NoteShare

tarbiyati muzakara-11


مؤسسة الفردوس
আল ফিরদাউস
Al Firdaws

 

تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents

 

في اللغة البنغالية
বাংলা ভাষায়
In the Bengali Language

 

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled:

 

سلسلة المذاكرة التربوية- الحلقة ١١
الإخلاص : لا يقبل عمل إلا به

 

তরবিয়তি মুযাকারা সিরিজ : ১১
ইখলাস যা ছাড়া কোনো আমলই কবুল হয় না 

 

Tarbiyati Muzakara Series-11
Ikhlas does not accept any time without

 

لمولانا عبد الله حذيفة حفظه الله
মাওলানা আব্দুল্লাহ হুযাইফা হাফিযাহুল্লাহ
By Mawlana Abdullah Huzaifa Hafizahullah

 


للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading


روابط بي دي اب
PDF (556 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৫৫৬ কিলোবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/LyF3qgYq6KEgzPr


https://www.mediafire.com/file/9rmdp1cdaqcjjzm/TorbiyotiMuzakara+-+11+-+Ikhlas.pdf/file


https://mega.nz/file/k8dkBRjb#3WTq4UIFVhqkT3mCSVAoYJKfXVcLDC9x3UTk6iAvKx8


https://archive.org/download/tarbiyati-muzakara-11/TorbiyotiMuzakara%20-%2011%20-%20Ikhlas.pdf


https://top4top.io/downloadf-2045nv82c4-pdf.html


https://mymegacloud.com/index.php?dl=9e39d5c22926ffd4599885db43cb103c


https://www.udrop.com/file/5O3T/TorbiyotiMuzakara_-_11_-_Ikhlas.pdf


https://www.solidfiles.com/v/eWP822evd5xkG


https://files.fm/f/6hauqktuu

 

 

روابط ورد
Word (382 KB)
ওয়ার্ড [৩৮২ কিলোবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/MKmAqZ386yZEoqs


https://www.mediafire.com/file/i5g03zzltqedvbc/TorbiyotiMuzakara+-+11+-+Ikhlas.docx/file


https://mega.nz/file/I4dgHDoL#fa_UcevBATfitSK7Et4nNRjeRMdOoo6vLpfg4ubGogc


https://archive.org/download/tarbiyati-muzakara-11/TorbiyotiMuzakara%20-%2011%20-%20Ikhlas.docx


https://top4top.io/downloadf-2045jzuzg3-docx.html


https://mymegacloud.com/index.php?dl=efea27614f3156287c919db91b646c93


https://www.udrop.com/file/5O3S/TorbiyotiMuzakara_-_11_-_Ikhlas.docx


https://www.solidfiles.com/v/ze6GYY6BwqveR


https://files.fm/f/46z9uu5dy

 

 

روابط الغلاف- ١
book Banner [2.9 MB]
বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [২.৯ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/Cjw37NjLfnzw2nz


https://www.mediafire.com/file/cl39sb1tmobxe8t/tarbiyati-muzakara-11.jpg/file


https://mega.nz/file/5tN01LhK#2sIloGgkWWpGRVFJqdgvoatSLYvkFCg_dlp6Bst6_sA


https://archive.org/download/tarbiyati-muzakara-11/tarbiyati-muzakara-11.jpg


https://g.top4top.io/p_2045qc04k2.jpg


https://mymegacloud.com/index.php?dl=c989f76993887a322b9a3ce8889fc7b0


https://www.udrop.com/file/5O3R/tarbiyati-muzakara-11.jpg


https://www.solidfiles.com/v/4YdaLvZGrae2G


https://files.fm/f/5vacptuu5

 

 

روابط الغلاف- ٢
Banner [796 KB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [৭৯৬ কিলোবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/rGsijgoPpDFCFLo


https://www.mediafire.com/file/y028q527g1kkumu/web-banner-tarbiyati-muzakara-11.jpg/file


https://mega.nz/file/JkF22TRA#FR3jY7nJ06AO2XcH6VCJe4DRl9R-9P_9A123pkcKWuc


https://ia601509.us.archive.org/34/items/tarbiyati-muzakara-11/web-banner-tarbiyati-muzakara-11.jpg


https://f.top4top.io/p_2045yvnyg1.jpg


https://mymegacloud.com/index.php?dl=6f3a0cff549de6471b96b43c0db4c3c2


https://www.udrop.com/file/5O3U/web-banner-tarbiyati-muzakara-11.jpg


https://www.solidfiles.com/v/rdY6KXrGAjANB


https://files.fm/f/8fau4729y

 

 

************

 

الإخلاص : لا يقبل عمل إلا به

তরবিয়তি মুযাকারা সিরিজ : ১১

-------------------------------------

 

ইখলাস

যা ছাড়া কোনো আমলই কবুল হয় না

 

 

 

মাওলানা আব্দুল্লাহ হুযাইফা হাফিযাহুল্লাহ

 

 

  

 

সূচিপত্র

 

ইখলাস ফিল আমল. 4

হাদিস থেকে প্রাপ্ত কিছু শিক্ষা.. 10

সে কিছুই পাবে না.. 12

পার্থিব প্রতিদানের কারণে পরকালীন প্রতিদান কমে যায়. 12

সত্যিকার মুমিনের দিলের তামান্না.. 14

তাদের অন্তর ভীত সন্ত্রস্ত থাকে.. 14

ইখলাস সম্পর্কে সালাফদের কিছু বাণী. 16

সূরা যুমারের তিনটি আয়াত. 18

হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাযি.-এর দোয়া. 20

 

 

 

 

 

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم

اَلْحَمْدُ لله رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى أَشْرَفِ الْأَنْبِيَاءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ، وَعَلَى آله وَأَصْحَابِهِ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ، أَمَّا بَعْدُ

فأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم، بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم

إِنَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّينَ

اَللّهُمَّ يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ لا إِلَهَ إِلَّا أَنتَ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ

اَللّهُمَّ اجْعَلْ عَمَلِيْ كُلُّهُ صَالِحًا وَاجْعَلُهُ لِوَجْهِكَ خَالِصًا وَلَا تَجْعَلْ لِأَحَدٍ فِيْهِ شَيْئًا

