ইস্তিগফার ও দুরুদ বেশি বেশি পড়া যায়। তবে সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তাসবীহের বাক্যগুলো বেশি বেশি পড়া চাই। সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
আমাদের আযকার ফাইলের শেষে কিংবা gazwa.net এ প্রকাশিত ‘সকাল সন্ধ্যার মাসনূন যিকির’ [http://gazwah.net/?p=25686] নামের ছোট্ট রেসালাটির শেষে সহজ বারটি যিকির শিরোনামে যে যিকিরগুলো রয়েছে, আমরা যদি রাত দিন মিলিয়ে এ যিকিরগুলো ১০০ বার করে বারোশ বার পড়ে নিতে পারি তাহলে এটি আমাদের জন্য অনেক বড় একটি আমল হবে ইনশাআল্লাহ।
সবগুলো না পারলে কমপক্ষে যে যিকিরগুলো ১০০ বার পড়ার কথা বলা হয়েছে ওগুলো ১০০ বার করে পড়ে নিলাম আর অন্যগুলো যে কয়বার পারলাম, পড়ে নিলাম। এতেই আমরা অধিক পরিমাণে যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
ওলামায়ে কেরাম বলেছেন,
الذكر يكون بالقلب واللسان تارة، وذلك أفضل الذكر وبالقلب وحده تارة، وهي الدرجة الثانية، وباللسان وحده تارة، وهي الدرجة الثالثة.
যিকিরের তিনটি স্তর রয়েছে।
প্রথম এবং সর্বোত্তম স্তর হল, জিহবা ও অন্তর উভয়টি দিয়ে যিকির করা। অর্থাৎ মনযোগ সহকারে যিকির করা। দ্বিতীয় স্তর হল, শুধু অন্তর দিয়ে যিকির করা। অর্থাৎ মনে মনে যিকির করা।
তৃতীয় স্তর হল, শুধু মুখে যিকির করা। এটি যিকিরের সর্বনিম্ন স্তর। তবে এটিও কাম্য। কেউ নিজেকে অভ্যস্ত করার জন্য এটি দিয়েই শুরু করতে পারেন। এরপর ধীরে উপরের দিকে উঠতে থাকলেন।
এবার অধিক পরিমাণে যিকির করা প্রসঙ্গে সালাফদের কিছু বাণী এবং কয়েকটি হাদিস বলেই কথা শেষ করছি।
যিকির প্রসঙ্গে এরই মধ্যে সালাফদের অনেক বাণী আমাদের সামনে চলে এসেছে আলহামদুলিল্লাহ। তারপরও শুধু একটু স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য দু-চারটি বাণী পেশ করছি।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযি. বলেন,
وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا.
“অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকিরকারী নারী ও পুরুষ, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও বিরাট পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন”। (সূরা আহযাব ৩৩ : ৩৫)
‘অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকিরকারী’ বলে উদ্দেশ্য, তারা প্রত্যেক নামাযের পর, সকালে, সন্ধ্যায়, যখন ঘুমোতে যায়, যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হয়, যখন ঘর থেকে বের হয় এবং যখন ঘরে ফিরে আসে সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকির করে।-আল আযকার-নববী : ১৯
ইমাম ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন,
لو سمعتَ صريرَ أقلامِ الملائكة وهي تكتب اسمَك من الذاكرين لمتَّ شوقا لقول لا إله إلا الله .
ফেরেশতারা যখন আপনার নাম যিকিরকারীদের মধ্যে লিপিবদ্ধ করেন তখন আপনি যদি তাঁদের কলমের আওয়াজ শুনতে পেতেন তাহলে যিকিরের প্রতি অত্যধিক ভালোবাসার কারণে মারাই যেতেন।
তিনি আরও বলেন,
إن في دوام الذكر في الطريق والبيت والحضر والسفر والبقاع تكثيرا لشهود العبد يوم القيامة فإن البقعة والدار والجبل والأرض تشهد للذاكر يوم القيامة .
