مؤسسة الحكمة
আল হিকমাহ মিডিয়া
Al-Hikmah Media
تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents
الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation
بعنوان:
শিরোনাম:
Titled
أفكار متناثرة
বিক্ষিপ্ত ভাবনা
Scattered thinking
للشيخ أبي يحيى الليبي رحمه الله
শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল-লিবী রহিমাহুল্লাহ
By Sheikh Abu yahya Al-Libi (Rahimahullah)
للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading
روابط بي دي اب
PDF (869 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৮৬৯ কিলোবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/4QXwwxfzXPAJaFd
https://www.file-upload.com/qs43xkvfj558
https://www.mediafire.com/file/e9u44hyefu5xyi5/BikkhiptoVabna-SaikhYahyaRohimahullah.pdf/file
https://mega.nz/file/8mJGhRyC#8AWufSxxKGPq0eSkpa7MPf8YxslhnxtFQiL30RJJsJc
روابط ورد
Word (451 KB)
ওয়ার্ড [৪৫১ কিলোবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/Q4fzCQfJrZRp2dQ
https://www.file-upload.com/5hf267om8vbs
https://www.mediafire.com/file/2mhz82q0882kf46/BikkhiptoVabna-SaikhYahyaRohimahullah.docx/file
https://mega.nz/file/Q75iBSaS#Xb5zngKJXcEQur27muyiXhMMf7Dxo1nnHEXzjlOpgQA
روابط الغلاف- ١
book Banner [1.1 MB]
বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.১ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/4jC6iG2Wgq8BxWc
https://justpaste.it/img/e8b592bb286d22fb04de1797d8e26671.jpg
https://www.file-upload.com/jidhop08y5se
https://www.mediafire.com/file/nq7nje24749b9v6/Bikkhipto-vabona.jpg/file
https://mega.nz/file/0jhiQBYT#Iuw3bwy0er4BY09jz3hD7BZoClrfZxMJiFfbV0BrVcc
روابط الغلاف- ٢
Banner [1 MB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [১ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/WTs8nkHtLSZMe6b
https://justpaste.it/img/c2c14468d8f63221c205efd7cb1dcff3.jpg
https://www.file-upload.com/sy4n2ylsavjh
https://www.mediafire.com/file/9lccpi60nbgn8xn/bikkhipto-vabona-web.jpg/file
https://mega.nz/file/UiBTwB7Y#pTquDRWoF9myqnLx2T-T62YBbjquRZMcQYZLMHSq8Uo
********
বিক্ষিপ্ত ভাবনা
শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল-লিবী রহিমাহুল্লাহ
ভূমিকা ও উপস্থাপনায়ঃ
আবুল হাসান আল-ওয়ায়েলী
অনুবাদ ও প্রকাশনা
-মূল প্রকাশনা সম্পর্কিত কিছু তথ্য-
মূল নাম:
أفكار متناثرة للشيخ حسن قايد أبو يحيى الليبي رحمه الله
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৬৪ পৃষ্ঠা
প্রকাশের তারিখ: সেপ্টেম্বর ২০১৬ ঈসায়ী-যিলহজ্জ ১৪৩৭ হিজরী
প্রকাশক: নুখবাতুল ফিকার
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের পালনকর্তা। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের সর্দার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীদের উপর।
আম্মা বা’দ…
এগুলি কিছু বিক্ষিপ্ত চিন্তা, যেগুলি প্রিয় শাইখ (আমাদের ধারণা অনুসারে যিনি) আবেদ, জাহেদ, খোদাভীরু ও শহীদ আবু ইয়াহ্ইয়া আল-লিব্বী রহিমাহুল্লাহ লিখেছেন।
তিনি তাঁর শাহাদাতের আগে, এই ছোট পুস্তিকাটি আমার কাছে প্রেরণ করেন এবং এটিকে “أفكار متناثرة “ বা “বিক্ষিপ্ত ভাবনা” নামকরণ করে বলেছিলেন: ‘এটি আপনার কাছে রাখুন। আর আমি এটি কেবল আপনার কাছেই প্রেরণ করেছি, তাই স্বযত্নে রাখবেন’।
তখন থেকে কিতাবটি আমার কাছে আছে। আমার মনে হল, এটি আমাদের সবার পাঠ করা দরকার। তাই, আমি এই কিতাবের সাথে আমার কাছে পাঠানো সংরক্ষিত কিছু চিঠি যোগ করি। অত:পর আমি তার ব্যক্তিগত ডায়েরি থেকেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা যোগ করি। আমি অনুচ্ছেদগুলিকে যথাযথ উপযুক্ত স্থানে সাজানোর চেষ্টা করেছি।
আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন এ ছোট পুস্তিকাটির মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সাধারণ মুসলমানদের মঙ্গল ও কল্যাণ দান করেন, প্রিয় শাইখকে কবুল করে নেন, তার মর্যাদাকে সুউচ্চ আসনে আসীন করেন এবং আমাদের সকলকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সর্বোচ্চস্থানে একত্রিত করেন।
والحمد لله رب العالمين
কেবল সে আল্লাহর জন্যই সকল স্তুতি জ্ঞাপন করে বিদায় নিচ্ছি, যিনি বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক।
আবুল হাসান আল-ওয়ায়েলী (আন-নাযী)
১৬ রজব ১৪৩৫ হিজরী
সূচিপত্র
ভাই আবুল হাসান আল-ওয়ায়েলী-র ভূমিকা.. 4
১. বক্তৃতার মধ্যে আবেগ বিবেচনা করা: 8
২. পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ত্রাস-কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা: 9
৩. আমাদের জনগণের নিকটবর্তী হতে হবে.. 11
৪. ক্যাডার বা কর্মী তৈরি এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা: 12
৫. যুদ্ধটি পশ্চিমাদের গৃহে স্থানান্তরিত করা.. 14
৬. অস্ত্র বিরতি আহ্বানের বাস্তবতা: 15
৮. আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়াঃ... 17
৯. লক্ষ্যগুলি বাছাই করুনঃ.. 17
১০. বিশৃঙ্খল অঞ্চলগুলির সুবিধা নেওয়াঃ... 18
১১. বিজয় অর্জনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানঃ.. 19
১২. সামরিক সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট গঠন: 21
১৩. সাবধান, জেনে রেখ! নিক্ষেপণকারী বস্তুই শক্তি: 22
১৪. গোয়েন্দাগিরী শক্তিশালীকরণ: 23
১৫. জয় পরাজয়ের সমীকরণের পরিবর্তন প্রয়োজন: 23
১৬. একটি পুলিশ বাহিনী গঠন করা: 25
১৮. উম্মাহর সকল স্তরের সাথে সরাসরি যোগাযোগের উপায় আবিষ্কার করা: 26
১৯. কাফেরদেরকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানানোর প্রতি জিহাদী যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করা: 27
২০. মুজাহিদদের দ্বীনের ইলম শিক্ষা করা.. 28
২২. প্রশিক্ষণে কাঙ্খিত আক্বীদা-বিশ্বাস শিক্ষা দেয়া.. 30
২৩. সমাজের প্রকৃতি জানার ব্যাপারে যত্ন নেওয়া: 32
২৪. জিহাদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ: 34
২৫. জামায়াত বা গোষ্ঠিগুলোর পতনের অন্যতম কারণসমূহ: 36
২৮. লৌহমানব তৈরি ও তার সংরক্ষণ করা: 38
২৯. যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং মুসলিম মুজাহিদের নৈতিকতার মাঝে পার্থক্য: 40
৩০. সাহায্য কেবলমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে: 41
৩৪. মুজাহিদদের জন্য শয়তানের কুমন্ত্রণা: 45
৩৫. ফ্রান্সের মুহাম্মদ মারাহর মহাকাব্য সম্পর্কে মন্তব্য: 47
৩৬. জবাই বা শিরশ্ছেদ কার্যক্রম সম্পর্কে মন্তব্য: 50
৩৮. মানুষের মধ্যে সমস্যা মোকাবেলায় পরামর্শ: 52
৩৯. শাইখ আতিয়া ও শাইখ আবু ইয়াহইয়ার সম্পর্ক: 53
৪০. “আবু দুজানা আল-খোরাসানী” বইটিতে শাইখের মন্তব্য: 54
শাইখ আবু ইয়াহ্ইয়া রহিমাহুল্লাহ এর হাতে লিখিত বিশেষ ডায়েরী থেকে কিছু পাতা: 56
মুসলিম জনগণ এবং যুবকদের প্রতি আমাদের বক্তৃতাগুলি প্রচুর সংবেদনশীল হওয়া উচিৎ। স্মরণ রাখতে হবে যে, আমরা যেন আমাদের বক্তৃতায় শুকনো রাজনীতির মাঝে ডুবে না যাই। এমন নিরস রাজনৈতিক পরিভাষা আমরা ব্যবহার করবো না যা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গই বুঝতে পারে না; আর আত্মমর্যাদাশীল শাহাদাতের পিয়াসী যুবকরা কিভাবে বুঝবে!
আমি বিশ্লেষণমূলক রাজনৈতিক বক্তব্যের বিরোধিতা করছি না। কিন্তু আমরা যেন আমাদের বক্তৃতার মাঝে এটা বেশি ব্যবহার না করি।
পরিবার-পরিজন, ঘর-বাড়ি, ধনসম্পদ ও দেশ ত্যাগকারী যুবকদের আমরা দেখেছি; তারা অন্তরকে নাড়া দানকারী কোন ঘটনা থেকেই প্রথম জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়েছে। অনেক সময় কোন মুজাহিদ শহীদের হাস্যজ্জ্বল মুখের ছবি দেখা অথবা কোন কারামাতের ঘটনা শোনাই তার জিহাদে আসার কারণ হয়েছে।
এই তরুণরা আমাদের সাধারণ মানুষেরই অংশ, যারা আবেগ দ্বারা পরিচালিত হয় এবং প্রায়শ অনুভূতির আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়।
আমার এই কথাটি কুরআনুল কারীমে (التحريض على القتال) বা ‘লড়াইয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ’ শব্দের দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে।
এখনও আমরা লড়াই এবং ধ্বংসের পর্যায়ে রয়েছি। এখনও পশ্চিমাদের দাম্ভিকতা দূর হয়নি। আর তাদের জবরদস্তি ও হিংস্রতাও বন্ধ হয়নি। পশ্চিমাদের মাথাটি এখনও ভেঙে চুরমার হয়ে যায়নি। যদিও তাদের টালমাটাল অবস্থা শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় যুদ্ধের পুরো সময় যাবত জিহাদে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তির এমন আত্মিক খোরাক প্রয়োজন যা তাকে পরিচালিত করবে। জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে।
তাই আমাদের বক্তব্য যেন এই আয়াতের মত প্রভাব বিস্তারকারী হয়।
وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ
“আসমান ও জমিনের ন্যায় প্রশস্ত জান্নাতের দিকে দৌড়াও।” [সূরা আলে ইমরান ৩:১৩৩]
আমাদের শত্রুদের, বিশেষত আমেরিকার সাথে আমাদের বর্তমানের লড়াই এমন কোন যুদ্ধ নয়, যা কয়েক ঘন্টা বা কিছু দিন স্থায়ী হবে এবং এরপর বিজয়ীরা পরাজিতদের উপরে প্রাধান্য লাভ করবে, যেমনটি অতীতের অধিকাংশ সময় ঘটেছিল।
আমেরিকার বিরুদ্ধে বর্তমানের লড়াই, ইচ্ছা, সংকল্প এবং চ্যালেঞ্জের লড়াই। দুটি বিবাদী দলের প্রত্যেকটিরই শক্তি এবং দুর্বলতা রয়েছে। আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হল - সত্যিকারের দুর্বলতাগুলিকে তীক্ষ্মতার সাথে অনুসন্ধান করা। এর উদ্দেশ্য হলো - যুদ্ধের সময়কে সংক্ষিপ্ত করা, সম্ভাব্য কম সময়ে যুদ্ধের ইতি টানা এবং সর্বনিম্ন ক্ষতির সাথে যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা করা। পশ্চিমারা এ উদ্দেশগুলো সামনে রেখেই তাদের যুদ্ধ পরিকল্পনা সাজায়। তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে, তারা দুটি জিনিস অর্জন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে:
প্রথমতঃ তাদের সুরক্ষা (তাদের লোকদের সুরক্ষার বিষয়টি সর্বজন স্বীকৃত),
দ্বিতীয়তঃ তাদের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা।
তাদের লোকেরা সুরক্ষার ছায়াতলে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কিছুই চায় না। তারা এমন জীবন যাপনে আগ্রহী যেখানে মৃত্যুর ভয় তাড়া করে না। তারা সব থেকে বেশি পছন্দ করে বেঁচে থাকতে। এ কারণেই তারা যুদ্ধে স্থির থাকতে পারে না। কারণ তারা জানে যে, তাদের জীবন বিপন্ন হওয়া মানে হল তাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাওয়া। তাদের একমাত্র জীবন শেষ হয়ে যাওয়া। তাই তারা যুদ্ধে স্থীর থাকতে পারে না। যেমন আল্লাহ তা’য়ালার বাণী:
وَإِن يُقَاتِلُوكُمْ يُوَلُّوكُمُ الْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يُنصَرُونَ
“আর যদি তারা তোমাদের সাথে লড়াই করে, তাহলে তারা পশ্চাদপসরণ করবে। অত:পর তাদের সাহায্য করা হবে না।” [সূরা আলে ইমরান ৩:১১১]
এ কারণেই সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’য়ালা (শরীয়তের বিধানের মধ্যে থেকে) অধিক মাত্রায় হত্যা ও শাস্তি দানের মাধ্যমে - ভয় দেখানো ও ত্রাস সৃষ্টির এই অস্ত্রটিকে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে তাদের (কাফেরদের) জুলুম বন্ধ হয়ে যায় এবং অপরাধীরা পালিয়ে যায়। যেমন আল্লাহ তা’য়ালার বাণী-
فَإِمَّا تَثْقَفَنَّهُمْ فِي الْحَرْبِ فَشَرِّدْ بِهِم مَّنْ خَلْفَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
“সুতরাং যদি কখনও, তুমি তাদেরকে যুদ্ধে পেয়ে যাও, তবে তাদের এমন শাস্তি দাও, যেন তাদের উত্তরসূরিরা তা দেখে পালিয়ে যায়; তাদেরও যেন শিক্ষা হয়।” [সূরা আনফাল ৮:৫৭]
এই কারণেই আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ যে নিয়ামত দিয়ে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে শক্তিশালী করেছিলেন, তা হলো – ‘প্রভাব’। এজন্য কোথাও কোথাও তিনি শুধু প্রভাবের দ্বারায় যুদ্ধে জয়লাভ করেছেন। এর পক্ষে প্রমাণ হল আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদিস - “আমাকে একমাসের দুরত্ব পর্যন্ত প্রভাব দান করা হয়েছে।”
ভেবে দেখা দরকার; এই হাদিস থেকে এই মাসআলা ইস্তেম্বাত হয় কি না যে, “মুজাহিদদের জন্য শরয়ীভাবে জরুরী হল - ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমগুলো গ্রহণ করা। বিজয়ের যে সব মাধ্যম গ্রহণ করার আদেশ করা হয়েছে এটাও তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।”
আর পশ্চিমারা শুধুমাত্র নিরাপদে বাঁচতে চায়। নিরাপত্তার সাথে, সহজে প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করতে চায়। যে সরকার এই দুই বিষয় তাদেরকে দিতে পারবে না, পশ্চিমাদের কাছে সে ব্যর্থ, অথর্ব ও অমার্জনীয় অপরাধী সরকার। সে ক্ষমতায় থাকার অযোগ্য। তার ব্যাপারে কোন সুপারিশকারীর সুপারিশই গ্রহণযোগ্য নয়।
তারা যে নিরাপত্তার কথা বলে তা হলো - আর্থিক স্থিতিশীলতা। আর্থিক স্থিতিশীলতা থাকলেই তারা তাদের প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী চলতে পারে।
তাই মুজাহিদ হিসাবে আমাদের অবশ্যই স্পষ্টভাবে সেই পদ্ধতিগুলি অনুসন্ধান করতে হবে, যেগুলোর মাধ্যমে তাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ভেঙ্গে দেওয়া যায়।
আমাদের, মুসলিম জনগণের আরও নিকটবর্তী হওয়া প্রয়োজন। জনগণের মাঝে এখনও অনেক ভালো গুণ রয়েছে, যেগুলির দ্বারা বিপ্লব বা জাগরণ সৃষ্টি করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের ধর্মীয় অনুভূতি খুবই দৃঢ়, শক্তিশালী, এমনকি প্রভাবশালীও বটে। এই ফিতরাত বা অভ্যাসকে অত্যাচারীরা, অত্যাচারের মাধ্যমে বিকৃত সাধন করেছে। যার ফলে যদিও মানুষের চরিত্রে অধঃপতন এসেছে তার পরেও মুসলিম জনগণের অন্তরে পরিচ্ছন্নতা আছে। হক গ্রহণের মানষিকতা আছে। আল্লাহ, রাসুল ও দ্বীন ইসলামের প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য আছে।
সুতরাং আমাদের বাস্তবতাকে অবশ্যই গভীর মনোযোগ সহকারে অনুধাবন করতে হবে এবং সেসকল কারণগুলোকে অনুসন্ধান করতে হবে, যা আমাদেরকে আমাদের লোকদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। আমাদের শত্রু কাফেরদের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ কাংখিত বিষয়ই এটি। তারা আমাদেরকে মুসলিম জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। রাত দিন বিভিন্নভাবে আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে।
অন্যদিকে, আমাদেরকে সেই জিনিসগুলোর দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে, যা জনগনকে আমাদের শত্রু বানিয়ে দেয়। আমাদেরকে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আমরা এই কথার দ্বারা এখানে আমি দ্বীনের ব্যাপারে জনগণের সাথে আপোষ করতে বলছি না।
মিডিয়ার চেপে বসার কারণে জনগণের মাঝে যে বিকৃত ধারণা সৃষ্টি হয়েছে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতেও বলছি না।
বরং আমার উদ্দেশ্য হলো, আমাদের সংস্কারের আহবান অব্যাহত রেখে, সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করার মাধ্যমে আমাদের জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে।
যেমন আল্লাহ তা’য়ালা মুমিনদেরকে একে অপরের প্রতি ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারে জোর দিয়ে বলেছেন:
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ
“আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা সৎ কাজের আদেশ করে এবং মন্দ কাজের নিষেধ করে।” [সূরা আত-তাওবাহ্ ৯׃৭১]
তাই, আমাদের নিজেদের বিষয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করা অত্যন্ত জরুরী, যাতে আমরা আমাদের ভুলগুলো সংশোধন করে নিতে পারি। চাই সেটা রাজনীতির ক্ষেত্রে হোক, বক্তৃতা অথবা কার্যক্ষেত্রেই হোক না কেন। এই সমস্ত বিষয় প্রথমে শরয়ী আইনে বিবেচিত হবে। তারপর জনগণের সাথে সম্পর্কের বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।
নিশ্চয় আমরা আমাদের হিংস্র শত্রু আমেরিকা এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে দীর্ঘতম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। এ যুদ্ধে সর্বস্তরে প্রচুর ত্যাগের প্রয়োজন হচ্ছে। এর জন্য যে শক্তি খরচ হচ্ছে, আমাদের অবশ্যই তার ক্ষতি পূরণের জন্য এমন একটি কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে হবে, যা আমাদেরকে যেকোন সঙ্কটের ক্ষতি পূরণ করা সহ সকল পরিস্থিতি ও অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য তৈরিতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে নেতা তৈরির ক্ষেত্রে। কারণ শত্রুরাও এই বিষয়ে খুব উন্নতি লাভ করেছে।
এখানে দুটি জিনিস অপরিহার্য:
প্রথমটি হল: নেতৃত্ব ও শক্তি সংরক্ষণ করার জন্য বাস্তব সম্মত ইজতেহাদ/গবেষণা করা। যাতে বর্তমান স্তরটি নিরাপত্তার সাথে পার করা যায়।
দ্বিতীয়: কীভাবে হারিয়ে যাওয়া শক্তির ক্ষতিপূরণ করা যায় এবং নতুন শক্তি অর্জন ও দক্ষ নেতৃত্ব তৈরি করা সম্ভব সে সম্পর্কে গুরুত্বের সাথে বাস্তবসম্মত চিন্তাভাবনা করতে হবে। আমাদের স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, এটি একটি শরয়ী আদেশ, যা আমাদের পালন করতে হবে। এটি কেবলমাত্র একটি প্রস্তাব নয় যে, আমরা শুধু এই বিষয়ে আলোচনা করব কিন্তু বাস্তবে কোন পদক্ষেপ নেব না।
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেন।” [সূরা আত-ত্বলাক ৬৫:২]
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।” [সূরা আত-ত্বলাক ৬৫:৪]
সূতরাং তোমরা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর এবং নিষ্ক্রিয় হয়ো না।
আমি শাইখ আব্দুর রহমান সা’দী (আল্লাহ তার প্রতি সদয় হোন) এর চমৎকার একটি বাণী পড়েছি। তিনি [আল কাওয়াইদুল হাস্সান লি-তাফসীরিল কুরআন ১নং খন্ডের ১০৬ পৃষ্ঠায়] বলেন: কুরআনের একটি সুন্দর বিষয় হলো, আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তিরষ্কার করেছেন এই কথা বলে:-
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ
“আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রাসুল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুত কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন।” [সূরা আলে-ইমরান ৩:১৪৪]
সুতরাং আল্লাহর বান্দাদের যেকোন অবস্থায় বিচক্ষণতার সাথে সঠিক পথে অবিচল থাকা উচিত। যাতে করে তারা কারো অনুপস্থিতিতে দিশেহারা না হয়ে পড়েন, যদিও সে (অনুপস্থিত ব্যক্তি) রাষ্ট্রপধান বা তার থেকেও বড় কেউ হোক না কেন। আর এ অবস্থা কেবলমাত্র তখনই সম্ভব, যখন সকল লোক দ্বীনী ও দুনিয়াবী প্রতিটি বিষয় বাস্তবায়ন করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। যদি তাদের মধ্যে কেউ (মৃত্যু বা অন্য কোন কারণে) দূরে সরে যায়, তখন অন্য একজনকে তার স্থানে প্রতিস্থাপন করতে হবে।
পশ্চিমারা সর্বদা চায়, তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে আমাদের দেশে অবস্থান করে। এর দ্বারা বুঝা যায়, এই যুদ্ধের ঘ্রাণ যদি তাদের দেশে পৌঁছে, তাহলে তাদের কি অবস্থা হতে পারে!