ইখলাস ফিল আমল

দুনিয়ার সাধারণ একটি নিয়ম, যা আমরা সবাই জানি, যে জিনিস যত উঁচুতে উঠে তা তত বেশি ঝুঁকিতে থাকে। কোনো কারণে তা যদি নিচে পড়ে যায় তাহলে ক্ষয়ক্ষতিও তত বেশি হয়। জিনিসটা যত উপর থেকে পড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তত বেশি হয়।      

ইসলামের বিধি বিধানের মধ্যে জিহাদ হল, এর সর্বোচ্চ চূড়া। আল্লাহ না করুন এই চূড়া থেকে কেউ যদি পড়ে যায় তাহলে তার অবস্থা যে অন্য যে কারোর চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ হবে, তা সহজেই বুঝা যায়।

তাছাড়া যে দিন থেকে আমরা আল্লাহর দ্বীনের জন্য জীবন দেয়ার শপথ নিয়েছি সে দিন থেকেই আমরা মালউন ইবলিসের বিশেষ টার্গেটে পরিণত হয়েছি। সে অবশ্যই আমাদের পিছনে অন্য যে কারোর চেয়ে বেশি মেহনত করছে। আমাদের মধ্যে যে ভাইরা যত বড় খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছেন স্বাভাবিকভাবেই তিনি ইবলিসের তত বড় দুশমনে পরিণত হয়েছেন।    

ইবলিস ও তার বাহিনী প্রতি মুহুর্তে নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করছে কীভাবে আমাদেরকে এ পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে। বিচ্যুত করতে না পারলে কমপক্ষে আমাদের আমলগুলোকে, কুরবানিগুলোকে কীভাবে নষ্ট করে দিতে পারে, এ চেষ্টা ওরা সারাক্ষণ করে যাচ্ছে। 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যদি তাঁর খাস মেহেরবানিতে আমাদের হেফাজত না করেন তাহলে ইবলিস ও তার বাহিনীর ফাঁদ থেকে নিজেকে রক্ষা করা আমাদের মতো কমজোরদের পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব হবে না। বিশেষ করে এ যুগে, যখন কিনা চার দিকে কেবল ফেতনা আর ফেতনা!!      

তৃতীয়ত জিহাদ ও শাহাদাতের এ পথে পা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেই তিন শ্রেণির এক শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে গেছি, যাদের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, ওই তিন শ্রেণির লোকদের ব্যাপারে জাহান্নামের ফায়সালা সবার আগে হবে, তাদের মাধ্যমেই জাহান্নামের আগুন উত্তপ্ত করা হবে। তারা হল, নামধারী মুজাহিদ, আলেম ও দানশীল।   

এসব কারণে যেবিষয়গুলো নিয়ে আমাদের মাঝে বেশি বেশি মুযাকারা হওয়া দরকার, কিছু দিন পর পরই নিজেদের মাঝে আলোচনা হওয়া দরকার তার মধ্যে অন্যতম হল, ইখলাস ফিল আমাল। কীভাবে আমরা আমাদের ছোট বড় প্রতিটি কাজ ইখলাসের সাথে সম্পন্ন করতে পারি এবং কাজগুলো সম্পন্ন করার পর ইখলাসের ওপর অবিচল থাকতে পারি। আল্লাহ না করেন আমরা যেন কোনো ভাবেই সেই তিন শ্রেণির কোনো শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত না হয়ে যাই। তাহলে আমাদের দুনিয়া আখেরাত দুটোই বরবাদ হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করেন। আমীন। 

এটি এমন একটি বিষয় যার দিকে মুহতাজ কম বেশি আমরা সবাই। প্রতি মুহুর্তে আমরা এর দিকে মুহতাজ। আমাদের মধ্যে কেউই এর ব্যতিক্রম না। 

আল্লাহ তাআলা তাওফিক দিলে আজ এ বিষয়টি নিয়েই কিছু কথা ভাইদের খেদমতে পেশ করার ইচ্ছা করেছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইখলাস ও ইতকানের সাথে কথাগুলো বলার তাওফিক দান করুন।  

মুহতারাম ভাইয়েরা, শুরুতেই আমরা আমাদের জানা ওই হাদিসটা একটু স্মরণ করি, যে হাদিসে এই তিন শ্রেণির কথা এসেছে। যে হাদিসটি বলতে গিয়ে সাইদিনা আবু হুরাইরা রাযি. তিন তিন বার বেহুশ হয়ে পড়েন। যে হাদিসটি শুনে কাঁদতে কাঁদতে হযরত মুয়াবিয়া রাযি.-এর মারা যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যায়।

ওই তিন ব্যক্তির দ্বারাই জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করা হবে 

হাদিসটি সহী মুসলিম ও সুনানে নাসায়ীতে এসেছে। তবে জামে তিরমিযীতে এসেছে একটু বিস্তারিত। তাই হাদিসটি জামে তিরমিযী থেকেই পেশ করছি। পুরো হাদিসটি হল,

حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، أَخْبَرَنَا حَيْوَةُ بْنُ شُرَيْحٍ، أَخْبَرَنِي الْوَلِيدُ بْنُ أَبِي الْوَلِيدِ أَبُو عُثْمَانَ الْمَدَنِيُّ، أَنَّ عُقْبَةَ بْنَ مُسْلِمٍ، حَدَّثَهُ أَنَّ شُفَيًّا الأَصْبَحِيَّ حَدَّثَهُ أَنَّهُ، دَخَلَ الْمَدِينَةَ فَإِذَا هُوَ بِرَجُلٍ قَدِ اجْتَمَعَ عَلَيْهِ النَّاسُ فَقَالَ مَنْ هَذَا فَقَالُوا أَبُو هُرَيْرَةَ ‏.‏ فَدَنَوْتُ مِنْهُ حَتَّى قَعَدْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُوَ يُحَدِّثُ النَّاسَ فَلَمَّا سَكَتَ وَخَلاَ قُلْتُ لَهُ أَنْشُدُكَ بِحَقٍّ وَبِحَقٍّ لَمَا حَدَّثْتَنِي حَدِيثًا سَمِعْتَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَقَلْتَهُ وَعَلِمْتَهُ ‏.‏ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَفْعَلُ لأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَقَلْتُهُ وَعَلِمْتُهُ ‏.‏ ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً فَمَكَثَ قَلِيلاً ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ لأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي هَذَا الْبَيْتِ مَا مَعَنَا أَحَدٌ غَيْرِي وَغَيْرُهُ ‏.‏ ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً أُخْرَى ثُمَّ أَفَاقَ فَمَسَحَ وَجْهَهُ فَقَالَ لأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا وَهُوَ فِي هَذَا الْبَيْتِ مَا مَعَنَا أَحَدٌ غَيْرِي وَغَيْرُهُ ‏.‏ ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً أُخْرَى ثُمَّ أَفَاقَ وَمَسَحَ وَجْهَهُ فَقَالَ أَفْعَلُ لأُحَدِّثَنَّكَ حَدِيثًا حَدَّثَنِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا مَعَهُ فِي هَذَا الْبَيْتِ مَا مَعَهُ أَحَدٌ غَيْرِي وَغَيْرُهُ ‏.‏ ثُمَّ نَشَغَ أَبُو هُرَيْرَةَ نَشْغَةً شَدِيدَةً ثُمَّ مَالَ خَارًّا عَلَى وَجْهِهِ فَأَسْنَدْتُهُ عَلَىَّ طَوِيلاً ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ حَدَّثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ يَنْزِلُ إِلَى الْعِبَادِ لِيَقْضِيَ بَيْنَهُمْ وَكُلُّ أُمَّةٍ جَاثِيَةٌ فَأَوَّلُ مَنْ يَدْعُو بِهِ رَجُلٌ جَمَعَ الْقُرْآنَ وَرَجُلٌ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَرَجُلٌ كَثِيرُ الْمَالِ فَيَقُولُ اللَّهُ لِلْقَارِئِ أَلَمْ أُعَلِّمْكَ مَا أَنْزَلْتُ عَلَى رَسُولِي قَالَ بَلَى يَا رَبِّ ‏.‏ قَالَ فَمَاذَا عَمِلْتَ فِيمَا عُلِّمْتَ قَالَ كُنْتُ أَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ ‏.‏ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ كَذَبْتَ وَتَقُولُ لَهُ الْمَلاَئِكَةُ كَذَبْتَ وَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ بَلْ أَرَدْتَ أَنْ يُقَالَ إِنَّ فُلاَنًا قَارِئٌ فَقَدْ قِيلَ ذَاكَ ‏.‏ وَيُؤْتَى بِصَاحِبِ الْمَالِ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ أَلَمْ أُوَسِّعْ عَلَيْكَ حَتَّى لَمْ أَدَعْكَ تَحْتَاجُ إِلَى أَحَدٍ قَالَ بَلَى يَا رَبِّ ‏.‏ قَالَ فَمَاذَا عَمِلْتَ فِيمَا آتَيْتُكَ قَالَ كُنْتُ أَصِلُ الرَّحِمَ وَأَتَصَدَّقُ ‏.‏ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ كَذَبْتَ وَتَقُولُ لَهُ الْمَلاَئِكَةُ كَذَبْتَ وَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى بَلْ أَرَدْتَ أَنْ يُقَالَ فُلاَنٌ جَوَادٌ فَقَدْ قِيلَ ذَاكَ ‏.‏ وَيُؤْتَى بِالَّذِي قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ فِي مَاذَا قُتِلْتَ فَيَقُولُ أُمِرْتُ بِالْجِهَادِ فِي سَبِيلِكَ فَقَاتَلْتُ حَتَّى قُتِلْتُ ‏.‏ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى لَهُ كَذَبْتَ وَتَقُولُ لَهُ الْمَلاَئِكَةُ كَذَبْتَ وَيَقُولُ اللَّهُ بَلْ أَرَدْتَ أَنْ يُقَالَ فُلاَنٌ جَرِيءٌ فَقَدْ قِيلَ ذَاكَ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى رُكْبَتِي فَقَالَ ‏"‏ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أُولَئِكَ الثَّلاَثَةُ أَوَّلُ خَلْقِ اللَّهِ تُسَعَّرُ بِهِمُ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏"‏ ‏.‏ وَقَالَ الْوَلِيدُ أَبُو عُثْمَانَ فَأَخْبَرَنِي عُقْبَةُ بْنُ مُسْلِمٍ أَنَّ شُفَيًّا هُوَ الَّذِي دَخَلَ عَلَى مُعَاوِيَةَ فَأَخْبَرَهُ بِهَذَا ‏.‏ قَالَ أَبُو عُثْمَانَ وَحَدَّثَنِي الْعَلاَءُ بْنُ أَبِي حَكِيمٍ أَنَّهُ كَانَ سَيَّافًا لِمُعَاوِيَةَ فَدَخَلَ عَلَيْهِ رَجُلٌ فَأَخْبَرَهُ بِهَذَا عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ فَقَالَ مُعَاوِيَةُ قَدْ فُعِلَ بِهَؤُلاَءِ هَذَا فَكَيْفَ بِمَنْ بَقِيَ مِنَ النَّاسِ ثُمَّ بَكَى مُعَاوِيَةُ بُكَاءً شَدِيدًا حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ هَالِكٌ وَقُلْنَا قَدْ جَاءَنَا هَذَا الرَّجُلُ بِشَرٍّ ثُمَّ أَفَاقَ مُعَاوِيَةُ وَمَسَحَ عَنْ وَجْهِهِ وَقَالَ صَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ‏:‏ ‏(‏مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لاَ يُبْخَسُونَ * أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الآخِرَةِ إِلاَّ النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ‏)‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏

তাবেয়ী শুফাইয়া আল-আসবাহী রহ. বর্ণনা করেন, কোনো একদিন তিনি মদিনায় পৌঁছে দেখতে পান, এক লোককে ঘিরে জনতার ভীড় লেগে আছে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, ইনি কে? উপস্থিত লোকেরা বলল, ইনি আবূ হুরাইরা রাযি.।  