রাস্তায়, ঘরে, সফরে, মাঠে ময়দানে (তথা সর্বত্র) আল্লাহর যিকির করার দ্বারা কেয়ামতের দিন বান্দার পক্ষে সাক্ষ্য দানকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। কারণ, (যেখানে যেখানে যিকির করা হয়েছে ওসব) মাঠ, বাড়িঘর, পাহাড়-পর্বত ও জমি সবই কেয়ামতের দিন যিকিরকারীর পক্ষে সাক্ষ্য দিবে।-আলওয়াবিলুস সাইয়িব : ৮১
لو صلّى العبد عليه (محمد صلى الله عليه وسلم) بعدد أنفاسه، لم يكن موفيًا لحقّه .
কেউ যদি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তার নিঃশ্বাসের সমপরিমাণ দুরুদও পড়ে তবুও তাঁর যা প্রাপ্য তা সে আদায় করতে পারবে না।-জালাউল আফহাম : ৩৪৪
১ম হাদিস
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُسْرٍ رضي الله عنه أَنَّ رَجُلاً قَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ شَرَائِعَ الإِسْلاَمِ قَدْ كَثُرَتْ عَليَّ، فَأَخْبِرْنِي بِشَيْءٍ أَتَشَبَّثُ بِهِ، قَالَ : لاَ يَزَالُ لِسَانُكَ رَطْباً مِنْ ذِكْرِ اللَّهِ
“হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর রাযি. বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে) আরয করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! ইসলামের হুকুম-আহকাম তো অনেক। (তার মধ্য থেকে) আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যা আমি শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে রাখবো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা জিহবা যেন সারাক্ষণ আল্লাহর যিকিরে সজীব থাকে”। (জামে’ তিরমিযী, হাদিস : ৩৩৭৫)
হাদিস থেকে যে শিক্ষা আমরা পাই তা হল, সব সময় মুখে কোনো না কোনো যিকির করতে থাকা বিরাট মর্যাদা পূর্ণ একটি আমল। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করেন। আমীন।
২য় হাদিস
عن أبي ذر الغفاري رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم: ما من يومٍ وليلةٍ إلا ولله عزَّ وجلَّ فيه صدقةٌ يمنُّ بها على من يشاءُ من عبادِه، وما مَنَّ اللهُ على عبدٍ بأفضلَ من أن يُلهِمَه ذِكرَه
“হযরত আবু যর রাযি. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতিদিন ও প্রতিরাতে আল্লাহর (বিশেষ) একটি দান থাকে, যা তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা করেন তার প্রতিই করে থাকেন। আর আল্লাহ কাউকে তাঁর যিকিরের তাওফিক দেয়ার চেয়ে উত্তম কোনো দান কারোর প্রতি করেন না”। (মুখতাসারুত তারগীব, ইবনে হাজার : ৫৭৩)
হাদিসের শেষ কথাটি লক্ষ করুন,
وما مَنَّ اللهُ على عبدٍ بأفضلَ من أن يُلهِمَه ذِكرَه
“আর আল্লাহ কাউকে তাঁর যিকিরের তাওফিক দেয়ার চেয়ে উত্তম কোনো দান কারোর প্রতি করেন না”।
প্রিয় ভাই! আমি আপনি কি চাইলে আল্লাহর এই বিশেষ দানটি লাভ করতে পারি না?