পশ্চিমারা দুটি পয়েন্টে কাজ করে:
প্রথমত, আমাদের দেশগুলিতে এবং আমাদের ইসলামিক ভূমিগুলির অভ্যন্তরে সামরিক ক্রিয়াকলাপে আমাদেরকে ব্যস্ত রাখা। এমনকি এই সামরিক ক্রিয়াকলাপ পশ্চিমাদের বাহিনী বা এজেন্টদের বাহিনীর বিরুদ্ধে হলেও।
দ্বিতীয়ত, পশ্চিমারা তাদের জনগনের সামনে তাদের ও তাদের দেশগুলিকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ হিসাবে দেখাতে চায়। তারা (নিজদের) দেশগুলিকে নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে রাখতে চায়।
সুতরাং আমাদের এই দূষিত রাজনীতিটিকে সফল হতে দেওয়া উচিত হবে না। তাই যুদ্ধ তাদের দেশগুলির গভীরে স্থানান্তরিত করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। এমনকি নিয়মিত বিরতিতে বিক্ষিপ্ত অপারেশন আকারে হলেও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
তাদের দেশে একটি শক্তিশালী এবং নিখুত অপারেশন, আমাদের দেশে তাদের বাহিনী বা তাদের এজেন্টদের বাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েক ডজন অপারেশনের সমান।
আমাদের উচিত নয় যে, সমস্ত কাজকর্মে ফুটবল মাঠের ডিফেন্ডারের মত সীমান্তে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে সীমাবদ্ধ থাকব (ফুটবল মাঠের ডিফেন্ডারের মূল কাজ হচ্ছে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় বিশেষ করে স্ট্রাইকারকে থামানো, গোল করা থেকে বিরত রাখা) আর আমদের শত্রুরা পুরো ময়দানকে তাদের বিচরণক্ষেত্র বানিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে।
ادْخُلُوا عَلَيْهِمُ الْبَابَ فَإِذَا دَخَلْتُمُوهُ فَإِنَّكُمْ غَالِبُونَ ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
“অতঃপর তোমরা যখন তাতে প্রবেশ করবে, তখন তোমরাই জয়ী হবে। আর আল্লাহর উপর ভরসা কর যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।” [সূরা মায়িদাহ ৫:২৩]
এ কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো - আল-কায়দার সাথে যুক্ত সকলে যেন পশ্চিমা দেশগুলিতে, বিশেষত আমেরিকার অভ্যন্তরে সামরিক বা দূর্বিষহকারী অপারেশন চালানোর জন্য চেষ্টা করে। তবে এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো বা অস্থিরতার প্রয়োজন নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল - সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণ এবং পদক্ষেপগুলিকে মজবুত করা। তারপরে সফল বাস্তবায়ন। আল্লাহ-ই বিশ্বস্তদের অভিভাবক।
উম্মতে মুসলিমার দরদী বীর শাইখ উসামার (আল্লাহ তাঁর প্রতি করুণা বর্ষণ করুন) একটি সুন্দর ক্লিপ আছে, যা তিনি লিবিয়ার বিষয়ে ভূমিকাস্বরূপ উল্লেখ করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন:
“আল্লাহর রাহে লড়াই করা; শুধুমাত্র দ্বীনের একটা অংশ-ই নয়, বরং আমাদের ধর্মের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এটি দ্বীন ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া। তাই দ্বীন কীভাবে তার চূড়ান্তশৃঙ্গ ছাড়া স্থায়ীত্ব লাভ করতে পারে?!
জিহাদ আমাদের জাতির জীবন, শক্তি ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য খুবই জরুরী। আমাদের শত্রুরা সত্য বলেছে, যদিও তারা প্রতারক ও মিথ্যুক। তাদের শিক্ষকরা তাদের বাচ্চাদের শেখায় “করলে লড়াই বাঁচবে তুমি।” এটাই সত্য যে, তারা তাদের বাচ্চাদের বাস্তবতা শেখায় আর আমাদের নিকট পাঠানো হয় তার উল্টো শিক্ষা।
বড় বড় শক্তি বা সাম্রাজ্যের বেঁচে থাকার জন্য লড়াই একটি চূড়ান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। আপনি চাইলে ইতিহাস দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে আমেরিকার ইতিহাসও উল্লেখযোগ্য। মাত্র ছয় দশকে এই দেশটি কয়েক ডজন যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। কারণ তার সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য যেসকল বিষয় প্রয়োজন সেগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম।
যেদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বে যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে আন্তরিক সিদ্ধান্ত নিবে, সেদিনের আগেই তারা বুঝতে পারবে যে, তাদের সাম্রাজ্যবাদের পতন শুরু হলো। আল্লাহর ইচ্ছায় সামনে এমন-ই হবে।
তাই শান্তি চুক্তির নামে অস্ত্র বিরতির সকল আহ্বানের ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকুন। কারণ এটি আসলে আমাদেরকে হতাশ করার ও আত্মসমর্পণ করার আমন্ত্রণ। আর মূর্খ ও মুনাফিক ব্যতিত অন্য কেহ এই জাতীয় আমন্ত্রণ গ্রহণ করে না।”
যে কোন সংস্থার মধ্যে, দুই বা তিন জনের সমন্বয়ে গঠিত ‘মনিটরিং, ফলোআপ এবং পরামর্শদাতা’ কমিটি গঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই কমিটির সদস্যরা তাকওয়া, ভদ্রতা এবং চরিত্রবানদের অন্তর্ভূক্ত হবেন এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবেন না। তারা এমন ব্যক্তিবর্গ হবেন যাদের অনেক অভিজ্ঞতা, মেধার প্রখরতা, দক্ষতা এবং ইসলামী জ্ঞানের ময়দানে দখলদারিত্ব রয়েছে। তারা একই সাথে সমালোচনা এবং উন্নত দিকনির্দেশা প্রদান করবেন। তারা গোপন বিষয়কে গোপন রাখতে সক্ষম হবেন।
এই কমিটির কাজ হবে - শুরা ও সাধারণদের মাঝে আমিরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা। তারা আমিরের সাথে এবং আহলে শুরার সাথে বৈঠক করবেন। তারা আর্থিক, শিষ্টাচারিতা ও নৈতিক বিষয়ের জবাবদিহিতা তলব করবেন।
সেইসাথে লক্ষ্য করবে - জনগণের প্রতি অবহেলা, অপদস্ততা বা অযাচিত হস্তক্ষেপ হচ্ছে কিনা এবং সে ব্যাপারে তাদেরকে (দায়িত্বশীলদের) সর্বশক্তিমান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিবে। তাদেরকে তাকওয়া, ন্যায়পরায়ণতা ও সংশোধনের দিকে উদ্বুদ্ধ করবে।
এক্ষেত্রে সায়্যিদুনা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর উক্তি উল্লেখ করা যেতে পারে:
“আপনি এটি (সঠিক পরামর্শ) না বললে, আপনার মধ্যে কোনও মঙ্গল নেই এবং আমরা এটি (সৎ উপদেশ) না শুনলে, আমাদের মধ্যেও কোন মঙ্গল নেই”
অনুরূপভাবে সায়্যিদুনা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বাণী:
“আমি যদি সঠিক পথে চলি, তবে আমাকে সাহায্য করুন এবং যদি সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হই, তবে আমাকে সৎ পথে টেনে আনুন।”
এমনিভাবে তাদেরকে সঠিক কথা বলতে অভ্যস্ত হতে হবে, যদিও তা আমির-উমারাদের জন্য হয়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থা (New World Order) একটি বৃহৎ শিকারীর ফাঁদ যা বিশ্বকে আবদ্ধ করে রেখেছে, দেশগুলিকে কোণঠাসা করে রেখেছে। এই ব্যবস্থা দেশগুলোর ইচ্ছাসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং যা মনে চায়, তা-ই বিশ্বের উপর চাপিয়ে দেয়। এটি একটি স্পষ্ট আইনী উপনিবেশবাদ, যা - কিছু রাষ্ট্র স্বেচ্ছায় আর কিছু রাষ্ট্র অনিচ্ছাকৃতভাবে গ্রহণ করেছে। এই ব্যবস্থার ভিত্তি এবং কেন্দ্র হলো আমেরিকা এবং ইউরোপ।
মুজাহিদদের জন্য এখন যেসকল বিষয়ে জোর প্রচেষ্টা চালানো উচিত, তার মধ্যে অন্যতম একটি হল - এই আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থা নামক জাল ছিঁড়ে ফেলা এবং বিশ্বের নিয়ন্ত্রণকারী অপরাধী (আমেরিকা ও ইউরোপের) দেশগুলোর আসল চরিত্র প্রকাশ করা। আর এটা করতে হবে সামরিক, রাজনৈতিক এবং মিডিয়া অঙ্গনে।
শাইখ আবু মুসআ’ব আস-সুরি (আল্লাহ তাঁকে বন্দীদশা থেকে মুক্তি দান করুন) তাঁর এক বক্তৃতায় উল্লেখ করেছিলেন: পয়ষট্টি শতাংশ ইউরোপীয় গ্যাস আলজেরিয়া এবং মরক্কো থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে আসে। এর অর্থ হল - এই পাইপলাইনটি একটি ভাল টার্গেট, যা মুজাহিদদের দ্বারা চিহ্নিত হতে পারে। তাদের এই টার্গেটে পৌঁছানোর জন্য খুব বড় চেষ্টা চালাতে হবে। এমন অনেক অপারেশন আছে যেগুলোর জন্য তহবিল, গবেষণা এবং ঝুঁকি নেয়া হয়, কিন্তু ফলাফলগুলি তেমন বড় হয় না। এমন অনেকগুলো অপারেশনের চাইতে এটি উত্তম।
মুজাহিদরা সবচাইতে বেশি উপকৃত হতে পারে যে অঞ্ছল থেকে সেটি হচ্ছে - বিশৃঙ্খল অঞ্চল। তাদের বিকাশ, উত্থান এবং কাঠামোগত নির্মাণের উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায় এই বিশৃঙ্খল অঞ্চলগুলোতে। কারণ এখানে তাদের উপর গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নিয়ন্ত্রণ নেই এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাও তেমন শক্তিশালী নয়। পূর্বে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’য়ালা মুজাহিদদের জন্য এমন বিশৃঙ্খল অঞ্চল সৃষ্টি করেছেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই অঞ্চলগুলো থেকে সত্যিকারের ক্ষমতা ও উপকার অর্জন করতে সক্ষম হওয়া। কারণ বিশৃঙ্খলা সাময়িক হয়। আর বিশৃঙ্খল পরিবেশে জনগণ অস্থির হয়ে ওঠে। বিশেষ করে যখন বিশৃঙ্খলা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, তাদের সুরক্ষা বিঘ্নিত করে এবং তাদের জীবন সঙ্কুচিত হয়। এর ফলে সাধারণ জনগণ চাতক পাখির ন্যায় চেয়ে থাকে তাদের দিকে, যারা তাদেরকে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে বের করে আনার চেষ্টা করে।
আর জানা কথা, শত্রুরা পূর্ণ চেষ্টা করবে, অর্থ ব্যায় করবে, মানুষকে দুনিয়ায় লিপ্ত করার জন্য। যেন এই ভূমি এবং এই পরিবেশ মুজাহিদদের জন্য প্রস্তুত না হয়।
সুতরাং প্রথম পর্যায়ে মুজাহিদদের উচিত, বিশেষত যখন তাদের এবং তাদের শত্রুদের মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত থাকে, তখন বিশৃঙ্খলার অবসানের চেষ্টা না করা।
এই অবস্থায় জনগণের মন জয় করতে, তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়তে, তাদের নিকটবর্তী হতে, তাদের সমস্যাগুলো অনুভব করতে এবং তাদের উদ্বেগগুলোতে অংশ নিতে চেষ্টা করতে হবে। আর চেষ্টা করতে হবে যেন তাদের এবং জনগণের মধ্যে কোনো দূরত্ব না থাকে।
ভাই আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদের কাছ থেকে পাওয়া নিচের রেফারেন্স বই থেকে আমি যা ভাল পেয়েছি, তা এখানে সংযুক্ত করলাম। লেখক তার জিহাদী ফোরামে (المذكرة الاستراتيجية বা রণকৌশল বিষয়ক নোট) নামক নিবন্ধে বলেন: আরব বিপ্লবগুলি চূড়ান্তভাবে কেবল বুআছ যুদ্ধের ন্যায় হবে। বুআছ যুদ্ধে আউস এবং খাজরাজের অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছিল। এর ফলে মদিনায় ক্ষমতার ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছিল এবং তারপরে নেতৃত্বের জন্য উপযুক্ত ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি পাওয়া যায়নি।
হযরত আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণনা মতেঃ বুআছ যুদ্ধ ছিলো একটি সুযোগ। যা আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর রসূলকে দিয়েছিলেন। ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমন করেন এমন অবস্থায় যে, তাদের শক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিলো। আর তাদের নেতারা নিহত হয়েছিলো। [বুখারী]
আর আরবরা মরুভুমিতে বসবাস করাকে পছন্দ করত। কারণ সেখানে স্বাধীনতা পাওয়া যায়। আর যালেমের যুলুম থেকে বাঁচা যায়। আবুল আলা মাআররি বলেছেন,
“নজদের মরুভূমিতে যারা বসবাস করে, তারা শহরে আসে না। কারণ শহরে স্বাধীনতা থাকে না।” (হায়াতুল হায়ওয়ান আলকুবরা ২/৯৩ পৃষ্ঠা।)
আমি দেখতে পাচ্ছি যে, এখনও আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর শত্রুদের সাথে আমাদের যুদ্ধে বা বড় লড়াইগুলোতে, প্রাথমিক স্তরের ও সাদাসিধা পদ্ধতিতে হামলা করছি। আমাদের হামলায় নতুন কলাকৌশল, বিভিন্ন পদ্ধতিতে ধোঁকা দেয়ার ক্ষেত্রে কোন উন্নতি করতে পারছি না। শত্রুরা সারাদিন ব্যস্ত থাকে কিভাবে নতুন নতুন কৌশল ও বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদেরকে ঘায়েল করবে।
এটি একটি অগ্রগণ্য বিষয় যে, যুদ্ধে বিজয় অর্জনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদান রয়েছে। যথা-
ক) আপনার শত্রু সম্পর্কে আপনাকে তথ্য যোগাড় করতে হবে (এটি আপনার বাহিনীর গুপ্তচরদের মূল দায়িত্ব)।
খ) আপনার গোপনীয়তা, প্রতারণা এবং কুটকৌশল - যা আপনার ব্যাপারে আপনার শত্রুদের মনকে বিভ্রান্ত করে।
অর্থাৎ আপনি কী করবেন এবং কী পরিকল্পনা করবেন তা তারা জানতে পারবে না। এই কাজটি প্রথমে কমান্ডারের এবং তারপরে তার সৈন্যদের বাস্তবায়ন করতে হবে।
কিন্তু, যে কেউ আমাদের অবস্থার দিকে তাকাবে, সে দেখবে, আমরা এই দুই বিষয় থেকেই অনেক দূরে। সাধারণ কর্মকৌশল ছাড়াও প্রত্যেক অপারেশনের সাথে যুক্ত বিশেষ কৌশলেও আমাদের এই দুই বিষয়ে কমতি রয়েছে। আমরা একদম সাধারণ স্তরেই রয়ে গেছি।
আফসোসের বিষয় হলো, আমরা তাদের (শত্রুদের) সম্পর্কিত তথ্য জানার বিষয়ে সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছি। তাদের সকল বিভাগ সম্পর্কিত তথ্য আমাদের সামান্যই জানা আছে। সাধারণ মানুষের মুখ থেকে আপনি যা গ্রহণ করেন, তা ব্যতীত আমাদের তথ্য সংগ্রহের ভিন্ন কোনো উত্স নেই। যেখানে শত্রুরা আমাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য আমাদের কাছে মিথ্যাও বলতে পারে। আমরা কিছু তথ্য মিডিয়া থেকে পাই, যার বেশিরভাগই ভিত্তিহীন।