(শুফাইয়া বলেন), আমি কাছে গিয়ে তাঁর সামনে বসলাম। তিনি তখন লোকদেরকে হাদিস শুনাচ্ছিলেন। তিনি যখন নীরব ও একাকী হলেন, আমি তাকে বললাম, আমি সত্যিকারভাবে আপনার নিকট আবেদন করছি যে, আপনি আমাকে এমন একটি হাদিস শুনাবেন, যা আপনি সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে শুনেছেন, ভালোভাবে বুঝেছেন এবং শিখেছেন।

আবূ হুরাইরা রাযি. বললেন, আমি তাই করব, আমি এমন একটি হাদিস তোমার কাছে বর্ণনা করব যা সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন। আমি তা বুঝেছি এবং শিখেছি।

একথা বলেই আবূ হুরাইরা রাযি. বেহুশ হয়ে পড়েন। 

অল্প সময় এভাবে থাকেন। বেহুশিভাব চলে গেলে তিনি বললেন, আমি এমন একটি হাদিস তোমার কাছে বর্ণনা করব যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ঘরে বসে আমাকে শুনিয়েছেন। তখন ঘরে আমি এবং তিনি ছাড়া আর কেউ ছিল না।

এ কথা বলে তিনি পুনরায় আরও গভীরভাবে বেহুশ হয়ে পড়েন।    

একটু পর চেতনা ফিরে পেলে নিজ মুখমন্ডল মুছেন, এরপর বললেন, আমি তোমার নিকট এমন একটি হাদিস বর্ণনা করব যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন। তখন এই ঘরে তিনি এবং আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না।

এ কথা বলে তিনি পুনরায় আরও গভীরভাবে বেহুশ হয়ে পড়েন এবং বেহুশ হয়ে উপুড় হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। আমি অনেকক্ষণ তাকে ঠেস দিযে রাখলাম।

হুঁশ ফিরে এলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 

أَنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ يَنْزِلُ إِلَى الْعِبَادِ لِيَقْضِيَ بَيْنَهُمْ وَكُلُّ أُمَّةٍ جَاثِيَةٌ فَأَوَّلُ مَنْ يَدْعُو بِهِ رَجُلٌ جَمَعَ الْقُرْآنَ وَرَجُلٌ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَرَجُلٌ كَثِيرُ الْمَالِ

আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য কিয়ামতে দিন তাদের সামনে হাজির হবেন। সকল উম্মতই তখন নতজানু অবস্থায় থাকবে। তখন (হিসাব-নিকাশের জন্য) সর্বপ্রথম যাদেরকে ডাকা হবে তাদের একজন হবে এমন ব্যক্তি যে কুরআন শিখেছে। আরেকজন হবে এমন ব্যক্তি যে আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে। আরেকজন হবে এমন ব্যক্তি যে ছিল প্রচুর ধন সম্পদের মালিক। 

আল্লাহ্ তা‘আলা সেই কারীকে (যে কুরআন শিখেছে, কুরআনের ইলম অর্জন করেছে) প্রশ্ন করবেন, আমি আমার রাসূলের নিকট যা প্রেরণ করেছি তার ইলম কি তোমাকে দেইনি? সে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার প্রতিপালক। তিনি বলবেন, যে ইলম তোমাকে দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী তুমি কী আমল করেছ? সে বলবে, আমি রাত-দিন তা তিলাওয়াত করেছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, ফেরেশতারাও বলবে, তুমি মিথ্যা বলছ। আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরও বলবেন, বরং তুমি চাইতে তোমাকে যেন কারী (বা আলেম) বলে ডাকা হয়। আর তা তো ডাকা হয়েছে।

তারপর সম্পদশালী ব্যক্তিকে হাজির করা হবে। আল্লাহ্ তাআলা তাকে বলবেন, আমি কি তোমাকে সম্পদশালী বানাইনি, যার ফলে তুমি কারো মুখাপেক্ষী ছিলে না? সে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার প্রতিপালক। তিনি বলবেন, আমি তোমাকে যে সম্পদ দিয়েছি তা দিয়ে তুমি কী আমল করেছ?  

সে বলবে, আমি এর দ্বারা (অনেক কিছু করেছি, যেমন) আত্মীয়স্বজনের সাথে সুম্পর্ক রেখেছি, দান-সাদাকা করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, ফেরেশতারাও বলবে, তুমি মিথ্যা বলছ। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলবেন, তুমি চাইতে, মানুষ যেন তোমার ব্যাপারে বলে, উমুক লোক বড় দানশীল-দানবীর। আর এরূপ তো বলা হয়েছেই।

এরপর ওই লোককে হাজির করা হবে যে আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, তুমি কীভাবে বা কোন উদ্দেশ্যে নিহত হয়েছ? সে বলবে, আমি আপনার পথে জিহাদ করতে আদিষ্ট ছিলাম। কাজেই আমি জিহাদ করতে করতে শাহাদাত বরণ করেছি।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, ফেরেশতারাও বলবে তুমি মিথ্যা বলছ। আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলবেন, তুমি চাইতে, মানুষ বলুক যে, অমুক খুব সাহসী, বাহাদুর। আর তাতো বলাই হয়েছে।

তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হাঁটুতে হাত মেরে বললেন,

يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أُولَئِكَ الثَّلاَثَةُ أَوَّلُ خَلْقِ اللَّهِ تُسَعَّرُ بِهِمُ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

আবূ হুরাইরা! কিয়ামতের দিন আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে এই তিন শ্রেণির লোকদের দ্বারাই সর্বপ্রথম জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করা হবে।

হাদিসটির এক বর্ণনাকারী আবূ উসমান ওয়ালীদ হাদিসটি বর্ণনা করার পর, সাথে ছোট্ট একটি ঘটনাও বলেন, তিনি বলেন, ... জনৈক ব্যক্তি মু‘আবিয়া রাযি.-এর নিকট এসে উক্ত হাদিসটি আবূ হুরাইরা রাযি.-এর সূত্রে বর্ণনা করেন। তখন মু‘আবিয়া রাযি. বলেন,