এর জন্য কঠিন কিছুই করতে হবে না। যা করতে হবে তা হল, মনের দৃঢ় ইচ্ছা ও সংকল্প।
কেবল এই সংকল্প যে, আমি প্রতিদিন প্রতিরাত আল্লাহর এই বিশেষ দানটি অবশ্যই লাভ করব ইনশাআল্লাহ। এই সংকল্প করার পর আমরা যদি একে কাজে পরিণত করি এবং নিজেকে অহেতুক কথাবার্তা থেকে দূরে রেখে আল্লাহর যিকিরে মগ্ন রাখি তাহলেই আমরা আল্লাহর এ বিশেষ দানের ভাগীদার হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের সবার জন্য এ মূল্যবান আমলটিকে সহজ থেকে সহজতর করে দেন। আমীন।
৩য় হাদিস
عَنْ مُعَاذٍ بن أنس رضي الله عنه، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَهُ فَقَالَ : أَيُّ الْمجاهدين أَعْظَمُ أَجْرًا؟ قَالَ : " أَكْثَرُهُمْ لِلَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى ذِكْرًا ". قَالَ : فَأَيُّ الصَّائِمِينَ أَعْظَمُ أَجْرًا ؟ قَالَ : " أَكْثَرُهُمْ لِلَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى ذِكْرًا ". ثُمَّ ذَكَرَ لَنَا الصَّلَاةَ وَالزَّكَاةَ وَالْحَجَّ وَالصَّدَقَةَ كُلُّ ذَلِكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : " أَكْثَرُهُمْ لِلَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى ذِكْرًا ". فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ لِعُمَرَ : يَا أَبَا حَفْصٍ، ذَهَبَ الذَّاكِرُونَ بِكُلِّ خَيْرٍ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " أَجَلْ ". مختصر الترغيب والترهيب لابن حجر : ٥٧٤
হযরত মুয়ায বিন আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, মুজাহিদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি প্রতিদান পাবে? উত্তর দিলেন, যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহর যিকির করবে।
ওই ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, রোজাদারদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি প্রতিদান পাবে? উত্তর দিলেন, যে সবচেয়ে বেশি যিকির করবে।
এরপর ওই ব্যক্তি নামায, যাকাত, হজ এবং সাদাকার কথা বলেও জিজ্ঞেস করল, প্রতিবারই নবীজী উত্তর দিলেন, যে সবচেয়ে বেশি যিকির করবে।
তখন (ওই মজলিসে উপস্থিত) আবু বকর রাযি. (তাঁর পাশে বসা) ওমর রাযি.কে লক্ষ্য করে বললেন, আবু হাফস! যিকিরকারীরা যে সব পুণ্যই নিয়ে যাচ্ছে! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তাঁর কথা শুনে) বললেন, হ্যাঁ, এমনই। (মুখতাসারুত তারগীব, ইবনে হাজার : ৫৭৪)
৪র্থ হাদিস
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أربعٌ مَنْ أُعْطِيَهُنَّ فَقَدْ أُعْطِيَ خَيْرَ الدُّنْيا والآخرةِ قَلْبًا شاكِرًا ولِسانًا ذاكرًا وبدَنًا على البلاءِ صابِرًا وزوجةً لا تَبْغِيهِ خَوْنًا في نفْسِها ولا مالِهِ
الهيثمي (ت ٨٠٧)، مجمع الزوائد ٤/٢٧٦ • رجاله رجال الصحيح • أخرجه الطبراني في «المعجم الأوسط» (٧٢١٢)
চারটি জিনিস এমন যে, যে ব্যক্তি এগুলো লাভ করল সে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের কল্যাণ লাভ করে ফেলল।
এক. শোকরগুযার অন্তর।
দুই. যিকিরকারী জিহবা।
তিন. বিপদাপদে সবরকারী দেহ।
চার. এমন স্ত্রী যে তার খেয়ানত করে না। না তার নিজের ব্যাপারে আর না স্বামীর সম্পদের ব্যাপারে। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/২৭৬, মু’জামুল আওসাত ৭২১২)
আল্লাহ তাআলা মুতাকাল্লিম-মুখাতাবীন সবাইকে চারটি নেয়ামত দান করে ধন্য করেন আমীন।
আজ কথা এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কথাগুলোর ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন। শাহাদাত পর্যন্ত জিহাদ ও কিতালের পথে অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের সবাইকে সর্বোচ্চ জান্নাত জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন, আমীন।
اللَّهُمَّ إِنِّا نسْأَلُكَ لِسَانًا صَادِقًا، وَقَلْبًا سَلِيمًا
اللَّهُمَّ إِنِّا نسْأَلُكَ لِسانًا ذاكرًا، وقَلْبًا شاكِرًا وبدَنًا على البلاءِ صابِرًا وزوجةً لا تَبْغِينا خَوْنًا في نفْسِها ولا مالِنا
اَللَّهُمَّ اجْعَلْ سَرِيرَتنا خَيْرًا مِنْ عَلَانِيَتنا، وَاجْعَلْ عَلَانِيَتنا صَالِحَةً
وصل اللَّهُمَّ على خير خلقك محمد وعلى آله وصحبه أجمعين
وآخردعوانا أن الحمد لله رب العالمين
************
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الفردوس للإنتاج الإعلامي
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশন
In your dua remember your brothers of
Al Firdaws Media Foundation