আমাদের উচিত গুপ্তচরদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং তাদের জন্য যতটা সম্ভব অর্থ বরাদ্দ দেওয়া এবং প্রকৃতপক্ষে শত্রুদের গুপ্তচরদেরকে নিজেদের দলে নিয়ে আসার চেষ্টা করা। সেইসাথে অন্যান্য জ্ঞাত এবং শরয়ী শৃঙ্খলাবদ্ধ নিয়োগ পদ্ধতি চালু করা। এই নিয়োগের পরিধি, আল্লাহর রহমতে অনেক প্রশস্ত। স্মরণ রাখতে হবে যে - কুটকৌশলই হলো যুদ্ধ।
বিভ্রান্তকরণ এবং গোপনীয়তা: আমরা অনেক সময় আমাদের অনেক তথ্য, ছোট, বড় সকলের জন্য উম্মুক্ত করে দিই। আমরা আমাদের তথ্যগুলি সর্বজনীন আকারে আলোচনা করি। বিশেষ এবং সাধারণ মজলিস এমনকি মহিলা মজলিসগুলোতেও সেগুলোকে খোলামেলা আলোচনা করি। এমনটা করলে তা হবে একটি মারাত্মক ভুল, যার কারণে এক কদমও এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন যুদ্ধের ইচ্ছা পোষণ করতেন, তখন সেটা অন্যদের কাছ থেকে গোপন রাখতেন।
আমাদের সামাজিক জীবন, ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক, পরস্পরের মহব্বতকে - সামরিক কার্যক্রম, পরিকল্পনা, সতর্কতা ও টেকনিক থেকে পৃথক করতে হবে।
ফলে সামরিক পদযাত্রা এবং এর রক্ষণাগার, রিজার্ভ এবং কৌশলগুলি গোপন করা সহজ হবে। এই রোগটির চিকিত্সা কীভাবে করা যায় সে সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই গুরুতর গবেষণা করতে হবে, কারণ এটি আমাদের দেহে পচন রোগে পরিণত হয়েছে। (তথ্য সংক্রমণ রোগের ন্যায়। একবার এটা ভুল যায়গায় প্রকাশিত হলে সেটা বিনামূল্যে শত্রুর কাছে পাচার হয়ে যায়। আর খুব উদারতার সাথে এই ভুলটা আমরা করে থাকি।)
সমর বিষয়ক অনেক নিয়মনীতি আছে। অন্যান্য ইলমের মত এটাকেও পড়ানো হয়। কেবল মাঠ পর্যায়ের অনুশীলন, অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান-ই যথেষ্ট নয়। তাই, সৈনিক বানানোর সময়, বিশেষ করে কমান্ডার তৈরির ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে সে যেন এই বিষয়ক জ্ঞানে পারদর্শী হয়ে ওঠে। সাথে সাথে অধ্যায়ন/মুতাআলা জারি রাখা। যুদ্ধের ইতিহাস পাঠ এবং বর্তমান ও পূর্বের সামরিক ব্যক্তিবর্গের অভিজ্ঞতা থেকে জানা এবং ময়দানের ব্যাপারেও অভিজ্ঞতা অর্জন করা জারি রাখতে হবে যাতে তার মধ্যে একটি পূর্ণ যোগ্যতা তৈরি হয়।
কোনো ব্যক্তিকে সামরিকভাবে গড়ে তোলার সময় – বিশেষত: তাদের মধ্যে যারা কমান্ডার, তাদের সামরিক জ্ঞানের সাথে একটি সাংস্কৃতিক ভিত্তি যুক্ত হওয়াও জরুরি। ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক অভিজ্ঞতা এবং মাঠ পর্যায়ের অনুশীলনের মাধ্যমে কমান্ডাররা এই বিশেষায়িত সামরিক কৌশল অর্জন করবে।
ইসলামী আইনবিদরা তাদের অর্জিত জ্ঞান ও দীর্ঘকালীন অনুশীলনে নানান ঘটনা ও অভিজ্ঞতার আলোকে আইনী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। এমনিভাবে সামরিক কমান্ডাররা পূর্বের ইতিহাস থেকে শিক্ষা ও নিজেদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সময়োপযোগী কার্যকর সিদ্ধান্ত নিবেন।
আমি মনে করি যে, জিহাদী গোষ্ঠীগুলোর এই দিকটির যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে - যা প্রায়শই মাঠের জ্ঞান, ভাল আচরণ এবং অস্ত্র চালনার জ্ঞান এবং সামরিক লোক গঠনে, কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করতে হয় তার উপর নির্ভর করে। এসব অভিজ্ঞতা অতি জরুরী হওয়া সত্ত্বেও - যুদ্ধ ও সেনাবাহিনীর পরিচালনা, যুদ্ধ সংকট মোকাবেলা এবং পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট নয়। আমি মনে করি, যে সামরিক ভাইদের অবশ্যই পড়াশোনা করার জন্য একটি সুসংহত, নির্বাচিত সামরিক সিলেবাস তৈরি করা দরকার, ঠিক যেমনভাবে তারা শরয়ী আইন বা রাজনৈতিক কোর্স গ্রহণ করে থাকে। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, ভালো হত যদি সামরিক বা অস্ত্রের প্রশিক্ষণের জন্য কেবল শিবির না থেকে, একটি ছোট সামরিক ইনস্টিটিউট তৈরি করা সম্ভব হত।
মুজাহিদদের যুদ্ধের ময়দানে “শিকারে পারদর্শিতা” বিষয়টি প্রবেশ করা এবং সক্রিয় হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এই বিষয়ে মুজাহিদদের এখনও পারদর্শিতা অর্জন হয়নি। (গুপ্ত হত্যা, অতর্কিত হামলা) বিশেষত শহর ও বড় বড় ব্যক্তিত্বের উপর হামলার ক্ষেত্রে।
উঁচু ভবনের ছাদ এবং জনবহুল রাস্তায় ঘিরে থাকা সরকারী আবাসনগুলি, যেগুলিতে বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা বেশিরভাগ সময় অনেক যাতায়াত করে - সে স্থানগুলি হত্যাকান্ডের জন্য এবং তাদের কিছু নেতাদের বন্দুকের নিশানা করার বিরল সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।
বিস্ফোরক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি রয়েছে, তাহলে কেন এই বিষয়ে অনুশীলনের নিখুঁত প্রশিক্ষণের জন্য মুজাহিদদের জন্য বিশেষ দল নেই?
তারপরে প্রয়োজন অনুযায়ী তারা শহরে ছড়িয়ে পড়বে। গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করার ফলাফল অনেক বেশি। এটা কোন গোপন বিষয় নয়, বিশেষত যদি এটির পুনরাবৃত্তি করা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: সাবধান, জেনে রেখ! নিক্ষেপণই শক্তি! সাবধান, জেনে রেখ! নিক্ষেপনই শক্তি!! সাবধান, জেনে রেখ! নিক্ষেপণই শক্তি!!!।
আমাদের সাথে কাজ করা প্রতিটি গ্রুপে স্বতন্ত্র ভাবে একটি করে গোয়েন্দা বিভাগ তৈরি করা সম্ভব কিনা তা অনুসন্ধান করে দেখা উচিত। যাতে করে তাদেরকে ময়দানে সামরিক কাজের মতো সামরিক গোয়েন্দাগিরীর কাজ করানো যায়। আমাদের সত্যিই গোয়েন্দাগিরী কাজকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। অনুপ্রবেশের বৃত্তটি সম্প্রসারিত করা (তথা শত্রুদের দলে আমাদের লোক প্রবেশ করানো) এবং তাদেরকে দক্ষ করে তোলা প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে, আমরা আজ যে লড়াই করছি, এটি একটি গোয়েন্দা যুদ্ধ। এটি তথ্য ও সৈন্য সংগ্রহ এবং (শত্রুদের দলে) অনুপ্রবেশের উপর নির্ভর করে। তাই এবিষয়টিতে আমাদের কাজকর্মে এবং শত্রুদের সাথে আমাদের লড়াইয়ের জন্য পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া সময়ের দাবি। এমনকি এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া কাম্য।
আল্লামা ইবনুল খুলদুন রহিমাহুল্লাহ তার মুকাদ্দিমায় বলেন,
“পরাজিতরা সর্বদা বেশভূষা, পোষাক-পরিচ্ছদ, সভ্যতা সংস্কৃতি সহ সকল ক্ষেত্রে বিজয়ী জাতির অনুসরণ করা পছন্দ করে।”
দেখুন, এই অধ্যায়ে তিনি যা লিখেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশ্চাত্যের দেশগুলির সামনে আমাদের উম্মাহর অন্যতম একটি অসুবিধা হল এ জাতি “পরাজিত” আর পশ্চিমারা হল “বিজয়ী” এই মনোভাব পোষণ করা। এর ফলে মানসিক পরাজয় সৃষ্টি হয়েছে। আর পশ্চিমারা তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে মিথ্যা ও ভ্রান্ত সাজ-সজ্জার স্বপ্ন দেখায়, ভ্রান্ত চিন্তা-চেতনা, সভ্যতা, সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়। আর মুসলিমরা তাদেরকে আদর্শ ও নেতৃত্বের দৃষ্টিতে দেখে। ফলে মুসলমানদের প্রজন্ম পশ্চিমাদেরকে রাজনীতি, সংস্কৃতি, সভ্যতা বা অন্য যে কোন কিছুতে পূর্ণাঙ্গ অনুকরণ করতে তাদের পঙ্কিলতার পিছনে ছুটতে থাকে।
(জয়ী ও পরাজিত) এর এই স্তরটি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। যাতে, আনুগত্য ও অনুসরণের এই জাল ছিন্ন হয়ে যায়। পাশ্চাত্যের প্রথম অগ্রগতি হলো সামরিক বাহিনীর শক্তি। এই সামরিক শক্তিই - সাধারণভাবে গোটা বিশ্বের উপর, বিশেষত: ইসলামী দেশগুলির উপর তাদের সংস্কৃতি, সভ্যতা, ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার মাধ্যম। এই সামরিক বাহিনীর শক্তি - কোন ভিক্ষা বা দান কিংবা নিছক “অনুরোধ” এর দ্বারা মোকাবেলা করা যায় না, বরং এটি সামরিক শক্তির দ্বারা মোকাবেলা করতে হয়।
পশ্চিমাদের অনুগ্রহ সূলভ আচরণ বহু মুসলমানের মনকে প্রভাবিত করে এবং এর কারণে অনেক কাফের ইসলামে প্রবেশ হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ ইসলাম যদি তার শক্তি, ন্যায়বিচার এবং উত্তম নীতি দ্বারা বিজয়ী হত, তাহলে এটি ঐ সকল লোকদের জন্য এক অনন্য মডেল হতো, যারা অচিরেই পরাজিত হবে। যখন ইসলাম বিজয়ী হবে তখন আপনি সে পরাজিত লোকদের দেখবেন যে, তারা দলে দলে আল্লাহর (মনোনীত) দ্বীন ইসলামে প্রবেশ করছে। ঠিক যেমনটি মক্কা বিজয়ের পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হয়েছিল।
তদানুসারে, মুসলিম জাতির স্বীকৃতি পুনরুদ্ধার এবং এ জাতির স্বাধীনতা বাঁচাতে এবং তার ধর্ম নিয়ে গর্ব করার মন-মানসিকতা গড়ে তুলতে সেইসাথে পাশ্চাত্যের যে জঞ্জাল এবং পাপকে আজ তারা প্রশংসা করে সেই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে কেবলমাত্র জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ্-ই পারে মুসলমানদের পরাজিত মানসিকতা ও (পশ্চিমাদের বিজয়) সমীকরণকে পাল্টিয়ে দিতে। কারণ এটি শত্রুদের কাছে আত্মসমর্পণকে এবং তাঁর ষড়যন্ত্রের কাছে বশীভূত হওয়া এবং তার চক্রান্তগুলো দ্বারা প্রতারিত হওয়াকে মুসলিম উম্মাহর নৈতিক পরাজয় ও লাঞ্ছনা হিসেবে চিহ্নিত করে।
আসুন আমরা একটি বিষয় মনে রাখি, যতক্ষণ না আমরা পশ্চিমা আধিপত্যবাদীদেরকে বিজয়ী হওয়ার মনোভাব পরিত্যাগ করাতে না পারবো, ততক্ষণ আমরা ইসলামকে (রাষ্ট্র হিসাবে) সঠিক ও সম্পূর্ণ পদ্ধতিতে উপস্থাপন করতে সক্ষম হব না। বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারকারীদের (আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় – New World Order) জাল ছিন্ন করার জন্য ক্রমাগত হামলা করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে, আমি পূর্ববর্তী পয়েন্টগুলোতে উল্লেখ করেছি। একমাত্র এপথেই মুসলমানরা পরনির্ভরশীলতার লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি পেতে পারে।
তানজীমের মধ্যে একটি মিনি-পুলিশ বাহিনী তৈরি করা সম্ভব কি-না তা ভেবে দেখা দরকার, যাদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এটিকে ভিন্ন কমিটি বা স্বতন্ত্র সংস্থা হিসাবে এর বাজেট প্রণয়ন, প্রশিক্ষণ এবং কর্মকর্তাদের সমন্বিত করা হবে। এর দায়িত্ব হল: কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলো কিনা তা দেখা শুনা করা এবং কোনো আদেশের লঙ্ঘন থেকে মানুষকে বিরত রাখা। বিভিন্ন বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তার বাস্তবায়ন করা। যাতে সব বিষয়গুলিই ঐচ্ছিক না হয়ে যায়।
ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদের দিন, যুদ্ধের জন্য আমাকে পর্যবেক্ষণ করেন। আমি তখন চৌদ্দ বছরের কিশোর ছিলাম। তাই, তিনি আমাকে লড়াইয়ের অনুমতি দেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খন্দকের দিন আমাকে যখন পর্যবেক্ষণ করেন, তখন আমার বয়স পনেরো বৎসর হয়েছিল, যার ফলে আমাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমতি দেন।
নাফি রহিমাহুল্লাহ বলেন, “ওমর বিন আবদুল আজিজ রহিমাহুল্লাহ যেদিন খলীফাতুল মুসলিমীন হন, সেদিন আমি তার কাছে গেলাম এবং উক্ত হাদীসটি নিয়ে তার সাথে আলোচনা করি। অত:পর তখন তিনি আমাকে বলেন, “এটাই হল- ছোট ও বড়-র পার্থক্য। তারপর তার কর্মচারীদের নিকট লিখে পাঠান যে, ‘যে ব্যক্তির বয়স পনেরো বছর, তাকে ইবাদতে বাধ্য করা হবে। আর যারা এর চেয়ে কম বয়সী তাদেরকে বাচ্চাদের মধ্যে গণ্য করুন’। [মুসলিম- হাদীস নং-৪৯৪৪]
সুতরাং কাফালাত বা জামিনের মাসয়ালায় এবং শিশুকালের বয়সের সীমানা নির্ধারণে এই হাদীসটি কিভাবে সম্পূর্ণভাবে মিলে যায় তা দেখার বিষয়।
আমাদের শত্রুরা আমাদের এবং আমাদের মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিস্তৃত প্রাচীর প্রতিষ্ঠার জন্য, যে বিচ্ছিন্নতাবাদ আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, সেটিকে প্রতিরোধ করতে এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে শত্রুদের সফল হওয়া থেকে বিরত রাখতে গভীর চিন্তাভাবনা করা দরকার। এ জন্য মুজাহিদগণের যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিতে যত্নবান হওয়া উচিত তা হল, উম্মাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে এবং সাধারণভাবে দাওয়াহ্ পৌঁছানোর জন্য তারা কীভাবে উম্মতের সকল শ্রেণীর সাথে যোগাযোগ করতে পারে, তার জন্য আন্তরিক এবং বিস্তারিত অনুসন্ধান।
আমরা জানি যে আমাদের উম্মাহর অনেকেরই পড়ার মত ধৈর্য নেই অথবা মুজাহিদরা কী লিখছেন এবং তাদের সাইটে কী প্রকাশিত হয়েছে তা দেখার জন্য তাদের সরাসরি অ্যাক্সেস করার উপায় বা নিজস্ব উদ্যোগও নেই। নিজেদেরকে কেবল এই উপায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা আমাদের নিজেদের ব্যর্থতা হিসাবে বিবেচিত হবে এবং আমাদেরকে এই সীমাবদ্ধতাটি কাটিয়ে উঠতে হবে এবং এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
অধিবেশনের মাধ্যমে, অডিও এবং ভিডিও প্রকাশনাগুলোর মাধ্যমে উম্মাহর সাথে সরাসরি যোগাযোগের পদ্ধতিগুলো কাজে লাগানো আবশ্যক। এরপর সেই দাওয়াহ্ তাদের হাতে পৌঁছেছে কিনা এবং তাদের কান এটি শুনেছে কিনা এবং তাদের চোখ এটি দেখেছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে হবে।
সৎকাজের কোন বিষয়কে তুচ্ছ করবেন না। অনেকসময় সাধারণ কোন বৈঠকে যুবক বা দা’য়ী - জিহাদ, জিহাদের ফজিলত এবং এর দিকে পরিচালিত পদ্ধতি সম্পর্কে সহজ সরলভাবে বক্তব্য প্রদান করে। সে বক্তব্য শুনে কোন শ্রোতার হৃদয়ে জিহাদের প্রতি ভালোবাসা ও উৎসাহ জাগ্রত হয়। তার কিছুদিন পরে তিনি একজন সাহসী মানুষ এবং উম্মাহর সিংহদের এক অনন্য সিংহে পরিণত হয়ে উঠেন। সুতরাং, আমাদের মুসলিম জাতির সাথে তার সকল স্তর এবং বিভাগগুলোতে সরাসরি যোগাযোগের জন্য পরিশ্রমী ও উদ্যমী হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