قَدْ فُعِلَ بِهَؤُلاَءِ هَذَا فَكَيْفَ بِمَنْ بَقِيَ مِنَ النَّاسِ

এই লোকদের সাথে এমন আচরণ করা হলে অন্য লোকদের কী অবস্থা হবে? এ কথা বলে তিনি খুব বেশি কাঁদতে শুরু করেন। এমনকি আমাদের মনে হল, তিনি কাঁদতে কাঁদতে মারাই যাবেন। 

আমরা বলাবলি করতে লাগলাম, এই লোকটিই আমাদের এখানে অনিষ্ট নিয়ে এসেছে (অর্থাৎ সে হাদিসটি না বললে আজ এ অবস্থা হত না)। ইতিমধ্যে মু‘আবিয়া রাযি. হুঁশ ফিরে পান এবং চেহারা মুছেন। তারপর বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্যই বলেছেন। (এই বলে তিনি নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন) :

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لاَ يُبْخَسُونَ * أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الآخِرَةِ إِلاَّ النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

“যে কেউ পার্থিব জীবন ও এর সৌন্দর্য কামনা করে, আমি দুনিয়াতে তাদের কর্মের পূর্ণ ফল প্রদান করে থাকি এবং সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হয় না। এরাই হল সে সব লোক যাদের জন্য পরকালে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নেই এবং তারা যা-ই কিছু করে আখেরাতে তা নিষ্ফল হবে এবং তাদের সব আমল বিফলে যাবে” (সূরা : হূদ-১৫, ১৬)। জামে তিরমিযী ২৩৮২

হাদিস থেকে প্রাপ্ত কিছু শিক্ষা

হাদিসটিতে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা রয়েছে। হাদিসটি থেকে বুঝা যায়, সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহ ও তাঁর রসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কথায় কেমন প্রভাবিত হতেন! 

আবু হুরাইরা রাযি. হাদিসটি বলতে যাবেন, হাদিসের বিষয়বস্তুর কথা মনে হতেই তাঁর অবস্থা অস্বাভাবিক হয়ে যায়। বেহুশ হয়ে পড়েন। তাও এক দুবার না, তিন তিন বার।   

হাদিসটি শুনে হযরত মুয়াবিয়া রাযি.-এর অবস্থা কী হল? কাঁদতে কাঁদতে মারা যাওয়ার অবস্থা। কোনো ব্যক্তিকে কত বেশি কাঁদতে দেখলে আশপাশের লোকজন এ কথা বলে যে, কাঁদতে কাঁদতে তিনি হয়তো মারাই যাবেন।

তাঁদের মাঝে এবং আমাদের মাঝে কত তফাত! একই হাদিস তাঁরাও শুনেন, আমরাও শুনি। কিন্তু তাঁদের অবস্থা হয় এক রকম আর আমাদের অবস্থা হয় ভিন্ন রকম।   

আল্লাহ তাআলা মেহেরবানি করে আমাদেরকেও তাঁদের মতো দিল দান করেন আমীন।

২য় যে শিক্ষা এ হাদিস থেকে আমরা পাই তা হল, কুরআন ও হাদিসে জিহাদ ও মুজাহিদিন, ইলম ও ওলামা এবং আল্লাহর পথে দান সাদাকা করার যত ফজিলত এসেছে তা সবই হবে তখন, যখন এ আমলগুলো শতভাগ ইখলাসের সাথে করা হবে। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করাই উদ্দেশ্যে থাকবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিযী)

পক্ষান্তরে এগুলো যদি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য না হয় তাহলে এর পরিণতি অন্য যে কোনো অপরাধের চেয়ে অনেক বেশি জঘন্য হবে।

আমরা সবাই জানি যে, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য না হওয়ার দুটি সুরত হতে পারে। একটি হল, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য বিলকুলই ছিল না। উদ্দেশ্যই ছিল অন্য কিছু। সুনাম সুখ্যাতি, ইজ্জত সম্মান কিংবা পার্থিব সম্পদ বা এমন কিছু লাভ করা।

দ্বিতীয় সুরত হল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করাই উদ্দেশ্য, তবে এর সাথে অন্য কিছুও উদ্দেশ্য থাকে।

আমাদের সবাবই জানা আছে যে, এই দুনো অবস্থা মূলত একই। কোনোটাই খালেস আল্লাহর জন্য হয় নি। তাই আল্লাহর ওসব ভেজাল আমল একদমই গ্রহণ করবেন না।

সে কিছুই পাবে না

আবু উমামা বাহিলী রাযি. থেকে সুনানে নাসায়ীতে এসেছে,

 عَنْ أَبِي أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: أَرَأَيْتَ رَجُلًا غَزَا يَلْتَمِسُ الْأَجْرَ وَالذِّكْرَ، مَالَهُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا شَيْءَ لَهُ» فَأَعَادَهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، يَقُولُ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا شَيْءَ لَهُ» ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا كَانَ لَهُ خَالِصًا، وَابْتُغِيَ بِهِ وَجْهُهُ»

“এক ব্যক্তি রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, ওই ব্যক্তি সম্বন্ধে আপনি কি বলেন, যে সওয়াব ও সুনাম দুটোর জন্য জিহাদ করে, সে কি কিছু পাবে? রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে কিছুই পাবে না। সে কথাটি তিনবার পুনরাবৃত্তি করল। রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে (একটি কথাই) বললেন, সে কিছুই পাবে না। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা কেবল ওই আমলই কবুল করেন যা খালেস তাঁর জন্য করা হয়। যা দ্বারা একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করা উদ্দেশ্য হয়”। (সুনানে নাসায়ী ৩১৪০) (হাসান সহীহ)

পার্থিব প্রতিদানের কারণে পরকালীন প্রতিদান কমে যায়

সূরা দাহারের যে আয়াতে আল্লাহর নেককার মুখলিস বান্দাদের কিছু সিফাত এসেছে সেখানে তাঁদের একটি কথা এসেছে, 

إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمْ جَزَاء وَلَا شُكُورًا

“(তারা বলে) আমরা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে তোমাদেরকে আহার করাচ্ছি। আমরা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না, (মৌখিক) কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করাও চাই না”। (সূরা দাহার ৭৬:০৯)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এ প্রসঙ্গে বলেন,

 فمن طلب من الفقراء الدعاء أو الثناء، خرج من هذه الآية؛ ولهذا كانت عائشة إذا أرسلت إلى قوم بهدية تقول للمرسول: اسمع ما دعوا به لنا؛ حتى ندعو لهم بمثل ما دعوا، ويبقى أجرنا على الله.