আজকের পৃথিবীর মানুষের কাছে দাওয়াহ পৌছানোর অনেক মাধ্যম আছে। এমতাবস্থায় দাওয়াতের পিছনে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। কখনও মু’মিনদেরকে আল্লাহর রাহে জিহাদ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করার দাওয়াত দিতে হবে, কখনোবা লোকদেরকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’য়ালার দ্বীনে প্রবেশ করার আহবান করতে হবে। দাওয়াত পৌঁছানোর পর আল্লাহর কাছে তাদের হেদায়েতের জন্য দু’য়া করতে হবে। (দাওয়াহ্ ও জিহাদ) উভয় বিষয় এমন মহান কাজ - যা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে করেছেন এবং তাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’য়ালা তা করার আদেশ দিয়েছেন।
তাই মুজাহিদদের তাদের প্রকাশনা, গবেষণা, বই, নিবন্ধ বা অন্য কোন মাধ্যমে, স্থান, কাল, পাত্রভেদে (তাদেরকে মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানাতে) প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ-
“আমি প্রত্যেক পয়গম্বরকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার ভাবে বোঝাতে পারে।” [সূরা ইবরাহিম ১৪:৪]
আল্লাহ তা’য়ালার অনুগ্রহে এখন বিভিন্ন ভাষার অনেক জিহাদী যুবক বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতাও রয়েছে। তাদের জন্য সহজ তাদের এবং তাদের শাইখদের কণ্ঠস্বর, নিকট ও দূরবর্তী সকলের কাছে পৌঁছে দেয়া।
সুতরাং তাদেরকে প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হবে এবং এটাকে তাদের কর্মের মূল হিসেবে গণ্য করতে হবে। এটা মূল কাজের বাইরে বা পরিপূরক হিসেবে নয়। আল্লাহর রাহে জিহাদ কখনই দাওয়াতের বিপক্ষে ছিল না। এটি দাওয়াতকে অস্বীকারও করে নি বা জিহাদ দাওয়াতের পথে বাধাও ছিল না। তাই যার নিকট জিহাদ ও দাওয়াতের মধ্যে বৈপরিত্য পরিলক্ষিত হয়, সে অজ্ঞতার স্বর্গে বাস করে।
আমাদের জিহাদ, আল্লাহ তা’য়ালাই যার তাওফীক দিয়েছেন - আজ এর প্রয়োগের চিত্রটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জামানা বা পরবর্তী জামানায় যা ছিল, তার থেকে অনেক বেশি আলাদা।
সে সময়কার সেনাবাহিনী ইসলামের ভূমি থেকে বের হতেন। আর তাদের সহধর্মিণীদেরকে রেখে যেতেন সংরক্ষিতভাবে। আর যারা এদের সংরক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতেন, তারা লড়াইকারী যোদ্ধারা ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তা’য়ালার দ্বীনের ইলম অর্জনে আত্মনিয়োগ করতেন।
আজ জিহাদী অঙ্গনে মুজাহিদরা তাদের পরিবারের সাথে বসবাস করে। ফলে তাদের পরিবারগুলোও আসন্ন বিপদ হতে নিরাপদ নয়। যখন মুজাহিদরা বাইরে চলে যায় এবং পুনরায় যখন তাদের কেন্দ্র বা তাদের বাড়িতে ফিরে আসে, উভয় ক্ষেত্রেই তারা ও তাদের পরিবার বিপদসীমার মধ্যেই থাকে।
যারা জিহাদের কাজ করেন, তাদেরকে জীবনের ঝুঁকি, ভয় এবং হত্যার সম্মুখীন হতে হয়। চাই তা যুদ্ধের ময়দানে হোক অথবা সেখান থেকে তাদের বাড়ি বা কেন্দ্রে প্রত্যাবর্তনের পথে হোক। কেউ যদি মুজাহিদদের মারকাযে থাকাকালীন বা তাদের চলা ফেরার সময় গাড়িতে অথবা স্ত্রী সন্তানদের সাথে থাকাকালীন এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে ভ্রমণ করার সময় নিহত হওয়ার সংখ্যাটি বিবেচনা করেন, তবে তারা দেখতে পাবেন যে, ময়দানে লড়াইয়ের সময়ে যারা মারা গিয়েছিল, তাদের চেয়ে অনেক বড় সংখ্যক নিহত হয়েছে ময়দানের বাইরে। মোটকথা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন,
وَمَا کَانَ الْمُؤْمِنُوۡنَ لِیَنۡفِرُوۡا کَآفَّۃً ؕ فَلَوْلَا نَفَرَ مِنۡ کُلِّ فِرْقَۃٍ مِّنْہُمْ طَآئِفَۃٌ لِّیَتَفَقَّہُوۡا فِی الدِّیۡنِ وَلِیُنۡذِرُوۡا قَوْمَہُمْ اِذَا رَجَعُوۡۤا اِلَیۡہِمْ لَعَلَّہُمْ یَحْذَرُوۡنَ ﴿۱۲۲﴾
“আর সমস্ত মুমিনের একত্রে অভিযানে বের হওয়া সঙ্গত নয়। তাই তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হল না? যাতে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং সংবাদ দান করে স্বজাতিকে, যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা বাঁচতে পারে”! [সূরা তাওবাহ ০৯:১২২]
এখানে অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি যা ইমাম কুরতুবী উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন-
أن الجهاد ليس على الأعيان وأنه فرض كفاية كما تقدم
জিহাদ ফরজে আইন নয়, যেমনটি পূর্বে উল্লেখ হয়েছে। বরং জিহাদ ফরজে কেফায়া।
যদি প্রত্যেকে জিহাদের জন্য বেরিয়ে যায়, তবে তাদের পেছনে রেখে আসা পরিবার পরিজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। সুতরাং তাদের একদল জিহাদে থাকা এবং একটি দল দ্বীনের বিষয়ে অভিজ্ঞ হওয়ার জন্য এবং তাদের সহধর্মিনী ও পবিত্র স্থানসমূহের সংরক্ষণের জন্য দন্ডায়মান থাকা উচিত। মুজাহিদরা জিহাদ থেকে ফিরে এলে ইলম অর্জনকারীরা শরীয়তের বিধান থেকে যা শিখেছে তা মুজাহিদদেরকে শিক্ষা দিবে। [তাফসীরে কুরতুবী- ৮ম খন্ড, ২৯৩ পৃষ্ঠা]
মুজাহিদদের মধ্যে এই আয়াতটি প্রয়োগ করার ব্যবহারিক উপায় কী? এবং জিহাদের জন্য বের হওয়া দল এবং ইলম শিক্ষার জন্য থেকে যাওয়া দলের মাঝে পার্থক্য করার উপায় কী?
আয়াতটি সকল মুজাহিদকে ইলম অর্জনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। এ কারণেই এগুলোকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল, যার মধ্যে একটি হল জিহাদের জন্য বের হওয়া, অন্যটি ইলম শিক্ষার জন্য নিবেদিত থাকা, তারপরে মুজাহিদ দলকে শেখানো। দ্বীনি বিষয়ে মুজাহিদদের অভিজ্ঞ হওয়ার জন্য একটি বাস্তব এবং সম্ভাব্য কর্মসূচি সন্ধান করা জরুরী যাতে তাদের মধ্যে অজ্ঞতার ব্যাপকতা সৃষ্টি না হয় এবং তাদের মাঝে তা ছড়িয়ে না পড়ে। অজ্ঞতা ও মূর্খতা কখনই দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। আল্লাহর কাছে জ্ঞান, বুদ্ধি এবং হেদায়েত চাই আমাদের জন্য, আমাদের সকল মুজাহিদ ও মুসলিম ভাইদের জন্য।
চুক্তির রূপরেখা সম্পর্কে শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ্ রহিমাহুল্লাহ মাজমুউল ফাতাওয়া (২৭ তম খন্ডের ২১ নং পৃষ্ঠায়) কিতাবে বলেছেন:
“তোমাকে ওয়াদা করতে হবে যে, তুমি আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বন্ধুত্ব রক্ষাকারীর সাথে বন্ধুত্ব রাখবে। আর আল্লাহ ও তার রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে শত্রুতা পোষণকারীর সাথে শত্রুতা করবে। খোদাভীতি ও নেক কাজে একে অপরের সহযোগিতা করবে এবং অন্যায় কাজে একে অপরের সহযোগিতা করবে না। কেউ হকের উপর থাকলে হকের পক্ষে সাহায্য করবে। আর কেউ যদি ভ্রষ্টতার মাঝে থাকে, তাহলে ভ্রষ্টতা বা বাতিলকে সাহায্য করবে না। যে এই অঙ্গিকার করবে, সে আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদ বলে গন্য হবে। এদের চাওয়া হবে - সকল ক্ষেত্রে দ্বীন যেন আল্লাহর জন্যই হয়ে যায় এবং আল্লাহর কালিমা সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়।
সুতরাং, তানজীমে প্রবেশের বাইয়াহ এবং ওয়াদা গ্রহণের ক্ষেত্রে এটাকে মূলনীতি সাব্যস্ত করা যায় কি-না দেখা দরকার।
আমাদের নিজেদেরকে এবং আমাদের প্রজন্মকে যে আক্বীদা-বিশ্বাসে গড়ে উঠতে হবে, তা যেন কিতাবপত্রে বিদ্যমান সংজ্ঞা, প্রকার এবং প্রথাগত পদ্ধতির মাঝে সীমাবদ্ধ না থাকে।
বরং এই আক্বীদা শিক্ষা যেন এমন হয় যে, এই আক্বীদা ক্রোধের জায়গায় ক্রোধ তৈরি করে এবং নম্রতার জায়গায় নম্রতা তৈরি করে। এই আক্বীদায় প্রশিক্ষিত ব্যক্তি সত্যকে প্রকাশ করতে কারও পরোয়া করে না। সে দুনিয়া ও দুনিয়াদার ব্যক্তিদেরকে হালকা দৃষ্টিতে দেখে। দুনিয়া তাকে ধোঁকায় ফেলে না। দুনিয়ার মান-সম্মানের পরোয়া করে না।
সে যখন কুফর ও তার শক্তির মুখোমুখি দাঁড়ায় তখন তাদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয় না। এই আক্বীদা বিশ্বাস-ই আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের আখেরাতের আকাঙ্ক্ষা এবং দুনিয়া ত্যাগের পথে সামনে চলা, শক্তি-সাহস যোগাতে সবচেয়ে দুর্দান্ত উদাহরণ স্থাপন করেছিল।
এ আক্বীদা এমন এক জীবন্ত বিশ্বাস যার দ্বারা সততা এবং আন্তরিকতার সাথে অনুভব করা হয় যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’য়ালা তার সাথে আছেন। আল্লাহ তা’য়ালা তার নিকটেই আছেন, তাকে দেখছেন, তার কথা শ্রবণ করছেন এবং তার হৃদয়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে তাও জানেন। সুতরাং সে যদি কোন আমল করে, তবে সেটা আল্লাহর জন্যই করে। যদি সে (সালাতে) দন্ডায়মান হয়, তবে সে আল্লাহর জন্যই দন্ডায়মান হয়। যদি কিছু বলে, তাহলে আল্লাহর জন্যই বলে। যদি কিছু দান করে, সেটাও তার জন্যই করে।
এই বিশ্বাস-ই ঈমান দ্বারা হৃদয়কে পূর্ণ করে তোলে এবং এর সামনে কিছুই অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে না। কারণ এই আক্বীদাহ্ বা বিশ্বাস সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস। এটি সেই আক্বীদাহ্, যার পোষণকারী সত্যই অনুভব করে যে এর বাহুদ্বয়ের মধ্যে এমন একটি শক্তি রয়েছে, যা এর বাধাগুলো ছিন্ন করতে, তার রাস্তার প্রতিবন্ধকতার পাহাড়কে সরিয়ে দিতে, অসুবিধাগুলিকে ভেঙে অগ্রসর হতে এবং সবচেয়ে বিপজ্জনক অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম। আপনি কি দেখেন না! আনাস ইবনে নযর রাদিয়াল্লাহু আনহু কি বলেছিলেন:
(وَاهًا لِرِيحِ الْجَنَّةِ أَجِدُهُ دُونَ أُحُدٍ)
অর্থাৎ- চমৎকার! আমি উহুদের দিক থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ অনুভব করছি। আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন:
هَلْ أَنْتِ إِلَّا نُطْفَةٌ فِي شَنَّةْ…….أَقْسَمْتُ يَا نَفْسُ لَتَنْزِلِنَّهْ
“হে প্রাণ, আমি (জান্নাতকে) নামিয়ে আনার জন্য কসম খেয়েছি। চাই সেটা তোমার ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক!। লোকেরা যদি সে জান্নাত বেঁধে রাখে তবুও।
হে আত্মা! আমি তো তোমাকে জান্নাতকে ঘৃণা করতে দেখছি না। তাই তুমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ কর। তুমি কি এক ফোটা বীর্য ছিলে না?”
আবার উমায়ের ইবনুল হুমাম আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বদরের দিন বলেছিলেন:
بخ بخ لأن بقيت حتى آكل تمراتي إنها لحياة طويلة
“বাহ্ বাহ্! এই সামান্য খেজুর খাওয়ার সময়টা অনেক দীর্ঘ।”
অত:পর সে খেজুর ছুড়ে ফেলে দিয়ে, ময়দানে ঝাপিয়ে পড়েন এবং শহীদ হয়ে যান। এই আক্বীদা বা বিশ্বাসটিই তাদেরকে মৃত্যুর ভয়াবহতায়ও এই পৃথিবীর দরজা ছেড়ে, আখেরাতের দরজায় প্রবেশের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিল ও অস্থায়ী জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে ধাবিত করেছিল। আমাদের হৃদয়েও এই আক্বীদা বা বিশ্বাসকে ধারণ করতে হবে এবং আক্বীদাহ্ বা বিশ্বাস দিয়ে, কোন জটিলতা বা চাপ ছাড়াই স্বাচ্ছন্দ্যতার সাথে আমাদের হৃদয়কে পূর্ণ করতে হবে। আর আমাদের সন্তান ও সেনাদেরকে এই আক্বীদা-বিশ্বাসে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে।
কুরআন, সুন্নাহ এবং সাহাবাগণ রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ব্যবহারিক জীবনী সর্বোত্তম আদর্শ, যার মাধ্যমে মু’মিনের হৃদয়ে প্রবেশ করে এমন আক্বীদা বা বিশ্বাস, যদি তা অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হয় তবে তার সামনে দুনিয়ার কিছুই দাঁড়াতে পারবে না। আমরা আল্লাহ তা’য়ালার কাছে তাঁর মহান অনুগ্রহের জন্য প্রার্থনা করছি।
প্রাচ্যবিদ কাফেররা ইসলামের পূর্ণ অধ্যয়ন এবং রাজনীতি, অর্থনীতি, জাতিসত্তা, ঐতিহ্য, সামাজিক বন্ধন, ভাষা ইত্যাদি সমাজের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত কিছু, অতি যত্নের সাথে শিখে নিয়েছে। এমনকি তারা তাদের পরিকল্পনাকে সফল করার জন্য সমাজের গভীরে প্রবেশ করে তাদের দূষিত ও নোংরা ধারণাগুলোকে প্রচার করতে একটি সুস্পষ্ট ও উন্মুক্ত স্থানে পৌছেছে। যা ইসলাম ও মুসলমানদের অবস্থানকে অতিশয় দুর্বল করেছে। এক্ষেত্রে তারা সাফল্য নিয়ে অগ্রসর হয়েছে এবং শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে, মুসলমানদের মধ্যে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলোর ভিত্তিতে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে।
তারা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত এই বিষয়াবলীকে বিতর্কিত বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করেছে এবং বুঝিয়েছে যে, এর কিছু বিষয় গ্রহণ করা যায়, আর কিছু বর্জন করা যায়।
প্রথমত, তারা তাদের এই মতাদর্শ মুসলিম পণ্ডিতদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। ফলে মুসলিম পন্ডিতদের লিখনীতে (বই পুস্তক, ম্যাগাজিন ও পত্রিকায়) ঐ প্রাচ্যবিদদের কথাই চলতে থাকে।
যদি এই কাফেররা তাদের মিথ্যা কথা ছড়িয়ে দিতে এতটা ধৈর্যশীল থাকে, তবে মুসলিমগণের কি উচিৎ নয় যে, তারা যে সমাজকে মুক্ত করতে চায় এবং কল্যাণ পৌঁছাতে চায়, সে সমাজকে জানতে আরও বেশি অধ্যবসায়ী এবং আরও বেশি পরিশ্রমী হবেন?
উদাহরণস্বরূপ, মুজাহিদদের পক্ষে এটি সমীচিন নয় তারা যে সমাজগুলোতে অবস্থান করছে, যে সমাজকে ঐ অজ্ঞতার গর্ত থেকে বের করে আনতে চায়, যে অজ্ঞতা তাগুত তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে – সে সমাজের রীতিনীতি, তাদের মানসিকতা এবং তাদের মধ্যে সুপ্ত কল্যাণ সম্পর্কে কিছুই জানে না। তারা জানে না - কীভাবে তাদেরকে সম্বোধন করতে হবে এবং কীভাবে তাদের নৈকট্য অর্জন করতে হবে? তাদের অন্তর কীভাবে জয় করতে হবে আর তাদেরকে কীভাবে সুসংহত করতে হবে।
আপনি যখন বড় বড় সমাজ এবং প্রাচীন গোষ্ঠি দেখেন, তারা ইসলামকে লালন করেন, তখন এর সাথে সম্পর্কিত হওয়ার জন্য গর্ববোধ করেন।
আপনাদের এ লড়াই কোন সম্প্রদায়ের জন্য এবং কিসের ভিত্তিতে পরিচালনা করছেন?
আসুন মুজাহিদদের ঘটে যাওয়া ত্রুটিটি বিবেচনা করি যে, তারা সঠিক ইসলামী আইনী পদ্ধতি দিয়ে সমাজ বা উপজাতির সাথে আচরণ করতে জানেন না। এখানে তাদের লড়াইয়ের মাসয়ালাগত হুকুম দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উদ্দেশ্য নয়। বরং সমস্যার সমাধানে কেবল এই দিক থেকে নয়, বরং আমাদের অবশ্যই নিরপেক্ষ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির দিকে নজর দিতে হবে। কেননা, মুজাহিদরাই এ বিষয়গুলো সংঘটিত হওয়ার কারণ ছিলেন।
প্রথম কারণটি হতে পারে তাদের এই সমাজগুলোর প্রকৃতি সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং তাদের লোকদের প্রকৃতি সম্পর্কে তাদের কম জানা থাকা এবং তারা সকলকে এক স্তরের, এক উপায়ে এবং এক সম্বোধনসূচক আচরণ করা। এ ক্ষেত্রে সুপরিচিত এই বিষয়টি স্মরণ রাখতে হবে, যেমন আল্লাহ তা’য়ালার বাণী-
وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِہٖ لِیُبَیِّنَ لَہُمْ ؕ فَیُضِلُّ اللہُ مَنۡ یَّشَآءُ وَیَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَہُوَ الْعَزِیۡزُ الْحَکِیۡمُ ﴿۴﴾
“অর্থাৎ আমি প্রতেক রাসূলকে স্বজাতির ভাষায় প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে স্পষ্ট ভাবে বলে দিতে পারেন। অত:পর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে গোমরাহ করেন এবং যাকে চান তাকে হেদায়েত দান করেন। আর তিনিই তো সম্মানিত প্রজ্ঞাময়।” [সূরা ইব্রাহীম- ১৪:০৪]
যখন কেউ জিহাদের ইবাদত ও উম্মাহর সন্তানদের মধ্যকার জিহাদী মনোভাবকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত, পশ্চিমাদের মারাত্মক বুদ্ধিবৃত্তিক আক্রমণ সম্পর্কে পড়ে, তখন সে নিশ্চিতভাবেই বুঝতে সক্ষম হয় যে, এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে জিহাদের অগ্রযাত্রা শুধু তাদের সম্পত্তি ছিনিয়ে নেয়া এবং তাদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব হরণ করার মাঝে সীমাবদ্ধ নয়।
বরং তাদের জাতি; যারা হৃদয়ের ব্যাধিগ্রস্থতা, কানের বধিরতা এবং চোখের অন্ধত্বকে পুজি করে সত্য থেকে দূরে থাকে, তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য জিহাদ একটি চাবিকাঠি।
তারা জিহাদের বিরুদ্ধে ও অন্যান্য আরও বিষয়ে যে সন্দেহ-সংশয় তৈরি করেছে এবং দীর্ঘদিন যাবত ছড়িয়ে যাচ্ছে, সেগুলো স্বাভাবিক চেতনা ধ্বংস করে দেয় এবং এমন মানসিক পরাজয়, চিন্তাগত দীনতা ও আক্বীদা বিশ্বাসের ভঙ্গুরতা তৈরি করে, যার উপস্থিতিতে কোন আন্দোলন কিংবা জিহাদ সম্ভব হয় না।
সুতরাং এই সমস্ত খৃস্টান ধর্ম প্রচারক, প্রাচ্যবিদরা ও তাদের তৈরি করা লোকেরাও এই যুদ্ধের একটা অংশ। তারা মানুষের হেদায়াতের পথে অনেক বড় বাঁধা।
সন্দেহে পতিত ব্যক্তি অন্যকে বিভ্রান্তি বৈ ভাল কিছু দেয় না এবং ঝামেলাগ্রস্থ ব্যক্তি নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সুতরাং মুসলমানদের হৃদয়েই যদি সন্দেহের কালিমা উত্থাপিত হয়, তবে তারাও মানুষের কাছে এ সন্দেহ ছাড়া হেদায়েতকে উপস্থাপন করতে পারে না এবং যদি তাদের অন্তরে দুর্বলতা উপস্থিত হয় এবং সন্দেহের সাথে মিশ্রিত হয়ে একাকার হয়ে যায়, তবে তারা কীভাবে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করতে আত্মবিসর্জন দিবে?
পূর্ববর্তী প্রজন্ম যাদের সময়ে এই অপরাধীদের উত্থান হয়েছিলো, তারা যদি এই অপরাধীদের মুখোমুখি হত, তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করত, অপরাধীদের দাঁত ভাঙা জবাব দিত এবং তাদের পথে ওৎ পেতে বসে থাকত, তাদের প্রত্যেক পদক্ষেপে বাঁধা হয়ে দাড়াত তাহলে পরবর্তী লোকদের তাদের সন্দেহকে খণ্ডন করতে যে প্রচুর কষ্ট ও প্রচেষ্টার করতে হয়েছে তা সংক্ষিপ্ত হয়ে যেত।
আল্লাহ তা’য়ালার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, যিনি আমাদের জন্য আহলে কিতাবীদের মধ্যকার কাফেরদের সাথে তর্ক করার বিষয়ে সীমারেখা নির্ধারণ করেছেন। তা হল একাত্ববাদের প্রতি আহ্বান। এটিই হল এমন এক পবিত্র কালিমা বা বাক্য, যা তাদের ও আমাদের মাঝে সমান। আর এ পবিত্র কালিমা ছাড়া যা কিছু আছে তা অনর্থক এবং খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই নয়।
এ কারণেই উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু শর্ত দিয়েছিলেন যে, জিম্মিরা কোন মুসলমানকে তার ধর্ম সম্পর্কে প্রলোভিত করতে পারবে না। তাই ধর্ম সম্পর্কে প্রলোভিত করার দরজায় তিনি খিল এটেছেন এবং যে এই কাজে লিপ্ত হবে তার নিরাপত্তার জিম্মাদারি মুসলমানদের থাকবে না। তাহলে তাদের কি হুকুম, যারা তাদের নিবন্ধ এবং বই-পত্রে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো দূষিতভাবে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করে। অথচ তারা কখনও সত্যের সন্ধানও করে নি, আর তারা তা অর্জনেও আগ্রহী নয়। বরং তাদের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র সাধারণভাবে ইসলামের বিষয়ে আপত্তি তোলা, বিশেষত জিহাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতের ব্যাপারে আপত্তি তোলা। যাতে তারা (অপরাধীরা) এর আক্রমণ এবং এর আকস্মিক বিপদের নাগাল থেকে দূরে কোন দুর্গে অবস্থান নিতে পারে।
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ ۚ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ ۖ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
আর স্মরণ করো! যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল যে তারা তোমাকে আটক করবে অথবা তারা তোমাকে হত্যা করবে অথবা তারা তোমাকে নির্বাসিত করবে। আর তারা ষড়যন্ত্র করেছিল, আর আল্লাহ্ও পরিকল্পনা করেছিলেন। আর পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে আল্লাহ্ই শ্রেষ্ঠ। [সূরা আনফাল ৮:৩০]
আমাদেরকে সেই রোগগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে, যা কোন জামাআতের দেহকে ক্ষয় করে দেয় এবং এর সংহতির ভিত্তি দুর্বল করে দেয়। যেমনভাবে রাষ্ট্রগুলোর পতন, তাদের দেহের পতন এবং প্রভাব শেষ হওয়ার কারণসমূহের দিকে দৃষ্টি দিতে হয়, তেমনভাবে জামাআতের অবস্থানকে দেখতে হবে।
দ্বীন প্রতিষ্ঠাকারী জামায়াতগুলো আদর্শ বা কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গঠনের জন্য একটি প্রাথমিক নমুনা ও একটি ছক ছাড়া কিছুই নয়। যে রোগের কারণে দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় তা জামায়াতকেও ক্ষতিগ্রস্থ করে।
একটি রাষ্ট্রের স্তম্ভগুলো দুর্বল করে ভেঙ্গে ফেলার জন্য যে কারণগুলো দায়ী, সেগুলো হল শৌখিনতা, বিলাসিতা, বাড়াবাড়ি এবং মতবিরোধের প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিচ্ছিন্নতা ও বিভক্তি, অনর্থক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়া, মূল কাজ থেকে দূরে থাকা। সৎ ও ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতি, বিদ্বেষ ও বৈষম্যপূর্ণ আচরণ ও পারষ্পারিক অন্তরগুলোর বিচ্ছিন্নতার কারণে সুপ্রতিষ্ঠিত, বিশাল এবং জনবহুল রাষ্ট্রগুলো ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়েছে। স্পেনের বিষয়টি তো সবার সামনে স্পষ্ট।
ফোরাম এবং অন্যান্য বিষয়গুলোতে বাস্তবিকভাবেই আমাদের লেখকদের মান বাড়াতে হবে। তবে এই মান বা স্তরটি, শুধুমাত্র বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখাই উচিত নয়। বরং ভাষাতাত্ত্বিকভাবে সংশোধন করা উচিত।
কেবল পরিশীলিত সাহিত্যের ভাষা দিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে গেলে হবে না। বরং এতে নৈতিকতার সমস্ত দিককে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
লেখকের লেখার মাঝে ন্যায়বিচার, নম্রতা, করুণা, প্রজ্ঞা গ্রহণ ও ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে প্রত্যাবর্তন করা এবং সত্যকে গ্রহণ করা, (চাই তা যার পক্ষে থেকেই থেকেই আসুক না কেন) - এসব বিষয় থাকতে হবে।
এটা লেখকের লেখায় দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হবে। তাড়াহুড়ো করে এবং পর্যালোচনা ও চিন্তা ভাবনা না করেই বা উদ্দেশ্যহীনভাবে কোন বিবরণ লিখবে না। তাহলেই আমাদের লেখাগুলো একটি প্রয়োজনীয় মূল্যবান পাথেয় হবে, যা প্রতিটি নতুন ক্ষণে উপকার বয়ে আনবে।
আর লেখকের অপমান, রুক্ষতা, বিদ্বেষের কথা এবং অভিব্যক্তির মাঝে লিপ্ত হওয়া উচিৎ নয়। এমন শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করবে না যা তার অন্তরের পরিশুদ্ধতা বুঝায় না। কারণ এমন লেখা থেকে কেউ উপকৃত হতে পারে না। তাই এমন কিছু বই নির্বাচন করা যেতে পারে যা লেখকদের স্তর বা মান বাড়াতে পারে। আর তাদের নৈতিকতা উন্নত করার বিষয়ক কিছু কিতাব নির্বাচন করতে হবে। যেকোনো ফোরামের প্রতিটি লেখক, লিখা শুরু করার আগে অবশ্যই এই কিতাবগুলো মনোযোগ সহকারে পড়তে বাধ্য থাকবে। বিশেষত যদি তাকে বিশিষ্ট এবং প্রভাবশালী কোন বড় লেখক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়।
এতে কোন সন্দেহ নেই, যে জিহাদের পথে অনেক বিপদ ও বাধা রয়েছে, যা কখনও কখনও জিহাদ সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় কাজগুলোকে বিলম্বিত করে এবং অনেক সময় এগুলো বন্ধও করে দেয়। সেই প্রস্তুতিকে সামনে রেখেই নিতে হয় “সামরিক প্রশিক্ষণ।” এই দিকটি যত বেশি যত্নশীল, তীব্র, অবিচ্ছিন্ন এবং বিস্তৃত হবে, সামরিক রণক্ষেত্রগুলোতে এর ফলাফলও তত বেশি প্রভাবশালী এবং কার্যকর হবে।
আর এখন শত্রু তার লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ময়দানে অবতীর্ণ হয়ে আমাদের সাথে এমনভাবে লড়াই করছে যে, কোন ভাবেই কোন নিরাপদ ও স্থিতিশীল জায়গা তারা বাকি রাখেনি যাতে এই মহান ইবাদতটি প্রয়োজনীয় পদ্ধতিতে সম্পাদন করা যায়। সুতরাং আমাদের অবশ্যই অনিবার্যভাবে নিজেদেরকে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে এবং যাতে জিহাদী কর্ম যেন বন্ধ না হয় বা বিপর্যয় না ঘটে - তাই এর সমাধান ও উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
সুতরাং, আমি ভ্রাম্যমান সেনাছাউনি স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখছি। ভ্রাম্যমান সেনাছাউনির কাজ হলো, নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য করে কোন একটি জায়গায় একটি দুটি কোর্স করা। তারপর অন্য কোথাও স্থানান্তরতি হওয়া। তাহলে প্রশিক্ষণও বন্ধ হবে না আর শত্রুরাও জায়গা নির্দিষ্ট করে আক্রমণ করতে পারবে না।
আমাদের ক্যাডারদের সংরক্ষণ করা, তাদেরকে অব্যাহতভাবে প্রস্তুত করা, তাদের মান উন্নত করার ক্ষেত্রগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তাদের মধ্যে ঈমানের হাক্বিকতকে সংহত করা এবং বিভিন্ন ধরণের অভিজ্ঞতার সাথে তাদের পরিচিত করানো উচিত। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল জিহাদের দীর্ঘ সফরের জন্য পুরুষদেরকে গড়ে তোলা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তাদের সংরক্ষণ করা।
দেখুন! সাহাবাগণ রাদিয়াল্লাহু আনহু কীভাবে এমন একটি অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। সেসময় ইসলামের ভূখন্ড রক্ষিত ছিল। যদিও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর পরে দেশটিতে ধর্মত্যাগের ঝড় শুরু হয়। অথচ তখনও তারা ধর্মকে দৃঢ়তার সাথে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন।
এটা কেবল ঐ সকল দৃঢ় পুরুষদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল - যারা জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছিল এবং ঈমানের সত্যিকারের অর্থকে অন্তরে ধারণ করেছিল। বিনিময়ে যদিও তারা বিভিন্ন ধরণের দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছিলেন। জয় এবং পরাজয়, আনন্দ, দুঃখ বা সমৃদ্ধ ও দারিদ্র্য, দেশান্তর এবং স্থিতিশীলতার মাঝে যাদের জীবন ছিল দোদুল্যমান।
(ধর্মতাগ্যের) তুফান যখন তার বৃহৎ শক্তি নিয়ে এসেছিল, তখন তাদের হৃদয় কম্পিত হয় নি বা তারা দুর্বল হয়ে যায় নি। বরং তারা তাদের বিপদ অতিক্রম না করা অবধি অবিচল ও দৃঢ় ছিলেন।
আজকেও জিহাদী আন্দোলনে এটার বড়ই প্রয়োজন। তাই জিহাদের নেতৃত্বের জন্য উচিৎ নয় যে, এই ক্যাডারদের সবাইকে অথবা অধিকাংশকে এক যুদ্ধে পাঠিয়ে দেয়া। কারণ বর্তমান জিহাদের পথ অনেক দীর্ঘ। কাজও অনেক বেশি। এ জাতীয় আলোকিত ও ক্ষমতায়িত পুরুষের অস্তিত্ব, তাদের ভূমিকা কেবলমাত্র শত্রুদের বাহ্যিক সংযোগ থেকে ইসলামের কোষ বা মূল সংরক্ষণ করার উপরই নির্ভর করে না। বরং মতানৈক্যের চোরাবালু থেকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করাটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এই মতানৈক্য বছরের পর বছর চলতে থাকে এবং দিকবিদিক ছড়িয়ে পড়ে।
সে সময়ে যদি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পরে এ জাতীয় (মহান বীর পুরুষ) লোকদের অস্তিত্ব না থাকত, তবে হয়তো বা এমন ঘটনা ঘটত, যা কেবলমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহ-ই জানেন।