“অতএব যে ব্যক্তি গরিব মিসকিনদের কাছ থেকে দোয়া কিংবা প্রশংসা কামনা করে সে এ আয়াতের অন্তর্ভূক্ত হবে না। এ কারণেই হযরত আয়েশা রাযি. কারো কাছে কোনো হাদিয়া পাঠালে যাকে দিয়ে পাঠাতেন তাকে বলে দিতেন, ওরা আমাদের জন্য কোনো দোয়া করে কিনা শুনে রেখো। যেন আমরাও তাদের জন্য একই রকম দোয়া করে দিতে পারি। তাহলে আমাদের পুরস্কার পুরোটাই আল্লাহর যিম্মায় থাকবে। (তারা আমাদের জন্য দোয়া করার কারণে একটুও কমবে না।)” (মাজমূউল ফাতাওয়া ১১/১১)

দেখুন, এ থেকে বুঝা যায়, দোয়াটা পর্যন্ত চাওয়া যাবে না। যেন আমলটি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়। আর হযরত আয়েশা রাযি. এর আমল থেকে বুঝা যায়, ওই লোক যদি নিজ থেকে দোয়া করে তাহলে এ কারণে সাওয়াব কিছুটা হলেও কমে যাবে। কারণ, এটিও এক ধরনের বিনিময়। যা সে নগদ পেয়ে ফেলছে।  

এ থেকে বুঝা যায়, ইখলাসের সাথে কৃত আমলের ওপর দুনিয়াবি কোনো প্রতিদান পেয়ে ফেললে এ কারণে আখেরাতের পুরষ্কার ও প্রতিদান কিছুটা কমে যায়।

এবিষয়টি গনিমত সংক্রান্ত প্রসিদ্ধ হাদিস থেকেও বুঝা যায়, যা আমরা সবাই জানি যে, কোনো মুজাহিদ জিহাদ থেকে সুস্থ অবস্থায় গনিমত নিয়ে ফিরে এলে সে তার পুরষ্কারের দুই তৃতীয়াংশ নগদই লাভ করে ফেলে।    

পক্ষান্তরে কেউ নিজেও শহিদ হল, তার ঘোড়াটাও শেষ, সে পরিপূর্ণ প্রতিদান লাভ করে থাকে। (সহী মুসলিম ৪৮২০)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم  مَا مِنْ غَازِيَةٍ أَوْ سَرِيَّةٍ تَغْزُو فَتَغْنَمُ وَتَسْلَمُ إِلاَّ كَانُوا قَدْ تَعَجَّلُوا ثُلُثَىْ أُجُورِهِمْ وَمَا مِنْ غَازِيَةٍ أَوْ سَرِيَّةٍ تُخْفِقُ وَتُصَابُ إِلاَّ تَمَّ أُجُورُهُمْ

“আবদুল্লাহ বিন ‘আম্‌র রাযি. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বড় কিংবা ছোট কোনো বাহিনী, যারা আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করলো এবং গনিমত লাভ করলো, তারপর নিরাপদে প্রত্যাবর্তন করলো তাঁরা তাদের দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিদান নগদ পেয়ে গেল। যারা খালি হাতে বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ফিরে আসলো, তাদের পূর্ণ প্রতিদানই পাওনা রয়ে গেল”। (সহী মুসলিম ৪৮২০)

সত্যিকার মুমিনের দিলের তামান্না

একজন সত্যিকার মুমিনের দিলের তামান্না এমন থাকা চাই যে, আমি আল্লাহর দ্বীনের জন্য যা-ই করছি, এর কোনোরূপ প্রতিদান যেন দুনিয়াতে একদমই না পাই। কারো মৌখিক প্রশংসাও না। তাহলে এর পূর্ণ প্রতিদান আল্লাহর কাছ থেকে পাব ইনশাআল্লাহ।      

বরং একজন মুমিন তো দ্বীনের জন্য বড় থেকে বড় এবং কঠিন থেকে কঠিন কাজ করেও ভয়ে কাঁপতে থাকে, আল্লাহ এ আমলটা কবুল করেন কিনা? সে সাইদিনা ইবরাহিম ও ইসমাঈল আলাইহিমাস সালামের মতো (বাইতুল্লাহ পূননির্মাণের মতো এত বড় কাজ করেও) দোয়া করতে থাকে,

رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ   … … وَتُبْ عَلَيْنَآ إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

“হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমাদের পক্ষ থেকে (এ আমলটি) কবুল করে নিন, নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন, সব কিছু জানেন …আমাদের প্রতি দয়া করুন, নিশ্চয়ই আপনি অত্যন্ত দয়ালু (বা তাওবা কবুলকারী) ও করুনাময়”। (সূরা বাকারা ০২:১২৭-১২৮)

একজন প্রকৃত মুমিন কোনো নেক কাজ করে তার একটাই চিন্তা থাকে আল্লাহ যেন আমলটি কবুল করে নেন। এই একটা চিন্তাই তার মধ্যে থাকে। কাজটি কেউ দেখুক, শুনুক, এ সব চিন্তাও তার অন্তরে আসে না।

তাদের অন্তর ভীত সন্ত্রস্ত থাকে

ইমাম ইবনে কাসীর রহ. সূরা মুমিনূনের আয়াত-

وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوا وَّقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ

“তারা যা কিছুই করে (তা করার সময়) তাদের অন্তর ভীত সন্ত্রস্ত থাকে, এজন্য যে, তারা তাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে”। (সুরা মু’মিনুন ২৩:৬০) 

এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তিনি একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন,