আমরা মনে করি যে বনী সায়েদার তাবুতে যা ঘটেছিল, তা যদি ভিন্ন কোন সাধারণ মানুষদের মধ্যে ঘটতো, যারা সাহাবাগণের জ্ঞান, তাদের ধর্মভীরুতা, তাদের নিরপেক্ষতা, তাদের দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতার শিক্ষা অর্জন করেনি, তাহলে উক্ত বিষয়টির জন্য তাদের প্রশংসা করার শক্তিটুকুও, তারা খুঁজে পেত না।
তারা একটি অধিবেশনে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে এবং এতে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছিল। তাদের মতো বুঝ ও জ্ঞানের অনুসারী হয়ে, আমরাও যেন আমাদের ক্যাডারদের তৈরি ও সংরক্ষণের একটি উপায় বের করতে পারি। না হলে এ সমস্ত আবেগ, অগভীর ও এলোমেলো অভিজ্ঞতা এবং বিনা ফায়দায় মারা যাওয়া, ছেলেমানুষী এবং বেপরোয়া কাজকর্ম পরিহার না করা এবং যথাযথ বিষয়গুলো গ্রহণ না করার কারণে একদিন আমরা হারিয়ে যাবো ও অদৃশ্য হয়ে যাবো।
[মূল লেখক: শাইখ মাহমুদ শাকিরের (রহিমাহুল্লাহ) ইসলামী ইতিহাস বিষয়ক বইয়ের দ্বিতীয় অংশটি পড়ার সময় আমি এই অর্থগুলোকে গ্রহণ করেছি এবং উপকৃত হয়েছি।]
আমাদের যুদ্ধে, আমরা সমসাময়িক ক্রুসেডার শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা প্রতিটি সম্মানজনক বিষয়ের মূল্যায়ন, সৃষ্টি, শক্তি বা রীতিনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন শত্রুর মুখোমুখি হচ্ছি। কারণ এটি এমন একটি যুদ্ধ যেখানে শত্রুরা নোংরামি, অবক্ষয় এবং অবজ্ঞার সমস্ত অর্থ বহন করে থাকে। তারা নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরণের কেলেঙ্কারী ও লজ্জাজনক কাজ করে, যার প্রেক্ষিতে তাদের অসুস্থ ও পচা আবেগ, মানুষদেরকে মিথ্যাবাদী সাবস্ত্য করা, তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও শ্লীলতাহানি করা, তাদের শহর জ্বালিয়ে দেওয়া, গ্রামগুলোকে উড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের মধ্যে যারা বসবাস করেন, তাদের সকলকে নির্মূল করে দেওয়ার মত জঘন্য কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না।
তাদের বিভ্রান্তকারী মিডিয়াতে, তাদের সামরিক প্রচারণার পাশাপাশি তাদের কদর্যও শোভা পায়। তবুও এসব হলুদ মিডিয়া তাদের অবস্থাকে উন্নত হিসেবে দেখায় এবং তাদের লক্ষ্যগুলো প্রচার করে বেড়ায়। তাছাড়া শত্রুদের হাতে রয়েছে সামরিক অস্ত্রাগার থেকে শুরু করে উন্নত আধুনিক প্রযুক্তি, যা হৃদয়কে চমকে দেয়।
বিপরীতে এই উন্নত আধুনিক প্রযুক্তির মুখোমুখি হচ্ছে পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু মুজাহিদ, যাদের হাতে কোনো ধরনের বৈষয়িক শক্তির উপকরণ নেই। লড়াইয়ের বাহ্যিক উপকরণে দুই দলের মাঝে কোন মিল নেই। আবার আকিদা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে উভয় দলের পার্থক্য এমন, যেমন পার্থক্য রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে।
ক্রুসেডারদের সামরিকভাবে উচ্চতর হিসেবে দেখা হলেও, তাদের মিডিয়াগুলো, তাদের পতনের উপরে বিজয়ের প্রলেপ দিতে ছদ্মবেশ ধারণ করে থাকে। মুজাহিদরা তাদের যুদ্ধের ময়দানে ঈমানী দিক থেকে উন্নত, অগ্রগামীতার দিক থেকে সুদৃঢ় ও অবিচল। অবশেষে বিজয় তাদেরই হবে এবং মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তা’য়ালা তাদের সাথে আছেন। আর মুজাহিদগণ এমনটাই বিশ্বাস করেন।
তবে, এই লড়াইয়ে উভয় পক্ষের মুখোমুখি অবস্থায়, বার্ধক্যের পূর্বেই শিশুর কেশ শুভ্র করে দেয়া এই যুদ্ধের সাগরে ডুবে থাকা মুজাহিদরা, যদি নিজেদের ব্যাপারে সতর্ক না হয় এবং যদি তারা তাদের পথ সুসংহত না করে এবং “মুসলিম মুজাহিদ” এর নৈতিকতার প্রতি আগ্রহী হয়ে না উঠে, তাহলে জিহাদের অনেক সুন্দর দিক মুজাহিদদের থেকে ছুটে যাবে, যা আমাদের জিহাদ ও দ্বীনের বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যাবলী, এই উন্নত চরিত্র, এই উঁচু মূল্যবোধ, নীতি ও নৈতিকতা রক্ষা করার বিষয়টি - আমাদের ঘৃণ্য শত্রুর সাথে লড়াই করে তাদের পরাস্ত করার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
যুদ্ধের ভয়াবহতা ও প্রচন্ডতার সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা, সীমারেখার উপর চলা সর্বোত্তম কাজ।
শত্রুরা আমাদের অনুসরণীয় নয় যে, আমরা বর্বরতা ও নিচু মানের কাজে তাদের অনুসরণ করে চলব। আমাদের একটি দ্বীন আছে যা আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের বিধান আছে, যা আমাদেরকে দিকনির্দেশনা দেয়। আমাদের মূল্যবোধ আছে, যা আমাদেরকে পথ দেখায়। আমরা দ্বীনের দেখানো পথে বিধান অনুপাতে মূল্যবোধ সহকারে চলি। দ্বীনকে আঁকড়ে ধরেই আমরা আল্লাহর দেওয়া বিজয় লাভ করি। আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ
“অর্থঃ তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর আল্লাহও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা মজবুত করে দিবেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৭)
মহান আল্লাহ তা’য়ালার অন্যতম একটি সুন্নাহ হল- তাঁর বান্দাদের প্রতি সমর্থন ও সাহায্য করা। শত্রুদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ধ্বংস করে তাদের হিংসাত্মকতা, অত্যাচার, অমানবিকতা ও অহংকারের উচ্চতায় থাকা অবস্থায়, তাদের থেকে বদলা গ্রহণ করা। আর তাঁর বিজয় স্বীয় ভগ্ন হৃদয়বান বান্দাদের উপর অবতীর্ণ হয়, যারা তাদের অসহায়ত্ব এবং অপারগতাকে নতশিরে স্বীকার করে এবং আসবাব থেকে সম্পর্ককে ছিন্ন করে, সেগুলোর কোনটিই নিজের কাছে থাকাকে উপকার মনে করে না।
তারা আরও বিশ্বাস করে যে, এই দুনিয়াবী কোন আসবাব, অভিজ্ঞতা, ভাল প্রশিক্ষণ বা অস্ত্রের নিপুণতায় বিজয় আসে না এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমেও সামনে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। বরং পূর্ণ স্বীকৃতি ও বিজয় আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি এক ও অদ্বিতীয় এবং মহা পবিত্র।
এটাই হল- দাসত্ব বা ভক্তির অর্থ, যা বান্দা অনুভব করে এবং হৃদয়ের আঙ্গিনায় সেই অনুভবের-ই প্রতিফলন ঘটে বিভিন্ন ভাষায়। আর এই বিশ্বাস নিয়েই, তার যা আছে, তা নিয়েই আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে শত্রুর মোকাবিলায় জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
উহুদের যুদ্ধে সাহাবীগণের সাথে কী ঘটেছিল সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’য়ালা সে সম্পর্কে কিছু বিধান স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে বলেন-
وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ
“আর এ কারণে আল্লাহ ঈমানদারদেরকে পাক-সাফ করতে চান এবং কাফেরদেরকে ধ্বংস করে দিতে চান।” [সূরা আলে ইমরান ৩:১৪১]
আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন-
وَلَوْ يَشَاءُ اللَّهُ لَانتَصَرَ مِنْهُمْ وَلَٰكِن لِّيَبْلُوَ بَعْضَكُم بِبَعْضٍ
“আল্লাহ তা’য়ালা ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান।” [সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:০৪]
আমেরিকা একটি ঘৃণিত, পাপিষ্ঠ, অবিচার, নিপীড়ন ও অত্যাচারের রাজ্য হিসেবে খ্যাত। আপনি কী দেখতে পান না যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ, তার অনুগ্রহ আমাদেরকে দান করেছেন। সে অনুগ্রহ দ্বারা আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করবেন। আর তাদেরকে পরীক্ষা করবেন আমাদের দিয়ে। এটা একারণে যাতে করে মহিমান্বিত রব তাদের উপরে আমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব ও নিয়ামত দান করেন। আল্লাহ তাঁর সৈন্যদের দিয়ে, তাঁর ধর্ম প্রতিষ্ঠা করবেন এবং তাঁর শত্রুকে পরাভূত করার জন্য আমাদেরকে তাদের সাথে লড়াই করাবেন।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ইন্টারনেট তাদের জন্য ভয়ানক, যাঁরা নিজেদেরকে মহান আল্লাহর নিকটে সমর্পণ করেন নি। এটি লেখককে চরমভাবে দূষিত করে। এর দ্বারা তার নফস কিছুটা ফুলে ওঠে ও আকুলতায় ভরে ওঠে। বিশেষত: শিরোনামের লাইনে যখন কমেন্ট বা মন্তব্যকারীরা দুটি শব্দ সংমিশ্রণ করার সাথে পোষ্ট করেন যেমন: “ফযিলাতুশ শাইখ বা ফযিলাতুশ শাইখ আল-মুরাবিত আল-মুজাহিদ” ইত্যাদি। এটি কোন ধর্মীয় ব্যক্তির জন্য বিরাট বিপদ।
এটি গোপনীয় ভাবে হতে পারে, যা সে অনুভব করতে সক্ষম হয় না। এক্ষেত্রে আমি আমার সম্মানিত কয়েকজন ভাইকে পরামর্শ দিয়েছি এবং তাদের নির্দেশ দিয়েছি যে, এই পাঁচ, দশ বা একশত ব্যক্তি যারা নিবন্ধগুলোতে মন্তব্য করেন তাদের দিকে যেন লক্ষ্য করা না হয়।
এখানে তাদের অবস্থান হলো “মুসলিম উম্মাহ”র মতো, আর আমাদের লিখনী ও কথন যেন তার সাথে আলাপচারিতার মাধ্যম হয়। তা-নাহলে আমাদের নিবন্ধগুলোর মূল বিষয়গুলোকে পাল্টে দিবে এবং এক্ষেত্রে ভাইকে (লেখক) প্রচুর ব্যস্ত দেখবেন, এই ভেবে যে “মুসলিম উম্মাহ” তার নিবন্ধ, গবেষণা বা মন্তব্যগুলোতে মনোযোগ দিচ্ছে।
আমরা আল্লাহর নিকট এ আকুতি করছি, তিনি যেন আমাদেরকে লৌকিকতা, অহঙ্কার ও ধোঁকা থেকে রক্ষা করেন এবং আমাদের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ বিষয়কে পরিশুদ্ধ করে দেন।
আমি এখানে একটি বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছি, যা আপনি নিঃসন্দেহে জানেন। মুজাহিদদের মধ্যে অনেক ভাই এমন আছেন, যারা ময়দানে প্রয়োজনীয় সামরিক কৌশলগুলো এবং ইসলামি সহীহ্ আক্বীদার জন্য যা প্রয়োজন সেগুলো অর্জন করতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। কেননা, তিনি মনে করেন যে, তিনি যদি কোন কাফেরের সাথে “সন্ধি” করেন, তাদেরকে ছাড় দেন, তাদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকেন বা তাদের কিছু মন্দ কর্ম সম্পর্কে চুপ থাকেন, তবে তিনি “তার ধর্মের ক্ষেত্রে চাটুকার” হয়ে উঠবেন অথবা তাঁর “আল-ওয়ালা ও আল-বারা আক্বিদার মাঝে ঘাটতি রয়েছে।” অথচ বাস্তবে এ বিষয় দু'টি পরস্পর বিরোধী। যেমন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে,
قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْحَرْبُ خَدْعَةٌ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যুদ্ধ হচ্ছে কৌশল।’ (বুখারী-৩০৩০)
ফকীহগণ কর্তৃক কতকগুলো নীতি বা বিষয় আরোপিত হয়েছে, যা নিয়ে তাদের বইগুলোতে বিস্তর আলোচনা হয়েছে এবং এ সম্পর্কিত আলোচনাগুলোকে পৃথক করা হয়েছে। সম্ভবত, মুজাহিদদের কেউ কেউ সেখানকার মতানৈক্য থেকে নীচুতা খুঁজে পাবে এবং সম্ভবত তিনি এটিকে একটি “ধর্মের ক্ষেত্রে তাচ্ছিল্যতা” হিসাবে বিবেচনা করবেন। প্রকৃতপক্ষে এটি বা এর মতো আরো কিছু বিষয়কে মুজাহিদরা বেশিরভাগ সময় হঠকারিতা, তীব্রতা ও সংকির্ণতার ঊর্ধ্বে মনে করেন এবং সংশয় থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হিসেবে গ্রহণ করেন।
ফুকাহায়ে কেরাম কি তাদের গ্রন্থগুলোতে “ইমামকে অর্থের বিনিময়ে কাফেরদের সাথে সমঝোতা করা” এর হুকুম সংক্রান্ত মাসআলটি উত্থাপন করেননি? এটাকে (কাফেরদের সাথে সন্ধি করার বিষয়টি) কেউ কেউ মনে করেন কাফেরদের চাটুকারিতার চূড়ান্ত স্তর। কেউ কেউ তো এ বিষয়টি গ্রহণ করা তো দুরের কথা বর্জন করাটাই উত্তম মনে করেন।
যদি এ জাতীয় মাসআলা যা প্রাচীন বিদ্বানদের লেখাতে পাওয়া যায় - তার আলোচনা ও গবেষণা করা হয়, তবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে বাকি বিষয়গুলোর সন্ধান এবং গবেষণা করা আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমি এখানে এই নির্দিষ্ট সমস্যাটি গ্রহণ করার বা অন্য একটি নির্দিষ্ট সমস্যা উত্থাপনের অর্থে বলতে চাইছি না। তবে আমার বক্তব্য হল বিভিন্ন বৈধ উপায়ে শত্রুদের হ্রাস করার এমন কিছু নীতি, যা গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
এটি সামরিক বাহিনীর মধ্যে একটি সুপরিচিত নীতি এবং সম্ভবত নেতৃত্বের পরিশীলতা, অভিজ্ঞতা এবং সামরিক প্রতিভা যেমন দেখা হয়, তেমনি বাস্তবে তার শত্রুদের সাথে একা যুদ্ধ করার ক্ষমতা কতটা তাও দেখার বিষয়, যদিও শত্রুরা তাদের পালা বদল করতে থাকে।
নিঃসন্দেহে, আপনি যে আমলটির জন্য দুর্দান্ত চেষ্টা করছেন তার জন্য ধৈর্য এবং দৃঢ়তা প্রয়োজন। তবে আপনি যখন এর গুরুত্ব এবং এর ভাল ফলাফলের কথা স্মরণ করেন, তখন আপনি বিরক্তিকর এবং দুঃখের বিষয়টিকে হ্রাস করতে পারবেন। অন্যদিকে এটি আপনাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকেও দূরে রাখবে।
শয়তানের কুমন্ত্রণা নিঃসন্দেহে আপনার কাছে চতুর্দিক থেকে আসে। কখনও সেটি আপনার কাছে অনুভূত হবে, আবার কখনো এই কুমন্ত্রণা আপনাকে “ফতওয়া” দিবে যে, আপনি বিন্দুমাত্র সত্যিকারের জিহাদে নেই। অতএব সর্বদা তাকে বহিষ্কার করুন এবং অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করুন। আর তার কুমন্ত্রণা ও ধোকাকে হালকা বা ছোট মনে করবেন না, কেননা এটি নিয়ে বাগ-বিতণ্ডা করা ও এ ব্যাপারে অসতর্ক থাকার দ্বারা তার বিকাশ ঘটায় এবং পুষ্টি দিয়ে এটিকে বড় করে তোলে।
আপনি সর্বদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্বাচিত হাদীসটি স্মরণ রাখুন:
إِنْ كَانَ فِي الْحِرَاسَةِ كَانَ فِي الْحِرَاسَةِ وَإِنْ كَانَ فِي السَّاقَةِ كَانَ فِي السَّاقَةِ
“তাকে পাহারায় নিয়োজিত করলে পাহারায় থাকে আর (দলের) পেছনে পেছনে রাখলে পেছনেই থাকে” (সহিহ বুখারী-২৮৮৭)
অর্থাৎ যেখানেই তাকে দায়িত্ব দেয়া হোক, তিনি তা পালন করে যান এবং এগিয়ে যান। তিনি যদি সৈন্যদের পিছনে থাকেন তবে পিছনে থেকেই দায়িত্ব পালন করেন। আর যদি তিনি পাহারার দায়িত্ব পান তবে তিনি সে কাজও আঞ্জাম দেন। কারণ তাঁর উদ্দেশ্য হল ‘পুরষ্কার’ চাই তাঁকে যেখানেই রাখা হোক না কেন!।
প্রিয় ভাই আমার,
এতে কোন সন্দেহ নেই যে জিহাদে উচ্চ সহনশীলতা, দীর্ঘ ধৈর্য, প্রশস্ত দিল এবং লম্বা শ্বাস প্রয়োজন। জিহাদের অর্থ সম্পর্কে একটি সত্য উপলব্ধি হচ্ছে, বিশেষত আমরা ময়দানে যে ধরণের লড়াই করছি, যা নিয়ে কখনও কখনও মনে হয়, যে তা মোটেও লড়াই নয়। মনে হয় তিনি একটি সাধারণ জীবনযাপন করছেন।
কিন্তু যখন সর্বশক্তিমান আল্লাহর শত্রুরা এই (লড়াইকারী) সম্প্রদায়টির জন্য কী পরিমান ব্যয় করে, তাদের অভিযান, ভ্রমণ এবং তাদের পিছনে পিছনে ছুটে চলা এবং যে সম্মেলনগুলো তারা গোপনে এবং প্রকাশ্যে রাখে এবং এ কারণে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, এ সকল বিষয় নিয়ে যখন আলোচনা করে, তখন সে বুঝতে পারে, যে তিনি হক্কের সাথেই আছেন এবং তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর শত্রুদের সাথে এক ভয়ঙ্কর মারাত্মক যুদ্ধে রয়েছেন। যতক্ষণ না বিষয়টি এমন অনুভূত না হবে, ততক্ষণ আমাদেরকে আল্লাহ তা’য়ালার এই বাক্যগুলোর ব্যাপারে খুব চিন্তা ভাবনা ও গবেষণা করা উচিত।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ، وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖوَاصْبِرُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
“অর্থাৎ হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যখন কোন বাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর যাতে তোমরা উদ্দেশে কৃতকার্য হতে পার। আর আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রাসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।” (সূরা আনফাল ৮:৪৫,৪৬)
পরিশেষে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের এবং আপনাকে সুদৃঢ় করতে এবং আমাদের অন্তরকে এ পথে অটল রাখতে, ধৈর্য্য দান করতে এবং অবিশ্বাসীদের উপর আমাদের বিজয় দান করতে বিনয়াবনত অনুরোধ করছি।
দু'দিন আগে আমি ভাই মুহাম্মদ মারাহর মহাকাব্য দেখেছি, আল্লাহ তা’য়ালা তাকে কবুল করুন এবং জান্নাতে তাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে দিন।
সুবহানাল্লাহ্! কী করে তিনি হৃদয়কে অক্ষমতা থেকে মুক্ত করে এমন শক্তি অর্জন করেছিলেন! যেখানে বৃহত্তর দেশগুলোর গোয়েন্দা, সুরক্ষা পুলিশ পরিসেবাগুলো নিজের বাড়িতে তেইশ বছরের কম বয়সী এক যুবকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে অক্ষম। এই জাতীয় লোকদেরকেই ব্রিগেডস “আসিম বিন সাবিত” বলা উচিত, যিনি আনসারী সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন :
أما أنا فو الله لا أنزل اليوم في ذمة كافر
আসিম ইব্নু সাবিত (রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু) বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তো আজ কাফিরদের নিরাপত্তায় অবতরণ করবো না’। (সহিহ বুখারী-৩০৪৫)
(উক্ত যুবক বলেন) আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম যেন তাদের হাতে ধরা না পড়ি ও বন্দী না হয়ে যাই। আল্লাহর প্রশংসা, যিনি তাকে বন্দি হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন।
এ ঘটনার পরে আমার মতে - আমি অপ্রাপ্তবয়সী কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা এমনকি সে বাচ্চা সরাসরি ইহুদী হলেও তাদের হত্যা করার বৈধতা দেখতে পাই না। কারণ নবীয়ে রহমত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলা ও বাচ্চাদের হত্যা সম্পর্কে খোলামেলা ও স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন। উক্ত হাদিসটি বুখারী ও মুসলিমে যৌথভাবে স্থান পেয়েছে এবং এ সম্পর্কে অনেক প্রসিদ্ধ হাদিস বিশারদ ও আলেমদের ঐক্যমত বিদ্যমান। এগুলো যে কোনো আইনশাস্ত্রের কিতাব বা অন্যান্য কিতাব সমূহে সুপরিচিত প্রতিষ্ঠিত বিধিগুলোর মধ্যে একটি। তবে “بالعامل بالمثل” একই ধরনের কাজ করে অর্থাৎ ‘তারা যেমনি আমাদের বাচ্চাদের হত্যা করে, আমরাও তাদের সন্তানদের হত্যা করব’ এই বাক্যটুকু ব্যতীত।
উক্ত বাক্যটি মুজাহিদদের মধ্যে একটি বিখ্যাত উক্তি হিসেবে সুপরিচিত হলেও, এটির সম্পাদনা প্রয়োজন। আমি শাইখ ইবনে উসাইমীনকে তাঁর ভাষ্য থেকে বিভিন্ন জায়গায় শুনেছি যে, শত্রুরা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিম মহিলাদের হত্যা করে, তবে তাদের সাথেও একই আচরণ করতে হবে এবং আশ্চর্যের বিষয় হল, তিনি এ জায়েয বা বৈধতাকে এমন সঙ্গত বলে উল্লেখ করেন, যেন তারা বদলা নেয়া বন্ধ করে না দেয়, যদিওবা এমন পরিস্থিতিতে হত্যা করাকে দুর্বলতা, অপমান বলে বিবেচনা করা হয়।
তবে এখানে তিনি মহিলাদের সম্পর্কে কথা বলছেন। পক্ষান্তরে শিশুদের ক্ষেত্রে তিনি কয়েক জায়গায় সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে এটি জায়েয নয়। এখানকার আলোচনাটি ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা সম্পর্কে।
(أما صور الفتل الأخرى فأدلة جوازها واضحة)
অন্যান্য হত্যাগুলোর ক্ষেত্রে যেমন- হামলা, নৈশকালীন সময়ে আক্রমণ করা যা সাধারণত হত্যার জন্যই করা হয়ে থাকে - তাই তাদের উপরও এ ধরণের হামলা জায়েজ হওয়ার প্রমাণ আরো সুস্পষ্ট। তবে আলেমরা যেমন আলোচনায় উল্লেখ করেছেন যে, যে কেউ তাকে হত্যা করতে গিয়ে নিষেধ করা মহিলা ও শিশুদের হত্যা করে, তার রক্তের বিনিময়ে জরিমানা হিসেবে কোন টাকা বা অন্য কিছু করতে হবে না, তবে তাকে অবশ্যই তাওবাহ্ করতে হবে।
তাওবাহ্ তখনই করতে হবে, যদি সে তাদের হত্যা করা নিষিদ্ধ, এটা জানার পরেও হত্যা করে। আর আমি মনে করি, ভাই মুহাম্মদ মারাহ্ রহিমাহুল্লাহ্ এর বেলায়ও এমনই হয়েছে। তিনি তাদের বক্তব্যের দিকে ধাবিত হয়েছেন, যারা ফতোয়া জারি করেন যে এ জাতীয় পরিস্থিতিতে এটা বৈধ। কেউ কেউ তা গ্রহণ করেন, আবার অনেকে এটিকে উপেক্ষা করেন। আমার এটাই মনে হয়েছিল।
আপনি যদি চান, তাহলে আপনি যা বলেছেন তা সংরক্ষণ করুন, তবে এখানে বর্ণিত পদ্ধতিতে এটি সম্পর্কেও কথা বলুন! যদিও এই হত্যাকাণ্ড কীভাবে ঘটেছিল, সেটা সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য নেই। হলুদ মিডিয়ার দেওয়া তথ্য ছাড়া আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এটা জানার অন্য কোনো উত্স নেই।
শাইখ আবদুল্লাহ বিন নাসির আল-রাশিদ (আল্লাহ তাকে সুস্থ করুন) বলেন- এই বিষয়ে তিনি একটি দীর্ঘ আলোচনার সুযোগ পেয়েছেন:
(এই উক্তিতে: যখন কাফের মহিলারা মুসলিম নারীদের হত্যা করে তখন তাদেরও শক্তি ও কর্তৃত্বের সাথে হত্যা করা উচিত, তবেই তাদের সাথে প্রতিদানমূলক আচরণ করা হবে। উক্ত কাজটি আমার জানা মতে মুসলমানদের কেউ তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে করেনি। আর অপরদিকে তাদের শত্রুরা যখন মুসলিম দেশের কোথাও বিজয় অর্জন করে, তখন তারা মহিলা এবং শিশুদের হত্যা করে। এরপরও নারীদের রক্তকে বৈধ করার অনুমতি দেওয়ার পক্ষে এ প্রমাণ যথেষ্ট স্পষ্ট নয়।)
সমসাময়িকদের মধ্যে যারা এই কথাটি বলেছেন, তারা হলেন- আবু কাতাদা ফিলিস্তিনী (আল্লাহ তাঁকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দান করুন), ইউসুফ আল-ওয়াইরী (আল্লাহ তাকে শহীদদের মধ্যে কবুল করুন) তাঁর এক অনন্য উপকারী গ্রন্থ (নতুন ক্রুসেডের বাস্তবতা) এবং শাইখ ইবনে উসায়মীন তার কয়েকটি ফতোয়ায় বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, কিন্তু এ বিষয়ে পূর্ববর্তী উলামাদের কোন বক্তব্য পরিলক্ষিত হয়নি।]
সমসাময়িক পণ্ডিতদের মধ্যে বিষয়টি আলোচিত এবং জনপ্রিয়। তবে যারা এটি সম্পর্কে কথা বলেন, তাদের অনেকেই সেটি বাস্তবায়নের রূপরেখা সূক্ষ্মতার সাথে বর্ণনা করেননি। আমি এখানে বিশদভাবে আলোচনা করতে চাই না, তবে আমি ইহুদিদের তিন সন্তানের ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে, যা আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে কেবল তা-ই ব্যক্ত করতে চেয়েছিলাম (আল্লাহ তাদের প্রতি অভিশম্পাত দিন)।
সমসাময়িক এবং অন্যান্য বিষয়ে শরয়ী বিধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ইস্যুটির পার্থক্য উল্লেখ করার এবং আলেমদের বক্তব্যকে বোঝার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সর্বদা ভাইদের সতর্ক করুন। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল মুজাহিদদের ধারণাগুলো সম্প্রসারিত করা এবং তাদেরকে বিচ্যুত, বিচ্ছিন্ন বা নিঃসঙ্গ হওয়া থেকে দূরে রাখা, যদিও উক্ত মাসয়ালাটি ইজতিহাদ বা মতপার্থক্যের বিষয়।
আমার কাছে সিরিয়া সম্পর্কে দুটি ফিল্ম প্রেরণ করা হয়েছিল, যা আমি দেখেছি। মনে হচ্ছে ভাইরা ইরাকেও একই ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি করছে। সেখানেও আম জনতাকে জবাই করে হত্যাকান্ড এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করা হচ্ছে (লা হাওলা ওয়ালা কুও্ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্)। আমি জানি না এটি স্বতন্ত্র কোন গ্রুপের কাজ কি-না বা এ কাজে ইরাকী ভাইদের অন্তর্ভুক্তী আছে কিনা। অথবা নির্দিষ্ট কোন জিহাদি গ্রুপের পক্ষে এবং যে কোন অনিবার্য কারণে মুজাহিদ ভাইরা সেখানে রয়ে গেছেন কিনা।
প্রিয় ভাইয়েরা! তাদের বেশিরভাগ কাজের ক্ষেত্রে বিষয়গুলোকে তারা এতই অতি উচ্চমান ও সফলতার সাথে মোকাবেলা করে যে, ভাইদের দৃষ্টি এই প্রক্রিয়াটির বাইরে যায় না। অতঃপর এর অনুসারী ও সংশ্লিষ্টরা মাঝারি বা দীর্ঘ মেয়াদ পর্যন্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য করে না, অনুসরণও করে না। আমি এটিই দেখছি, যে বিষয়টি সিরিয়ায় মুজাহিদ ভাইদের পক্ষ থেকে চলছে। আমি আশংকা করছি যে, তারা ভাল করছে বলে ভেবে, তারা নিজেরাই পাগল হয়ে যায় কিনা।
তবে এখানে আমি তাদের কাজের ব্যাপারে শরয়ী দিকনির্দেশণা, সততা, ত্যাগ ও চেষ্টা-সাধনা সম্পর্কে কথা বলছি না। যদিও এটি মুজাহিদীনের জন্য তুলনাহীন অঞ্চল। বরং আমি যে প্রক্রিয়াগুলো ঘটে, তার পিছনে এবং পরিচালিত সমস্ত কার্যক্রমের পিছন থেকে সত্যিকারের ফলাফলের কথা বলছি। কেননা আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কেবল এই দূষিত এবং জঘন্য অপরাধীদের হত্যাই নয়, বরং এর অর্থ হল আমাদের ভাইদের রক্ত প্রবাহিত হওয়া বন্ধ করা এবং আমাদের বোনদের ইজ্জত-সম্ভ্রম রক্ষা করা এবং এটিই হল চূড়ান্ত বিষয়।
হিংস্র, নৃশংস রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাটির অবাধ শক্তি প্রয়োগ, বেপরোয়া গতি-বিধি ও অপরাধবোধ থামাতে বা হ্রাস করতে বিশাল শক্তির প্রয়োজন। সাধারণ জনগনের প্রশংসনীয় ও সুপরিচিত কাজের সাথে মুজাহিদ ভাইদের উপস্থিতিও কাম্য, যদিও তারা তাদের মিডিয়াতে এবং অঙ্গনে স্লোগান না দিয়েই হাজির হয়। দরিদ্র সিরিয়ার জনগণকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার অন্যতম কারণ হতে পারে - পশ্চিমা অংশীদারিত্ব এবং এর বংশধররা। এদের এই মারাত্মক, হত্যাযজ্ঞ বিষয়গুলোর বিবৃতিও ব্যাক্ত করা হয়েছে। এদিকে রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে অভিযোগ ছোঁড়াছুড়ি চলমান, ফলে এটি (ঐ মারাত্মক, হত্যাযজ্ঞ বিষয়গুলোর) সুযোগ করে দেয় এবং এই পথটি খুলে দেয়। অবশেষে এই অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় যে, তখন শুরু হয় অবৈধ হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ। অবিচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে ক্রোধের অগ্নিশিখা ও ধ্বংসলীলা (একমাত্র আল্লাহই সাহায্যকারী)।
সুতরাং মুজাহিদ ভাইরা যদি নিখুঁতভাবে গোপনে কাজ করেন তবে ক্ষতি কি?
আমার প্রিয় ভাই!
ক্রমাগতভাবে দুর্যোগগুলোর ধেয়ে আসা, কঠিন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়া, সদর্পে শত্রুদের আস্ফালন দেখানো এবং সেগুলোর সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া অথচ আমরা এমন পরিস্থিতিতে আছি যা সঙ্কটাপূর্ণ ও নাজুক।
এগুলো কোনটাই আপনার কাছে গোপন নয়। তাই আমি আশা করি যে, এর থেকে উত্তরণের জন্য আপনি ভঙ্গুর, অভাবী হৃদয় এবং দুর্দশা ও মুখাপেক্ষীতা নিয়ে আল্লাহ তা’য়ালার নিকট খুব বেশী বেশী প্রার্থনা করবেন। মহান আল্লাহ স্বীয় মহান গ্রন্থে বদরের দিনের অবস্থা সম্পর্কে একটি ঘটনা তাঁর নবীকে বলেন এবং দুটি দলের উপস্থিতি ও মিলিত হওয়ার আলোচনা তুলে ধরেন এভাবে:
إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُم بِأَلْفٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُرْدِفِينَ- وَمَا جَعَلَهُ اللَّهُ إِلَّا بُشْرَىٰ وَلِتَطْمَئِنَّ بِهِ قُلُوبُكُمْ ۚ وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
“আপনি যখন আপনার পালনকর্তার কাছে কায়মনোবাক্যে দু’য়া করলেন, তখন তিনি আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে বলেন যে, আমি আপনাকে সাহায্যের জন্য এক হাজার ফেরেশতা দিচ্ছি এবং আল্লাহ তা’য়ালা ঐ সাহায্যকে কেবলমাত্র সুসংবাদ ও আপনাদের অন্তরের প্রশান্তির জন্য নিশ্চিত করেছে। বিজয় বা সাহায্য কেবলমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে, আল্লাহ পরাক্রমশালী, জ্ঞানী।” (সূরা আনফাল ৮:৯-১০)
সুতরাং আমাদের যা কিছুই প্রয়োজন হোক না কেন, আমাদের উচিৎ হল মহান রবের নিকট প্রার্থনা ও আকুতি মিনতি করা। কারণ এটি উপাসনার মধ্যে এক সর্বশ্রেষ্ঠ উপাসনা, যা আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর বান্দাদের কাছ থেকে দেখতে পছন্দ করেন। বিশেষত প্রতিকূলতার সময়ে যখন অন্তরগুলো কোমল এবং নরম থাকে, অপরদিকে অহংকার, অতিরঞ্জন থেকে দূরে থাকে। আমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি তাদের অবস্থা থেকে, যাদের অবস্থা সম্পর্কে তিনি নিন্দা প্রকাশ করে বলেছেন:
وَلَقَدْ أَخَذْنَاهُم بِالْعَذَابِ فَمَا اسْتَكَانُوا لِرَبِّهِمْ وَمَا يَتَضَرَّعُونَ
“আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম, কিন্তু তারা তাদের পালনকর্তার সামনে নত হল না এবং কাকুতি-মিনতিও করল না।” (সূরা মু’মিনুন-২৩:৭৬)
আপনার নেক দুয়ায় আমাদেরকে ভুলবেন না, আল্লাহ্ আপনাকে বারাকাত দান করুন।
ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্!