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعِيدِ بْنِ وَهْبٍ الْهَمْدَانِيِّ، أَنَّ عَائِشَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ هَذِهِ الآيَةِ ‏:‏ ‏(‏والَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ ‏)‏ قَالَتْ عَائِشَةُ أَهُمُ الَّذِينَ يَشْرَبُونَ الْخَمْرَ وَيَسْرِقُونَ قَالَ ‏"‏ لاَ يَا بِنْتَ الصِّدِّيقِ وَلَكِنَّهُمُ الَّذِينَ يَصُومُونَ وَيُصَلُّونَ وَيَتَصَدَّقُونَ وَهُمْ يَخَافُونَ أَنْ لاَ يُقْبَلَ مِنْهُمْ أُولَئِكَ الَّذِينَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُونَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ وَقَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعِيدٍ عَنْ أَبِي حَازِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَ هَذَا ‏.‏

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ আয়াত প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তারা যা কিছুই করে (তা করার সময়) তাদের অন্তর ভীত সন্ত্রস্ত থাকে’-(সূরা মূ'মিনূন ৬০)। 

হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, তারা কি মদ পান করে, চুরি করে? (ওসব করার সময় তাদের অন্তর ভীত সন্ত্রস্ত থাকে, এখানে কি তাদের কথা বলা হচ্ছে?) তিনি বললেন, হে সিদ্দীকের মেয়ে! না তারা তা নয়, বরং তারা হল যারা নামাজ পড়ে, রোযা রাখে, দান-খয়রাত করে এবং মনে মনে এই ভয় করতে থাকে যে, তাদের এ আমলগুলো কবুল হয় কি না? এরাই হল তারা যারা কল্যাণের কাজে দ্রুত অগ্রসর এবং তাতে অগ্রগামী”। (সুরা মু’মিনুন (২৩) ৬১; তাফসীরে ইবনে কাসীর; জামে তিরমিযী ৩১৭৫)

এ জন্যই হযরত আলী রাযি.-বলতেন,

 كونوا لقبول العمل أشد اهتماماً منكم بالعمل، ألم تسمعوا قول الحق عز وجل : إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنْ الْمُتَّقِينَ . المائدة : ٢٧

তোমরা আমল করার চেয়ে আমল কবুল হওয়ার প্রতি বেশি গুরুত্ব দাও। আল্লাহ তা'আলার এই কথা কি তোমরা শোনোনি যে, তিনি বলেছেন,

إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنْ الْمُتَّقِين .

“আল্লাহ তাআলা কেবলমাত্র মুত্তাকীদের কাছ থেকেই কবুল করেন”। (সূরা মায়েদা ৫:২৭)

হযরত আব্দুল আজিজ বিন আবু রাওয়াদ রহ.-বলতেন ,

أدركتهم (السلف الصالح) يجتهدون في العمل الصالح، فإذا فعلوا وقع عليهم الهمّ ! أيقبل منهم أم لا؟

“আমি সালাফদের দেখেছি, তাঁরা নেক আমল করার প্রতি খুব যত্নবান ছিলেন। তবে কোনো নেক আমল সম্পন্ন করে এই ভেবে চিন্তিত থাকতেন  যে, আমলটি কবুল হবে তো”?

যেকোনো নেক আমল সম্পন্ন করার পর অন্তরে এই ভয় থাকা যে, আমলটি কবুল হবে কি না,  এটি দিলে ইখলাস থাকার অন্যতম একটি আলামত।

ইখলাস সম্পর্কে সালাফদের কিছু বাণী  

এবার ইখলাস সম্পর্কে সালাফদের কিছু মূল্যবান বাণী পেশ করছি। 

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. বলেছেন,

المخلص لربه كالماشي على الرمل لا تسمع خطواته ولكن ترى آثاره . جامع العلوم والحكم : ٣٠٢

“ইখলাসের সাথে আমলকারীর দৃষ্টান্ত হল এমন, যেমন কেউ বালির ওপর দিয়ে হেঁটে যায়। তার পায়ের ছাপ তো দেখা যায় কিন্তু আওয়াজ শুনা যায় না”। (জামিউল উলূমি ওয়াল হিকাম : ৩০২)

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেছেন, 

إنَّ القَلبَ إذَا ذَاقَ طَعْمَ عِبَادَةِ اللَّهِ والإخلاصِ لَه لَمْ يَكُنْ عِنْدَهُ شَيْءٌ قَطُّ أحلَىٰ مِن ذَلِكَ ولا ألَذَّ ولا أطْيَبَ .

“কোনো অন্তর যখন আল্লাহর ইবাদত ও ইখলাসের স্বাদ পেয়ে যায় তখন তার কাছে এর চেয়ে অধিক আনন্দের ও উপভোগ্যের আর কিছুই থাকে না”। (মাজমুউল ফাতাওয়া : ১০/১৮৭)

ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেছেন, 

الإخلاص أن لا تطلب على عملك شاهدا غير الله، ولا مجازيا سواه .

“ইখলাস হল, আপনি নিজের আমলের জন্য আল্লাহ ছাড়া কোনো সাক্ষীও কামনা করবেন না, কোনো বিনিময় দানকারীও কামনা করবেন না”। (ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ.; মাদারেজুস সালিকীন : ২/২৯)

العمل بغير إخلاص ولا اقتداء كالمسافر يملأ جرابه رملا ينقله ولا ينفعه .

“ইখলাস ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণবিহীন আমল করার দৃষ্টান্ত হল এমন, যেমন কোনো মুসাফির নিজের ব্যাগ বালি দিয়ে ভর্তি করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যা তার কোনোই উপকারে আসবে না”। (আল ফাওয়ায়েদ : ৬৭)

তিনি আরও বলেছেন,

إذا لم تُخْلِصْ فلا تَتعبْ.

“আপনার (আমলে) যদি ইখলাস না থাকে তাহলে (অযথা) কষ্ট করবেন না”। (বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ : ৩/২৩৫)

একবার সাহল তুসতারি রহ.কে জিজ্ঞাসা করা হল,

أي شيء أشد على النفس؟

কোন জিনিস নফসের কাছে সবচেয়ে কঠিন?