আমাদের সমস্যাটি হল আমরা একটি ভার্চুয়াল জগতে কাজ করছি। অর্থাৎ আপনি মানুষের মধ্যকার থাকা সমস্যাগুলো কী কী তা দেখার দিক থেকে দর্শক এবং কি ঘটছে তার বিশদ বিবরণ শোনার দিক থেকে আপনি কেবল একজন শ্রোতা। আর আত্মা তো বাস্তবে এমনই আচরণ করে।
আপনি এখানে দেখতে পাচ্ছেন এমন অনেকগুলো ছোট-খাট সমস্যা, যা একটি সাধারণ অধিবেশনে সমাধান করা যেতে পারে, কিন্তু সমস্যাগুলোর সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্কযুক্ত লোকেদের প্রকৃতি দ্বারা এটি জটিল এবং কঠিন হয়ে ওঠে। আপনি নিজেকে নানা ধরনের অপবাদ, খাহেশাত ও নানা রকমের উদ্ভট বিষয়ের কারণে, সেখানে এমন কপট অবস্থায় দেখতে পাবেন, যার কোন সীমারেখা নেই। আর এ সকল সমস্যার প্রসার সর্বদাই চলমান।
অতএব, আমাদের সর্বদা সতর্কতার সাথে এই জাতীয় সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে হবে এবং আমাদের কথাবার্তা এবং শব্দগুলো সাবধানে নির্বাচন করতে হবে, যাতে কোনো পক্ষই অনুভব না করে, যে আমরা এটির পক্ষপাতদুষ্ট এবং এটাকে সমর্থন করি। এটি তাত্ক্ষণিকভাবে নয়। বরং স্থীরতার সাথে নিশ্চিতকরণ এবং সনাক্তকরণের পাশাপাশি আপনি যে সমস্যার সমাধান করতে চান, উভয় পক্ষের কাছ থেকে তার বিস্তারিত বিবরণ শুনে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সাথে অগ্রসর হতে হবে। এটা নিছক সাধারণ একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে খুবই গুরুত্বের সাথে এটিকে আমলে নিতে হবে।
বিসমিল্লাহির রহ্মানির রহীম
প্রিয় ভাই আবুল হাসান আল-ওয়াইলি (আল্লাহ্ তা’য়ালা তার পূর্ণ হেফাজত করুন)
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহ্মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্!
আপনার শুভ বার্তা আমার কাছে পৌঁছেছে। আল্লাহ তা’য়ালা আপনাকে আনুগত্যের রশি দিয়ে তাঁর কাছে পৌছিয়েছেন এবং আপনার জন্য তাঁর সন্তুষ্টি লাভের পথকে সহজ করেছেন। আল্লাহ আপনাকে একজন শহীদ হিসাবে পুনরুত্থিত করুন এবং তাঁর শত্রু এবং আপনার শত্রুদের থেকে আপনার হৃদয়কে প্রশান্ত রাখুন। অনন্তর আপনাকে শহীদ হিসাবে কবুল করুন। (আমিন)
গত বছর ঈদুল আযহায় আবু বকর ব্রিগেডের ভাইদের উপর বোমা ফেলায় বিশ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়। শাইখ মাহমুদ (আমাদের শাইখ আত্বিয়্যাতুল্লাহ্ আল-লিব্বী এর উপনাম হল মাহ্মুদ, আল্লাহ তাঁর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন) সেসময় “ডাইকন” নামক স্থানের পাশেই অবস্থান করছিলেন।
তাকে সংবাদ দেওয়া হল যে, আমি মৃত বা আহতদের মধ্যে আছি। তিনি সাথে সাথে নিজেকে এতটাই চিন্তা ও শোকের মধ্যে ফেলে দিলেন, কেমন যেন আমাকে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে তিনি দু’দিন থাকলেন এবং আমি দ্রুত তাঁর কাছে শহীদদের নাম সম্বলিত একটি চিঠি লিখলাম। আমার পত্র তাঁর নিকট পৌঁছালে তিনি আমাকে একটি ফিরতি বার্তা পাঠিয়ে বললেন, আমি জানিনা যে আমি বেঁচে থাকতে পেরে খুশি হব না-কি শহীদদের সংখ্যা নিয়ে শোক জানাব?
আমি এভাবেই ছিলাম। অথচ তিনি আমাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে ভীত ছিলেন যে, তাঁর কোন বন্ধু আখেরাতের প্রতিযোগিতায় তার আগে চলে যাবে। অগ্রগামীতা তাঁর জন্যই নির্ধারিত ছিল, কেননা তিনি হিজরত, ধর্ম, নৈতিকতা এবং জ্ঞানের দিক থেকে অগ্রগামীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকে উত্তম স্থলাভিষিক্ত নির্ধারন করেন। আমরা দৃশ্যমান এবং গোপন উভয় প্রকার ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
নোট:- এটি এমন একটি বই যেখানে আমি বীর শহীদ ডাঃ হাম্মাম আল-বালাবি আবু দুজানা আল খোরাসানী কর্তৃক আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশে আমেরিকান গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে অপারেশনটির ঘটনা লিখেছিলাম। যার শিরোনাম ছিল: খোস্ত অপারেশনের সম্পূর্ণ ঘটনা।
প্রিয় ভাই আবুল হাসান আল-ওয়ালি, আল্লাহ তার প্রতি স্বীয় অনুগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন।
আমি আপনার বইটি এক একটি শব্দ করে পড়ছিলাম এবং এক অধিবেশনেই এটির পড়া সম্পন্ন করেছি। বিশেষত যেহেতু এটি আমাকে বেশ কয়েকদিন আগে আকৃষ্ট করেছিল এবং আমার পাশ দিয়ে যাওয়া পুরুষদের স্মরণ করে দিচ্ছিল।
বইটি যে কোন অধ্যায় থেকে পাঠ করা যেতে পারে এবং আমি গেস্টহাউস, উপত্যকা, সভা, দর্শন এবং সভাগুলোর মধ্যে এর আলোচনা করেছি। এটি প্রত্যেকেই পড়তে পারে, ফলে সবার মাঝে এতে বিদ্যমান অন্তর্নিহিত সংবেদনগুলো বাড়িয়ে তুলবে। পাঠক এর মাঝে এক প্রবল উত্সাহ খুঁজে পাবেন। কেউ আবার এমনও হতে পারেন, যিনি বইটির উপর মারাত্মক অভিশাপ দেবেন, কেউবা তার জন্য বিশ্লেষণ এবং কল্পনা করার দরজা উন্মুক্ত করবেন এবং প্রতিটি গন্তব্যের জন্য পাবেন পরামর্শদাতা।
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আামাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন, আমাদের প্রিয়জনদের সাথে জান্নাতে একত্রিত করেন এবং তাদের পরে আমরা যেন কোন ফিতনায় না পড়ি এবং তাদের পুরষ্কার থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত না করেন।
আমি আপনাকে আরও লিখতে ও তা অব্যাহত রাখতে অনুরোধ করছি। অনেক সময় লিখনি আবেগকে হত্যা করে এবং কৃত্রিমতার দিকে পরিচালিত করে। সে কথায় কোনো কল্যাণ নেই যা আন্তরিক আবেগ দ্বারা পুষ্ট হয় নি এবং সত্য ও বাস্তবতার অনুভূতিগুলো যাদের শিরাগুলোতে প্রবাহিত হয় নি। এমন লেখা কোন উপকারে আসবে না।
সংশোধন সম্পর্কিত ভুল বা টাইপের মাধ্যমে আপনার কাছ থেকে যা ঘটেছিল, সেগুলোর কিছু বাদ দেওয়া ছাড়া আমি কিছুই করি নি। কারণ, আমার মতে, এটি এমন কিছু যা পাঠককে আকর্ষণ করে এবং তার একঘেয়েমি কেটে দেয়। যদিও আপনার বইটি সম্পূর্ণ হয় নি, কারণ সংক্ষেপে এ বিষয়টি একটি অনন্য গল্প, যা আরও সমৃদ্ধ করা দরকার।
পরিশেষে দু’য়া করি আল্লাহ আপনাকে সকল উত্তম বিনিময় দান করুন!। আপনি যদি লেখাটি আরবী মাসের উনিশতম দিনের আগে পান, তবে এটি এই দিনে বা এর একদিন আগে বা পরের দিন প্রকাশিত হলে ভাল হয়, কেননা এটি আবু দুজানার অপারেশনের তারিখ। আল্লাহ তাঁর প্রতি অনুগ্রহ করুন এবং আমাদেরকে তাঁর সাথে সর্বোচ্চ জান্নাতে একত্রিত করুন, আমিন।
এটি একটি বিশেষ ডায়েরী, যা আল্লাহর অভিপ্রায়ে আমার শাহাদাতের পূর্বে কারও খোলার অনুমতি নেই।
এই ডায়েরী লিখেছেন শাহাদাত প্রত্যাশী
আবু ইয়াহ্ইয়া
১১ সফর ১৪২৯ হিজরী.
শাইখ আবুল লাইছ এবং তাঁর সাথীগণ ২১ মহর্রম ১৪২৯ হিরজীর মঙ্গলবার রাতে আফগানিস্তানের খোশহালীতে শাহাদাত বরণ করেন। আল্লাহ তা’য়ালা সকলের প্রতি রহম করুন এবং তাদের শাহাদাতকে কবুল করে নিন। আর তাদের সাথে আমাদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সুউচ্চ স্থানে মিলিত হওয়ার তাওফীক দান করুক। আমীন!
“ওহে আমাদের বীর সেনানী! আপনাদের বিচ্ছেদের পরে, আমরা তার তিক্ততার স্বাদ পেয়েছি।”
খোশহালীতে যাঁরা শাহাদাত বরণ করেন:
১. শাইখ আবুল লাইছ ক্বাসেমী আল-লিব্বী
২. প্রিয় ভাই আবু সাহাল হানাফী
৩. হাফেজ ক্বারী আবুল হারিছ তাজিকী
৪. হাফেজ ক্বারী আব্বাস তাজিকী
৫. হাফেজ ক্বারী সাইফুল্লাহ্ তাজিকী
৬. প্রিয় ভাই আব্দুল্লাহ্ আফগানী
৭. হাস্যোজ্জ্বল অবয়বী ভাই আবু সালামাহ্ আল-লিব্বী
৮. প্রিয় ভাই আবু সুলাইমান আশ-শামী
৯. খাদেম ভাই আবু উবাইদাহ্ আল-কুয়েতী
১০. উন্নত চরিত্রের অধিকারী ভাই আব্দুল হাকীম আফগানী
১১. উন্নত মনের ব্যক্তি ও খাদেম ভাই ত্বলহা আততুর্কী
১২. সুপ্ত জ্ঞানের অধিকারী আবু খাওয়ালা আন-নাজ্দী
“আমাদের মধ্যে যা আছে তা না সংখ্যায় অথবা কোনও বংশে গণনা করা হয়।
আমরা সবাই বন্ধু বরং বন্ধুত্বেরও উপরের বন্ধু।”
৩ নং পৃষ্ঠা:
চিন্তার চা/কফি-
পরামর্শের চাদর গ্রহণে ক্লান্ত হবেন না
কাপুরুষতার আবরণ দিয়ে নীরবতা ডাকবেন না
সৌন্দর্যের জাল দিয়ে সঙ্গীদের ধরে রাখবেন না
অধিক পরিমাণে তিরস্কার এবং শাস্তি দিয়ে সৌন্দর্যকে নষ্ট করবেন না
আবু ইয়াহ্ইয়া
২২ রবিউল আওয়াল ১৪২৯, শনিবার।
“মুক্তার মালা”
যে অন্যকে বড় জানে তাকে সবাই বিনয়ী জানে,
আর যে নিজেকে বড় মনে করে সে তাচ্ছিল্যতার শিকার হয়।
আর যে নিজের দোষ দেখে লোকেরা তার থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে।
সুতরাং তুমি হিনতা ও দীনতা বিহিন নিজের জন্য পরিশ্রমী হও, সৃষ্টিকুলের জন্য বিনয়ী হও।
শনিবার ১৭ ই শাওয়াল ১৪২৯ হিঃ
স্বর্ণের মত দামি কথা:
ইমাম সারাখসী রহ. বলেন: যুদ্ধক্ষেত্রে আনুগত্য কোন কোন ক্ষেত্রে ক্বিতালের চেয়েও বেশী উপকারী, আর আনুগত্য ব্যতিত নেতৃত্বের উপকারিতা প্রকাশ পায় না। (শরহুস সিয়ারিল কাবীর- ১/৬০)
প্রশিক্ষণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে সামরিক নেতাগণ বলেন:
প্রশিক্ষণের মাঝে ঘাম ঝড়ানো যুদ্ধক্ষেত্রে রক্ত ঝড়ানোর সমতুল্য। (আল-ক্বিয়াদাতুল আসকারিয়্যাহ-৭৬)
পৃথিবীতে জনসাধারণের নফসের অনুসরণ ও রাজা-বাদশাদের সন্তুষ্টি অর্জনে চাটুকারিতা করণের চেয়ে নিকৃষ্ট আর কিছু নেই। কখনো কখনো প্রথমটা দ্বিতীয়টার চেয়ে নিকৃষ্ট হয়ে থাকে।
আবু ইয়াহ্ইয়া
বুধবার ১৬ ই শাওয়াল ১৪২৯ হিঃ
গিরিপথের বন্ধু, পথ চলার সাথী শাইখ আব্দুল্লাহ্ সাঈদ ১ মুহার্রম ১৪৩১ হিজরী জুম’আর রাত্রে ডেকন এলাকায় গুপ্তচর বিমানের বোমা হামলায় শাহাদাত বরণ করেন। তখন তিনি সাথীদের নিয়ে মাগরীবের সালাতের ইমামতি করছিলেন। বৃহস্পতিবার হওয়ায়, তিনি সেদিন সিয়াম পালন করছিলেন। আল্লাহ তা’য়ালা তার প্রতি প্রশস্ত রহমত বর্ষিত করুন এবং তাঁকে জান্নাতে সুউচ্চ স্থান দান করুন।
শাইখ আব্দুল্লাহ্ সাঈদ এর সাথে যারা শাহাদাৎ বরণ করেন:
১. সাজ্জাদ দাগিস্তানী (আজরী)
২. ফারুক আফগানী
৩. আবুল বারা আশ-শামী
৪. হুজাইফাহ্ আশ-শামী
৫. আব্দুল গফুর দাগিস্তানী (আজরী)
৬. আবু সুহাইব তুর্কী
৭. অন্য এক তুর্কী ভাই
৮. আসেম আল-মাগরিবী
আমি আপনাদেরকে ওসিয়ত করছি, যে আপনারা সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ভয় করুন। তাঁকে গোপনে এবং প্রকাশ্যে ধ্যানে রাখুন। আর আপনাদের ও তাঁর মধ্যকার বিষয়গুলোর সংশোধন করুন।
আপনাদের ছোট বা বড় সমস্ত কাজে আন্তরিকতা এবং উত্সাহের উপর দৃঢ় থাকুন। সমস্ত মুসলমানের জন্য হৃদয়কে উন্মুক্ত করে দিন এবং তাদের অদৃশ্য বিজয়ের জন্য দু’য়া করুন। প্রার্থনা ও দু’য়া করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করুন, কারণ আল্লাহর শপথ! আমরা খুব-ই বিপদে ও আতঙ্কে আছি। কিন্তু আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ ও কৃপায়, আমাদের জন্য সে পরিণতি লাঘব করে দিয়েছেন। বেশি করে এই মহান প্রার্থনা করতে থাকুন: ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ
رَبِّ أَعِنِّي وَلاَ تُعِنْ عَلَىَّ وَانْصُرْنِي وَلاَ تَنْصُرْ عَلَىَّ وَامْكُرْ لِي وَلاَ تَمْكُرْ عَلَىَّ وَاهْدِنِي وَيَسِّرِ الْهُدَى لِي وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ بَغَى عَلَىَّ رَبِّ اجْعَلْنِي لَكَ شَكَّارًا لَكَ ذَكَّارًا لَكَ رَهَّابًا لَكَ مُطِيعًا إِلَيْكَ مُخْبِتًا إِلَيْكَ أَوَّاهًا مُنِيبًا رَبِّ تَقَبَّلْ تَوْبَتِي وَاغْسِلْ حَوْبَتِي وَأَجِبْ دَعْوَتِي وَاهْدِ قَلْبِي وَسَدِّدْ لِسَانِي وَثَبِّتْ حُجَّتِي وَاسْلُلْ سَخِيمَةَ قَلْبِي
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুআ করতেন এবং বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমাকে সহযোগিতা কর এবং আমার বিরুদ্ধে (কাউকে) সহযোগিতা করো না, আমাকে সাহায্য কর এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করো না, আমার জন্য পরিকল্পনা এঁটে দাও এবং আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পনা এঁটো না, আমাকে হিদায়াত দান কর, আমার জন্য হিদায়াতের পথ সহজসাধ্য কর এবং যে লোক আমার উপর যুলম ও সীমালঙ্ঘন করে তার বিরুদ্ধে আমাকে সহযোগিতা কর। হে আল্লাহ! আমাকে তোমার জন্য কৃতজ্ঞ বান্দা কর, তোমার জন্য অধিক যিকরকারী, তোমাকে বেশি ভয়কারী, তোমার অনেক আনুগত্যকারী, তোমার কাছে অনুনয়-বিনয়কারী ও তোমার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী কর। হে আমার প্রভু! আমার তাওবাহ কবূল কর, আমার সকল গুনাহ ধুয়ে-মুছে ফেল, আমার দুআ কবূল কর, আমার সাক্ষ্য-প্রমাণ বহাল কর, আমার যবানকে দৃঢ় কর, আমার অন্তরে হিদায়াত দান কর এবং আমার বুক হতে সমস্ত হিংসা দূর কর।” (ইবনু মাজাহ -৩৮৩০)
আবুল হাসান আত-তানাফিসিয়্যি বলেন: আমি ওয়াকী রহিমাহুল্লাহ্ কে বললাম: আমরা কি এটা (সালাতুল) বিতরে ক্বুনূত হিসেবে পড়তে পারি? তিনি বলেন “হ্যাঁ।”
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের ও আপনাদেরকে সাহায্য করেন এবং আমাদের ও আপনাদের কাছ থেকে (কৃত নেক আমল সমূহ) গ্রহণ করুন, কারণ তিনি মহা শ্রবণকারী, অতি নিকটে।
والحمد لله رب العالمين
***********
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الحكمة للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায়
আল হিকমাহ মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
Al Hikmah Media
Al-Qaidah in the Subcontinent