উত্তর দেন,

الإخلاص؛ لأنه ليس لها فيه نصيب

ইখলাস। কারণ, ইখলাসে সঙ্গে কৃত আমলে নফসের কোনো অংশ থাকে না। 

কার আমল উত্তম?

ফুযাইল বিন ইয়ায রহ. সূরা মুলকের আয়াত

لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا

(যেন তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন যে, কার আমল উত্তম) এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন,  

أحسن عملاً: أخلصه وأصوبه. وقال: إن العمل إذا كان خالصاً ولم يكن صواباً  لم يقبل، وإذا كان صواباً ولم يكن خالصاً لم يقبل حتى يكون خالصاً، والخالص ما كان لله، والصواب ما كان على السنة.

‘কার আমল উত্তম’ এর অর্থ হল, কার আমল খালেস এবং সঠিক পন্থায় সম্পাদিত। 

তিনি বলেন, কোনো আমল যদি খালেস হয় কিন্তু সঠিক পন্থায় সম্পাদিত না হয় তা কবুল হয় না। তেমনিভাবে যদি সঠিক পন্থায় সম্পাদিত হয় কিন্তু খালেস না হয় তখনও কবুল হয় না। খালেস আমল হল, যা একমাত্র আল্লাহর জন্য (করা) হয়। আর সঠিক পন্থায় সম্পাদিত আমল হল, যা সুন্নাহ মোতাবেক করা হয়। (হিলয়াতুল আউলিয়া)

সূরা যুমারের তিনটি আয়াত 

সূরা যুমারের শুরুর দিকে একই মাযমূনের পর পর তিনটি আয়াত এসেছে। আয়াতগুলোর ধরণটা অবাক হওয়ার মতো।

দেখুন, প্রথম আয়াতটি হল, 

إِنَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّينَ

“আমি আপনার প্রতি এ কিতাব যথার্থরূপে নাযিল করেছি। অতএব, আপনি ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদত করুন”। (সুরা যুমার ৩৯:০২)

এ আয়াতে আল্লাহ নবীজীকে নির্দেশ দিচ্ছেন, তিনি যেন ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদত করেন।

কয়েক আয়াত পর একই মাযমূনের আরেক আয়াত। কিন্তু সেটির ধরণ আগেরটার চেয়ে ভিন্ন। 

আল্লাহ তাআলা নবীজীকে নির্দেশ দিচ্ছেন,

قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّينَ

“বলুন, আমি ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি”। (সুরা যুমার ৩৯:১১)

ইখলাসের সাথে ইবাদত করার যে নির্দেশ আল্লাহর তরফ থেকে নবীজীকে দেয়া হয়েছিল এ আয়াতে তাঁকে সেই কথা মুখ দিয়ে বলার নির্দেশ দিচ্ছেন যে, বলুন, আমাকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছি।  

এর দুই আয়াত পর একই মাযমূনের তৃতীয় আয়াত। 

قُلِ اللَّهَ أَعْبُدُ مُخْلِصًا لَّهُ دِينِي

“বলুন, আমি ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে আল্লাহরই এবাদত করি”। (সুরা যুমার ৩৯:১৪)

আগের আয়াতে আদিষ্ট হওয়ার বিষয়টি মুখ দিয়ে বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এ আয়াতে পরিষ্কার ভাবে মূল কথাটি বলার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, বলুন, আমি একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করি। আর কারও ইবাদত করি না।  

আয়াতে আসা এ নির্দেশ তো আমাদের সবার জন্যই। তাই আমরাও আমাদের ছোট বড় প্রতিটি কাজে আয়াতগুলোতে আসা কথাটি মনে রাখবো।

যে কথাটি বলার নির্দেশ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নবীজীকে দিয়েছেন সেই কথাটি আমরাও বলবো,

আমি ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি।

আমি ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে আল্লাহরই এবাদত করি।

হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাযি.-এর দোয়া

হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাযি. থেকে বর্ণিত একটি দোয়া বলেই আজকের সংক্ষিপ্ত মুযাকারা শেষ করছি।

رُوِيَ أَنَّهُ كَانَ أَكْثَرُ دُعَاءِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ-: اللَّهُمْ اجْعَلْ عَمَلِي كُلَّهُ صَالِحَاً وَاجْعَلْهُ لِوَجْهِكَ خَالِصَاً وَلا تَجْعَلْ لِأَحَدٍ فِيهِ شَيْئَاً.

বর্ণিত আছে, হযরত ওমর রাযি. প্রায়ই নিম্নের দোয়াটি পড়তেন, 

اَللّهُمَّ اجْعَلْ عَمَلِيْ كُلُّهُ صَالِحًا وَاجْعَلُهُ لِوَجْهِكَ خَالِصًا وَلَا تَجْعَلْ لِأَحَدٍ فِيْهِ شَيْئًا

হে আল্লাহ, আমার সব আমল নেক আমলে পরিণত করুন। ওগুলোকে আপনার জন্য খালেস বানান। তাতে অন্য কারো কোনো অংশ যেন একদম না থাকে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. দোয়াটি অনেক বেশি বেশি পড়তেন।

আমরাও এ দোয়াটি পড়ার অভ্যাস বানানোর চেষ্টা করি। ছোট-বড় যত কাজ আমরা করি সেগুলোর শুরুতে, মাঝখানে এবং শেষে এ দোয়াটি আমরা পড়তে পারি। 

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ছোট বড় প্রতিটি কাজে পূর্ণ ইখলাস নসীব করেন এবং আমাদেরকে তাঁর মুখলিস বান্দাদের দলভূক্ত করে নেন। 

আমাদেরকে তাঁর দীনের জন্য কবুল করেন। শাহাদাত পর্যন্ত জিহাদের পথে অবিচল থাকার তাওফিক দান করেন এবং সর্বোচ্চ জান্নাত-জান্নাতুল ফিরদাউসে আমাদের সবাইকে একত্রিত করেন, আমীন ইয়া আরহামার রাহীম।

وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وأصحابه أجمعين

وآخردعوانا أن الحمد لله رب العالمين

 

 

************
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الفردوس للإنتاج الإعلامي
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশন
In your dua remember your brothers of
Al Firdaws Media Foundation